somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

সৌর শক্তি কথামালাঃ বাংলাদেশের নবায়ন যোগ্য জ্বালানীর সম্ভাবনা

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৌর শক্তির পেছনের গল্প এবং প্রস্তুতি কথা
বাংলাদেশে সোলার প্যানেল সাধারণত চীন থেকে আমদানি করে, তবে এখন দেশেও এলইডি অ্যাসেম্বলিং, চার্জ কন্ট্রোলার তৈরির মতো কাজ শুরু হয়েছে। ৬টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের আর্থিক সহায়তায় ছোট-বড় প্রায় ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ খাতে কাজ করছে৷ এই প্রতিষ্ঠান গুলোর এ্যাসোসিয়েশন ‘বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন’ বা বিএসআরইএ। রয়েছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।

বাংলাদেশে বর্তমানে মাসে আনুমানিক ৮০,০০০ সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি হচ্ছে৷ ২০১২ সালে যে সংখ্যাটা ছিল অর্ধেক৷এখন পর্যন্ত সারা দেশে এনজিওর মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে যার মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার হোম সিস্টেম সচল থাকার তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি সেচে সোলার বেইজড সাবমারজিবল পাম্প এর পাইলট নিয়ে কাজ করা হচ্চে।সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প প্রকল্পের সফলতা ও অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে ফসলের জমিতে সেচে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির স্কোপ বাড়াবে, নোবেল বিজয়ী ড ইউনুসের "গ্রামীণ শক্তি" ব্যক্তি পর্যায়ে সোলার সলূশন, ব্যবসা এবং নতুন নতুন খাতে সোলার প্রকল্পের সম্ভব্যতা যাচাইয়ের পাইলট পরিচালনার অগ্রদূত।

সোলার প্যানেল স্থাপন বিষয়ক পরামর্শ প্রদানে ডেসকো বেশ কয়েকটি সেল খুলেছে, যেগুলো কর্ম প্রক্রিয়ায় যাবার অপেক্ষায়। ডেসকোর নিজস্ব দফতর ও সাবস্টেশনসহ গ্রাহকপর্যায়ে সোলার সিস্টেম স্থাপন শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ২০ হাজারের অধিক সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করেছে। পিডিবিও সৌর প্লান্ট স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে পাঁচ বছরের জন্য সরকারিভাবে আয়কর মওকুফ করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন’ বা বিএসআরইএ ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে সৌরশক্তির সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে। সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করছে জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জিআইজেড৷ সোলার প্যানেলে মূল্য বেশি হওয়ায় শুরুতে ভর্তুকিও দিয়েছে জিআইজেড৷ কিস্তিতে সোলার প্যানেল কেনার সুবিধা থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সহজেই সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে৷

বাড়িতে ‘সৌর ছাদ’ তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ। বাড়ির ছাদ বা চালে সৌর প্যানেল স্থাপন করে হোম পাওয়ার সিস্টেম চালু করা যেতে পারে, বিশেষ করে পাকা ছাদের ওপর, যার সংখ্যা মোট বাড়িঘরের ১০ শতাংশের ওপর।

সৌরশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রির উদ্যোগ নিয়ে একটি পাইলট করছে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঢাকার সচিবালয়ের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছে৷ তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মেগাওয়াট প্রতি নির্দিষ্ট দামে কিনে নেয়ার কথা ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ, সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে পার্যাপ্ত আলোচনা নেই বিধায় খুব বেশি তথ্য পাবলিক্লি এভেইএবল নয়৷


সৌর শক্তি খাতের সমস্যা
বর্তমানে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ আবেদনের সাথে ১০-২০% বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সোলার প্যানেল স্থাপনের নামে শুভঙ্করের ফাঁকি চলছে। সোলার প্যানেল না বসিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকদের ঘুষ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভাড়া করে এনে সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে। বিদ্যুতের লোকজনের পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই সেগুলো সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ কম দামে নিম্নমানের সোলার প্যানেল বসাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে। যেগুলো অল্পদিনেই অকেজো হয়ে পড়ছে।

