আজ আমি আমার সবথেকে পুরোনো একটা বন্ধুর কথা বলছি। অবশ্য এই বন্ধুটার সাথে যখন আমার বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল তখন কিন্তু আমি কথাই বলা শিখিনী । শুধু কি কথা বলাই, তখনোতো আমি কাউকে চিনিইনা, কাউকে দেখিইনি । আরে, আমি চিনবো কিভাবে, দেখবো কিভাবে, আমার যে তখনও জন্মই হয়নি । কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের জন্ম ঠিকই হয়ে গেছে । আমার মায়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব আমার জন্মের ১০ মাস আগে থেকেই । আমি তখনও পৃথিবীতেই আসিনি অথচ আমার জন্য মা'র কত দুশ্চিন্তা, কত ব্যাকুলতা, কত যত্ন, কত ভালবাসা । আমিও কম যাইনা, মাঝে মাঝেই একটু নড়েচড়ে উঠতাম । আমার অস্তিত্ব টের পেয়ে মা যে কতই খুশি হতেন । অবশ্য আমার ব্যাপারে মা ছিলেন ভীষণ সাবধানী । আমি যেন ব্যথা না পাই সেজন্য মা হাঁটতেন খুব ধীরে ধীরে । রান্নাঘরেও যেতেন সাবধানে যেন আমার কোনও ক্ষতি না হয়। আর আমি যখন পৃথিবীতে আসলাম তখন মা যে কি পরিমান ব্যথা সহ্য করেছিলেন, কি পরিমান কষ্ট অনুভব করেছিলেন সেটা শুধু মা'ই জানেন। সে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাদের পুরুষ জাতিকে দেননি। আমি পৃথিবীতে আসলাম। আমার মায়ের খুশি দেখে কে। আমি কিন্তু একটানা কেঁদে চলেছি। আর আমার মা আমার কান্না দেখে হাসছেন। জীবনে শুধুমাত্র এই একটা দিনই সন্তান কাঁদলে মা হাসেন। বাকিটা জীবনই সন্তান কাঁদলে মা কাঁদেন, সন্তান হাসলে মা হাসেন। সেই তখন থেকেই আজ অবধি মা আমার জন্য কি কষ্টই না স্বীকার করেছেন। রাতের বেলা কোচিং ক্লাস করে বাড়ি ফিরতে ভয় পেতাম বলে ছুটির আগেই কোচিং এ গিয়ে মা বসে থাকতেন। বাড়ি ফেরার সময় আমার ব্যাগটা হাতে নিতেন। আমার মনে আছে একবার ভাইয়া কোনও একটা কারণে খুব ক্ষিপ্রতা নিয়ে আমাকে মারতে এগিয়ে আসছিলেন আর এটা দেখে মা যেভাবে অশ্রু জড়ানো কণ্ঠে আর্তনাদ করে আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ভাইয়া কিন্তু আর এক পা 'ও এগোতে পারেনি। ছোট বেলায় আমার শুধুই অসুখ লেগে থাকতো আমার অসুখে কত রাত যে মা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন তার হিসাব নেই। এখনতো অনেক বড় হয়ে গেছি। তবে মায়ের কাছে সন্তান সব সময় ছোটই থাকে। মায়ের দুশ্চিন্তা কমেনা বরং বাড়ে। ছেলেটা কিভাবে থাকে, কি খায়, টাকাপয়সার কোনও কমতি হচ্ছে নাতো। মাকে শান্ত রাখতে মাঝেমাঝে আমাকে দুই একটা মিথ্যার আশ্রয়ও নিতে হয়, শরীর খারাপ হলে সেটা লুকিয়ে চলা, বুয়ার রান্না করা স্বাদহীন তরকারীর গুণকীর্তন মায়ের কাছে মাঝে মাঝেই করতে হয়। তবে অভিনয়ের এই প্রতিযোগিতায়ও আমি মায়ের কাছে পরাজিত। মা তো ফোনে প্রতিদিনই বলেন ভাল আছেন। যেন আমি চিন্তা না করি। কিন্তু আমি জানি সন্তান দূরে থাকলে মা ভাল থাকতে পারেনা। ভাল থাকার অভিনয় করে মাত্র। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা লাগে। ক্লাস-খাওয়া-ঘুম এর এই ছকবাধা জীবন একঘেয়েমি লাগে। হোস্টেল লাইফের কিছু পাগলামি আড্ডা, খেলার চ্যানেল, ইংলিশ মুভি, তুরুপের তাস, ইন্টারনেট এসব রেখে মায়ের কাছে গিয়ে একটু শীতল হতে ইচ্ছা করে। এখনতো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। নিজের বুঝ নিজে বুঝতে শিখেছি। শুধু বুঝতে শিখেছি বললে ভুল হবে, দু-এক লাইন বেশিও বুঝে ফেলি মাঝে মাঝে। কথায় কথায় মায়ের সাথে রাগারাগি করি, খাবার নিয়ে রাগারাগি করি, সকাল-সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুললে রাগারাগি করি। এসব নিজে নিজেই শিখে গেছি। শুধু মায়ের কাছে ক্ষমাটা আজও চাইতে পারিনি। মা, তোমাকে বলছি মা, বিশ্বাস করো, জীবনে যতবারই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি ততবারই আড়ালে কেঁদেছি। কিন্তু তোমার কাছে গিয়ে সরি বলতে পারিনি। তোমাকে ভালবাসি এই কথাটাও মুখফুটে আজও বলতে পারিনি। আজ তোমাকে বলছি মা, তোমাকে ভালবাসি, অনেক অনেক ভালবাসি, ভালবাসি। ভালথেকো মা।

আলোচিত ব্লগ
রাজনৈতিক সংকটে বিএনপি খেলছে পিছনে থেকে, কিনতু কেন?
রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এখনও ক্ষমতায় থাকত। রাজনীতি গড়ে উঠে গণমানুষের পারসেপসনের উপর ভিত্তি করে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকের পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ই সঠিক
কিছু মানুষ পুরোপুরি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাঁচে। তারা বারবার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের কথাই একমাত্র সত্য। এই প্রক্রিয়াটি এক ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসি বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ড.ইউনূস আউট, হাসিনা ইন প্রজেক্ট : কতদূর অগ্রগতি হইলো ?
খুবই সাদামাটা ভাবে সমাপ্তি ঘটলো প্রধান উপদেষ্টার সাথে বড়ো রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতের বৈঠক। সাবসিডারি হিসাবে বিনা আমন্ত্রণে ড. ইউনূসের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল এনসিপি ! আগামীকাল বাকি দলগুলোর সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ড. ইউনুস, বিএনপি ও ‘সমাধান’ নাটক: আস্থার সংকট না কৌশলের খেলা?
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক অদ্ভুত দৃশ্যপট আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট চায় নির্বাচন ও কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির পদত্যাগ; অন্যদিকে সেই ব্যক্তিদের নিয়েই আলোচনার টেবিলে বসছেন ড.... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী রাজনীতির গতিপথ
আওয়ামী উত্থান হতে হতে পতন এবং অবশেষে পলায়ন।সেলপি তুলেও বাইডেন থেকে রক্ষা পাওয়া গেল না।ট্রাম্পে ফিরে আসার প্রত্যাশা থাকলেও সেইটা এখন মরিচিকা। বিচার বাঞ্চালে বিএনপির উপর ভর করা... ...বাকিটুকু পড়ুন