অধ্যায়-১ঃ নগর ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতটা গুরুত্ব পুর্ন?
নগর ব্যবস্থাপনায় মোটা দাগের সমস্যা গুলোর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। অল্প সংখ্যক উন্নয়নশীল দেশ ছাড়া এই চেলেঞ্জকে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করছে বহু দশক আগে থেকেই, কিছু ব্যতিক্রম, দায়িত্ব হীনতা এবং অবহেলা ছাড়া। নগরীর নান্দনিক পরিবেশ বজায়ের বাধ্যবাধকতাতো রয়েছে বটেই, সেই সাথে দূরদৃষ্টি এবং সমন্বিত সম্পন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রয়োজন আরো কয়েকটি অতন্ত্য ক্রিটিক্যাল কারনে-
ক। একটি শহর, শহরের পার্শবর্তী এলাকা সমূহের জীবাণু চক্র নিয়ন্ত্রণ ।
(মূলত ফাঙ্গাল, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল জার্ম সাইকেল নিয়ন্ত্রণ। ব্যক্টেরিয়াল ব্যাধি, ক্যান্সার ইত্যাদি মরন ঘাতী রোগ বালাই প্রতিকার এবং প্রতিরোধ কে সামনে রেখে এই ব্যবস্থাপনার কর্ম পরিধি সাজানো প্রয়োজন।
এখানে বলে রাখা প্রাসঙ্গিক যে,
-ক্রমবর্ধমান ভাবে উচ্চ মাত্রার এন্টি ব্যক্টেরিয়াল (এন্টি বায়োটিক) ঔষধ প্রয়োগে ফলহীনতা ( এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স)
-শহরে হার্ট এটাক সহ প্রাণঘাতী রোগের ঝোঁকের অতি উচ্চ বৃদ্ধি,
-ক্যান্সারের ব্যাপক প্রসার
-শিশু রোগের ব্যপকতা সহ রেড এলার্মিং স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয় গুলোকে কোন ক্রমেই আর বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান পৃথিবীর হাজার হাজার শহরের মধ্যে একেবারেই তলানীতে, সম্ভবত দূষণের দিক থেকে আমাদের প্রিয় শহর গত এক দশকে সর্ব নিন্ম তিনটি শহরের মধ্যেই থাকছে, দূষিত এবং কলুষিত শহরে যুগের পর যুগ বসবাসের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি নিয়ে আমাদের নাগরিক ভাবনা গভীর করতে হবে। উত্তরনের জন্য পলিটিক্যাল গুড উইল তৈরির বুদ্ধিবৃত্তিক চাপ অগ্রসর নাগরিককেই করতে হবে।
ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল জীবাণু ছড়িয়ে যাবার বিপর্জয়ের ঝুঁকিতে আছি আমরা যা “ব্যাকটেরিয়াল রেজিস্ট্যান্স” গ্রো করছে। ব্যাকটেরিয়াল জার্ম গুলোর বিস্তার আনকন্ট্রোল্ড নিউক্লিয়ার ফিউশনের মত চেইন রিয়েকশন, তবে এদের কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাংলাদেশের জীবাণু চক্রে কি কি অনিয়ন্ত্রিত ব্যাকটেরিয়াল চেইন আছে তা বের করে আনা দরকার, আমার ধারনা এন্টি বায়োটিক তৈরির কোম্পানিগুলোর হাতে এই তথ্য আছে, এগুলো শিক্ষিত নাগরিক এবং জেনেরাল প্র্যাক্টিশনার লেভেল নিয়ে আসা দরকার। এমনকি আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরির প্রসেসেও স্ট্যাবল জার্ম সাইকেল মেইন্টেইন করতে পারা আবর্জনা গুলোকেই শুধু বিবেচনা করা দরকার।
খ। নদী দূষণ মুক্ত রেখে পুরো খাদ্য চক্রকে (সাধু পানির মাছ, অন্যান্য ইনল্যান্ড ওয়াটার এর প্রান চক্র) বিষাক্ত তার হাত থেকে রক্ষা (প্রতিকার এবং প্রতিরোধ)।
গ। ভু-গর্ভস্ত সুপেয় পানির গভীরতা কে রাষ্ট্রের এবং দরিদ্র জনসমষ্টির উত্তোলন কিংবা পিউরিফিকেশন সাধ্যের নিয়ন্ত্রনে রাখা।
ঘ। উন্মুক্ত এবং প্রবাহিত জলীয় (পুকুর, খাল, বিল, নদীর) উৎসের পানিকে রিসাইকেল এবল রাখার বাধ্যবাধকতা।
(নচেৎ সামনে ভয়াবহ বিপর্জয় অপেক্ষা করছে, একদিকে- ঢাকার পার্শ্ব বর্তী নদীগুলোর এতটাই দূষিত যে তা রিসাইকেল সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এক দশক আগে বুড়িগঙ্গা এই সক্ষমতা হারিয়েছিল, এখন বৃহৎ নদী শীতলক্ষ্যার পানিও পিউরিফিকেশন এবিলিটির বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে- ঢাকা এবং পার্শ্ব বর্তী এলাকার ভূগর্ভস্ত সুপেয় পানির গভীরতা আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।)
