আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি যে যয়নবের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিয়ে নিয়ে অনেক নাস্তিক/তথাকথিত মুক্তমনারা নেট জগতে ঘৃণার বানী ছড়াচ্ছে। আর শার্ট প্যান্ট পরিহিত সাধারন যুবকরা সীরাত [ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী কে সীরাত বলা হয় ] সম্পর্কে ভাল করে পড়াশুনা না থাকার কারনে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই ভাবলাম এই বিষয় নিয়া একটা ব্লগ লিখি।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৩ জন ছেলেই শৈশব কালে মারা গিয়েছিল। আর
যায়েদ ছিল আমাদের নবীর দাস। যায়েদ শৈশব কালে জাহেলিয়াত যুগে ঘটনাচক্রে দাস হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নীত হন। পরবর্তীতে যায়েদের পিতা, চাচা যায়েদ কে মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্ত করতে চাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদের পিতা কে বলেন মুক্তিপণ লাগবে না। আমি বিনা মুক্তিপণেই যায়েদ কে স্বাধীন করে দিলাম। কিন্তু যায়েদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ছেড়ে আর তার পরিবারের কাছে যায় নি। যায়েদ তার শৈশব ও যৌবণকাল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছেই কাটায়। এবং নবুয়তের প্রথম যুগেই যায়েদ মুসলমান হয়ে যায়। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদ কে খুব ভালবাসতেন। জাহেলিয়াতের যুগে যায়েদ কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালক পুত্রের মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং যায়েদ কে ডাকা হত যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ। যায়েদের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আপন ফুফাত বোন যয়নব কে বিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু পালক পুত্র কন্যা নেয়া ইসলামী শরীয়তে যখন হারাম হয় এবং পালক পুত্র কে কখনোই নিজের পুত্র বলে ডাকা যাবে না এই ওহী যখন নাযিল হয় তখন যায়েদ শুধু একজন মুক্ত দাসের মর্যাদা পায়। অর্থ্যাত্ যায়েদের স্ত্রী যয়নব কখনই আমাদের নবীর পুত্র বধু ছিল না বরং সে ছিল একজন দাসের স্ত্রী। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই তাঁর পুত্র বধু কে বিয়ে করেননি বরং তাঁর দাস যায়েদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে যয়নব ছিল আমাদের নবীর আপন ফুফাত বোন। বিয়ের পরে যায়েদের সাথে যয়নবের বনিবনা হয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মাঝে তালাক হয়। পরবর্তীতে যয়নবের একান্ত ইচ্ছায় এবং পালক পুত্র নিজের পুত্র নয় শুধু এটা বুঝানোর জন্যই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন। মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আপন ফুফাত বোন যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন। যে যয়নবের বিয়ে নিয়ে এত কথা সেই যয়নবের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩৭ বছর।
জাহেলিয়াত যুগের অনেক প্রথাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দ্বারা প্রথম রহিত করেছিলেন। যেমন খুনের বদলে খুন এই রীতি টা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহিত করেছিলেন উনার বংশের ইবন রবীয়া ইবন হারিছের রক্তের বদলা বাতিল ঘোষনা করে, সুদ প্রথা প্রথম বাতিল ঘোষনা করেছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাদা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদের দাবী মাফ করে ঠিক তেমনি পালক পুত্র সম্পর্কে যেইসকল অনৈসলামি আক্বীদা ছিল আরব সমাজে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যয়নব কে বিয়ে করার মাধ্যমে দূর করেছিলেন। জাহেলিয়াতের যুগে পালক পুত্র সম্পত্তির অংশীধার হত এবং পালক পুত্র কে নিজের পুত্র হিসাবেই গন্য করা হত। কিন্তু এখন ইসলামি আইনে পালক পুত্র কন্যা বলতে কিছু নাই। পালক পুত্র কন্যার মাধ্যমে পর্দা প্রথা নষ্ট হয়। তবে মাহরুম অর্থ্যাত্ যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদের কে দত্তক/পালক নেয়া যাবে। যেমন আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা তাঁর আপন ভাইয়ের ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন।
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
স্টালিনের নৃশংসতার স্বীকার এক বাঙ্গালী বিপ্লবী
মাওসেতুং এর সময় চীনা মুসলমানদের দূর্দশতার কথা শুনুন
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২৩