১। প্রায়ই দেখা যায় চীন থেকে আমদানিকৃত নিন্ম মানের সোলার প্যানেল অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ২০-২৫-৩০ বছরের লাইফ সাইকেলের কথা মৌখিক ভাবে বলা হলেও অকেজো প্যানেলের রিপ্লেইস্মেন্ট করা হয় না, ব্যক্তি গ্রাহক এর সাথে বিধি বদ্ধ বিজনেস ডিল থাকে না। মৌখিক প্রতিশ্রুতির সাথে প্যানেল পার্ফর্মেন্স অসামাঞ্জস্য পূর্ন।
২ক। কারিগরি বিষয়ে অনভিজ্ঞ গ্রাহকের কাছে উপস্থাপনের জন্য অতি সরল সোলার সল্যুশনের (প্যাকেজ) অভাব। বিভিন্ন মানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম (বাতি/সিএফএল বাল্ব, পাখা, সেচ পাম্প, ডেস্কটপ ল্যাপটপ কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদি) ব্যবহারের বিপরীতে প্যানেল/ব্যাটারি ইত্যাদির দরকারি ক্যাপাসিটির অসামাঞ্জস্য থাকে, কিছু ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ব্যাপারে বিধিবদ্ধ বিজনেস এথিক্স না থাকা গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং নতুন গ্রাহক সৃষ্টিতে বাঁধা।
২খ। প্যানেল ক্যাপাসিটির সাথে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি অসামাঞ্জস্য পূর্ন থাকে প্রায়ই, তদুপরি ব্যাটারির লাইফ সাইকেল বছরে বলা হয় কিন্তু ব্যবহার ঘন্টায় বুঝিয়ে দেয়া হয় না, ফলে অতি ব্যবহারে ৩ বছরের প্রতিশ্রুত ব্যাটারি ১-১.৫ বছরেই ফুরিয়ে যায়। নিম্ন মানের ব্যাটারি সাপ্ল্যাই করা এই খাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের মিল্কিং কাউ। প্যানেল ঠিক থাকে কিন্তু ব্যাটারি সার্ভসিং কিংবা একেবারেই পাল্টানো দরকার হয়ে পড়ে। ফলে আর্থিক দিক দিয়ে সোলার বেশ খুরুচে হয়ে উঠে- প্রাথমিক বিল্ড আপ কস্ট এবং ব্যাটারি মেইন্টেনেন্স কস্ট, এই দুই মিলে। উল্লেখ্য, উন্নত মানের সোলার প্যানেল এবং উচ্চ মান ব্যাটারির ক্ষেত্রে মেইন্টেনেন্স খুবই প্রাহক বান্ধব।

বিজনেস কেইস, সাধারণত একটা ছোট গ্রামীণ পরিবারের শুধু কয়েকটি বাতির জন্য ৪০-৫০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম লাগে, এই ক্যাপাসিটির মধ্যম মান সম্পন্ন কমপ্লিট সোলার সল্যুশন এক্টিভ এবং প্যাসিভ কস্ট মিলে ১২,০০০ টাকার মত পড়ে, এই পরিবারটি যদি পল্লী বিদ্যুৎ এর বিল ৮০ টাকা করে (পিক আওয়ার লোড শ্যেডিং বিবেচনায় এটাই এই ধরনের পরিবারের এভারেজ বিল!) দিয়ে থাকে তাহলে এই খরচ উঠতে ১২,০০/(৮০*১২)=১২.৫ বছর লাগে। কিন্তু কিস্তিতে কিনলে এই সময় নূন্যতম ২০ বছরে ঠেকে, বিএসআরইএ এর তথ্যও তাই উঠে আসে।

সুতরাং এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদী পুঁজি উঠে আসা ব্যবসায় বিজনেস এথিকস পালন (উচ্চ মান সম্পন্ন ইকুইপমেন্ট ডেলিভারি এবং অনেস্ট মেইন্টেনেন্স লেভেল) খুবই গুরুত্ব পুর্ন। অন্যথায় হোম সোলার এর নতুন এই খাতে নতুন পটেনশিয়াল গ্রাহক আকৃষ্ট করন দুরূহ হয়ে পড়বে।

৩। অভিযোগ আছে এন্টি ডাম্পিং নীতি মালা থাকা দেশ থেকে অকেজো প্যানেল ফেরত এনে মেরামত করে বাংলাদেশে ফাইনাল ডাম্পিং করা হচ্ছে। এতে করে সোলার হ্যাজার্ড তৈরি করা হচ্ছে।
৪। লোভনীয় কিন্তু অতি জটিল কিস্তির ফাঁদ, প্রতিশ্রুত প্যাকেজের সাথে ডেলিভারি না মিলা, রিপ্লেইস্মেন্ট গ্যারান্টি ঝামেলা পুর্ন।