ঙ। কৃষি ভূমির অণুজীব চক্র কে ভেঙ্গে ফেলার হাত থেকে রক্ষা, অতি দীর্ঘ মেয়াদে জমির উর্বরতা রক্ষা।
চ। আবর্জনার সমন্বিত এবং ক্লাসিফাইড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করে জৈব সার তৈরির (এমনকি ওয়েস্ট ল্যান্ডফিল গ্যাস তৈরির ইকনোমিক প্রকল্প) প্রকল্প হাতে নিয়ে দেশে ওরগ্যানিক চাষাবাদের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা।
জনপ্রতি পলিথিন ব্যবহারের একটা সার্ভে করে উচ্চ মাত্রার নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে পলিথিন ব্যবহার। বাংলাদেশের জল এবং স্থল নষ্ট করার হেতু পলিথিন। বিপরীতে গ্রীন ব্যাগ (রিসাইকেল্ড পেপার এবং পাটের) ব্যবহার বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার। যদিও পাটের ব্যাগ ব্যাবহারের বহু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেসব কেন কাজ করছে না তা বের করে এনে ফলপ্রসূ নীতিমাল বের করে আনতে হবে। ক্লাসিফাইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে পলিথিন নিয়ন্ত্রণ বিশেষ গুরুত্বসহ বিবেচনায় রাখতে হবে।
নগর সমূহই বর্জ্য (ইন্ডাস্ট্রিয়াল, টক্সিক, ক্যামিক্যাল, হোম, আরবান, হিউম্যান ওয়েস্ট ) তৈরির প্রধান কারখানা। উপরোক্ত বিষয় সমূহ তাই নগর ব্যবস্থাপনার ইন্টেলেকচুয়াল ডিজাইন এবং ইমপ্লিমেন্টেশন স্কোপে এনে কর্ম পরিকল্পনা সাজানো বাধ্যতামূলক। মৌসুমী বারিপাত মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের বেসিকেই গলদ। জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রন করার জন্য হলেও একটি কার্জকর বর্জ্য এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা দরকার। ঢাকার বর্জ্যের চরম অব্যবস্থাপনা শহরের ভিতরে জীবানু সংক্রামণ করে স্বাস্থ্যগত বিপর্জয় ডেকে আনতে পারে (ইতিমধ্যেই ঢাকার ব্যাপক সংখ্যক কাক এবং চড়ুই পাখি বিষ চক্রে ধ্বংস হতে বসেছে)। অতি দরকার হয়ে পড়েছে ড্রেনেজ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সমন্বিত করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা।
অধ্যায়-২ঃ মেগা সিটি ম্যানেজমেন্টঃ নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
উৎস অনুসারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ক্লাসিফাই করে এর সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার পৃথক এবং সমন্বিত মডেল সাজাতে হবে।
১।-গ্রিহস্থলীর পচনশীল বর্জ্য, ২।-গ্রিহস্থলীর অপচনশীল বর্জ্য,.৩।-সুয়েজ বর্জ্য, ৪।-পলিমার বর্জ্য (রিসাইকেল করতে হবে) ৫। -পেট বোতল, প্লাস্টিক ওয়েস্ট ৬।-ওয়েস্ট বেইজড রিনিউএবল এনার্জি প্ল্যান্ট এন্ড প্রসেসিং, ৭।-কাগজ এবং সমজাতীয় বর্জ্য (রিসাইকেল এবল) ৮।-রিসাইকেল এবল ইলেকট্রিক বর্জ্য এবং ব্যাটারী (রিসাইকেল করতে হবে) ৯। -নন রিসাইকেল এবল ইলেকট্রিক বর্জ্য ১০। -রিসাইকেল এবল ম্যাকানিকেল এবং অটোমোবাইল বর্জ্য ১১। -শিল্প বর্জ্য (ইন্ডাস্ট্রিয়াল হ্যাজার্ড ১২। -কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য (কেমিক্যাল হ্যাজার্ড) ১৩। -গার্মেন্টস বর্জ্য (ডাইয়িং এবং জুট সহ সকল গার্মেন্টস হ্যাজার্ড) ১৪। -হাট বাজার এর বর্জ্য এবং মিট প্রসেসিং হ্যাজার্ড ১৫। -রাস্তার ধূলি বালি এবং ভাসমান বর্জ্য ১৬। -নির্মান শিল্পের বর্জ্য ( কন্সট্রাকশন হ্যাজার্ড), ১৭। মেটালিক বর্জ্য ইত্যাদি ইত্যাদি সর্বোপরি ১৭। হিউম্যান ওয়েস্ট।
