আমি রাত ১১টা সংবাদ শেষ করে নামছি, রিসিপশনে দেখি আমার দুই কন্যা অন্য-বর্ণ, সঙ্গে শিপলু! ছোট্ট একটি কেক নিয়ে অপেক্ষা করছে আমার মেয়েরা। বাজানের জন্মদিনের ১২টা ০১-এ কেক কাটবে ওরা। ওরা আমাকে বাজান বলে ডাকে।
আমাদের যৌথ পরিবার। শিপলু এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর রেওয়াজটা চালু করেছে। পরিবারের সদস্যদের জন্মদিনের ১২টা ০১-এ কেক কাটার আয়োজন করে। বড় পরিবারে যা হয়, প্রতি মাসেই কারো না কারো জন্মদিনটিন কিছু একটা থাকে।
আমার মেয়েরা জন্মের পর থেকে দেখছে, মধ্যরাতে কেক কাটা হচ্ছে। ওরা বড় মজা পায়। অন্যতমা তো আগে ভাবত, ওর জন্মদিনেরই কেক কাটা হচ্ছে। প্রতিমাসেই ওর জন্মদিন। ও কেক খায় না একফোটাও। তবে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নেভানোতে, কেকে ছুরি চালানোতে আর হাততালি দিতে ওর বড় আনন্দ। আমার সেই মেয়েরা তাদের বাজানের জন্মদিনের ১২টা ০১-এ কেক কাটবে না!
কেক হাতে আমার মেয়েদের দেখে রাতের ডিউটি শেষ করে বাড়ির পথধরা আমার সহকর্মীরা ৬তলা থেকে আবার উঠল ৯তলায়। ৬তলায় আমাদের রিসিপশন আর ৯তলায় নিউজরুম। সবাই হৈচে করে ছোট্ট কেকটা কাটল। আমি কলিগদের সামনে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে। আমার ওই লজ্জানীল মুখে চুমু খেল আমার দুই কন্যা।
রাতে ওরা খালার বাসা ফার্মগেটে থেকে যাবে। আমি চলে যাব বাসায়। অফিসের গাড়িতে ওদের তুলে নিলাম। ফার্মগেটে যখন ওদের নামিয়ে দেব, তখন বর্ণমালা কান্না শুরু করল- বাজানকে ও ছাড়বে না।
অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নামালাম। আমার গাড়ি ছেড়ে দিল। রাতে খোলা হাওয়ায় ভেসে আসছিল তখনো বর্ণর কান্না।
আর... আর আমি কাঁদছিলাম গাড়ির ভিতর। এই জীবনের ওই অসামান্য সুখে।
কত কিছু না পাওয়ার, অতৃপ্তির আর অপমানের এই জীবনে আর কী দরকার- এই ভালোবাসার চেয়ে! মনে হয়, এ জীবনই দোয়েলের, ফড়িংয়ের- মানুষের সাথে তার হয় যে গো দেখা...
** আমার দুই কন্যা- অন্যতমা আর বর্ণমালা। ছবিটা অবশ্য ২ বছর আগের। যখন লিখছি, হাতের কাছে তখন ওদের আর কোনো ছবি ছিল না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৬