১। বাংলাদেশে খাদ্যের প্রক্রিয়াজাকরনের কালচার খুবই নাজুক এবং অস্বাস্থ্যসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় যারপর নাই নিন্ম মানের।
২। কৃষি পণ্যের বাজার বাজারঃ একটি কৃষি পন্যের অন্তত ৬ রকমের বাজার থাকা চাই-
ক। মৌসুমে দেশি ভোক্তার বাজার
খ। মৌসুমের বাইরে দেশি ভোক্তার বাজার
গ। মৌসুমে বিদেশি ভোক্তার বাজার
ঘ। মৌসুমের বাইরে বিদেশি ভোক্তার বাজার
ঙ। এই পণ্য জাত প্রসেসড ফুডের বাজার দেশে (যেমন ফলের ক্ষেত্রে ড্রাই ফ্রুট,জুস, জুস তৈরির নেক্টার)
চ। এই পণ্য জাত প্রসেসড ফুডের বাজার বিদেশে
এই ছয় রকমের বাজারের বাইরেও এই সময়ে অরগ্যানিক কৃষি পন্যের জন্যও এই ৬ টি প্যারালাল বাজার সৃষ্টি করা সম্ভভ। একজন কৃষককে মোট ১২ রকমের বাজারে তাঁর উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করনের সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এক অভাবনীয় মাত্রা যোগ হবে। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম কৃষি উৎপাদনকারী দেশ, কৃষিতে আমাদের অর্জন অবশ্যই অসামান্য। উৎপাদনের এই অর্জনকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরনে সঞ্চারিত করা গেলে সেটা হবে একটা টেকসই উন্নয়ন।
খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের কৃষককে প্রায় সব ফল ফলাদি ঠিক পাকার মুহুর্তেই বাজারে ছাড়তে হয়। এত বিপুল পরিমাণ আম জাম কাঁঠাল এত উচ্চ তাপমাত্রায় রাস্তার পাশের উত্তপ্ত পরিবেশ উঠিয়ে দিতে বাধ্য করে আমরা আমদের কৃষিকে বড্ড ভালনারেবল করে তুলেছি। অথচ মানসম্পন্ন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরনের মাধ্যমে এই চিত্র পাল্টে দেয়া যেত। একই চিত্র ইলিশের বেলায়ও। ধানের বেলাতেও। আরেকটা উদাহরণ, জুসের বাজারে পেয়ারার জুস দামি, কিন্তু মৌসুমের শেষে আমাদের পেয়ারা গরুতে খায়)।
একদিকে ফলন আন রেজিস্টার্ড, অন্যদিকে উৎপাদিত ফলন হারভেস্ট পরবর্তীতে অতি স্বল্প সময়ে চাষিকে বাজারে কম দামে ছাড়তে হচ্ছে। এর উপর রয়েছে প্রক্রিয়াজাত করনের অভাবে নষ্ট হওয়া। ট্রান্সপোর্টেশনের কারণে নষ্ট হওয়া। খাদ্যাভ্যাস টেকসই ও পুষ্টি নির্ভর না হওয়ায় আমাদের খাদ্যের অপচয় হচ্ছে ব্যাপক হারে। (এরও বাইরে রয়েছে বড়লোকের ঘরে এবং রেস্টুরেন্টে খাবার নষ্টের মহোৎসব।)
এই চিত্রের বাইরে আরো বেশ কয়েকটি চিত্র আছে-
৩। বড়লোকের জমির অনুতপাদশীলতা ও গরিবের ভূমিহীনতা উদ্ভূত কৃষি উৎপাদন ও শ্রমের অন্যমিত বিন্যাস।
৪। কৃষি শিক্ষা, উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের যে বরাদ্দ তার সমন্বয় হীনতা (কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ইন্সটিটুশন, বিরি, বারি, বিএডিসি)।
৫। বীজ, সার ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক কীট-পতঙ্গ-ফাঙ্গাস নাশন ব্যবহারে অরাজকতা।
৬। কৃষিতে মেশিনারি এবং টুলস ব্যবহারে অতিমাত্রায় পশ্চাৎ পরায়নতা।