উন্মুক্ত ট্রাকে করে ময়লা রাস্তার ধারে ময়লা জড়ো করে অথবা নব নির্মিত ওয়েস্ট স্টোরেজ সেন্টারে আন ক্ল্যাসিফাইড ময়লা একত্রীত করা নির্ভর ঢাকা সিটি করপোররেশনের ময়লা পরিষ্কারের বর্তমান মডেল সম্পূর্ন বিলোপ করতে হবে। বিপরীতে কয়েকটি ধাপে সংগ্রহ করে ময়লা নির্দিস্ট রি-সাইকেল চেইনে সাপ্ল্যাই দিতে হবে কিংবা প্রসেসিং সেন্টারে নিতে হবে -
ক। ক্ল্যাসিফাইড পচনশীল ময়লাঃ নির্দিস্ট ব্যাগ/“বিন ব্যাগ” করে বদ্ধ কালেকশন করতে হবে। বর্জ্য ভেদে পচনশীল ময়লার পৃথক পৃথক ব্যাগ থাকতে পারে (প্রথম দিকে একটি সাধারণ ব্যাগ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে) যা সিটি কর্পোরেশন বিপণন করবে ,ব্যাগের দামের সাথে প্রসেসিং ফি এড করা থাকবে। এই ব্যাগ ছাড়া ময়লা বাসা দোকান অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা নির্মান সাইট থেকে কোন ময়লা বের হবে না। নিয়ম ভঙ্গকারী উচ্চ আর্থিক পেনাল্টিতে আসবে।
সিটির লোকের সপ্তাহে নির্দিস্ট দিনে বদ্ধ ব্যাগ সংগ্রহ করবে, তবে মাঝে মাঝে র্যান্ডোম চেক করবে। নিয়ম ভঙ্গকারী আর্থিক পেনাল্টিতে আসবে।
পচনশীল ময়লা উৎস থেকেই ক্লাসিফাইড না হলে এবং এর সংগ্রহ সমন্বিত ও নিয়ন্ত্রিত না হলে এই খাতে জৈব সার, বায়োগ্যা্ ল্যান্ড ওয়েস্ট ফিল গ্যাস ইত্যাদি প্রডাক্টিভ বেসরকারি ইনভেস্ট আনা যাবে না। এই শিল্পের কাঁচামালের জোগান এবং ময়লার ডোর টু ডোর সংগ্রহ পদ্ধতিকে সংস্কার না করে শিল্প ইনভেস্টরের উপর ছেড়ে দিয়ে বছরের পর পছর এই খাতে বিনিয়োগের আহ্বান কোন ফল আনবে না।
পচনশীল সলিড ওয়েস্ট “বায়ো স্ট্যাবিলাইজেশন হল” ভিত্তিক ম্যানেজমেন্টে নিয়ে আসতে হবে। এতে ভয়ংকর ভাবে অনিয়ন্ত্রিত জার্ম সাইকেল নিয়ন্ত্রনের মধ্যে আসতে পারে কিছুটা। ব্যাকটেরিয়াল রেজিস্ট্যান্স গ্রোথকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে এই পদ্ধতি। উল্লেখ্য আন স্ট্যাবল ব্যাক্টেরিয়াল জার্ম বিশিষ্ট পচনশীল বর্জ্য জৈব সার প্রস্তুতে ব্যবহার করা বিপর্জয়কর।
বর্তমানে পচনশীল ময়লার কোন রিপ্রসেস হচ্ছে না বরং কয়েক স্টেজে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে স্থান্তারিত হয়ে এই ময়লা নগরের কিছু উন্মুক্ত স্থান, ড্রেন এবং ফাইনালি নদীতে যাচ্ছে। আমাদের পরিবেশ এবং পানি নষ্ট করছে। পাখি এবং কুকুর বিড়াল তা খাচ্ছে তবে ক্যামিক্যাল আগ্রাসন, খাদ্য বিষক্রিয়া, আন স্ট্যাবল ব্যাক্টেরিয়াল এটাকের শিকার হয়ে মারাও পড়ছে।
বড় আবাসিক কম্পাউন্ড , ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান পাট, বাজার এবং সকল অফিস আদালতের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে যা সিটির কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সমন্বিত থাকবে। সুনির্দিস্ট ব্যাগে ভিন্ন ভিন্ন ময়লা সংগ্রহের বিধান চালূ করতে হবে।
সত্যিকার অর্থে সিটি কর্পরেশন এর সহযোগী হিসেবে একটি আলাদা স্বাধীন "ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট" প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই ভবিষ্যৎ ওরিয়েন্টেড। বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান পাট, বাজার, সকল অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, ম্যানুফেকচারিং প্ল্যান্ট, ওয়াশিং প্ল্যান্ট, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, গার্মেন্টস, কনস্ট্রাকশন সাইট ইত্যাদির জন্য বর্জ্যের প্রকার অনুযায়ী পৃথক পৃথক মডেলের ডাস্টবিন বা ময়লার ব্যাগ ডিজাইন করতে হবে, ব্যবহার বাধ্য করতে হবে। এতে রিসাইক্লিং সহজতর হবে।
