somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় উপমহাদেশে যুদ্ধের ছায়া: বিদেশী পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ, পর্ব ৪৩

২০ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দি টাইমস, ১৩ জুলাই, ১৯৭১

পিটার হ্যাজেলহার্স্ট

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রি এখন পর্যন্ত মুখ না খুললেও মিসেস গান্ধীর সরকারে থাকা এবং সরকারের বাইরে থাকা অনেক ভারতীয়ই মনে করে সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই কেবল উদ্বাস্তু-সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। আর এজন্য যুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে ভারতবাসীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধবাদীরা মনে করেন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিণতির একটি আংশিক ফলাফল হিসেবে ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুর দায়ভার ভারতকে বহন করতে হচ্ছে। আর শান্তিবাদীরা মনে করেন যুদ্ধের মূল্য কেবল অর্থনৈতিক লাভালাভ দিয়ে যাচাই করা যাবে না; ভারত আক্রমণ করলে চীন পাকিস্তানের পক্ষে এসে দাঁড়াবে। যুদ্ধবাদীরা মনে করছেন বর্তমান পরিস্থিতি পিকিং ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ করার নাটকীয় সিদ্ধান্ত নেবে না। আর যেকোনো সংঘাতে নিজের শক্তি অবহিত করার ঝুঁকি নিতেই হয়।

এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি ভারতের নিরাপত্তা অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ ইনস্টিটিউট যুদ্ধের খরচ ও উপযোগিতা, এই অঞ্চলে সামরিক ক্ষমতার ভারসাম্য ও ভারতের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বিষয়ক একটি সমন্বিত দলিল তৈরী করেছে। দলিলটি একটি আশংকাজনক উপসংহারে পৌঁছেছে যে যুদ্ধ ছাড়া ভারতের আর কোনো বিকল্প নেই। ইনস্টিটিউটের পরিচালক মি. সুব্রামনিয়াম কর্তৃক প্রস্তুতকৃত দলিলটি সিনিয়র সম্পাদক, কর্মকর্তা ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে একটি রুদ্ধদ্বার সেমিনারে দলিলটি উপস্থাপিত হয়। দলিলে বলা হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের কিছু অংশ দখল করে নেবে যাতে ঐ অংশে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করা যায়। একইসঙ্গে বলা হয়েছে যদি পূর্ব পাকিস্তানের কিছু অংশ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা যায় তবে বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকারকে সব ধরনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিয়ে সেখানে স্থাপন করা যাবে।

"এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে নিরাপত্তা পরিষদ দু-দেশকেই যুদ্ধ শেষ করার জন্য আহ্বান জানাতে সভায় বসবে। যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে না বেশ খানিকটা সময় জুড়ে চলতে থাকবে, এটাই হলো ভারতের বিবেচনার বিষয়। এই পর্যায়ে ভারতের উদ্যোগ হবে বাংলাদেশকে বিতর্কের অন্যতম একটি পক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সত্যি অর্থে, এটাই হলো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবার ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা। এটা পরিস্কার করতে হবে যে বাংলা অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর হবে না, যতক্ষণ না বাংলাদেশের কমান্ডারকে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করার জন্য একজন স্বাধীন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে। আর বাংলাদেশ সরকারকে এই বিতর্কে একটি স্বীকৃত পক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।"

মি. সুব্রামনিয়ামের উপসংহারের সঙ্গে কেউ সম্মত নাও হতে পারেন। কিন্তু এই দলিলটি ভারতব্যাপী যে অধৈর্যের মনোভাবই পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা নির্দেশ করছে। আর ভারতের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পরিমণ্ডলে যুদ্ধের ব্যাপারটি যে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাও দলিলটি নির্দেশ করছে। উপসংহারে পৌঁছার পূর্বে মি. সুব্রামনিয়াম একটি সশস্ত্র সংঘাতের সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন: যুদ্ধের খরচাপাতি, যুদ্ধের বিকল্পসমূহ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সক্ষমতা, ভারতের পক্ষের ও বিপক্ষের ফ্যাক্টরসমূহ এবং চীনের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা, এসবকিছুই দলিলে বলা হয়েছে।

