দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা কখনই স্বচ্চ ছিল না, এই মুহুর্তে এটা সবেচেয়ে অরাজকতা পূর্ণ। সরকারের উচ্চ পর্যায় চাইলে শুধু স্থানীয় নির্বাচন কিঞ্চিৎ স্বচ্চ হতে পারে তবে এটা ১০০% স্বচ্চ কখনই হয় না। কেন্দ্রীয় ক্ষমতার পালাবদল এর যোগ থাকলে বাংলাদেশে নির্বাচন এর আংশিক স্বচ্চতা ৩ টি এলেমেন্ট এর উপর নির্ভর করে-
১। নির্বাচন সময়কালীন কিংবা সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের শান্তি পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা।
২। ক্ষমতা পরিবর্তনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা।
৩। ভারতী স্বার্থ এবং আমেরিকার সম্মতি। (এই ২টির ক্রম রোটেট করেছে সম্প্রতি)।
তবে স্থানীয় নির্বাচনে যেখানে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার পালাবদল এর যোগ না থাকলে বাংলাদেশে নির্বাচন এর আংশিক স্বচ্চতা শুধু ১ টি এলেমেন্ট এর উপর নির্ভর করে-
৪। ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ এবং স্থানীয় রাজনীতি-ব্যবসা- চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রনে বল প্রয়োগের সর্ব গ্রাসী সন্ত্রাসের প্রয়োগ।
নির্বাচন কমিশন কখনই একদল সৎ স্বচ্চ এবং আইনের শাসন বুঝার এবং মানার ক্ষমতা সম্পন্ন প্রশাসন দিয়ে চালিত হয়নি। এরা দলীয় নিয়োগ প্রাপ্ত ক্ষমতার সুবাধাভোগী কিছু শকুন।
অর্থাৎ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন (কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয়) স্বচ্চ হবে কি, হবে না তার উপর নির্বাচন কমিশনের কোনই ভুমিকা নেই।
ফলে একটি আমূল নির্বাচনী সংস্কারের দরকার হয়ে পড়েছে।
যে কোন মূল্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব মুক্ত একটি "স্বাধীন নির্বাচন কমিশন" গড়তে হবে। যাতে ক্ষমতার লোকদের কিংবা বাইরের লোকের ইচ্ছা সময়মত নির্বাচন অনুষ্ঠান, অযোগ্য প্রার্থী বাতিলকরন এবং নির্বাচনী ফলে নূন্যতম কোন প্রভাব ফেলতে না পারে।
নির্বাচনী সংস্কার একটি বহুল চর্চার এবং বহু স্তর বাস্তবায়নের বিষয়। দুর্বিনীত রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের উপর দাঁড়িয়ে ভয়ঙ্করসব সামাজিক অপরাধ প্রবণ সমাজে এর বাস্তবায়ন যথেষ্ট কঠিন। তাই সঠিক কৌশল এবং কারিগরি বাস্তবায়ন এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে ইচ্ছা স্বত্তেও আলচ্য পক্ষ গুলো নির্বাচনের সঙ্ঘঠন এবং ফলে প্রভাব আনতে না পারে।
বিবদমান এবং কলহপূর্ণ রাজনৈতিক কালচারের দেশে, ভয়ঙ্কর সব নির্বাচনী অপরাধের দেশে শান্তি পূর্ন ক্ষমতা হস্তান্তর অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্তিতাবস্থা, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পুর্বশর্ত। আফ্রিকা সহ বিশ্বের বহু দেশ এবং বাংলাদেশ নিজে এর জ্বলন্ত প্রমান। দুটি চোরের মাঝে একজনকে বেঁছে নিতে ও বহু বার এই একই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক খুব ক্লান্ত। আমরা জেনেছি সর্বশেষ ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া চোরটি সবসময়ই বহুগুনে প্রবল পরাক্রান্ত হয়ে রাষ্ট্র লূটে আবির্ভূত হয়। তাই অপেক্ষাকৃত ছোটটিকে বেঁছে নিবার এই লজ্জাকর খেলার সমাপ্তি দরকার। দরকার একটি মৌলিক পরিবর্তন।
ভোট গ্রহন পদ্ধতির সংস্কার
টেকসই ভোট গ্রহন পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। প্রসাশনের কাছে প্রায় শতভাগ নাগরিকের ডেটা আছে, আছে এড্রেস, ন্যাশনাল আইডি, এমনকি বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট।
১। কমিশন ব্যালট পেপার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দিবে, গোপনীয় সীল গালায়, সরকারি পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে, সাথে প্রার্থীর যোগ্যতা এবং পরিচিতি থাকবে। নগরিক নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ঘরেই সীল দিয়ে ভোট কেন্দ্রে শুধু খামে ভরা ব্যালট জমা দিবে!