খ। ক্ল্যাসিফাইড অপচনশীল ময়লাঃ প্রতিটি এলাকায় নন পচনশীল ময়লার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড ডাম্পিং কন্টেইনার স্থাপন করতে হবে যার উপরি ভাগ সরু ও বদ্ধ কিংতু ভূগর্ভস্ত ভাগ স্পেসিয়াস হবে, এখানে ক্ল্যাসিফাইড ময়লাই শুধু ভিন্ন ভিন্ন কন্টেইনারে ফেলা যাবে যা ফ্রি। এখানে ক্যামিক্যাল হ্যাজার্ড কিংবা ব্যাটারির জন্য আলাদা কন্টেইনার থাকতে পারে। এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন না করা গেলে অপচনশীল ময়লার (কাগজ, পেপার কন্টেইনার, কাঁচ, প্লাস্টিক, কন্সট্রাকশন ডেব্রি, ব্যাটারি, ইলেক্ট্রনিক ওয়েস্ট ইত্যাদি) জন্যও আলাদা আলাদা রিসাইকেলএবল ব্যাগ অথবা চাকা যুক্ত মোবাইল প্ল্যাস্টিক কন্টেইনার এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে শেষোক্ত পদ্ধতিতে বেশি হপে সংগ্রহের ঝামেলা তৈরি হবে।
ব্যাপক ধারন ক্ষমতার ভূগর্ভস্ত ক্ল্যাসিফাইড ময়ালার কালেকশন সেন্টার। ঢাকার রাস্তার সারফেইস স্পেইস কম থাকায়, আমাদের রাস্তার উপযোগী মডেলে ডিজাইন করে এরকম কালেকশন সেন্টার করা যেতে পারে। পুর্ণ হওয়া সাপেক্ষে / সপ্তাহে নির্দিস্ট সংখ্যক দিনে ক্রেইন টাইপের ট্রাক এসে পুরো কনটেইনার তুলে নিয়ে এম্পটি কনটেইনার রিপ্লেইস করে যাবে।
ময়লার ক্ল্যাসিফিকেশন এবং "রি-ইউজ" "রি-সাইকেল""রিডিউস" কন্সেপ্ট নাগরিকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াঃ পচনশীল, অপচনশীল ক্ল্যাসিফাইড ময়লা সম্পর্কে সিটি ম্যানেজমেন্ট নাগরিককে সচেতন করতে টিভি প্রমোশনে যাবে। এখানে সরকার ময়লা ব্যবস্থাপনার "ওয়েস্ট রি-ইউজ" "ওয়েস্ট রি-সাইকেল" এবং "ওয়েস্ট রিডিউস" কন্সেপ্ট জনগণকে বুঝাবে, এই শিক্ষা প্রাইমারি স্কুলে দেয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার।
ময়লা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান বাচ্চাদের মাঝে নিয়ে আসতে হবে, পারিবারিক এবং প্রাইমারি শিক্ষার স্তরেই!
গ। বাজার গুলোর জন্য বিশেষ ওয়েস্ট ডাম্পিংঃ পচনশীল এবং অপচনশীল উভয় পদ্ধতির সুবিধা রেখে বাজার গুলোর ময়লা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। কুরবানির পশু জবাইকে বাসা বাড়ি থেকে সরিয়ে বাজার ভিত্তিক কিংবা আংশিক ভাবে খামার ভিত্তিক করা যায় কিনা সেটা নিয়ে নেয়া পরিকল্পনা ম্যাচিউর করতে হবে। তবে পশু জবাই স্কুল মাঠ কেন্দ্রিক করা যাবে না কোনভাবেই, এতে জীবাণু সংক্রমণে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য গত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
ঘ। জনপ্রতি পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রন, গ্রামীণ ভূমিতে পলিথিনের পেনিট্রেশন এবং পতঙ্গ প্রতিরোধের স্বাভাবিক ইকোসাইকেল
একটা সার্ভে করে বর্তমান মাথা পিছু ব্যবহার বের করে কঠিন টার্গেট সেট করে উচ্চ মাত্রার নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে পলিথিন ব্যবহার।
নতুন ইউরোপিয়ান আইনে থেকে ৫০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা মোড়ক এবং পলি ব্যাগের ব্যবহার ২০১৯ এর মধ্যে বছরে জনপ্রতি ৯০টি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে তা ৪০ এ নামিয়ে আনার টার্গেট সেট করা হয়েছে। পহেলা জানুয়ারি ২০১৬ থেকে সকল দোকান পাটে ফ্রি পলি ব্যাগ সাপ্লাই বাধ্যতামূলক ভাবে বন্ধ করে ব্যাগ প্রতি ১০ থেকে ২০ সেন্ট (১০ থেকে ২০ টাকা!) দাম নির্ধারন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আমরা একদিন বাজারে গেলেই আনুমানিক ২০টি পলি ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরি! এর বাইরে প্রসেসড পণ্যের প্রায় শত ভাগ প্লাস্টিক পট/ব্যাগ/সাচেট এ মোড়ানো। তার উপর রয়েছে অবারিত লুজ পলি নেয়ার সুযোগ। গ্রামে দোকান গুলোর চিত্রও একই।