৭। এক ফলনের অতি আধিক্য, অন্য ফলনের আমদানী নির্ভরতা।
৮। পানি ও সেচের চাহিদা অনির্নিত, পানি বান্ধব ফলনের চাহিদা তৈরি না করার বিপদ। ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মাটি ১৬ কোটি মানুষের চাহিদার তুলনায় ঢের বেশি খাদ্য উৎপাদনের চাপ নিয়েছে। এই মাটি আজ উৎপাদনের চাপে, দূষণে এবং অপব্যবস্থাপনায় বিপর্যস্ত। অন্যদিকে প্রান্তিক চাষির জীবন মান ও তাঁর উৎপাদন আজো আর্থিক নিরাপত্তাহীন।
কৃষির জ্ঞান, রিসার্চ, উৎপাদন, বাজার চাহিদার আলোকে সমন্বিত ও ডাইভার্স ফলন উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ইত্যাদিকে সমন্বিত করতে একটা সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় এগ্রিকালচার প্রমোশন জোন ভূমিক রাখতে পারে।
প্রাথমিক দিকে প্রতিটি বিভাগে ১টি এগ্রিকালচার প্রমোশন জোন করা যেতে পারে যা আমাদের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর চাহিদা মাফিক এক্সপান্ড করবে।
এগ্রি প্রমোশন জোন থাকলে আমাদের কৃষি এবং খাদ্য সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা সেখানে ট্রেনিং নিবেন, ফার্মারের সাথে লিংকেজ নিবেন, প্রোমোশন জোনের স্পেইস, মেশিনারি ও সেটআপ সময় সাপেক্ষে ভাড়া নিবেন এবং ক্রিয়েটিভ বিজনেস করবেন। আমাদের বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল এবং বিদেশে আমাদের এম্বাসি গুলো উনাদের বাজার তৈরিতে সাহায্য করবেন। খাদ্য রপ্তানি বেশ জটিল, এখানে ব্যাপক মান সংরক্ষণ, অতি উন্নত প্রসেসিং এবং মানসম্পন্ন প্যাকেজিং দরকার। এই কাজ গুলোতে কোয়ালিটি আনতে দরকার ফুড এন্ড এগ্রি প্রোমোশন জোন দরকার। এগ্রি প্রোমোশন জোন হতে পারে একটা সেন্ট্রাল কৃষি মেশিনারি ও টুলস হাউজ, যেখান থেকে প্রান্তিক কৃষক কনভেনিয়েন্টলি ও সস্তায় কৃষি সারঞ্জামাদি ভাড়া নিতে পারবেন। এগ্রি প্রমোশন একটা ইন্সটিটুশনাল ভ্যালূ তৈরি করবে যেখানে কৃষির এন্ড টু এন্ড সব ডোমেইন একে অপরকে হেল্প করবে এবং রিচ করবে। নলেজ, কমিউনিকেশন, প্রোডাকশন এবং প্রোমোশনের একটি পুর্নাঙ্গ ব্যবস্থাপনা হাউজ হয়ে উঠবে এগ্রি প্রোমোশন জোন।
ফাংশনালিটি এবং ১২টি এক্টিভিটি আমব্রেলাঃ
১ক। ইন হাউজ রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট, প্রাকৃতিক কৃষি জ্ঞান, চাষাবাদ পদ্ধতি, জৈব ব্যবস্থাপনা (বীজ সার সেচ বালাই)
১খ। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট)।
২। সরকারি রিসার্চ ইন্টারফেইসেস - BARI, BINA,BADC,IRRI, BRRI, SCA,BSRI,SRDI, BJRI, CDB, BARC, CDB,হর্টেক্স, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব ,বাকৃবির ভ্যাকসিন উৎপাদন ও গবেষণা, পার্বত্য কৃষি কেন্দ্র
৩। বেসরকারী কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, দেশি এবং বিদেশি কৃষি এনজিও সার ও বীজ বালাই নাশক বিপনন কোম্পানী
৪। কৃষক (মাঝারি ও বড় কৃষক) যাদের স্ট্রাকচারড খামার রয়েছে।