৫। সরকারি আফিসের ছাদে প্যানেল এর কার্যকরিতা, প্রতিশ্রুতির বিপরীতে প্রাপ্ত বিদ্যুত ব্যবহারের গ্যারান্টি ক্লজ না থাকায়, অতি খরুচে সোলার সিস্টেম বসানো হচ্ছে কিন্তু তার উৎপাদন এবং ব্যবহার কি পরিসরে হচ্ছে তার ক্রেডিবল কোন তথ্য নেই। ফলে এইসব প্রকল্প রাজনৈতিক হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের আরেকটি উর্বর খাত হয়ে উঠতে পারে।

এইসব কারণে বাংলাদেশ সোলার খাত থেকে সমন্বিত সুফল পাচ্ছে না। ব্যক্তি পর্যায়ে বিদ্যুহীন রিমোট গ্রামের (যেমন, নোয়াখালী, ভোলা এবং মেহেন্দীগঞ্জ এর বহু গ্রাম) নাগরিকেরা সন্ধ্যায় সামান্য আলো জ্বালানর বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, সোলার খাতের সাফল্য এখানেই সীমাবদ্ধ।


ব্যক্তি পর্যায়ে সোলার সল্যুশনঃ প্রকারভেদ
সৌরবিদ্যুৎ তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে তিন ধরনের হোম পাওয়ার সিস্টেম পাওয়া যায়। ১। গ্রিড সংযুক্ত সিস্টেম(গ্রীড টাই আপ সিস্টেম) ২। ব্যাটারি ব্যাকআপসহ গ্রিডে সংযুক্ত সিস্টেম ৩। সোলার হোম সিস্টেম।
গ্রীড টাই আপে তৈরি বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করে খরচ কমানো যায়। যতটুকু গ্রিডে সরবরাহ হবে, সে পরিমাণ বিদ্যুৎ মোট ব্যবহার থেকে বাদ দিয়ে বিল দিতে হয়। (বাংলাদেশে সম্প্রতি স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান গ্রিড সংযুক্ত সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ থেকে প্রতি বছর ৭৫ মেগাওয়াটঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।) ব্যাটারি ব্যাকআপসহ গ্রিডে সংযুক্ত হোম মডেল একটু উন্নত, কোনো কারণে গ্রিড থেকে সরবরাহ পাওয়া না গেলে ব্যাটারিতে সংরক্ষিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। সোলার হোম পাওয়ার সিস্টেমই বাংলাদেশের বাজারে প্রাধান্য পেয়েছে।
তবে স্মার্ট গ্রীড(অত্যাধুনিক কন্ট্রোল সিস্টেম বেইজড বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো যা বাংলাদেশে নেই) থাকলে, গ্রীড টাইড আপ হোম সোলার সোলার সিস্টেমকে এক নতুন মাত্রা দেয়া যায় যেখানে গ্রাহক পর্জায়ে ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ন্যাশনাল কিংবা লোকাল বা কমিউনিটি গ্রীডে সরবারহ করে ব্যবসায়িক উপার্জনের পথ সুগম হয়।


