এই বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক সর্বশক্তিমান আল্লাহ পৃথিবীতে মানব জাতিকে প্রেরণের শুরু থেকেই নবী-রাসূলদের পরম্পরা চালু করেছেন, যাতে করে বিভ্রান্তির স্বভাবজাত কুফল থেকে মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে পারেন। সাথে সাথে তাদের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন মানবের জীবন চলার বিধি-বিধান; যার অনুসরণ করলে তিনি ওয়াদা করেছেন মানুষকে ফিরিয়ে নেবেন তাদের প্রথম বাসস্থান জান্নাতে, অন্যথায় প্রস্তুত রয়েছে জাহান্নাম। এই ধারার প্রথম নবী ছিলেন প্রথম মানুষ আদম 'আলাইহিস সালাম। নবুয়তের এই সত্য ও শান্তির পথে ইবলীস তার বাহিনী দিয়ে মিথ্যা দাবীর ধোঁয়া তুলতে পারে; এটা মহাজ্ঞানী আল্লাহর ভালভাবেই জানা ছিল। এজন্যই তিনি তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল বলেনঃ ((কেয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্তত্রিশজন দাজ্জাল বের হবে। তারা প্রত্যেকে নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করবে।))(আবু দাউদ, তিরমিযী) তাই আল্লাহ প্রথম নবীসহ প্রায় সবার কাছেই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী কে হবেন এবং তার কিছু কিছু গুণ-বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আগাম জানিয়ে দিয়েছেন। অন্য এক বর্ণনায় প্রিয় রাসূল বলেনঃ ((আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবে না।)) (আবু দাউদ, তিরমিযী)
প্রিয় রাসূলের সতর্কবাণী ও ভবিষ্যতবাণীর সত্যতা দেখেছে বিশ্ববাসী ইসলামের প্রথম শতাব্দীর প্রধান দাজ্জাল মুসাইলামাহ আল-কাজ্জাব এর নবুয়তীর দাবীর মাধ্যমে আর বর্তমানের চতুর্দশ শতাব্দীর দাজ্জাল গোলাম আহমাদের মাধ্যমে, যারা প্রত্যেকেই নিজেকে নবী দাবী করেছে। উপরোক্ত হাদীসের ভাস্যকে অধিকাংশ কাদিয়ানী (গোলাম আহমদকে যারা নবী বলে স্বীকার করে, এমন মুরতাদ ও সে মতবাদে নবদীক্ষিত) গোলাম আহমদের জন্য মেনে নিতে নারাজ, তাদের কথা হলো ত্রিশ জন শেষ হয়ে গেছে, তাই গোলাম এর অন্তর্ভুক্ত নয়। এর জবাবে প্রথমতঃ ((আমার পরে কোন নবী আসবে না)) -এ বাক্য কেয়ামত পর্যন্ত কার্যকর, তাই পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে আর কোন নবীর সম্ভাবনাই থাকছে না। দ্বিতীয়তঃ প্রখ্যাত মুসলিম মনীষী ইবনে হাজার এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এই হাদীসের দ্বারা রাসূলুল্লাহর পর নবুয়তের যে কোন দাবীদারই উদ্দেশ্য নয়। নবুয়তের দাবীদার তো অগণিত, এদের অধিকাংশই বিকৃত মস্তিস্ক ও অপ্রকৃতিস্থ। এই হাদীস দ্বারা এমন ভণ্ডনবীদের কথা বলা হয়েছে, যারা নবুয়তের দাবী করবে এবং মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।(ফাতহুল বারী-6ম খণ্ড, 455 পৃষ্ঠা) তাছাড়া, দাজ্জাল বলতেই মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তারকারী কাউকেই বুঝায় মূলতঃ। ধারাবাহিক এ আলোচনায় গোলাম আহমদের মিথ্যাচার ও ভণ্ডামীর কিছু বাস্তবতা ও পর্যালোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। সর্বশক্তিমানের নিকট তৌফিক কামনা করছি।