কৃষক এবং খামার উভয়ই- রেজিস্টার্ড
৫। ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষি- যাদের খামার নেই।
ক্ষুদ্র বা ছোট কৃষক
কৃষক রেজিস্টার্ড
৬। কৃষি বিপনন আধিদপ্তর, কৃষি তথ্য সার্ভিস,কৃষি মন্ত্রণালয় ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এদের স্থানীয় অফিস, খাদ্য অধিদপ্তর, দূর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালয়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়া আধিদপ্তর
৭। কৃষি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, প্রস্তাবিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং অন্যান্ন কৃষি বিনিয়োগ কারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান (সরকারী বেসরকারী)
৮। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড ইন্টারফেইস। বিদেশী ইনভেস্টর এবং ইনভেস্টর রিলেশন। ফরেন মার্কেট এন্ড ইনভেস্টর সার্চ। ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্ট এন্ড বিজনেস কমিউনিকেশন।
৯। টুলস , মেশিনারিজ, মেজারমেন্ট সফটওয়্যার, কোয়ালিটি কন্ট্রল টেকনোলজি এন্ড ডেটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট । কিউ ম্যানেজমেন্ট, জমি বরাদ্দ। টেস্ট, পাইলট, আবাদ ব্যবস্থাপনা।
১০। জৈব সার ও বীজ ব্যাংক, প্রাকৃতিক বালাই নাশক ব্যবস্থাপনা। রাসায়নিক সার এবং বীজ , মান সম্পন্ন কীটনাশক, সেচ ব্যবস্থাপনা , উপকরন ব্যবস্থাপনা। আধুনিক সার ব্যবস্থাপনা।
১১। APZ এর নিজস্ব আবাদি জমি , সমীক্ষা / টেস্ট ফিল্ড, স্থানীয় দের আবাদী জমি। দেশের প্রধান প্রধান ভূমি রূপ, নদি ও স্রোত ব্যবস্থার প্রোটোটাইপ নির্মান। টেস্ট পাইলট এবং আবাদের জন্য জমি বরাদ্দ ব্যবস্থা।
১২। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলঃ প্রসেস, বাজারজাত এবং অন্তর্জাতিক বাজার তৈরি।
জমির সুব্যবহার, চাহিদা ভিত্তিক ও সমন্বিত কৃষি উৎপাদন, কৃষকের শ্রম সহজীকরন, কৃষি গবেষণা, উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু সহিষ্ণুতা তৈরি, জৈব ও রাসায়নিক ব্যবস্থপনার বিন্যাস, আধুনিক ও টেকসই সার বীজ কীটনাশক ব্যবস্থপনা কৃষি উৎপাদন রেজিস্ট্রেশন, নূন্যতম কৃষি ফলন মূল্য ও উৎপাদন মূল্যে টেকসই ভর্তুকি, খাদ্য গুদাম ও প্রক্রিয়া জাতকরন, ফুড প্রসেসিং, প্যাকেজিং, নতুন জাত ইন্ট্রোডাকশন ও বীজের স্বত্ব দেশীয় অধিকারে রাখা, অর্গানিক সার্টিফিকেশন, যাবতীয় কৃষি রিসার্চ, গবাদি পশুর খাদ্য ও এন্টি বায়োটিক ব্যবস্থাপনা, কৃষি পণ্যের বিপণন এবং আন্তর্জাতিক বাজার খোঁজা- এইসব সমুদয় ফিল্ড-রিসার্স-বিপনন কাজকে এক আম্ব্রেলায় আনা এবং কৃষি ব্যবস্থাপনাকে এন্ড টু এন্ড ইফিশিয়েন্সি দেয়াই "এগ্রিকালচার প্রোমোশন জোনের" নেপথ্য ভাবনা।
(সংক্ষেপিত, উইং গুলোর কাজের পরিসর আলোচনায় আনা হচ্ছে না আপাতত! তবে মন্তব্যে আলোচনা করা যেতে পারে)।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৫