'বাংলাদেশ এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা -- ভারতের করণীয়' শীর্ষক দীর্ঘ দলিলে বলা হয়েছে প্রথমবারের মতো জঙ্গি তৎপরতায় যাওয়ার চেয়ে (যা পুরোমাত্রায় যুদ্ধের জন্ম দেবে) ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে আন্তর্জাতিক আর্থিক সাহায্যের আওতায় আনাটা ভালো হবে, এরকম ধারণার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। "উদ্বাস্তুদের সাহায্য করাই কি সমস্যার একমাত্র দিক?" এটা স্পষ্ট যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে তার উপনিবেশ-সদৃশ শাসন চালিয়ে যাবে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধ চলতেই থাকবে। "আর এখানে এই প্রশ্নটার মুখোমুখি ভারতকে হতে হবে যে এসবে অংশ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আছে কিনা। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলার লোকজনের সহানুভূতি পুরোপুরিই আছে। এর ফলে, বাংলার লোকজনকে রক্ষার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেবার জন্য ও নানাভাবে সাহায্য করার জন্য ভারতকে বড়ো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। যদি বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ আন্দোলন চলতে থাকে এবং নেতৃত্ব আরও অধিক বাম-ঘেঁষা হয়ে থাকে তবে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।"

দলিলটিতে এরকম বলা হয়েছে যে, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রতিরোধকারীদের খুঁজতে নিঃসন্দেহে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত আসবে এবং তখন তাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ভারতের জন্য কোনো কিছু হতে পারে না। "অপেক্ষা করা ও দেখার নীতি অনুসরণ করলে বাংলাদেশ সীমান্তে সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে এবং যেকোনো সময় পুরোমাত্রায় যুদ্ধের সম্ভাবনা সেখানে থাকবে। বাংলাদেশ বরাবর যেকোনো সময় আমাদের বিশাল বাহিনী নিয়োগ করতে হতে পারে এবং এধরনের নিয়োগের কারণে বাড়তি খরচ গুনতে হবে। বাংলাদেশে পাকিস্তান চার থেকে পাঁচ ডিভিশন সৈন্য স্থায়ীভাবে রাখবে বলে মনে হচ্ছে এবং সেখানে এই প্রক্রিয়া তারা শুরুও করেছে।"

মি. সুব্রামনিয়াম দাবি করেছেন যে যদি উদ্বাস্তুদের ব্যয়ভার বহন করার ব্যাপারটি বৈদেশিক শক্তির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, এরপরও ভারত ব্যাপক নিরাপত্তা-হুমকির মুখোমুখি হবে। দেশের ভেতরে পূর্ব বাঙালিদের জন্য একধরনের প্রতিশ্র“তি-ভাবনা গড়ে তোলার জন্য তিনি সরকারকারকে সর্বপ্রথমে সুপারিশ করেছেন। "এই প্রতিশ্র“তিগুলো দেশের ভেতরে সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করবে এবং দেশের বাইরেও এইসব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরী হবে তা দূর করবে।" সামনের বছরে অনেকগুলো বড়ো রাজ্যে যে-নির্বাচন হবে, তাতে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পার্টি যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন না হয়, সেজন্যই এই সুপারিশ করা হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।

তিনি আরও বলেছেন যে পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তুদের ব্যাপক সমাগম এই স্পর্শকাতর ও বিক্ষুব্ধ রাজ্যটিতে উদ্বেগ তৈরী করবে। দলিলটিতে পূর্ব বাংলার বিপজ্জনক পরিস্থিতির বর্ণনা রয়েছে এবং উদ্বাস্তুদের কেন্দ্র ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লেগে যাবার সম্ভাবনা আছে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেছেন যদি বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সমাধান না হয় তবে ভারত ও পাকিস্তানকে, ইতোমধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে হবে। "যদি বাংলাদেশের অভ্যুদয় না হয় এবং পাকিস্তান ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা চালিয়ে যায় তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তেই থাকবে এবং স্থায়ী হয়ে যাবে। আর এটাই দু-দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা-বাজেটকে বাড়িয়ে তুলবে। বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে কোনো প্রকারে নিয়ন্ত্রণ আনা গেলে, পাকিস্তান কাশ্মিরেও সমস্যা সৃষ্টি করা থেকে বিরত হতে পারে।"