কেন্দ্র সন্ত্রাস কবলিত হলে তার বিকল্প থকবে (পোষ্ট অফিস, কিংবা ইউপি অফিস কিংবা টিএনো অফিস কিংবা বিকল্প কেন্দ্র), যেখানে আগেই সীল দিয়ে ফেলা ব্যালট গোপনীয়তার সাথে গ্রহন করা হবে।
২। পরবর্তি স্টেইজে এসে এর বাইরে, পাস কোড সহ মোবাইলে ভোটিং এর অপশন আসবে (পাস কোড মোবাইল ভিন্ন অন্য মাধ্যমে সংগ্রহের ব্যাপারও আনা যায় দ্বৌত নিরাপত্তা যুক্ত করতে),যা হবে ফ্রি, আগাম ভোটিং এবং অনলাইন ভোটের মত বিষয় গুলো (সেখানে ইমেইল এবং পাস কোড (ডাক যোগে) ভেরিফিকেশনের বিষয় বাধ্যতামূলক থাকবে)।
অর্থাৎ দুর্বল পক্ষের প্রিজাইডিং অফিসার বের করে দেয়া, ব্যালট ছিনতাই, ভোট বক্স ছিতাই, আগের রাতেই সীল মেরে বক্স ভরার দুর্বিত্ত কাজগুলোর স্কোপই ক্লোজ করে দিতে হবে, নাইলে টেকসই ভোট গ্রহন পদ্ধতি প্রবর্তন করা যাবে না।
তবে ব্যালট প্যাপার খুব বেশি আগে পাঠালে, কিংবা মোবাইল ভোটিং অথবা ই-মেইলের পাস কোড ডাক যোগে খুব বেশি আগে পাঠালে ভোট বিক্রি নগদ হয়ে উঠতে পারে, তাই এই কাজ নূন্যতম সময় আগে করা যায়। অর্থাৎ নির্বাচনী প্রচারণা অফিশিয়ালি বন্ধের ঠিক পর স্থানীয় পোষ্ট ব্যালট এবং পাস কোড ভেরিফিকেশনের চিঠি নির্বাচনের ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে বিলি শুরু করবে।
৩।
পরবর্তি স্টেইজে এসে এর বাইরে, অগ্রিম পোষ্টে ব্যালট পেপার সেন্ড করার অপশন দিতে হবে যা হবে ফ্রি এবং অনলাইন ভোটের মত বিষয় গুলো (তবে সেখানে ইমেইল এবং পাস কোড ভেরিফিকেশনের বিষয় বাধ্যতামূলক থাকবে)।
৪।
পাশাপাশি বিবেচনায় আসবে দেশের অর্থনীতির প্রাণ ভোমরা প্রবাসীদের ভোটাদিকার। সিকিউরড পাস কোড নিয়ন্ত্রিত ই-মেইল ভোটিং কিংবা আগেই রেজিস্ট্রেশন সাপেক্ষে ডাক মারফতের ব্যালট পাঠিয়ে এটা সহজেই বাস্তবায়ন যোগ্য।
অর্থাৎ দুর্বল পক্ষের প্রিজাইডিং অফিসার বের করে দেয়া, ব্যালট ছিনতাই, ভোট বক্স ছিতাই, আগের রাতেই সীল মেরে বক্স ভরার দুর্বিত্ত কাজগুলোর গলা টিপে ধরা অটোমেশন বাস্তবায়ন করতে হবে, নাইলে টেকসই ভোট গ্রহন পদ্ধতি প্রবর্তন করা অধরাই থেকে যাবে।
৫।
প্রার্থিরা নিজেরা কোন ধরনের পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার কিংবা দেয়াল লিখন করতে পারবে না। শুধু গনংসংযোগ করতে পারবে, এর ভিত্তি হবে ২ টা-
(ক) নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া নির্বাচনী মেনিফেস্ট/অঙ্গীকার।
(খ) নির্বাচন কমিশনের পাবলিশ করা প্রার্থী পরিচিতি।
এর বাইরে কোন ধরনের আন-অথরাইজড তথ্য সংবলিত পোস্টার, লিফলেট গণসংযোগে ব্যবহার করা যাবে না।
শুধু পত্রিকায় এড দিতে পারবে যার বিপরীতে তার আর্থিক উৎস চেক করা যাবে।
অর্থাৎ
চাঁদাবাজির টাকায় অথবা অবৈধ উপার্জনে ঘুষ, অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনা এমনকি কাগজ/পরিবেশ ধ্বংসের শেইমফুল এবং মিথ্যায় ভরা প্রচারণার টুঁটি চেপে ধরতে হবে কৌশলে এবং সিস্টেমেটিক অটোমেশনে।
৬।
বিগত বছর গুলোতে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে ট্রায়াল হয়েছে)। দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশে এটা গর্ব করার মত আবিস্কার আমাদের তরুন প্রকৌশলীদের।
কিন্তু সমস্যা হোল এটা আসলে উন্নত দেশের জন্য খুব ভালো কাজ করবে যেখানে বল প্রয়োগে অন্যের ভোট জোর করে দিয়ে দিবার মত অপরাধ ঘটে না। আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা নির্বাচনের পূর্ব রাতে ভোটার নম্বর ধরে ধরে ইলেকট্রনিক ভোট দিয়ে দিবার গুরু দায়িত্ব নিজেরাই খুব দ্রুত সেরে নিবে। এটা ব্যালট সিলের মত না তাই সাংবাদিকরাও রিপোর্ট করার রেফারেন্স খুঁজে পাবেন না।