সোলার হোম সিস্টেম এর চ্যালেঞ্জ
১। সরল প্যাকেজ, শুধু মাত্র উচ্চ মান পন্য আমদানি কিংবা উৎপাদন। মেইন্টেনেন্স এর নিশ্চয়তা, কথা ও কাজে মিল থাকা গ্যারান্টির নিশ্চয়তা বিধা্ন করা।
২। এনজিও/ব্যবসায়ীদের বিজনেস এথিকস মানতে বিজনেস রেগুলেশন আনয়ন, গ্রাহক কমপ্লেইন মনিটরিং সিস্টেম ডেভেলপ, এনজিও নির্ভরতা কাটিয়ে কাস্টমার বেনিফিট ডেফিন্ড করার জন্য ওয়ান স্টপ সহায়তা সেল, সাপ্ল্যায়ের মান যাচাইয়ের সার্টিফিকেশন, গ্রাহক সন্তুষ্টি যাচাই ব্যবস্থাপনা ডেভেলপ করা।
৩। রিসাইকেল বেইজড, লোকাল রি-প্রডিউসিং বেইজড গ্রীন এনার্জির প্রণোদনা ডিফাইন করা।
৪। ইলেকট্রনিক হ্যাজার্ড দূরীকরণ নির্ভর সেন্ট্রাল সোলার ওয়েস্ট প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরি করা, সাপ্ল্যাইয়ারদের অকেজো প্ল্যান্ট রিটেইক করার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।
৫। সেচ কাজে অতি আকর্ষনীয় সোলার মডেল ডেভেলপ যা কৃষক বান্ধব অর্থাৎ কৃষি উৎপাদন খরচ সীমিত রাখার অনুকূল।
৬। সোলার ব্যবসাকে শুধু হোম বেইজড সল্যুশনে সীমাবদ্ধ না রেখে, স্মার্ট গ্রিড পরিকল্পনা এবং ইমপ্লিমেন্টেশন করে, ব্যক্তির প্যানেলকে স্মার্ট গ্রিড টাই আপ এর ব্যবস্থা করা যাতে ব্যক্তির ব্যবহার এবং এ থেকে উপার্জন এর উৎস তৈরি করা যায়।
৭। উন্নত ব্যাটারি সহ, কনভার্টার, চার্জ কন্ট্রোলার সিস্টেম লোকালি ডেভেলপ করে বা মেইন্টেনেন্স ফেসিলিটি বাড়ানোর সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া।
৮। ব্যক্তি গ্রাহককের উৎপাদন ছোট ছোট স্থানীয় গ্রীড অবকাঠামো ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ, সরাসরি অন্য গ্রাহক এবং ডেসকো/পিডিবি'র কাছে বিক্রির অধিকার দেয়া। ব্যক্তিগত খাতের সোলারকে এলাকা ভিত্তিক কমিউনিটি গ্রীডে সরবারহ (বিক্রি), ন্যাশনাল গ্রীড এ বিদ্যুৎ প্রদানের মত সঞ্চালন অবকাঠামো (গ্রীড টাই আপ) সুযোগ দিলে অনেকেই এই খাতে ইনভেস্ট করবে। সেজন্য ব্যাপক সঞ্চালন (পাওয়ার ট্রান্সমিশন) প্রিপারেশন দরকার, স্মার্ট গ্রীড দরকার।
৯। এসি টু ডিসি , ডিসি টি এসি ডুয়েল কনভার্শন ড্রপ রোধ এবং কনভার্টার কস্ট কমানোর লক্ষে সরাসরি ডিসি বৈদ্যুতিক সারঞ্জাম এর স্থানীয় উৎপাদন, ইম্পোর্ট সহজিকরন এর গাইড লাইন, রোডম্যাপ তৈরি করা।
১০। বাড়ির ছাদে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সোলার প্ল্যান্ট এর বিপরীতে একাধিক পরিবার বা বাড়িতে সমন্বিত প্ল্যান্ট এর অনুকুলে নীতিমালা তৈরি করা, সঞ্চালন সাপোর্ট দিবার জন্য কমিউনিটি সঞ্চালন অবকাঠামো নিয়ে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা চালু।
১১। লোকাল ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিকে বিভিন্ন ভাবে প্রোমোট করা। গ্রীন এনার্জি কে প্রোমোট এর বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ নেয়া যাতে সিটিজেন রিস্পন্সিবিলিটিকে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
১২। পিক অফ পিক রেইট ভিন্নতা আনা দরকার, যাতে পিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কে এঙ্কারেজ করা যায়।
১৩। সোলার নিয়ে রিসার্চ ইন্সটিটিশন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্পোরেট পর্যায়ে গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করন, এই খাতে উল্লেখযোগ্য ফান্ড বরাদ্দ দেয়াও সময়ের প্রয়োজন।




সোলার ইর‍্যাডিয়েন্স বা সৌর দেদীপ্যমানতাঃ বাংলাদেশের অফুরন্ত সম্ভাবনা


সোলার ইর‍্যাডিয়েন্স স্কোরে বাংলাদেশের অবস্থান মাঝামাঝি থেকেও কিছুটা উপরে, বলা চলে ইউরোপের অনেক উপরে। এমনকি শীতের দিনেও গড় দিন দৈর্ঘ্য ইউরোপ থেকে আমাদের অনেক বেশি, উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে প্রধান ঋতু গ্রীষ্মের মেরুকরণ হচ্ছে (দীর্ঘায়ন) হচ্ছে এবং রোদের সময়কাল ও প্রখরতা বাড়ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, তবে সোলার ইর‍্যাডিয়েন্সে এর প্রভাব আসতে সময় লাগবে কেননা এই ডেটা নূন্যতম ২০ বছরের এভারেজ।


