বেকারত্বের হার দেশে দেশেঃ নিউজিল্যান্ডস ৬%, ইউ এস এ-৬.১%, ইউ কে-৬.৫%, ইন্ডিয়ার ৮.৮%, নেদারল্যান্ডস -৭.৩%, সুইডেন-৮.১%, সৌদি আরব-১২.১%, সাউথ আফ্রিকা-২৫.৫% স্পেইন-২৫.৬%, গ্রীস-২৬.৮%।
বাংলাদেশ-৫% এবং পাকিস্তান ১%।
কর্মসংস্থান কে যদি উন্নয়নের সূচক ধরা হয়, তাহলে যেটা দাঁড়ায়, পাকিস্তান পৃথিবীর সর্বোন্নত দেশ, ফোলইং বাই বাংলাদেশ!!!!! বাংলাদেশে উন্নতির জন্য শুধু দরকার একটি ডেটাবেজ সংস্থা যার নাম "বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো"।
বাংলাদেশে বেকারত্বের হার কত, সেটা বুঝতে খেয়াল করুন সারা দেশে কি পরিমান কর্মজীবি গ্রাজুয়েট এবং নন গ্রাজুয়েট মহিলা আছেন, গ্রাম প্রধান এই দেশে কি পরিমান কি পরিমান গৃহিণী আছেন, কি পরিমান কর্মহীন শিক্ষিত বেকার আছেন, কি পরিমান কর্মহীন অশিক্ষিত যুবক যুবতী আছেন। ভুলে যাবেন না, কৃষি প্রধান এই দেশে কত জন সক্ষম কৃষক আছেন যাদের নিজের জমি আছে, কত জন কৃষকের কাজ থাকে সারা বছর। খেয়াল করবেন, কি পরিমান কাজের বুয়া, কাজের ছেলে, দোকানের বয়, আছে দেশের ঘরে ঘরে। (এই গুলা কি কর্ম সংস্থান???)
কর্মসংস্থান এমন এটা জিনিস যা ভিজিবল।
বাংলাদেশের ডাটাবেইজ বিষয়ে জেনে রাখুন একটা কথা, এখানে ডাটা এন্ট্রির জন্য উপাত্ত লাগে না। ডাটা আসে হাওয়ায় ভেসে। ২ টা এক্সাম্পল দিচ্ছি। বাজেট এবং আদমশুমারী ২০১১।
১। বাজেট এর ব্যাকগ্রাউন্ড ডাটাবেইজ প্রসঙ্গেঃ
""১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ২০০৯ সালে, অর্থাৎমুক্তিযুদ্ধের ৩৮ বছরে প্রতিবছর আমাদের মাথাপিছু আয় হয়েছে ৮৪৩ ডলার।
কিন্তু পরের দুই বছরে শেয়ার মার্কেটে বাড়ি খেয়ে মধ্যবিত্তের আয়-রোজগার দেশের অল্প কিছু লোকের হাতে গিয়ে, আবাসন সেক্টর ধ্বসে, ঋণের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে এবং তার পরে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের চাপে কৃষি উৎপাদনের মূল্য হ্রাস পেয়ে, গ্রামীণ অর্থনীতি ধ্বসে পড়ার পরেও— শুধু মাত্র রেমিটেন্স এবং পোষাক শিল্পের রফতানি বৃদ্ধি দেখিয়ে সরকার, দুই বছরে আমাদের দেশের গড় মাথাপিছু আয় দেখাচ্ছে ১১৯০ ডলার। তার মানে সব চেয়ে খারাপ সময়টাতে মানুষের গড় আয়, ১১৯০-৮৪৩ = ৩৪৭ ডলার, মানে ২৬৭১৯ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে!