বিপরীতে গ্রীন ব্যাগ (রিসাইকেল্ড পেপার এবং পাটের) ব্যবহার বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার। যদিও পাটের ব্যাগ ব্যাবহারের বহু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেসব কেন কাজ করছে না তা বের করে এনে দুর্নীতি প্রতিরোধী ফলপ্রসূ নীতিমালা এবং শুধু মাত্র ব্যবহার সাপেক্ষে ঠিক জায়গায় প্রণোদনা দিয়ে পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে হবে। প্যাকেজিং সহ পলিব্যাগের দাম আতিমাত্রায় বৃদ্ধির যত সম্ভব পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
বাজারে বিক্রি করা কাগজের রিসাইকেল সোর্স কি পরিমান তা সার্ভে করে বের করে আনা দরকার, এই খাত কেন বাংলাদেশে আনেক্সপ্লোরড তা নিয়ে ভাবনা বাড়ানো দরকার। পণ্যের মোড়কে রিসাইকেল্ড কাগুজে ব্যাগ অবশ্যই জনপ্রিয় করতে হবে। পাশাপাশি পাটের ব্যাগ তো ভারি পণ্যের মড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলক করতেই হবে।
ক্লাসিফাইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে পলিথিন নিয়ন্ত্রণ বিশেষ গুরুত্বসহ বিবেচনায় রাখতে হবে। বর্তমানে বেসরকারি খাত পলিথিন রিসাইকেলে নেতৃত্ব দিচ্ছে তবে এই পদ্ধতি টেকসই নয়, এটা শুধু মাত্র বড় শহর কেন্দ্রিক, এখানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, এই খাতে স্কুল গামী বয়সের ছোট বাচ্চারা কাজ করছে ক্ষুধার জ্বালায়।
অন্যদিকে গ্রামে গঞ্জে পলিথিন রিসাইকেল একেবারেই নেই। শহুরে পলি ব্যাগের যে অংশ পানি বাহিত হয়ে ড্রেন এবং নদীতে যাচ্ছে তার ফাইনাল ডেস্টিনেশন আমাদের কৃষি ভুমি। একটি স্ট্যাডিতে দেখেছি এই পলি কচ্ছপের বিনাশে ভূমিকা রাখছে যা সাপ-ব্যাঙ-পতঙ্গের ইকো সাইকেল নষ্ট করে পতঙ্গ বাড়াচ্ছে, আদতে কৃষি উৎপাদনের মূল্য বাড়াতে পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে চাষের জমিতে পলিথিনের উৎপাত আবাদেও শ্রম ঘন্টা বাড়াচ্ছে, জমি অনুর্বর করছে। এটা আমাদের কৃষি ভূমির জন্য আশনি সংকেত।
ভারত এবং বাংলাদেশের অশোধিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্যের বাইরে আমাদের জল এবং স্থল নষ্ট করার অন্যতম হেতু পলিথিন।
চ। নতুন পলিথিন উৎপাদনকে শত ভাগ রিসাইকেল বেইজড করতে বাধ্য করতে হবে। অর্থাৎ ১০০% নতুন পলিথিন ১০০% পুরানো পলিথিন থেকে আস্তে হবে। নতুন পলিমার কাঁচামাল দেশে ধুকানো কিংবা রাসায়নিক ভাবে উৎপাদন করা যাবে না।
ছ। পেট বোতল প্রস্তুতকারীদের (পানীয়, তেল, ঘি,কাসুন্দি সহ যে কোন) বোতল এর মূল্য মূল দামের সাথে নির্ধারন করে দিতে হবে, যাতে এই বোতল জমা দিয়ে মূল্য ফেরত নেয়া যায়। এতে পানীয়ের প্যাকেট জাত অংশের রিসাইকেল নিশ্চিত হবে।
মূল কথা, ময়লা উৎস থেকেই প্যাকেটাইজ করে ট্রান্সপোরটেশন করতে হবে। এখানে সেখানে আবাসিক এলাকা, রাস্তার পাশ কিংবা শিল্প কারখানা, প্ল্যান্ট, নির্মান সাইট, দোকানের পাশে ময়লা ডাম্পিং করা যাবে না কোন ভাবেই। ট্রান্সপোরটেশন ব্যবস্থা ঠিক হলে রাস্তার পাশে ময়লা রাখার উন্মুক্ত ডাম্পিং ডাস্টবিন এর প্রয়োজন থাকবে না। আবাসিক এলাকার ভিতরে ময়লার প্রকারভেদ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ট্রান্সপোর্টএবল বা মোবাইল বা ভূগর্ভস্ত ডাম্পিং স্টেশন থাকতে পারে যেগুলো উন্মুক্ত হবে না। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্রেইলার ভ্যান এসে পুরো ডাম্পিং উনিট্টিকে নিয়ে গিয়ে আরেকটি খালি ডাম্পিং বক্স বসিয়ে যাবে। এগুলো সিসি ক্যামেরার কভারেজ এ রাখা যেতে পারে, যাতে উন্মুক্ত ময়লা ফেলা লোক কে কঠোর আর্থিক পেনাল্টির আওতায় আনা যায়।
অধ্যায়-৩ঃ সমন্বিত ড্রেনেজ পরিকল্পনা
ড্রেনেজঃ বৃষ্টিপাতের ড্রেন
ড্রেনেজ, জলাবদ্ধতা , পয়নিস্কাশন সমস্যা এবং ফ্ল্যাশ ফ্লাড এর মত দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সমস্যা গুলোকে মোকাবেলায় সত্যি কারের সমন্বিত ড্রেনেজ ডিজাইনের বিকল্প নেই। একটি শহরে বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিক রেকর্ড অনুযায়ী তিনটি জিনিসের হিসেব করতে হবে-
