সকালে আমার অফিসে ডেসটিনির :-& এক পোলা হাজির। বলে আমার নাকি কোটিপতি হবার পথে মাত্র ৬টা বছরের ব্যাপার ।
বল্লামঃ তা বাবা কেইসটা খুইলা কও, ধন্য হৈ।
সে যা জানালো তার সারমর্ম হলো এই,
ডেসটিনি এক অভিনব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশব্যাপী তারা প্রায় ৫ কোটি Powlonia tree নামের অতি মূল্যবান গাছ লাগাবে যার একেকটার দাম মাত্র ৬ বছর পরে হবে ২০০০০/-। একেকটা চারার দাম পড়বে ৫০০/-। তাইলে আমি যদি ২,৫০,০০০/- দিয়া ৫০০/- চারা কিনি (লাগাবে আবার উনারাই। তবে আমার জমি থাক্লে আমিও লাগাইতে পারি আরকি ), সেই চারা মহীরুহে পরিনত হৈবে ৬ বছর পর। প্রতি মহীরুহ ২০০০০/- ধর্লে আমি নিশ্চিত কোটিপতি ।
এই গাছের কাঠ দিয়া নাকি বড় বড় কোম্পানির লাক্সারিয়াস গাড়ীর ড্যাশবোর্ড ইত্যাদি কি কি সব হয়।
তারে জিগাইলাম, "তা বাবা এই গাছ কি তুমি স্বচক্ষে দেখেছো? "
সে কয়, "না, এইটাতো চীন, জাপান, কোরিয়াতে হয় "।
আমি বলি, " তো তুমি কেম্নে নিষ্চিত হৈলা যে এই গাছ বাংলাদেশে জন্মাইবো? আর হৈলেও ১০০% গাছ বাঁচার নিশ্চয়তা কি? আর বাঁচলোই বা, ৬ বছরে যে গাছ অতো বড়ই হৈবো তার গ্যারান্টি কে দিবো? তারপর তোমরা যে পাঁচ কোটি গাছ লাগাইবা, তোমার হিসাবে বিঘা প্রতি ১০৫টা গাছ হৈলে এই গাছ লাগাইতে প্রায় ৪৭৬১৯০ বিঘা বা প্রায় ২৫০ বর্গমাইল খালি জমি দরকার (ক্যালকুলেটর টিপ্যা কৈসি আর্কি ) এতো জমি কৈ পাইবা? এতো গাছ লাগানোর অনুমুতি তোমারে কে দিসে ? এই গাছ যে বায়লাদেশের আবহাওয়ায় মানানসই তাই বা তোমরা কেমনে জানলা?"
দেখলাম সে খুবই দৃঢ়তার সাথে জানাইলো, " আমরা সব পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখেছি। কোন সমস্যা নাই। আমরা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছি গাছ লাগাবার। জায়গা ব্যাপার না । আর প্রতিটা গাছ বীমা করা থাকবে । "
এই সেই Powlonia বৃক্ষ
আমি এইবার সিরিয়াস। বললাম, দেখো বাঙ্গালী হুজুগের জাতি। অনুমোদনকারী কর্মকর্তারাও বাঙ্গালিই হবেন নিশ্চয়ই । কাজেই খুব সুদূর প্রসারী চিন্তা কৈরা যে অনুমোদন দিসেন, আমার মনে হয়না । ক'দিন আগে পরিবেশ দুষণের হাত থাইকা বাঁচাইতে ধোঁয়াবিহীন অটো রিক্সা আনা হৈলো । এখন দেখা যাইতেছে, পরিবেশ বাঁচুক আর না বাঁচুক, মানুষ মারা যাইতেছে । লোডশেডিং এর কারণে কলকারখানা বন্ধ হৈয়া যাইতেছে। কাজেই নতুন সিদ্ধান্ত হৈলো এইসব অটো আমদানী বন্ধ। ক'দিন আগে মানুষ সাইক্সিরাজের অনুপ্রেরণায় জমিতে ধানের বদলে বাউকূল লাগাইতেসিলো। ফলাফল হাতে নাতে পাইতে টাইম বেশী লাগে নাই। এখন দেখি ইতা আবার ড্রাগন ফ্রুটের পিছে লাগসে। আরো কি যে কর্বো।
কাজেই বাবা, যে দেশে প্রধান ফসল ধান লাগানোর পর্যাপ্ত জমি নাই, চাউল আমদানী করা লাগে। সেখানে আজাইরা বিষয়গুলা নিয়া এতো গবেষণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার জানা নাই। তবে আমি এর পক্ষে নই। আমরা কখোনই বৃহত্তর আঙ্গিকে ভাবতে শিখিনি। ভাবি শুধু নিজেরটা নিয়ে।
এখন তুমি রাস্তা মাপ। পরে ভেবে দেখবো।
মনে হলো ছেলেটা এতো কথা শোনার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসেনাই। সে খুবই বিরক্ত হৈয়া ..................
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৬