বিশ্বশক্তি ইয়াহিয়া খানকে একটি কার্যকর রাজনৈতিক সমাধান করতে বাধ্য করতে সক্ষম হবে অথবা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করে ফেলবে এরকম অবাস্তব কল্পনায় না থেকে সুব্রামনিয়াম বলেছেন যে, "এইসব অলীক আশা এখন সুদূরপরাহত।" এটা নিশ্চিত যে পাকিস্তানি অর্থনীতি বাংলাদেশ-অভিযানের খরচ এবং নতুন দুই ডিভিশন সৈন্য বাড়ানোর খরচ অনুমোদন করেছে। পাকিস্তানি শাসকরা পশ্চিম পাকিস্তানে ধীরগতির উন্নয়নের বিনিময়ে হলেও বাংলাদেশের ওপর ঔপনিবেশিক শাসনকে বেছে নিয়েছে। পশ্চিমা শক্তি পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদান বন্ধ রাখার ব্যাপারে যে-প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেছিল তা পালন করে নি। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও ভারতের উদ্বাস্তু-সমস্যা হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত না হচ্ছে বিশ্বঅর্থনীতির পরিস্থিতি এরকম না যে, এপর্যন্ত তারা যা করেছে তার বেশি কিছু করবে।

"সমস্যাটির আন্তর্জাতিক একটি চেহারা না-থাকার কারণে বিশ্বশক্তি এখানে কিছু করার ক্ষেত্রে ভারতকে সহায়তা করার চাইতে, নিজেদের বাধাগ্রস্ত মনে করছে। এই বাধা ভারতের পক্ষ থেকেই এসেছে, কারণ বৈদেশিক শক্তি কী করতে পারে সেব্যাপারে ভারত সীমারেখা আরোপ করেছে। এখন ভারতের পক্ষ থেকে এটা ভাবা অবাস্তব হবে যে, বৈদেশিক শক্তি ব্যাপারটিকে আন্তর্জাতিক একটি সমস্যা বলে বিবেচনা করবে। ভারতই সমস্যাটিকে আন্তর্জাতিক চেহারা নিতে দেয় নি। ফলে, আন্তর্জাতিক চাপে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন কোনো সুযোগ আর নেই। যারা যুদ্ধের পক্ষপাতী নন তারা এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখেন নি।"

দলিলটি সামরিক শক্তির ভারসাম্য নিয়েও কথা বলেছে। সেখানে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের শহরগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং সেখানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ভারতীয় বাহিনীর শক্তিমত্তাকে খর্ব করার ক্ষমতা নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। "পাকিস্তানের মতো দেশের কোনো এয়ারক্র্যাফট-শিল্প নেই, এবং নিজেদের বিমানশক্তিকে রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো খুব সামান্যই উপায় তাদের হাতে আছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীকে নিরস্ত্র করার মতো সত্যিকারের ক্ষমতা তাদের নেই। ইসলামাবাদের কয়েকজন বেপরোয়া লোকের পুরো অযৌক্তিক তৎপরতার জবাব দেবার জন্য এটা বলা হচ্ছে না, কিন্তু এধরনের উদ্যোগের প্রভাবের কোনো তাৎপর্য নেই বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানী নৌবাহিনীর উদ্যোগের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। তাদের মহাসাগরগামী তিনটি সাবমেরিন রয়েছে এবং আরও একটি কয়েকদিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দেবে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া মনে করা হয় যে, তাদের এক ডজনেরও বেশি, পানির নিচে চলতে পারে এমন, এয়ারক্র্যাফট রয়েছে যা উপকূলীয় খনি-অনুসন্ধান, স্যাবোটাজ করতে এবং যাতে টর্পেডো ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং যেগুলোর টর্পেডো নিক্ষেপের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এই নৌশক্তিগুলোর ক্ষমতা খুবই সীমিত এবং পাকিস্তানের আশেপাশেই এগুলোকে নিয়োজিত রাখতে হবে। নৌ-আক্রমণ থেকে পাকিস্তান কিছু করতে পারবে কিনা এবিষয়ে সন্দেহ আছে। তেলসহ ভারতের বৈদেশিক পণ্যের বেশিরভাগ আসে সমুদ্রপথে। কিন্তু ভারত যেমন পাকিস্তানের পণ্য পরিবহণে ভৌগোলিক কারণে বাধা প্রদান করতে পারবে, পাকিস্তানের সেই সুবিধা নেই। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের শত্র“তা পূর্ব পাকিস্তানে আরও অতিরিক্ত সৈন্য সরবরাহ বন্ধ করতে পারবে এবং সেখানে ইতোমধ্যে নিয়োজিত সৈন্যদের আটকে ফেলা যাবে।"