১। বৃষ্টি পাতের পানি কি পরিমান ভূমিতে শোষিত হয় সেটা। এর পরিমান শহর অথবা শহরের বিভিন্ন এলাকা ভেদে ভিন্ন হয়, এলাকার গ্রাউন্ড কার্পেটিং এর পরিমান, পার্ক এবং উন্মুক্ত ভূমির পরিমানের উপর। এটা পরিমাপ এ রাখা দরকার।
২। বৃষ্টিপাতের কি পরিমান বাষ্পীভূত (ইভাপোরেটিং) হয় (ঘন্টায় বা দিনে), এটা শহরের গড় তাপমাত্রর উপর হেরফের হয়, তবে মোটামুটি স্থির।
৩। আরবান রান অফ- আরবান রান অফ হোল ভূমির শোষণ এবং বায়ু মন্ডলে বাস্পায়ন শেষে কি পরিমান পানি গড়িয়ে নদী খাল বা অন্যন্য জলীয় আধারে গিয়ে পড়ে।
ঢাকার "আরবান রান অফ" এর হিসেব ড্রেনেজ ডিজাইনের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে আনতে হবে। যেহেতু একটি শহরে বৃষ্টিপাতের পানির বাষ্পীভবন এবং ভূমির শোষণ এর পরিমান বছর বছর অতি ধীরে পরিবর্তিত হয় তাই বলা চলে "আরবান রান অফ" এর হিসেবেই ড্রেন এর ক্যাপাসিটি ডিজাইন করতে হবে। মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বই খুলে কিছু অতিরিক্ত বাফার ক্যাপাসিটি রেখে আরবান রান অফ এর জন্য ড্রেন ক্যাপাসিটি হিসেব করে ড্রেন এর ধারন ক্ষমতা (আয়তন এবং গভীরতা) বের করতে হবে। মোট গড়িয়ে পড়া পানি যত বেশি হবে ড্রেন এর ধারন ক্ষমতা তত বেশি হবে, ড্রেন তত গভীর হবে। ড্রেন এর ম্যান্টেনেইন্স হোলও তত বেশি হবে। আর অবশ্যই ড্রেন এর তলদেশ কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হতে পারবে না।
সমুদ্র সমতলের সাথে প্রতি সেন্টিমিটার উচ্চতার সমন্বয় রেখে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশন পর্জন্ত পর্জায়ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর ড্রেন ডিজাইন করতে হবে। সেই সাথে অবশ্যই অতি আবশ্যিক ব্যাপার সমূহ মাথায় নিতে হবে তার মধ্যে কয়েকটি হোল-
ক। নগরীর আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মান -এটা জানার জন্য যে- গড়ে কি পরিমান ভাসমান আবর্জনা, ধূলি বালি ময়লা পলিথিন বাসার অব্যবহৃত জিনিস পত্র নির্মান সামগ্রীর অবশিষ্ট, কনক্রিটের অবশিষ্ট, কাগজ জাত পন্য ইত্যাদি ডেবরী বৃষ্টির পানির সাথে বাহিত হয়।
খ। বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই মানহীন মলে এই ডেবরীর পরিমান খুব বেশি, তাই এগুলি ড্রেন গুলোকে জ্যাম করে ফেলে তার উপর আছে রাস্তার ব্যাপক ধূলি এবং কাদা মাটি।
গ। নদীতে উন্মুক্ত বড় ড্রেইন এ বিপরীত প্রবাহ ঠেকানোর জন্য স্লুইস গেইট নির্মান
ড্রেন মেইন্টেনেন্স হোল বা মেইন্টেনেন্স পয়েন্ট
ড্রেন যত বেশি আবর্জনা বাহিত করবে (বালি কিংবা ভাসমান কিংবা অন্য) তত বেশি ড্রেন মেইন্টেনেন্স হোল করতে হবে, শুধু মেইন্টেনেন্স হোল বেশি করলেই হবে না, এই হোল গুল আয়তনে বড় হবে, এবং ড্রেনের চেয়ে গভীরও হবে। অর্থাৎ ড্রেনের গভীরতের থেকেও মেইন্টেনেন্স হোল গভীর হবে বেশি। গভীরতাই বেশি গুরুত্ব পুর্ন, এতে করে ডেবরী এই হোল গুলোতে গিয়ে জমা হয়ে ড্রেন সচল রাখবে। সময়ে সময়ে বিশেষ করে শুস্ক মৌসুমে এই ডেব্রি ড্রেন মেইন্টেনেন্স পয়েন্ট থেকে সরিয়ে নিয়ে ড্রেন সচল রাখতে হবে।
ঢাকায় ভাসমান ময়লা এবং বালির অতি মাত্রার আধিক্যের রয়েছে। মেইন্টেনেন্স পয়েন্ট প্রয়োজন মত ক্যাপাসিটির এবং রাইট ডিজাইন এর না হবার কারনে দেখা যায় পুরো ড্রেনই বালি, পলিথিন এবং সুয়ারেজ বর্জ দিয়ে ভরা থাকে।
বৃষ্টিপাতের ড্রেন সাধারনত সরাসরি নদি খাল বা জলীয় আধারে উন্মুক্তু হয়, বিনা প্রসেসিং এ।
ড্রেনেজঃ পয়নিস্কাশন ড্রেন
