somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

উচ্চ শিক্ষার একসেস

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

​বাংলাদেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধিনস্ত ডিগ্রী কলেজ এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর সমিল্লিত ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ এক লক্ষ (ইউজিসি তথ্য মতে এর চেয়ে কিছু কম)। (২০১৩-১৪ সেশনে টি আই বি স্টাডিতে এই সংখ্যা ৮৭,২৯৭ ছিল)। অন্যদিকে বর্তমানে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৮৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ এর মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১,৩১,৯৩২ এবং ৬৬ টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ধারন করছে প্রায় ২০,০০০শিক্ষার্থী, সম্মিলিত ভাবে ১,৫১,৯৩২ জন বেসরকারিতে উচ্চ শিক্ষায় রত। (এই সংখ্যা সামান্য কম বেশি হতে পারে)

তুলনাঃ
২০১৪ সালের চিত্র
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের স্নাতক ১ম বর্ষের আসন সংখ্যা মোট ২,১৯,২২৯। (টি আই বি প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৩-২০১৪)
১,৩১,৯৩২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় > ৬০.১৮%
৮৭,২৯৭ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় >৩৯.৮২%

(টি আই বি প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৩-২০১৪ সেশনে, এর মধ্যে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর আউটার শাখা বন্ধ হয়েছে এবং প্রধান শাখার গ্রোথ হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর আসন মোটামুটি একই থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর আসন কিছুটা বেড়েছে এর মধ্যে)

পাশ করেছেন ৬,৯৯,৯৬৮ জন। ৬,৯৯,৯৬৮ - ২,১৯,২২৯= ৪,৮০,৭৩৯ জন HSC পাশ করা শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পাননি। এটা মোট HSC অংশ গ্রহন কারীদের ৬৮.৬৮%। মোট ফেল করা ২,৪৭,৩৩৬ জন (পরীক্ষার্থীর ২১,৬৭%) এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ না পাওয়া ৪,৮০,৭৩৯ জন (শুধু HSC) নিয়ে আমাদের রাষ্ট্র কি দায়িত্ব পালন করেছে আমাদের সেটা জানা নাই।



অন্যভাবে দেখলে, বিষয়টি এরকম HSC এবং সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়া মোট ১১,৪১,৩৭৪ জন এর জন্য স্নাতক ১ম বর্ষের আসন সংখ্যা মোট ২,১৯,২২৯ টি ছিল। বাকি ৯,২২,১৪৫ জন শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার সুযোগই পাননি, শুধু একটি মাত্র বছরে। তারা সবাই HSC বা সমমান পাশ করলেও তাদের উচ্চ শিক্ষার বন্দোবস্ত ছিল না।

২০১৫ সালের চিত্র এবং চাহিদাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের স্নাতক ১ম বর্ষের আসন সংখ্যা মোট ২,৫১,৯৩২।
১,৫১,৯৩২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় > ৬০.৩০% (বেসরকারি মেডিক্যাল আসন সহ)
১,০০,০০০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় >৩৯.৮০% (প্রকৃত সংখ্যা ৯০ হাজারের মত, ১০,০০০ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে)


২০১৫ সালে মোট ১০,৭৩,৮৮৪ জন। (নোটঃ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের থেকে এবার ৬৭ হাজার ৪৯০ জন কম শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।)

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষায় ২০১৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৮.৩৩%। সাধারণত বছর বছর এই % এর খুব লক্ষণীয় পরিবর্তন হয় না। ২০১৫ এর পাশের হার ৮০% ধরলেও আমরা দেখি সর্বোমোট ৮,৫৯,১০৭ পাশ করবেন। বিপরিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (রেগুলার বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সহ) এ আসন রয়েছে ১,০০,০০০ মাত্র।

সরকারিতে ভর্তি ১ লক্ষ বাদে বাকি ৭,৫৯,১০৭ পরীক্ষার্থীর কি হবে?

তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্র কি ভাবছে? হয়তবা কিছুটা ভেবেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর অনুমুদোন দিয়েছে কিন্তু তাঁদের ফান্ড দেয়া হয়নি, কোন ধরনের আর্থিক এবং সামাজিক সুবিধা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ কে বিজনেস মডেল হিসেবে গড়তে বাধ্য করেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি মেডিক্যাল সম্মিলিত ভাবে ১,৫১,৯৩২ জন শিক্ষার্থী ধারন করছে সরকারের বিনা অনুদানে, যারা এই দেশেরই নাগরিক! এরও বাইরে রয়েছেন ৫,০৭,১৭৫ জন পাশ করা এইচ এস সি শিক্ষার্থী যারা সরকারি বেসরকারি কোথাও ভর্তির সুযোগই পাবেন না, কারন আসনই নাই, এই সংখ্যাটি মোট পাশ করা স্টুডেন্ট এর ৫৯%।


