somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হত্যা বন্ধ কর": সানডে টাইমসের সম্পাদকীয় (বিদেশী পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ, পর্ব ৩৮)

০৮ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দি সানডে টাইমস্, ১৩ জুন, ১৯৭১

পূর্ব-পাকিস্তান সম্পর্কিত একটি আর্টিকেলের জন্য মধ্য-পাতার পুরোটা ব্যয় করে সানডে টাইমস একটি ব্যতিক্রমী ও দায়িত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরাই প্রথম এটি করেছি, কারণ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানে কী করছে, এটি ছিল তার ওপরে পূর্ণমাত্রায় বিশ্বাসযোগ্য, বি¯তৃত এবং প্রত্যক্ষদর্শীর রিপোর্ট। দ্বিতীয়ত, মিলিয়ন মিলিয়ন উদ্বাস্তু কী থেকে পালিয়ে যাচ্ছে, সে-সম্পর্কে সংবাদটি নিজেই এমন এত ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছে যে, এসম্পর্কে বিস্তারিত বলা প্রয়োজন। সানডে টাইমস্ রিপোর্টটির যথার্থতার ব্যাপারটি যতদূর সম্ভব খতিয়ে দেখেছে। কিন্তু যেকোনো ক্ষেত্রেই আমাদের প্রতিবেদকদের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি এই সংবাদটি বিশ্ববাসীকে জানাবার জন্য পাকিস্তানে নিজের ক্যারিয়ার ও ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন।

গত শরতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সমাপ্তি ঘোষণা করতে চাওয়ার পরেই যে কেবল বর্তমান সংকট শুরু হয়েছে তা নয়। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাঙ্গা হয়ে ওঠে, কিন্তু নির্বাচনের পর তাকে নিষ্ঠুর হাতে দমন করা হয়। কিন্তু তার অনেক পূর্বে ১৯৪৭ সালে দু’টি অসম অংশ নিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে এই অনৈক্য ও অসাম্যের বীজ রোপিত হয়। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগোষ্ঠী, সঙ্গতকারণেই, নিজেদের এমন একটি দেশে বৈষম্যের শিকার বলে নিজেদের খুঁজে পেয়েছে, যে-দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদানই বেশি। এছাড়া বর্তমানের রক্তপাত ও উৎপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে অবাঙালিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য বাঙালিদেরও কিছু দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে। আমাদের সংবাদটি সে-বিষয়টিও স্পষ্ট করেছে।

কিন্তু এসবকিছু বলার পরও, পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে যে পরিকল্পিত, স্বেচ্ছাকৃত নিষ্ঠুর আক্রমণের অভিযোগ রয়েছে, তা কিছুতেই এড়ানো যাবে না। একটি বেসামরিক শাসনব্যবস্থা ও স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফিরে যাবার কথা ইয়াহিয়া যখন বলেন তখন সেটা তিনি হয়ত সত্যিকার ভাবনা থেকেই বলেন। কিন্তু পাকিস্তানে এপর্যন্ত যা ঘটেছে তারপর কীভাবে পাকিস্তানি সরকার বাঙালি নেতাদের বোঝাতে সক্ষম হবেন যে তারা পরস্পরের ভাই এবং একই জাতিতে অন্তর্ভুক্ত। সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের প্রতি বাঙালিদের আনুগত্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এবং পশ্চিম-দেশসমূহের কাছে পাকিস্তানী সরকার যে-সাহায্যের আবেদন করেছে, তা যদি অনুমোদিত হয় তা হলে সেই সাহায্যের অর্থ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানেই কাজে লাগানো হবে। অবশ্য সাহায্য বন্ধ করে দিলেও পাকিস্তানে বাড়তি মানবীয় ভোগান্তি বেড়ে যাবে।

পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য, ব্রিটেন যার অন্তর্ভুক্ত, সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ফর্মুলা হলো সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রত্যাহারের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য ইয়াহিয়া বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সেসব ক্ষেত্রে দাতারা সাহায্য বরাদ্দ করবে। অবশ্য পূর্ব-পাকিস্তানে ত্রাণকার্যে জাতিসংঘ ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণসংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইলেও এই সত্য অস্বীকার করা যাবে না যে পাকিস্তান একটি স্বাধীন দেশ এবং সে যা না-করতে চাইবে, অন্য কেউ তা তাকে দিয়ে করাতে পারবে না। সবচেয়ে ভালো ও একমাত্র রক্ষাকবচ হলো পাকিস্তান-সরকারের কার্যকলাপের ওপর প্রচার চালিয়ে যাওয়া এবং এই আশা করা যে বিশ্ববিবেকের মতামতের চাপ অবশেষে কোনো প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে।

পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা বলা শক্ত। কিন্তু যাই হোক না কেন, এটা অপ্রত্যাশিত যে ভারতে বিরাটসংখ্যক উদ্বাস্তু রয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু এবং যারা আর পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যেতে চায় না। যুদ্ধ ও সহিংসতার এই সময়ে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট যে ইয়াহিয়া খান একটি বিরাট ভুল করেছেন এবং এর ভয়াবহ ফলাফল এশিয়া এবং বিশ্বে নতুন করে অস্থিতিশীলতার নতুন একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে; যার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য-সমস্যার মতো জাতিগত ও স্থানিক উপাদান জড়িত রয়েছে। এবং ভবিষ্যতে এখানকার অধিবাসীদের আরও অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে।


৪৫৬ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১৩

বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ সমুহঃ
১। শেখ হাসিনা এখন হুমকি ধামকি না দিয়ে হাল্কা পাতলা কান্না কাটি করলে এবং দুঃখ প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের উপকার হত।
২। সারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এবং খালেদা জিয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৬






২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যাওয়ার পর ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথম তিনি জনসমক্ষে উপস্থিত হলেন এবং রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন। শেষবার তিনি ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী... ...বাকিটুকু পড়ুন

নেটফ্লিক্স এবং তাদের LGBTQ প্রচারণা

লিখেছেন অপু তানভীর, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪৬

আপনারা ব্যাপারটা কেমন ভাবে নেন জানি না তবে আমি এখনও এমিনেশন দেখতে পছন্দ করি এবং নিয়মিত ভাবেই এই এনিমেশন দেখি। যদি মাসের ভেতরে আমি দশটা মুভি সিরিজ দেখি তার ভেতরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরুর রচনা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৬

একজন সাধারণ পাঠক হলেও দেশী-বিদেশী আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের তালিকা বেশ দীর্ঘ! বনফুল, যার আসল নাম- বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। শখের বশে তিনি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
বলাই চাঁদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজী মুক্ত সামু!!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২







মনপুরা মুভিতে একটা ডায়ালগ ছিলো যে, গাজী বেটারে তুমি চিনো না, বেশি ফাল পাইরো না। এদিকে ব্লগের গাজীকে সবাই চিনে, যারা লাফালাফি করে তারা ব্যবস্থা নেয়,গাজী কিছু করতে পারে না,ব্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×