তোমার যুক্তিতে কখনো এক হতে পারিনি, আগেও পারিনি এতদিনেও পারিনি। তাইতো বিকালে তোমার পাশে বসে এলোমেলো হাতে শুধু চোখ দুটোই মুছছিলাম।
নিশি পরিচয় আমার কলেজ লাইফে। ভালোবাসার কুড়ি উন্মক্ত ফুল তাকে দিই অনার্স প্রথম বর্ষের মাঝামাঝিতে। ফুলদানিতে সেই ফুলটা রাখার জন্য আমাকে টানা সাতদিন আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছিল। অষ্টম প্রহরে স্ফীত হাসি দিয়ে বলেছিল, জানো ছোটবেলা থেকে আমি ভালোবাসি এই শব্দটাকে অপছন্দ করি এবং এখন বলতেও কেমন জানি বিশ্রী লাগছে তবু বলতে পার আমি তোমাকে ভালো-জেনে ফেলেছি, ভালোবাসি কিনা জানিনা। তবে "ভালোজানি"। আমি তখন চিন্তা করতে চাইনি ভালোবাসি অথবা ভালোজানির পার্থক্য কি হতে পারে। শুধু তাকে পবিত্র ভেবেছি, অনেক পবিত্র। কারণ কখনো আমি নিজেও বুঝতে চাইতাম না তার মধ্যে যে কিছুটা সৌন্দর্যের অহংকার কাজ করে। শুধু ভাবতাম সৌন্দর্য সবসময় বহুবচন। ভুলের উর্ধ্বে হয়তো আমিও ছিলাম না।
সামু'তে হয়তো তোমার আসা হয়না তাই আমার অনেকগুলো অব্যক্ত গোপন অভিব্যক্তির মত আজ বিকেলের রহস্যময়তাও কেবল গোপনই থেকে যাবে।
তোমার সাথে পরিচয় অথবা আমাকে তোমার ভালো জানার পর থেকে দুজনে মিলে অনেক সারপ্রাইজ খেয়েছি। হয় তুমি নয়তো আমার দেয়া। শেষ জন্মদিনটার(২০০৮) সকালে, খুব সকালে তুমি সাধারণত ফোন দিতে না কখনো। রিসিভারের ওই প্রান্তের কোমল স্নিগ্ধ কণ্ঠটা ততক্ষনে আমার কাচা ঘুমের জড়তা কাটিয়ে দিলো।
সেটাতো তুমিই ছিলা তাই না?
যা নিয়ে আমি আজো সন্দেহপ্রবন। নিজেকে এখনো বলি সে নিশি ছিলনা। যাই হোক তোমাকে অস্থির শুনেছিলাম। বলতে শুরু করলে। একনাগাড়ে এলোমেলো অনেক কিছুই শুনলাম। শেষদিকে এসে বললে,''রিয়াদ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কতদিনের পরিচয় কত পুরানো সম্পর্ক তোমাকে এভাবে মিস করানো যায়না,অবশ্য তোমাকেই প্রথম বলব তুমি ছাড়া আর কেউ না''। তোমার মুখে আমাদের গভীরতার পরিমাপটা সেদিন আরও গভীর টের পেয়েছিলাম। সকাল থেকে বিকাল অব্দি ভাবছি আর ভাবছি কিভাবে আগামীকালটা শুরু হবে। তুমি হয়তো আজ আমাকে ভালোবাসি বলেই ফেলবে। তুমি যখন আমাকে ভালোবাসি তখন আমি একটানা অনেকক্ষণ ধরে চিৎকার করবো, না না চিৎকার করবো না একচক্করে একদৌড়ে পুরো TSC ঘুরে আসবো আর আসার পথে দেয়ালগুলোতে চিকা মেরে আসবো রিয়াদ+নিশি। আর এভাবে অনেকগুলো কাহিনীকল্প ভেবেই চলছিলাম কিন্তু আমবসসার চাঁদ যে সবসময় ঘোমটা টেনে থাকে শুধু তাই ভাবা হয়নি।
আমাকে ইতস্তত করে বলেই ফেললো,''যে ওর একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। যাকে নাকি অনেক ভালোবেসে ফেলেছে"। কিছুক্ষন থেমে আবার বললো,"রিয়াদ তুমি খুশি হওনি"। কিছু বিয়োগাত্তক বিকর্ষণ "হ্যাঁ" উত্তর হয়ে আমার কণ্ঠে ঝরে গেলো।
বাসায় ফিরে দেখলাম ছিঁচকাঁদুনে আমি অনেক অভিমানী। অভিমান এতই চেপে ধরেছিল তাকে জিজ্ঞেস না থাকতে পারলাম না।
আমি কেন না?
তোমাকে স্রেফ বন্ধু ভাবেই ভালোজানতাম, এখনো জানি আর এটা কি ধরনের কল্পনা তোমার? আর ভালোজানলে ভালোবাসা নাও হতে পারে, দুটো ভিন্ন।
--আমাকে ভালোবাসলেই বা কি হত?
--সবাইকে ভালোবাসা যায়না। তুমি আমার বন্ধু শুধুই বন্ধু। যাকে ভালোবাসা যায় তার জন্য ভেতর থেকেই আসে।
প্রচণ্ড ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম।
--হওনা আমার।
--তোমার লজ্জা নাই?
অভিমান সেও দেখালো। আমাকে ভুলে যাওয়ার কথা শুনালো। প্রত্যুত্তরে আবেগের প্রগাড়তা দেখিয়ে বললাম, কিইবা ভুলবে কাকেইবা ভোলাবে?
নিশি আজ বিবাহিত। আমি এখনো চলছি তবে থেমে থেমে। আজ কেনইবা আমার সাথে দেখা করল তাও জানা হলোনা। এখন ভাবছি আর কোনদিন জানা হবে না কিন্তু আগামীকাল যদি আজকের মত আবার দেখা হয়ে যায় তাহলে কি হবে? জানব?
নাকি আজকের মত আরও অজস্রবার আরও অনেক কিছু এমন অজানাই থেকে যাবে। নিশি এত আবেগ কারণ তোমাকে আমি এখনো ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৩