এর মানে বাংলাদেশের পরিবার প্রতি আয়, সরকারি হিসেবে গড়ে ৪.২ জন উপার্জনকারী হিসেব করে, এ ৪ বছরে, গড়ে প্রতি পরিবারে বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লক্ষ ৬ হাজার টাকা।
১৯৭১ সালের পরে ৩৭ বছরে আমরা ৮৪৩ ডলারে পৌঁছিয়েছি আর সরকারি হিসেবে মাত্র ৪ বছরে সেটির ৪১% বৃদ্ধি হয়েছে।
এ রকম সীমাহীন মিথ্যা কথা এ বাজেটের পরতে পরতে লেখা আছে। যেমন ২৫ হাজারকিলোমিটার নতুন রাস্তা বানানো হয়েছে, দেড় লক্ষ মিটার ব্রিজ বানানো হয়েছে। এসব পড়তে গেলে হাসতে হাসতে পেটের খিল ধরে যায়।
গোয়েবলসের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, সে একই মিথ্যা কথা বার বার বলত। কিন্তু, সেই মিথ্যাকে সবাই মিলে ধরিয়ে দিলে লজ্জা পেতেন। কিন্তু, আমাদের সরকারগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লজ্জাহীনতা। এরা সেই কাকের মতো যে মনে করে, চোখ বন্ধ করে থাকলে কেউ তার চুরি দেখতে পারবে না।
উদ্ধৃতি, "ইচ্ছামতো খরচ বাড়ানোর বাজেট-জিয়া হাসান"
২। ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১’ প্রসঙ্গে-
আপনাদের মনে থাকার কথা, ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১’ এ সীমাহীন জালিয়াতির কথা। ২০১১ সালের ১৫ মার্চে আদমশুমারির রাতে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। পরিবর্তিতে এটা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ এবং হাসাহাসির প্রেক্ষাপটে সেটা সংশোধন করে দেখানো হয় দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার। অথচ প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে ঢের বেশি হবার কথা।
""বি বি সি বাংলার একটি প্রতিবেদন দিচ্ছি এখানে-
বাংলাদেশের জনগণনার চুড়ান্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার, যা আদমশুমারির প্রাথমিক ফলাফল থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ বেশি। গত বছর জুলাই মাসে ৫ম আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১-এর যে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, ২০১১ সালের ১৫ মার্চে আদমশুমারির রাতে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার।
এই আদমশুমারির তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিআইডিএস, তখনই এই ফলাফল সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে।ভুল সংশোধনের পর আদমশুমারির চুড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দশকে জনসংখ্যা প্রতিবছর ১.৩৭% হারে বেড়েছে যা ২০১১ সালে ছিল ১.৫৮%।
দেশে নারী ও পুরুষের সংখ্যা এখন প্রায় সমান - ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৫১৮ জন পুরুষ ও ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৭ জন নারী। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০১৫ জন। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তখন চুড়ান্ত ফলাফলে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৪ লাখ। ২০০১ সালে চতুর্থ আদমশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার।
Click This Link
বাংলাদেশে ড্যাটাবেইজ করতে পরিসংখ্যান ব্যুরো কে নির্দেশ দিলেই হয়, তারা কোন তথ্য উপাত্ত ছাড়াই সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর চাহিদা মাফিক উন্নয়ন পত্র হাজির করে দিবে। তার উপর চলে চাপাবাজির আর মিথ্যার বেসাতি।
আদমশুমারিতে মানুষ কম দেখালে লাভ কি? উন্নয়ন সূচকের সব গুলো সুত্রেই জনসংখ্যা ভগ্নাংশের নিচে থাকে (denominator)। সুতরাং ভগ্নাংশের হর যত ছোট ফলাফল তত বড়। তার তাই সুচকের ঊর্ধ্ব মাত্রা দেখানো সহজ।
এভাবেই বাংলাদেশে মিথ্যায় ভরে গেসে সকল পরিসংখ্যান। অর্থনীতির সূচক, বাজেট, প্রবৃদ্ধির হার, জি ডি পি, কর্মসংস্থান। মানহীন চাকুরীর হিসেবে যেখানে বেকারত্ব ৪০- ৫০% এর মধ্যে হবার কথা, সেখানে তা দেখানো হচ্ছে ৫% এ। ২০১১ আদমশুমারিতে দেশে নারী ও পুরুষের সংখ্যা এখন প্রায় সমান - ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৫১৮ জন পুরুষ ও ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৭ জন নারী। বেকার পুরুষ বাদ দিন, আমাকে কেউ বলুন- ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৭ জন নারীর কত জন, কত % কর্মজীবী?
এই মিথ্যার শেষ কোথায়?
আমাদেরকে মিথ্যার উপর বড় করা হয়েছে।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও কি মিথ্যায় বড় হবে?