সোর্সঃ Click This Link

তুলনামূলক উদাহরণ-
সোলার ইর‍্যাডিয়েন্স কিংবা সোলার ইন্সুলেশন ফিগার জিও লোকেশন, বাড়ির দিক, সুর্যের গতিপথের সাথে ছাদের সমান্তরলতা, হেলানো কিংবা ঢালাই ছাদ, প্যানেল এর কৌনিক পজিশন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে, যা বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন হয়। সাধারন সামার মাস গুলোতে সোলার ইর‍্যাডিয়েন্স বেশি, উচ্চ ইর‍্যাডিয়েন্স উচ্চ সৌর শক্তি উৎপাদনের মাত্রা নির্দেশ করে।

নিচের ছবিতে দেখুন, জার্মান-নেদারল্যান্ডস-বেলজিয়াম সীমান্ত শহর মাসট্রীকট বনাম কুমিল্লার সোলার ইর‍্যাডিয়ান্স তুলনা (এক নিরুদ্দেশ পথিকের ২ নিবাস!)। দেখা যাচ্ছে-গড় ইন্সুলেশন ফিগার কুমিল্লায় ১,৪৭৫ বেশি, অর্থাৎ একই প্যেনেলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন মাসট্রীকট থেকে কুমিল্লায় ১,৪৭৫ গুন বেশি হবে। (আইডিয়াল হিসেব, সামান্য তারতম্য হতে পারে)। উল্লেখ্য মাস্ট্রিক্ট শহরে বাড়ির ছাদে প্যানেল খুবই জনপ্রিয়, যা গ্রীড টাইড আপ!


সরল ব্যাখ্যা
ফর্মুলা- Stated wattage of panel x 75% x monthly insolation figure = average daily power

উদাহরণ, ১০০ ওয়াট এর একটি প্যানেল ৭৫% প্রডাক্ট রেটেড সিস্টেম ইফিসিয়েন্সিতে মাসট্রিক্ট শহরে বাৎসরিক গড় ৩.০৪ ইন্সুলেশন ইন্ডেক্স এর অনুকুলে মাত্র ২২৮W/h/day সৌর শক্তি দিবে, কিন্তু এই একই প্যানেলে কুমিল্লায় বাৎসরিক গড় ৪.৫২ ইন্সুলেশন ইন্ডেক্স এর অনুকুলে ৩৩৯ W/h/day সৌর শক্তি দিবে, অর্থাৎ ১১১W/h/day বেশি শুধু একটি ১০০ ওয়াট প্যেনেলেই!
(আইডিয়াল হিসেব, সামান্য তারতম্য হতে পারে)। উল্লেখ্য মাস্ট্রিক্ট শহরে বাড়ির ছাদে প্যানেল খুবই জনপ্রিয়, যা গ্রীড টাইড আপ!

এই একটি সরল উদাহরনেই, বাংলাদেশে অমীত সৌর সম্ভাবনাকে এক্সপ্লেইন করে।




সামনে এগিয়ে যাওয়াঃ কোন মডেলে সমাধান?

সৌরবিদ্যুৎ, বায়ু, বায়োমাস, হাইড্রো, বায়োফুয়েল, জিওথার্মাল, নদীর স্রোত ও সমুদ্রের ঢেউ বাংলাদেশের সম্ভাব্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস। তরল জ্বালানি, কয়লাভিত্তিক ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস খুঁজছে বাংলাদেশ। ​

ইউন্ড সার্ভে ম্যাপিং এ বাংলাদেশের অবস্থা খুব খারাপ, পাইলট উইন্ড প্ল্যান্ট এ দেখা গেসে প্রাই সময় পাখা ঘুরেই না! বাতাসের গতিবেগের সাথে কিউবিক রিলেশনে বিদ্যুৎ উতপন্ন হয় বলে আমাদের উইন্ড এনার্জি ফিউচার আসলেই নাজুক।

