দি টাইমস্, ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭০
রাওয়ালাপিন্ডি, ডিসে. ৮। পাকিস্তানের নতুন দু-জন মুকুটহীন রাজার রাজনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির এতো বেশি পার্থক্য আছে যে, তারা যে দুই অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন তার দূরত্বের চাইতে এই দৃষ্টিভঙ্গির দূরত্ব আরও বেশি। পশ্চিম পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো জন্মেছিলেন লারকানায় ১৯২৮ সালে, একটি বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী সিন্ধি পরিবারে। তার পিতা মরহুম স্যার শাহনেওয়াজ খান ভুট্টো বোম্বে সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন ১৯৩০-এর দশকে বোম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে সিন্ধুকে পৃথক করার আন্দোলনকারী এডভোকেটদের একজন। তার সন্তানকে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করার পরে ভুট্টো অক্সফোর্ডের ক্রাইস্টচার্চ থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে এমএ সম্মান শেষ করেন এবং ১৯৫২ সালে তিনি লিংকনস ইন থেকে আইন পাস করেন।
সাউথহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে কিছুকাল কাজ করার পর তিনি পাকিস্তানে আইনব্যবসার মাধ্যমে জনজীবনে অনুপ্রবেশ করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের বিপ্লবী সরকারে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রিত্বে নিয়োগ পান। পরে তিনি কাশ্মিরবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পান; কিন্তু তার আগেই তিনি আন্তর্জাতিকভাবে কাশ্মিরবিষয়ক একজন গুরুত্বপূর্ণ, নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ ও বক্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।
তরুণ আইনজীবী তার অফিসের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নির্মাণের জন্য কাজ করা শুরু করেন এবং এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে বর্তমানে চীন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির ঘোর সমর্থক। সুশিতি ও শিষ্টাচারী ভুট্টো ভারতের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে ওকালতী করেন। তিনি তীব্রভাবে আমেরিকাবিরোধী এবং তিনি চান পাকিস্তান চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হোক। অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে তিনি জোরালোভাবে ক্ষমতাধর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষপাতী এবং বলে থাকেন যে মতায় গেলে তিনি ইসলামী সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন।
'বাংলার বাঘ' শেখ মুজিবুর রহমান একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে বড়ো হয়েছেন এবং বিক্ষুব্ধ বাংলার রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে তিনি পড়াশুনা করেছেন। এই ৪৮-বছর-বয়েসী নেতা কলেজে ১৯৩৯ সালে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং তখন থেকে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলে ও জেলের বাইরে কাটিয়েছেন। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন। কিন্তু দু-বছর পর রাষ্ট্রভাষা-বাংলা-দাবির আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে তিনি জেলে বন্দি হন। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রাদেশিক সরকারে মন্ত্রী হন, কিন্তু এই অনলবর্ষী নেতা কয়েকমাস বাদেই আবার জেলে প্রেরিত হন। তাকে আরেকটি মন্ত্রিত্বের পদ দেয়া হয়, কিন্তু ১৯৫৭ সালে গণ-রাজনীতি সংগঠিত করা পরিত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঝিমিয়ে পড়া পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করেন এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পরিহাস এই, দু-বছর আগে যে-লোকটিকে একজন বিশ্বাসঘাতক বলা হয়েছিল, তিনিই এখন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রি হবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ব্যক্তি। তিনি যদি তা হতে পারেন তবে অবশ্যই দিল্লির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। তিনি অবশ্যই পশ্চিমাপন্থী কিন্তু পাকিস্তানকে সিয়াটো ও সেন্টো থেকে প্রত্যাহার করতে চান। আপাতভাবে উদীয়মান উভয় নেতার জন্য এটাই সাধারণ মিলের একমাত্র জায়গা।