গোলাম আহমদের জন্ম 1839 খৃষ্টাব্দে পাঞ্জাবের অন্তর্গত কাদিয়ান নামক গ্রামে তৎকালীন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী সরকারের দয়ায় পুষ্ঠ কোন এক পরিবারে। তার পিতা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের একজন ছিল। ইংরেজদের দয়া-দাক্ষিণ্য এবং তাদের কাছ থেকে মান-সম্মান লাভ করাই ছিল যার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। গোলামের ভাস্যে- আমার পিতা গোলাম মতূর্জা ঐ সমস্ত লোকদের একজন ছিলেন, ইংরেজ সরকারের সাথে যাদের সুসম্পর্ক ও ভালবাসার বন্ধন ছিল এবং রাজদরবারে তার একটা আসন সংরক্ষিত ছিল। সে ইংরেজ সরকারকে সর্বোতভাবে সাহার্য করেছিল যখন তার স্বদেশী ও স্বধর্মীয় ভারতবাসীরা 1851 ইং সালে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। এমনকি সে নিজের পক্ষ থেকে পঞ্চাশজন সৈন্য ও পঞ্চাশটি ঘোড়া দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করে এবং সে তার সাধ্যাতীত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সেবা করেছে।(গোলাম আহমদ রচিত 'তোহফায়ে কায়সারিয়া'- পৃ 16) গোলাম যে বংশ পরম্পরায়ই ইংরেজদের সেবাদাস ছিল তা এ থেকেই প্রমাণিত।
শায়খ হাফেয এহসান এলাহী জহীর তার 'কাদিয়ানী মতবাদ' গ্রন্থে গোলাম আহমাদ সম্পর্কে বলেনঃ জন্মের পর লেখাপড়ার বয়সে পৌঁছলে সে অখ্যাত কিছু শিক্ষকের কাছে কতগুলো উর্দূ ও আরবী পুস্তক পড়ে এবং কিছু আইন বিদ্যাও শিখে। তারপর মাসিক মাত্র পনরটাকা বেতনে বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত শিয়ালকোট নামক শহরে চাকুরী নেয়। সে একটা মানসিক ভারসাম্যহীন প্রকৃতির লোক ছিল। এমনকি তার সম্পর্কে বলা হয় যে, তাকে ঘর থেকে চিনি আনার কথা বলা হলে সে চিনির বদলে লবন নিয়ে আসে। একান্ত নির্বুদ্ধিতা ও ভারসাম্যহীনতার কারণে সে পথিমধ্যে তা থেকে খেতে শুরু করে। লবন যখন তার গলায় পৌঁছে আটকে যায় তখন তার চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু নির্গত হয়। (তার পুত্র বশির আহমদ কর্তৃক লিখিত 'সিরাতুল মাহদী' নামক গ্রন্থ থেকে)
এতদ্ব্যতীত সে এত ভীরু ছিল যে, কখনো যুদ্ধ ও কুস্তিতে অংশ গ্রহণ করেনি। অথচ ঐ সময় ভদ্র পরিবারের সকলেই সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করত। একারণেই একদা সে একটা মোরগের বাচ্চা জবাই করতে গিয়ে তার আঙুল কেটে ফেলে এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে সে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে সরে পড়ে। কারণ, সে তার জীবনে কোন প্রাণী জবাই করেনি। ('সিরাতে মাহদী'- 2য় খণ্ড, 4র্থ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত প্রামাণ্য উদ্ধৃতি ও আলোচনায় পৃথিবীতে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোন নবী-রাসূলের আগমন ঘটবে না কেয়ামত পর্যন্ত; একথা সুস্পষ্ট। এবং দাজ্জালদের মিথ্যা নবুয়তীর দাবী ও তা দ্বারা মানব জাতিকে বিভ্রান্তকরণের প্রক্রিয়ায় গোলাম আহমদের মত মিথ্যাবাদীর পারিবারিক ঐতিহ্যে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের পদলেহন পরিস্কার হলো। এছাড়াও সকল নবীকেই শিক্ষা প্রদান করেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা, নবীরা পৃথিবীর কারো কাছ থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করেন না; এই ঐতিহ্যের পরিপন্থী গোলাম তারই মত অন্য মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এ এক বিরাট প্রমাণ এবং তার নির্বোধ সত্তা ও ভীরু মানসিকতাও নবুয়তীর এক চিরন্তন বিরূপ পন্থা।
(চলবে)
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ শায়খ হাফেয এহসান এলাহী জহীর এবং মুহাম্মাদ রকীবুদ্দিন হোসাইন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:৪৯