বায়োমাস এবং ল্যান্ড ফিল ওয়েস্ট গ্যাস বাংলাদেশে খুব ছোট এবং মধ্য পরিসরে কার্জকর হতে পারে, কিন্তু দুঃখ জনক হল, এই খাত গুলো আন এক্সপ্লোরড। এদিকে বায়োগ্যাস জনপ্রিয়তা পায়নি, কিন্তু বায়োমাস এবং বায়োগ্যাস এর লিকুইডিফিকেশন নিয়ে পাইলটও হয়নি।

কিছু ক্ষেত্রে ধানের তুষ (রাইস হাস্ক) থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে অতি স্বল্প পরসিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাইলট হয়েছে, কিন্তু তুষের বিকল্প ব্যবহার থাকায় তা বেশি দূর এগোয়নি।

স্বাভাবিক জোয়ার ভাটা থাকা নদীর মোহনায় সমুদ্র স্রোত কাজে লাগিয়ে আধুনিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ইন্টেলেকচুয়াল পর্যায়ে কথা হয়েছে সামান্য, কিন্তু এই ধরনের প্রকল্পের সমীক্ষা হয়নি। পাইলটের পরেই শুধু বুঝা যাবে কি পরিমান পটেনশিয়াল রয়েছে এই খাতে। একই কথা প্রযোজ্য বার্জ মাউন্টেইন টাইপ প্রকল্পের বেলায়, কাপ্তাই প্ল্যান্ট এ এই প্রকল্পের সমীক্ষা এবং পাইলট করা যায়। উদ্ভাবনী এসব খাতে বিলম্ব দুঃখজনক।

পাথুরে কয়লা ও জ্বালানী তেলের পর আরো উন্নত বা বিকল্প জ্বালানী হিসেবে সৌর-বিদ্যুৎ, বাতাস, পানি এবং পরমাণু জ্বালানী ফসিল জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হচ্ছে। গত ২ দশকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও দূষণমূক্ত জ্বালানী হিসেবে পরমাণু জ্বালানী অন্য সব জ্বালানীর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলেও পারমাণবিক দুর্ঘটনা এবং হিউম্যান রিস্ক বিবেচনায় পরমাণু জ্বালানীর বিরুদ্ধে উন্নত বিশ্বে জনমত সচ্চার হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে রাশান ঋণ এবং কারিগরি সহায়তায় রুপপুরে একটি পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কথা হচ্ছে, যা আগামী ১০-১৫ বছর নাগাদ উতপাদনে যেতে পারে বলে আশা করা যায়। একদিকে উচ্চ ঋণের বোঝা, অন্যদিকে বিশ্বের সবচাইতে ঘনবসতি পুর্ন দেশে কারিগরি দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পুরানো প্রযুক্তির রিয়েক্টর স্থাপনের পরিকল্পনাটি (যা কিনা এক দশক এরো বেশি পরে সচল হতে পারে) ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। উপরন্তু এই স্থানটি একটি ভূচ্যুতির কাছাকাছি অবস্থিত গাঙ্গেয় সমভূমির পলিঘঠিত এলাকা। তথাপি রিয়েক্টরের শীতলীকরণে অতি উচ্চ ভলিউমের ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার পরিকল্পনা বুমেরং হতে পারে। তার উপর রয়েছে পারমাণবিক বর্জ্য হস্তান্তরের জটিল এবং অমীমাংসিত বিষয়াদি।

যেহেতু পরমানু প্রকল্প সবে আঁতুড় ঘরে যার বাস্তবায়ন নূন্যতম এক দশক সময় সাপেক্ষ, তাই বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশ ঠিক কোন নবায়নযোগ্য শক্তির পিছনে ব্যয় করবে, সৌর শক্তি খাত আগামীর পাওয়ার পরিকল্পনায় কি ভূমিকা নিবে, তা একটা বিরাট প্রশ্নের মুখোমুখি। আগামীদিনের এবং আগামী প্রজন্মের সম্ভাবনা এবং দায়বদ্ধতার সাথে সাস্টেইনেবল পরিকল্পনা প্রণয়নই হোক রাষ্ট্র চিন্তার মৌলিকতা।


এনার্জি পরিকল্পনা দূরদর্শী এবং দুর্নীতিমুক্ত হোক!
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!


সুত্র- বণিক বার্তা ১৪-১-২০১৬ উপসম্পাদকীয়তে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯
১৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×