গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দী নির্যাতনের ফটোগুলো দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে। তা থেকেই বুঝি, কেন বারাক ওবামা চান না বিশ্ববাসী ছবিগুলো দেখুক। তিনি কি বিব্রত ও ব্যথিত? নাকি অপ্রিয় সত্যের সামনে বিরক্ত। জানতে সাধ হয়, গণতন্ত্রের বরপুত্র হার্ভার্ডের সাবেক আইনের অধ্যাপক কীভাবে একে জায়েজ করেন?
ওই একই খবরে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনিকেও দেখায়। নাহ্, নির্যাতনের হুকুমদাতা মোটেই লজ্জিত ও অনুতপ্ত নন। ওবামার মতো তিনিও বিশ্বাস করেন, এসব প্রকাশ হলে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘৃণার ঝড় উঠবে। নিউজউইক ম্যাগাজিনে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির প্রভাবশালী প্রতিনিধি ফরিদ জাকারিয়া প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘তারা কেন আমাদের ঘৃণা করে?’ ‘হোয়াই ডু দে হেট আস?’ আজ তাঁকে জানাই, মহাত্মন এইসব ছবি দেখুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রশ্নটাকে ওভাবে সাজিয়ে শয়তানি করেছেন ফরিদ জাকারিয়া। তিনি বোঝাতে চান এই ‘তারা’ হলো মুসলমানরা আর ‘আমরা’ হলো গড়পরতা মার্কিনিরা। এটা বুশ আর লাদেনের মন্ত্র হতে পারে, কিন্তু সব মুসলিমই মার্কিন বিদ্বেষী আর বাকিরা আমেরিকার আশেক এমন কথা ডাঁহা মিথ্যা। গণহত্যা-আগ্রাসনকে ঘৃণা জানানো কারো একচেটিয়া ব্যাপার নয়, লক্ষ লক্ষ মার্কিনিও ইরাকে হামলার বিরোধী ছিলেন। তাদের সংখ্যা এখন কোটি কোটি; ওবামার বিজয়ই তার প্রমাণ।
ওবামার বিজয় প্রতিশ্রুতির বিজয়। ইরাক থেকে সৈন্য সরানো, গুয়ানতানামো কারাগার বন্ধ করা, আমেরিকার গরিব-দুঃখী মানুষের দায়িত্ব নেওয়া, ইত্যাকার গণদাবি পূরণের ওয়াদার বলে ওবামা বীরের জয় পান। কিন্তু তিনি কথা রাখছেন না। রাখবেন যে সে ভরসাও নাই। বুশ আমলে যে দশ লক্ষ মার্কিনিকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রেখে নজরদারি করা হচ্ছিল, সরকারি কর্মচারি ও সেনাদের দেশে-বিদেশ গণবিরোধী কাজকে প্রকাশ বা বিচার করা যাবে না বলে যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা আরো জোরদার হচ্ছে। তবে কি পুরোটাই পরিহাস? ওবামাও কি মার্কিন সামরিক-কর্পোরেট মহলের হাতের পুতুল? এর উত্তর ইতিহাসই দিক। আমরা কেবল ভাবছি ওইসব ছবির কথা। সাবেক মার্কিন জেনারেল আন্তোনিও তাগুবার ভাষায়, ‘বিশ্বাস করুন, ওই সব ছবির সামান্য বর্ণনাও সহ্য করা কঠিন।’ তাঁকে অবিশ্বাসের কিছু নেই। তিনি ইরাকের আবু গারাইবে বন্দী নির্যাতনের তদন্ত করেন এবং প্রতিবেদন জমা দেবার পর বরখাস্ত হন। যে নগ্ন, শেকল পরানো, চোঙ দিয়ে মুখ ঢাকা, রক্তাক্ত, নিজের বিষ্ঠা ও মূত্র খাওয়া ও মাখানো মানবদেহের মাংসপিণ্ড দেখেছি, তা ভোলা কঠিন। ইলেকট্রিক শক দেওয়া, কুকুর দিয়ে ছিন্নভিন্ন করা, হাত-পা ভাঙা, অসহনীয় পানির চাপের মধ্যে অজস্রবার চোবানো, মলদ্বারে লাঠি-টিউব-কাঁটাতার ঢোকানো, নখ উপড়ানো, এসিড গেলানো, গণধর্ষণ, যৌনাঙ্গে আঘাত করা, গলায় দড়ি বেঁধে কুকুরের মতো টেনে নেওয়া, এক বন্দীকে দিয়ে আরেক বন্দীকে ধর্ষণ করানো, একজনের যৌনাঙ্গ আরেকজনের মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া, নগ্নদেহগুলোকে মরা মুরগির মতো স্তূপ করে তার ওপর নাচা, দিনের পর দিন ঘুমাতে না দেওয়া; কী করা হয়নি তাদের ওপর?