পয়নিস্কাশন ড্রেন বারিপাত বহন কারি ড্রেন থেকে ভিন্ন হয়। এদের সোর্স এবং ডেস্টিনেশনও ভিন্ন। এই ড্রেন গুলো কে প্রেসেস প্লাট এ টার্মিনেট করে এর জলীয় অংশ আলাদা করে কিছুটা পরিশোধন করে পরে নদীতে ফেলতে হয়। বাকি ডেবরী ভূ গর্ভস্ত করার নিয়ম।
বৃষ্টিপাতের ড্রেন এবং পয়নিস্কাশন ড্রেন মিলানো যাবে কোন ভাবেই, তবে পরিশোধন এর পরে এই দুই ড্রেন একসাথে মিলে নদিতে নেয়া যেতে পারে।
ড্রেনেজঃ শিল্পও আবর্জনা
সম্পুর্ন আদালা ড্রেন, সাধারনত উৎসে ক্যামিকেল আবর্জনা পরিশোধন করে পরেই ড্রেনে উন্মুক্ত করা যেতে পারে। আবর্জনার প্রসেস প্ল্যান্ট থেকে বের হওয়া ক্যামিক্যাল এর মাত্রা আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড এ সেট করা আছে। উৎসে প্রসেস করা না গেলে কেন্দ্রীয় ভাবে সম্পুর্ন সেপারেট ড্রেন দিয়ে শিল্পও এলাকার বর্জ সেন্ট্রাল প্রসেস প্ল্যান্ট এ নিয়ে শোধন করতে হবে। শোধনাগের আউটপুট শুধু মাত্র উপরে বর্নিত ২ টি ড্রেনেজ এর সাথে মিলে নদিতে পড়তে পারে।
ক্যামিক্যাল নদীতে উন্মুক্ত করলে তা বাহিত হয়ে কৃষি ভূমি, কৃষি ভূমির অনুজীব চক্র এবং অন্যন্য জলজ প্রাণীর বাঁচার পরিসবেশ নস্ট করে ফেলে। এতে স্বাদু পানির মাছ এর স্বল্পতা দেখে দেয়, ভূমির ন্যাচারাল উর্বরতা কমে যায়।
ড্রেনেজ পরিকল্পনা নিন্মোক্ত ইনপুট গুলিও আমলে নিতে হবে-
১। সমুদ্র সমতলের সাথে প্রতি সেন্টিমিটার উচ্চতার সমন্বয় রেখে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশন পর্জন্ত পর্জায়ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর ড্রেন ডিজাইন। নিষ্কাশন এলাকা, সর্বোচ্চ মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং সুয়ারেজ এর সাথে ডাইমেনশন ক্যল্কুলেশন করে ড্রেনের গভীরতা, ধারন ক্ষমতা, সার্ভিস ফেসিলিটি নির্ধারন করতে হবে, ধারন ক্ষমতা এবং সার্ভিস - ড্রেন ক্লিনিং এর ফেসিলিটি অনুসারে ড্রেনের প্রবেশ মুখে ফিল্টার (মেইন্টেইন এবল) বসাতে হবে।
২। নগরের রাস্তার উচ্চতা সমুদ্র সমতলের রেফারেন্সে নির্দিস্ট করতে হবে। পুরানো কার্পেটিং নষ্ট হলে তা সম্পুর্ন রুপে তুলে (এর জন্য বিশেষ মেশিন রয়েছে) আবার পুর্বের উচ্চতায় রাস্তা কার্পেটিং করতে হবে। কোন ভাবেই পুর্বের ক্ষয়ে যাওয়া পিট-পাথরের উপর নতুন কার্পেটিং করে রাস্তার উচ্চতা বাড়ানো যাবে না।
৩। দুর্নিতি কমিয়ে টেকসই রাস্তা এবং ড্রেন বানাতে হবে। ভেহিকেলের সর্বোচ্চ লোডেড মাস/অয়েট অনুযায়ী রাস্তার পীট এবং পাথরের মিশ্রণ ডিফাইন করতে হবে। পীট-পাথরের রোলিং উপজুক্ত হতে হবে। মানসম্পন্ন কার্পেটিং ২০-৪০ বছর স্থায়ী হবার কথা। কংক্রিটের তৈরি বলে প্রতিটি ড্রেন ৫০-১০০ বছরের জন্য টেকসই করে বানাতে হবে। রড সিমেন্ট চুরি করে মানহীন কনক্রিট স্ট্রাকচার বানানো বন্ধ করতে হবে।
৪। ভার বহনের উপযোগী এবং টেকসই কভার দিয়ে ড্রেন শত ভাগ ঢাকতে হবে। নির্দিস্ট কর্তৃ পক্ষ ছাড়া ড্রেনের ইনলেট টেম্পার করার নিয়ম পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
৫। শহরের ভিতর দিয়ে উন্মুক্ত মাল বাহী ট্রাক (মাটি, বালু, সুরকি) পরিবহন বন্ধ করতে হবে। মালবাহী ট্রাকের বডী ডিজাইন এ পরিবর্তন এনে ওয়াটার লীক প্রুফ এমন করে ট্রাকের মালবাহী অংশের বডির পাতাটন এবং সাইড তৈরি করতে হবে। নতুবা মাটি, বালু, সুরকি সম্পুর্ন কভার্ড ভ্যানে পরিবহনের নিয়ম করতে হবে।
৬। নির্মানাধীন বাড়ী থেকে কোন ভাসমান কঠিন কিংবা প্রবাহিত ওয়েস্ট/ বর্জ (মাটি, কাদা মাটি, লোদ, ময়লা পানি, বালি-সুরকির মিস্রন, পাইলিং এর কাদা) ইত্যাদি ড্রেন এ নির্গমন করানো যাবে না। এই কাজ কে অতি উচ্চ আর্থিক পেনাল্টির আওতায় আনতে হবে।
৭। নির্মান কাজে তলা এবং স্কয়ার ফিট অনুযায়ী পানি ব্যবহারের নির্দেশনা দিতে হবে, অতিরিক্ত পানি অপচয় কে মিটার রিডিং থেকে পিক করে উচ্চ আর্থিক জরিমানার আওতায় আনতে হবে।
