সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের দেহ-মন বিনম্র হয়ে আল্লাহর যিকরে ঝুকে পড়ে।এটা আল্লাহর হেদায়াত। তিনি এর দ্বারা যাকে ইচ্ছা হেদায়াত প্রদান করেন।আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন হেদায়াতকারী নাই।
সূরাঃ ৬ আনআম, ৩৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৯। আর যারা আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা মনে করে, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত মুক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন হেদায়াতের সরল সহজ পথের সন্ধান দেন।
সূরাঃ ৬১ সাফফ, ৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫। স্মরণ কর মুসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ যখন তোমরা জান যে, আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল? অত:পর তারা যখন বক্র পথ অবলম্বন করলো তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ১৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৩। বস্তুত শুধু তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দূর করে দিলাম। তারা কালামকে ওর স্থানসমূহ থেকে বিকৃত করে দেয়। আর তাদেরকে যা কিছু উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তার মধ্য থেকে এক বড় অংশ ভুলে যায়। আর ভবিষ্যতেও তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া তাদের কোন না কোন খেয়ানতের খবর তোমার কাছে আসতে থাকবে।অতএব তুমি তাদেরকে মাফ করতে থাক এবং তাদেরকে উপেক্ষা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচারী লোকদেরকে ভালো বাসেন।
* আল্লাহর পক্ষ নিয়ে পাপ থেকে বিরত থেকে সদাচারে লিপ্ত থাকলে হেদায়াত পাওয়া যায়।
সূরাঃ ১ ফাতিহা, ১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। সমস্ত প্রশংসা জগৎ সমূহের প্রতি পালক আল্লাহর।
* সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর বদনাম করা যাবে না।
সূরাঃ ৪৮ ফাতহ, ২৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৯। মোহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে।তাদের লক্ষণ তাদের মুখমন্ডলে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে: তওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ এবং ইঞ্জিলেও তাদের বর্ণনা এরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছ, যা থেকে নির্গত হয় নতুন পাতা, অতঃপর ইহা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীদের জন্য আনন্দ দায়ক। এভাবে মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা আল্লাহ কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।
* আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের (রা.) সুনাম করতে হবে। তাঁদের কারো কোন বদনাম করা যাবে না।
সূরাঃ ৪৯ হুজরাত, ১০ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০। মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই; সুতরাং তোমরা ভাইদের মাঝে ইসলাহ (শান্তি স্থাপন) কর, আর আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।
সূরাঃ ৪৯ হুজরাত, ১২ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২। হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করবে না এবং একে অপরের গিবত (পশ্চাতে নিন্দা) করবে না। তোমোদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়া পছন্দ করবে? তোমরা তো এটা অপছন্দ কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালূ।
সূরাঃ ১১১ লাহাব, ১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।
* কোন মুসলিমের গিবত করা যাবে না। তবে কাফেরের গিবত করা যাবে। কারণ আল্লাহ কাফেরদের গিবত করেছেন।
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতি সঞ্চার করেছেন, ফলে তাঁর দয়ায় তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে।তোমরাতো অগ্নি কুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ উহা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃতকরেন যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।
# সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির
বেশ কয়েকটি হাদিসে এমন বর্ণিত রয়েছে- একতার সময় মানুষ ভুল ও অন্যায় থেকে রক্ষা পায়। আবার অনেক হাদিসে মতানৈক্য থেকে ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, কিন্তু এতদ সত্ত্বেও উম্মতের মধ্যে মতপার্থক্য ও অনৈক্যের সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং তাদের মধ্যে তেয়াত্তরটি দল হয়েগেছে, যাদের মধ্যে একটি দল মাত্র জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। এরা ঐসব লোক যারা এমন বস্তুর উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যার উপর স্বয়ং রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ (রা.) প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
* মুসলিমদের জাহান্নামী বাহাত্তর দলের গিবত করা যাবে। কোন দল হেদায়াত প্রাপ্ত।
সূরাঃ ৩৫ ফাতির, ২৮ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৮। এভাবে রং বেরং- এর মানুষ, জন্তু ও আন’আম রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তাঁকে ভয় করে।নিশ্চয়্ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল।
সূরাঃ ২৯ আনকাবুত, ৪৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪৩।এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য পেশ করে থাকি, যেগুলো কেবল আলেমরাই বুঝে থাকে।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-
৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।
* আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল হেদায়াত প্রাপ্ত বিধায় আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের অনুসারী মুসলিমদের গিবত করা যাবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, মান সাতারা মুসলিমান সাতারাল্লাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতে। যে মুসলিমের দোষ গোপন করে আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ গোপন করবেন। সুতরাং আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের অনুসারী মুসলিমদের দোষ গোপন করতে হবে। তাহলে কিয়ামতে আল্লাহ এমন ব্যক্তির দোষ গোপন করে তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে পাঠিয়ে দিবেন।
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।
* আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে মতভেদে লিপ্ত হওয়া হারাম। সুতরাং আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে মতভেদে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে।
সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-
১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে যে দিকে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।
সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।
* আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে অভিন্ন ইবাদত পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। নতুবা জাহান্নামে যেতে হবে। তারপর কালেমার কারণে কেউ মুক্তি পেলে পাবে।
মুসনাদে আহমদ, ২০৩৩৫ নং হাদিসের অনুবাদ-
২০৩৩৫। হযরত আবু যার গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন নবির (সা.) নিকট উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মতের জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি। তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মতের জন্য দাজ্জালের চাইতেও বেশী ভয় করেন? তিনি (সা.) বললেন, পথভ্রষ্ট আলেমগণ।
* আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের বিপরীতে কোন বড় আলেমের অনুসারী হওয়া যাবে না। কারণ এমন আলেম দাজ্জালের চাইতেও বেশী জঘণ্য পথভ্রষ্ট। এরা এলেম হাসিল করেছে সুনামের জন্য। এরা আল্লামা, শায়েখ ইত্যাদি খেতাব পেয়ে তাদের পাওনা পেয়ে গেছে। পরকালে এদের জন্য বরাদ্ধ হলো জাহান্নাম।
সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের মধ্যে আমির।কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিরোধ দেখাদিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট। ওটা উত্তম এবং পরিনামে ভাল।
মেশকাত ২২৪ নং হাদিসের (ইলম অধ্যায়) অনুবাদ-
২২৪। হযরত আওফ ইবনে মালেক আশজায়ী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্বয়ং আমির অথবা আমীরের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা কোন অহংকারী ব্যতীত অপর কেউ ওয়াজ করতে পারে না।
* আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল আমিরগণের সর্ববৃহৎ দলের অনুসারী। তাদের সাথে মতভেদকারী সকল আলেম অহংহারী।
সূরাঃ ২ বাকারা, ৩৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৪। আর যখন আমি ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিশ ছাড়া সবাই সিজদা করেছিল; সে অমান্য করল ও অহংকার করল।সুতরাং সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়েগেল।
* আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে মতভেদকারী আলেম হলো ইবলিশ এবং কাফের। এদের অনুসারী হলে জাহান্নাম ছাড়া উপায় নাই।
সূরাঃ ২ বাকারা, ২৮৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৮৬। আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা ভুলে যাই অথবা আমাদের ত্রুটি হয় তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না।হে আমাদের প্রতিপালক এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করবেন না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।আমাদের পাপ মোছন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন।
* ভুল করে কেউ আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে মতভেদ করে থাকলে সে ক্ষমা পাবে। তবে এমন আলেমের অনুসরন করা যাবে না। এভাবে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) পক্ষ অবলম্বন করলে হেদায়াত পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২