মা-কে বন্দী করা হয়েছে। সঙ্গে নাবালক সন্তান। বোরকা পরা সেই মা-কে ১০-১২ জন মিলে ধর্ষণ করেছে। তাকে শেষ করে শিশুদের ধরেছে। সেসব দৃশ্য ভিডিও করে পর্নো সাইটগুলোতে তুলেও দেয়া হয়েছে! খেয়াল করুন, ঠাণ্ডা মাথায় নির্যাতনের পর তাদের লণ্ডভণ্ড-রক্ত-গু-মুত মাখা শরীরে পা তুলে হাসিমুখে ছবি তুলছেন আপনি_সদ্য শিকার করা বাঘকে পদানত করার তৃপ্তি ফুটে উঠছে আপনার চোখে-মুখে! আনন্দের ভাগ দিতে সেই সব ফটো বন্ধুকে পাঠাচ্ছেন, কিংবা দিচ্ছেন পর্নোসাইটে!!!
১৪ বছরের ইরাকি কিশোরী জানাবিকে বাবা-মা আর ছয় বছরের বোনের সামনে ধর্ষণ করা হয়। কাজ শেষে তাদের চারজনকেই গুলি করে মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানে পড়তে যাওয়া ১৭ বছর বয়সী ইয়েমেনি নাগরিক আলি আহমেদকে তার মেসের আরও ১৫ জনসহ আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় গুয়ানতানামো কারাগারে। সেই দোজখবাস পাঁচ বছর সহ্য করার পরপর ভাগ্যের জোরে মার্কিন আদালতের রায়ে সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়। তত দিনে ওই ১৫ জনের ৫ জন আত্মহত্যা করে। এগুলো হরেদরে বলা উদাহরণ মাত্র।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের যে যুক্তিই থাক, তার সঙ্গে গণহত্যা, নির্যাতন ও পাশবিকতা অবিচ্ছেদ্য হয়ে গেছে। ওবামা ও তাঁর দল বলেছিল, পরিবর্তন আসবে। সকলই গরল ভেল। বুশ-চেনি আর ওবামা-হিলারি যেন ব্যাটমান সিরিজের নতুন ছবি দা ডার্ক নাইট -এর ভিলেন আর নায়কের ভূমিকায়। সেখানে ভিলেন বলে ব্যাটম্যানকে, আমাতেই তুমি পূর্ণ হবে। হ্যাঁ, কালো ওবামা সাদা বুশ/চেনির কাজকেই সম্পূর্ণ করছেন। আমেরিকা বদলায়নি, ওবামাই বদলে যাচ্ছেন। বুশের কায়কারবারে আমেরিকার ভাব ও মূর্তি অর্থাৎ আদর্শ ও ক্ষমতার ভিত নড়ে গিয়েছিল। মানুষ বুশের মধ্যে এক রক্তপিপাসু খুনীকে দেখে যতটা না আঁতকে উঠেছিল, তার থেকে বেশি ত্রাসিত হয়েছে বুশ সরকারের যুদ্ধকে শান্তি, অন্যায়কে ন্যায়, দমনকে গণতন্ত্র বলে দাবি করার দম্ভ দেখে। ষাট দশক থেকে অনেক দেশেই সিআইএ গোপন কারাগার চালায়, বিভিন্ন দেশের সন্দেহভাজন শত্র“দের সেখানে রেখে শায়েস্তা করে। বিশ্বের অনেক দেশের সেনাবাহিনীকে নির্যাতন, হত্যা, ক্যু ইত্যাদির সবক দেওয়া বা মার্কিন সেনাদের প্রশিণ ম্যানুয়ালে ১৯ রকম নির্যাতনের পদ্ধতি থাকাও ওপেন সিক্রেট। কিন্তু তারা নিজেরা কখনো এসবকে বুশ গংয়ের মতো করে জাতীয় নিরাপত্তার ‘বৈধ অঙ্গ’ বলে খোলাখুলি দাবি করেনি। ওবামা এখন ন্যাংটো রাজার গায়ে পোশাক পরাতে নেমেছেন। বুশ আমেরিকাকে চোরাবালিতে টেনে নিয়েছিলেন, ওবামা সেটাকে আবার প্রশস্ত পথে আনতে চান। তাই অভিষেক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘরকে পাথুরে ভিত্তি দিতে হবে।’ কেমন পাথুরে সেই ভিত?