তবে, যদি ইভিএম এ ইন্ডিভিজুয়াল ভোটার আইডেন্টিটি সংযোগ করা যায় তাহলে কিছু কাজ হতে পারে। আইডেন্টিটী ২ টা হতে পারে, একটা হোল প্রত্যেক ভোটারের পাস কোড যা গোপোন চিঠিতে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে, অন্যটা হোল বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যক্তি ভোটার কোন মার্কায় ভোট দিয়েছেন তা বের করে ফেলা যাবে ভোট পরবর্তিতে যদি না আইডেন্টিটির বিপরীতে প্রদত্ত ভোটের ম্যাপিং সিস্টেমে জমা না করা হয় (সেভাবে সিস্টেম সফটওয়্যার ডিজাইন করা লাগবে)। তবে এটা নাগরিক নিরাপত্তায় একটি খুব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার।
আইডেন্টিটির বিপরীতে প্রদত্ত ভোটের ম্যাপিং সিস্টেমে জমা না করার
অসুবিধা হোল- ভোট চলার সময়ে ইভিএম হ্যাং করলে ইতিমধ্যেই প্রদত্ত ভোটের হিসাব পাওয়া ঝামেলার হবে কিংবা ভোট রি কাউন্টে সমস্যা হবে। আসলে প্রশাসন নাগরিকের ডেটা সিকিউরিটির সর্বোচ্চ গপোনীয়তা এবং নিরাপত্তা না দিলে অপরাধ প্রবণ এবং দুর্বিত্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির দেশে ইলেকট্রনিক ভোটের মত অত্যাধুনিক সিস্টেমও খুবই বিপদের। এটা বড়ই লজ্জার!
৭।
নির্বাচনে "না" ভোটের বিধান থাকবে এমনভাবে থাকবে যাতে তিন ভাগের এক ভাগ ভোটার "না" ভোট দিলে সকল প্রার্থী কে অযোগ্য ঘোষণা করে নতুন প্রার্থীতে নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে। চোর ও লুন্ঠনকারী হটানোর জন্য এই পদ্ধতি সমালোচনা সত্ত্বেও গ্রহন করতে হবে।
ভোট গ্রহন পদ্ধতির সংস্কার ছাড়াও আরো কিছু টার্গেট সেট নিয়ে কাজ করতে হবে-
১। চোর চাঁদাবাজ ঋণ খালাপী লোকের সুযোগ বন্ধ করা। শিক্ষা গত যোগ্যতাকে সর্ব নিন্ম স্নাতক করা। সর্বোচ্চ ২ বার নির্বাচন করার রীতি।
২। সাবেকদের বেলায় নির্বাচনী ওয়াদা্র অন্তত ৭৫% বাস্তবায়ন সাপেক্ষে পুনঃ মনোয়ন দেয়ার বিধান।
৩। সংসদে শুধু ব্যবসায়ী এবং সার্টিফেকেট ধারী আইন পেশার লোকে না ভরে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা এবং বিষয়ের সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট সমন্বিত করে দলীয় মনোনয়ন দান বাধ্য করা। আইন কমিশনই যেহেতু আসল আইন প্রণেতা তাই সেখানেও প্রতিটি প্রফেশনের সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের ডিরেক্ট ইন্টারফেইস তৈরি করা।
৪। সংসদের কার্যপ্রনালী বিধির আমূল সংস্কার যাতে ক্ষমতা হীন রাষ্ট্রপতির পাতানো ভাষণের উপর বক্তব্যের মত অর্থহীন আলোচনায় কোটি কোটি টাকা খরচ না হয়। বরং নির্বাচিত দলের মেনিফেস্টো, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং আন্ত ডিপার্ট্মেন্টাল সংযোগ নিয়েই যাতে ৭৫% আলোচনা হয় তার বিধান।
৫। রাষ্ট্রপতি সংসদে গয়ে নির্বাচনি মেনিফেস্টোর বাস্তবায়ন নিয়ে
প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্যতামূলক আহ্বান জানাবেন এবং বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানাবেন।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়াক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
রেফারেন্সঃ লিখকের কন্সেপচূয়াল আর্টিক্যাল
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৪৮