৮। পলিথিন নিয়ন্ত্রন এবং ১০০% রি সাইক্লিং ড্রেন ম্যেনেজমেন্টের পুর্ব শর্ত।
৯। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের বন্দবস্ত।
১০। নাগরিকের কাছ থেকে পানি দূষিত করন জনিত কারনে ন্যায্য সার্ভিস চার্জ আদায় করে তা দিয়ে ড্রেনের পানি ডেস্টিনেশনে পড়ার পুর্বেই আংশিক শোধন করে নদী দূষণ কমানোর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নীতিমালা নিতে হবে।
১১। বড় বড় আবাসিক কম্পাউন্ড এ টয়লেট ফ্ল্যাশ এর পানির রিসাইকেল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।
১২। যটতা সম্ভভ নগরীর খাল সমূহ কে উদ্ধার এবং প্রবাহিত করার বন্দবস্ত করন।
নগরীর লেক সমূহকে কানেক্টেড করা
১৩। নগরীর পুকুর দীঘি লেক সমূহকে উদ্ধার এবং গভীর করে খনন করে করে সাময়িক জলাধারের সৃষ্টি করা। নগরীর লেক সমূহকে পরস্পরের সাথে কানেক্টেড করা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। ঢাকায় অধিক সংখ্যক খাল রয়েছে, এই খাল সমূহ দুর্বিত্ত দের কাছ থেকে উদ্ধার করে সেগুলো দিয়ে ঢাকার লেইক সমূহকে কানেক্টেড করার একটা সাহসী (দুর্বিত্ত্ রা বাঁধা দিবে) এবং দুরদর্শী প্রকল্প নেয়া দরকার।
যে সামান্য কিছু খালকে ড্রেনেজ রুট (বক্স আকৃতির নালা) করা হয়েছে তাকে রিডিজাইন করা সম্ভব, এই নালা গুলোকে গভীর এবং ডিভাইড করে প্যারালাল স্ট্রীমে ভাগ করে একটি স্ট্রীম সুয়ারেজ/ড্রেনেজ নালা এবং অন্যটি আন্তঃ লেইক সংযোগ হিসেবে রি-স্ট্যাব্লিশ করা সম্ভভ, দরকার সঠিক ডিজাইনার এবং রাজনৈতিক ইচ্ছা।
১৪। ঢাকার ড্রেনেইজ মেইন্টেনেন্স পরিবর্তনঃ সময়ের দাবী, ড্রেন থেকে ময়লা ব্যস্ত রাস্তায় উঠিয়ে মাসের প মাস ফেলে রাখার এই পদ্ধতি খুবই হীনমান্য। এভাবে ময়লাকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। পানি শুকানোর নাম করে এই কাজ করা হয়, কিন্তু সলিড অংশ রাস্তা থেকে তুলে নিবার আগেই তার উল্লেখযোগ্য পরিমান নিচে পড়ে আবার ড্রেন বন্ধ করে দেয়।
অন্য দিকটা হোল, অতি দুর্নিতির কারণে মেইন্টেনেন্স গুলোর সাইজ এবং গভীরতা ছোট হয়। ভাসমান এবং সলিড ডেব্রির পরিমাণ (সাথে বর্ষায় বৃষ্টি এবং আরবান রান অফ-আশ পাশের এলাকা থেকে গড়ীয়ে আসা পানি) বের করে সঠিক ক্যাপাসিটির মেইন্টেনেন্স হোল বা ডেব্রি সংগ্রহের পয়েন্ট তৈরি দরকার।
আধুনিক ড্রেন ব্যবস্থাপনায় ড্রেনের মুখের জালিকার ছিদ্রের সাইজ পরিমাণ মত বসানো হয় এবং সময়ে সময়ে সাকার ট্রাক দিয়ে মেইন্টেইন্স হোল থেকে সম্পূর্ন লিকুইড ডেব্রিকে সলিড ওয়েস্ট সহ উঠেয়ে নিয়ে নির্দিস্ট জায়গায় নিয়ে মেনেজ করা হয়। ঢাকায় এই পদ্ধতি পরিবর্তন দরকার। উন্নত সাকার ট্রাকের বদলে লোকাল মেশিন এর কথাও চিন্তা করা যেতে পারে, এই মেশিন এর ম্যাকানিক্যাল দিক খুবই সিম্পল।
নগর সভ্যতা গড়ার অর্থ যদি হয় বেশি থেকে বেশি জীবনের যন্ত্রনা জড়ো করে নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত একটা জনপদ তৈরি করা তাহলে এই সভ্যতার নির্মান এবং ট্রাস্নফর্মেশনের ট্রেন্ড, হীনমান্য ব্যবস্থাপনা এবং খামখেয়ালিপনার ব্যাপারগুলো ভেবে দেখতে হবে গভীর ভাবে। নগরের দূষণ, অপরিচ্ছন্নতা এবং জলাবদ্ধ মানুষেরই তৈরি। তাই ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এর কারিগরি বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া খুব দরকার।
নগরের ড্রেনেজ পরিকল্পনা মানসম্পন্ন এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হোক,
নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশ বান্ধব হোক, রিসাইকেল বেইজড হোক,
আমাদের নগর সমূহ নান্দনিক হোক!
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৮