গুয়ানতানামো ও বন্দী নির্যাতন বিষয়ে ওবামার নির্দেশের সারমর্ম হলো: ১. সন্ত্রাস, নির্যাতন, আটকাদেশের মেয়াদ ইত্যাদির সংজ্ঞাকে অস্পষ্ট রাখা যাতে তারা আগের ধারা বহাল রাখতে পারে, তবে গোপনে। ২. এসব কাজ নিজেরা না করে আউটসোর্সিং-য়ের পন্থায় তথা এমন দেশে করা যেখানে এগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। ৩. জর্ডান, কাতার, পোল্যান্ডের মতো দেশে গোপন বন্দিশিবিরগুলো বহাল রাখা এবং আফগানিস্তান ও ইরাকে নতুন দুটি বিরাট সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করা। এই হলো ওবামার ‘চেঞ্জের’ মাজেজা। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চালানও তো একটা পরিবর্তন, তাই না?
বিশ্বের কোনো আইনেই বন্দী নির্যাতন জায়েজ নয়। ওবামাও সেটাই মনে করেন। তার পরও তা চলবে, কারণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে, নির্যাতনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য দিয়ে আগাম সন্ত্রাসী হামলা ঠেকিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো যাবে! যুদ্ধই যদি তা, তাহলে বন্দীরা যুদ্ধবন্দীর অধিকার পাবে না কেন? সাবেক মার্কিন প্রতিরামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেন, তারা ‘বেআইনি যোদ্ধা’। কারণ তাদের পেছনে কোনো রাষ্ট্র নেই। তাই জেনেভা কনভেনশন তাদের বেলায় খাটবে না। যুক্তিটা এমন, আপনার চোখ তুলে নিয়ে আপনাকেই দোষানো হচ্ছে, আপনি দেখেন না কেন?
বিষয়টা যাচাই দাবি করে। প্রথমত, দেখা যাচ্ছে যে আটককৃতদের বেশির ভাগই নিরীহ বিদেশি নাগরিক, সুতরাং তাদের দেওয়া তথ্য দিয়ে কীভাবে সন্ত্রাস মোকাবিলা সম্ভব? দ্বিতীয়ত, নির্যাতনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কতটা বিশ্বাস্য? মার্কিন আইনে এ ধরনের সাক্ষ্য ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে যে অপরাধের বিচার বা শাস্তির সম্পর্ক নেই তা পেন্টাগনের আইনবিদরাই মানছেন।
এ ধরনের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন ঘটছে বন্দীরা ‘কিছু জানে’ এই অজুহাতে। কীরকম সেটা? একটি উদাহরণ দিই। গত ২৬ মে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় সংবাদ আসে যে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। জামিল রহমান নামের ওই ব্যক্তি ২০০৫ সালে বাংলাদেশের একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আটক হন। তাঁকে তাদের সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এমআই ফাইভের দুই এজেন্টের উপস্থিতিতে তাঁকে নগ্ন করে পেটানো হয়। ‘তথ্য না দিলে’ পাশের ঘরে আটক তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ওই ব্যক্তি বলেন যে, তিনিই লন্ডনের পাতালরেলে বোমা হামলার হোতা। দুই বছর পর তিনি ছাড়া পান এবং ব্রিটেনে গিয়ে বেআইনি আটক ও নির্যাতনের মাধ্যমে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগে মামলা ঠুকে দেন। বাংলাদেশ-পাকিস্তান-মিসর-কলম্বিয়া-সোমালিয়া প্রভৃতি দেশে রকম ঘটনা আকছার ঘটে চলেছে। র্যাব ও ডিজিএফআই-এর সঙ্গে মার্কিন-ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষণ, বন্দী-হস্তান্তর ইত্যাদি ব্যাপারের মাখামাখিও এখন অনেকটা প্রকাশ্য।
স্রেফ সন্দেহের ভিত্তিতে নির্যাতন মানবতাবিরোধী। মুসলিম মানেই সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী, এ রকম চিন্তা হিটলারি চিন্তা। কেউ খুন করতে পারে এই অনুমানে তাকে আগাম খুন করার বুশীয় নীতিও কি তেমন নয়? এসব ঘটনা আইনী বাহিনীর সন্ত্রাসমূলক আচরণেরই প্রমাণ। বুশ সন্দেহের বশে ইরাক আক্রমণ করেছিলেন, সেই সন্দেহের মূল্য দশ লাখ মানুষের মৃত্যু আর দেশটির ৫০ বছর পিছিয়ে যাওয়া। তেমন সন্দেহের বশে ড্রোন হামলা করে নিরীহ মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের মূল্য যে আইন ও নৈতিকতার ধ্বংস, তা কি তাঁরা বোঝেন? এ দুটো বাদ দিলে মানুষ আর পশুতে ফারাক ঘুচে যায়, সমাজে কায়েম হয় জংলি শাসন।