এই সুবিশাল সংখ্যা নিয়ে আমরা ভাবি? কিংবা আমাদের রাষ্ট্র ভাবে? তাঁদের ভকেশনাল বা ইন্ডাস্ট্রি (কৃষি সহ) এবজর্বমেন্টের কোন বন্দোবস্ত আছে? আমার জানামতে নেই, কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এস এস সি পাশ দের সাথে পাল্লা দিয়ে ডিম্লোমা কোর্স করেন। বাকিরা সবাই ভাসমান শ্রমিক, দিনমজুর কিংবা অনিয়মিত কৃষক। এই হোল আমাদের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অতি মাত্রার খরুচে এবং কিছু ক্ষেত্রে মুনাফা লোভী বলে সমাজে পরিচিত। কিন্তু তারপরেও নাগরিকের শিক্ষা ব্যয় এর পুরোপুরি দায়িত্ব নেবার জন্য সরকারের উপর দৃশ্যত কোন নাগরিক চাপ নেই!

সাম্প্রতিক সময়ের ভ্যাট ইস্যুঃ
একটি আধুনিক সমাজে ৫৯% শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার সুযোগই পাবেন না এটা মেনে নেয়া অসম্ভব! রাষ্ট্রের নিজেরি শিক্ষা ক্যাপাসিটি নেই, যা উচ্চ শিক্ষার এক্সেস কে সংকুচিত করে রেখেছে। এই পরিস্থিতি এ সরকার উচ্চ শিক্ষার উপর ভ্যাট বসাচ্ছে!

৩৯.৮% শিখার্থীকে জনগনের ট্যাক্স এর টাকায় পড়তে সুযোগ দিয়ে আমাদের সরকার বাকী ৬০.৩% এর শিক্ষা ব্যয় কে ৭.৫% ভ্যাট এর আওতায় এনেছে।যেখানে ৭,৫৯,১০৭ জন এইচ এস সি পাশ করা স্টুডেন্ট এর সরকারিতে ভর্তির কোন বিকল্পই নেই। এই লজ্জাকর বৈষম্য কেন? এক দিকে মৌলিক শিক্ষা মানহীন হচ্ছে, সিলেবাস ডিগ্রেড করা হয়েছে, পরীক্ষা পদ্ধতি মূল্যহীন করা হয়েছে, অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষাকে পণ্য বিবেচনায় ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে!

অথচ নাগরিক দাবি হওয়া দরকার ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের খরচের ভার অংশত বহন করে সরকার সংখ্যা গরিষ্ঠের শিক্ষা ব্যয় সাধ্যের নাগালে আনবে! লজ্জাকর বৈষম্য রোধ করবে!

সংখ্যার দিকে থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন উচ্চ শিক্ষার মেইন স্ট্রীম, জব মার্কেট এক্সেসও এইসব শিক্ষার্থী ডমিনেট । প্রায় ২,৫১,৯৩২ শিক্ষার্থী ধারণ (এভেইলেবল আসনের ৬০.৩% ) করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অসামান্য অবদান রাখছে। সময় এসেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর দিকে বেশি নজর দিয়ে, সরকারি অনুদান, জমি/আবকাঠামো দিয়ে, শিক্ষক মূল্যায়ন প্রবর্তন করে, মানসম্পন্ন টিচিং ব্যবস্থাপনায় সাপোর্ট দিয়ে তাদের উচ্চমান নিশ্চিত করা।

করা হচ্ছে ঠিক উল্টো! উল্টো আমরা দেখছি এমনিতেই ভারবহুল এই উচ্চ শিক্ষা ব্যয়ের উপর ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করে কার্জত সরকার উচ্চ শিক্ষার একসেস কে সংকুচিত করে দিয়েছে!

রাষ্ট্র সবার। রাষ্ট্রের সম্পদে সবার এক্সেস সমানই হওয়া দরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সহ কোন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্ট্যাডি ফি এর উপর ভ্যাট বসানো রাষ্ট্রের মৌলিকতা বিরোধী।

একটি নিন্ম মধ্যবিত্ত দেশের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার চিত্র এর চেয়ে আর কত করুন হতে পারে?

মানব সম্পদ এর সত্যিকারের উন্নয়নে কার্জকর কিছু করুন।
শুধু ব্যাংক ঋন, বন্ড ব্যবসা এবং বৈদেশিক ঋন নির্ভর অর্থনৈতিক স্ফীতকরন থেকে বেরিয়ে আসুন!

নিজস্ব সম্পদ কে দৃশ্যমান ভাবে সমৃদ্ধ করুন।
বাংলাদেশ কে এগিয়ে নিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×