মি. সুব্রামনিয়াম পাকিস্তানের সঙ্গে আরেকটি সংঘাতের মুহূর্তে তাকে সামরিক সমর্থন কারা দেবে তা নিয়েও আলোকপাত করেছেন। "ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতার পর যুক্তরাষ্ট্র এখানে আবার হস্তক্ষেপ করবে বলে মনে হয় না। সোভিয়েত ইউনিয়নও সেরকম কিছু করতে যাবে না, অন্তঃত পাকিস্তানের সঙ্গে তারা যাবে না। পাকিস্তানের মিত্র সেন্টো, তুরস্ক ও ইরান হয়তো কিছু সরবরাহের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব বেশি সহায়তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে না।" এরপর সুব্রামনিয়াম নিরীক্ষা করছেন যুদ্ধবাদী প্রত্যেক ভারতীয়র মনে যে প্রশ্নটা উঁকি দিচ্ছে। ১৯৬৫ সালের মতো এবারও কি চীন হস্তক্ষেপ করবে? ইনস্টিটিউটের হিসেব মতে চীন তিব্বতে ১০০,০০০ সৈন্য নিয়োজিত রেখেছে এবং খুব দ্রুতই তারা সেখানে আরও সৈন্য নিয়োগ করতে সক্ষম।

এরপরও, মি. সুব্রামনিয়াম উপসংহারে পৌঁছাচ্ছেন এই বলে যে চীনের হস্তক্ষেপও এড়ানো যেতে পারে। "যদি আমরা মনে করি যে চীন তার সৈন্যসংখ্যা দ্বিগুণ বাড়াতে পারে, কিন্তু ভারতের উত্তর সীমান্তে যুদ্ধের জন্য তার সামান্য অংশই তারা ব্যবহার করতে পারবে। সত্যিকার অর্থে যে-সৈন্যদের তারা নিয়োজিত করবে, ভারতের উত্তরে যে গিরিখাতগুলো আছে যুদ্ধের জন্য সেগুলো অতিক্রম করতে যে-মাত্রায় অবকাঠামোগত সমর্থন লাগবে, তা বরাদ্দ করতে করতে তাদের সংখ্যা সীমিত হয়ে পড়বে। এর বিপরীতে উত্তর সীমান্তে আমাদের নয় ডিভিশন সৈন্য আছে (চীনা ডিভিশনগুলোর চাইতে আমাদের ডিভিশনগুলো বড়ো)।" এটা ঠিক যে, সীমান্তের প্রতি ইঞ্চি পাহারা দেয়া যাবে না এবং চীনাদের পক্ষ থেকে কিছু আক্রমণ হতে পারে; কিন্তু তারা যদি হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্তও নেয় এরপরও তাদের জন্য এপাশে থাকার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা থেকেই যাবে। সেটা হলো, শীতের সময় তুষারে হিমালয়ের গিরিখাতগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৬২ সালে, যখন নানা কারণে চীনারা সীমিত একটি প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল, থাগলা থেকে পাদদেশে নামতে তাদের পুরো এক মাস সময় লেগেছিল। যখন ভারত ও পাকিস্তানের শত্র“তা চলতে থাকবে, তখন চীন যা ক্ষতি করতে পারে, নেনা ও লাদাখ-এর কিছু অংশে বড়োজোর দুই কি তিন মাস জুড়ে তা করতে পারবে। ১৯৬২ সালে চীন আসামকে যেমন মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে পৃথক করে ফেলেছিল, এবার তা করারও সুযোগ নেই। কারণ যুদ্ধকালে বাংলাদেশের উত্তরাংশ ভারতের দখলে থাকলে বরং আসামের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ আরও ভালো হবে।

"চীনারা গিরিপথ দিয়ে নেমে আসলেও তারা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসতে পারবে না। উল্টো এপাশে সুসজ্জিত ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে তাদের মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া, এবার ভারতীয় বাহিনীকে ১৯৬২ সালের মতো বিমানবাহিনীকে উত্তর সীমান্তে ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো কালক্ষেপণ করা হবে না। যেহেতু তারা এবার তেমন সুবিধা করতে পারবে না, তাই এতো সামরিক ঝুঁকি নিয়ে তারা এ-যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না।" ইনস্টিটিউট হিসেব করেছে যে, "যদি ভারত যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তবে ৪০,০০০ লোক প্রাণ হারাবে। কিন্তু যারা যুদ্ধবিরুদ্ধ নীতিতে অটল আছেন, তারা এর বাইরে আর কোনো সমাধানও দিতে পারছেন না।"

৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×