হাজার হাজার বছরে অনেক মূল্য দিয়ে মানবজাতি যেসব আইন ও নৈতিকতাকে অলঙ্ঘনীয় বলে প্রতিষ্ঠা করেছে, আজ সেসবের গোড়ায় কুড়াল পড়ছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সন্ত্রাসী হয়ে যেতে পারে, আইন ভাঙতে পারে কিন্তু রাষ্ট্র যখন খোলাখুলি রক্তপিপাসু আচরণ করে, তখনই ‘সব কিছু ভেঙে পড়া’র কেয়ামত নামে। কেননা রাষ্ট্র এই দাবিতেই প্রতিষ্ঠিত আছে যে তা জ্ঞানত অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না, প্রতিহিংসার রিপু দ্বারা চালিত হবে না। এই আস্থা নড়ে গেলে আমরা কিভাবে আর পরস্পরকে বিশ্বাস করবো? কীভাবে বিশ্বাস করবো আমারে রাষ্ট্রকে? অথচ কিনা গোপন আদালত, অপহরণ, নজরদারি ইত্যাদির মাধ্যমে আসলে দাবি করা হচ্ছে যে, তাদের সকল কাজই মহৎ উদ্দেশ্যের নিমিত্তে। ধার্মিকরা যেভাবে ঈশ্বরের কর্মে পরম আস্থা রাখে, রাষ্ট্রও আজ তেমন বিশ্বাস ও আনুগত্য দাবি করছে। সন্ত্রাস দমনের সকল আইন ও কাজের নিহিত অর্থ এটাই।
বন্দী নির্যাতন কোনো যুক্তিতেই বৈধ নয়, যেমন ধর্ষণের পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এটাই প্রগতি, এটাই সভ্যতা। এর পে সওয়াল করা বর্বরতার সমান। আজ একদিকে কিছু মানুষ মানবোত্তর দানব হয়ে বাদবাকিদের বানাচ্ছে মানবেতর। রোমান সাম্রাজ্যের আইনে এরকম বাতিল মানুষকে বলা হতো ‘হোমো সাসের’। এদের হত্যায় অপরাধ হতো না, আত্মপক্ষ সমর্থনের বালাই তাদের জন্য খাটতো না। এমনকি তাদের মৃত্যুও মহিমাহীন। আজ ‘সন্ত্রাসবাদী’রাই নয় কেবল; রুয়ান্ডা, বসনিয়া, আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনের মানুষ বা অশ্বেতাঙ্গ যুদ্ধবন্দীদের হোমো সাসেরের স্ট্যাটাসে নামানো হয়েছে। এদের নিয়ে যা খুশি তা-ই করা চলবে কিন্তু একেবারে ফেলেও দেওয়া হবে না। দুর্ভি-মহামারি বা গৃহযুদ্ধে তারা ‘মানবিক হস্তপে’ (আফগানিস্তান বা দারফুরের মতো) পাবে। এক হাতে কিছুকে মেরে কিছুকে রেখে ‘শান্তি’ কায়েম চলবে, আরেক হাতে দেওয়া হবে ত্রাণ। বোমারু বিমান আর মানবতাবাদী সাহায্যের বহর এক প্যাকেজেরই অংশ। এক আফগান হোমো সাসের এর রহস্য না বুঝে এক সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করে সে, যে বিমানটি চক্কর মারছে সেটা কী ফেলবে বোমা না রুটির বস্তা? এই হলো আমাদের অবস্থা।
এই বাস্তবতায় শান্তি ও যুদ্ধ সমার্থক। হিটলার যুদ্ধাবস্থাকে জার্মানির জন্য সাধারণ অবস্থায় পরিণত করেছিলেন, আর আজকের আমেরিকা যুদ্ধকেই শন্তির সহযোগী করে দাঁড় করাচ্ছে, শান্তির পর্দা ঝুলিয়ে রেখেই একের পর এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মানবেতর হোমো সাসেরদের দেশে যখন যুদ্ধ চলে তখন নিউইয়র্ক-লন্ডন-প্যারিস-আমস্টারডামে বিরাজ করে শান্তি। এ তরিকা ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীন উভয়কেই অ-মানুষ বানাচ্ছে। দৈত্য হতে গিয়ে একদল নীতি-নৈতিকতাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে, আরেক দল অধিকার বর্জিত হয়ে ‘অবলা’ জীবের ভাগ্য বরণ করছে। দানবকে মানুষে পরিণত না করে তাই সম্ভব না মানবেতর হোমো সাসেরদেরও মানুষের জীবন দেওয়া।
এক অত্যাচারির পতনে দুটো মানুষ মুক্ত হয়। একজন সে নিজে, অপরজন যে নির্যাতিত। আসনু, আমরা উভয়েরই মুক্তি কামনা করি।