somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফটোগ্রাফির ষষ্ঠ পাঠ

১৯ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসেন আজকে এমন একটা জিনিষ নিয়া কথা কই যেইটার জন্য আসলে কোন ক্যামেরাই থাকনের দরকার নাই।

কম্পোজিশন

এই যে আমরা প্রতিদিন কতকিসু দেখি, এই দেখা জিনিষটা কি আসলে সবার একরকম? না । এক এক জন এক ভাবে একটা বিষয়রে দেখে, দেখতে পছন্দ করে । রাস্তার জ্যাম যখন আমরা বুঝাইতে চাই তাইলে যে ছবিটা আসে তা হইলো একটা এরিয়াল ভিউ, উপর থেইকা দেখা একটা লম্বা গাড়ি/রিকশা/বাসের সারি। আবার র্বষার ফুল বুঝাইতে চাইলে আমরা কিন্তু উপর থেইকা তোলা কদমগাছের ফটুক দেইনা, বরং অনেক কাছ থেইকা তোলা ২টা কদমফুলের ছবি দেই। কারন আমরা এমনেই দেখতে পছন্দ করি।

কম্পোজিশন মানে হইলো সাজানো। আপনার মনের চোখ যা দেখে সেইটা কিভাবে একটা ছবিতে দেখাইবেন আর সে জন্য ছবির উপাদান গুলারে কেমনে সাজাইবেন সেইটাই ফটোগ্রাফিতে কয় কম্পোজিশন। যেহেতু আপনার দেখার চেয়ে ক্যামেরা একটু ভিন্ন ভাবে দেখে, তাই কম্পোজিশনের টেকনিক গুলা জানা থাকলে, ক্যামেরারেও আপনার মতোই দেখাইতে পারবেন।

কম্পোজিশনের কয়েকটা নিয়ম নিয়া এখন কথা বলি । কিন্তু এই গুলাই শেষ না। এইগুলা হইসে কয়েকটা রং পেনসিল মাত্র, যে গুলা দিয়া ছবি বানানোর দায়িত্ব আপনার। আরও অনেক রং এর পেনসিল আসে যে গুলা যত ছবি দেখবেন, ছবি তুলবেন তত বুঝতে পারবেন। তো আসেন শুরু করি।

ছবির সাবজেক্ট ঠিক করা

প্রথম প্রথম আমরা সবাই যেটা করি সেটা হইল একটা কিছু পছন্দ হইলেই সেটার সামনে ক্যামেরা নিয়াই ক্লিক। কিন্তু পরে ছবিটা দেখলে নিজের কাছেই আর ভাল্লাগেনা, মনে হ্য় এউটা ক্যান তুলসিলাম হুদাই...তাই সবার আগে দরকার একটু চিন্তা করা, আপনি ঠিক কি দেখাইতে চাইতেসেন ছবিতে? আমি নিজে যা করি তা হইসে, ছবি তোলার আগে যদি আমার মনে হয় আমি যেমনটা দেখাইতে চাইতেসি সেইটা চোখে দেখা সম্ভব হইলেও ছবিতে আনা সম্ভব না, তাইলে আর তুলি না। কি দরকার? সব ছবি তুলতে হবে এমন তো কনো কথা নাই। নিজেরে এইটুক স্বাধীনতা উপভোগ করতে দিয়েন, নাইলে আমি অনেকেরে দেখসি অনেক তাড়াতাড়ি হতাশ হইয়া পরতে।

একটা উদাহারন দেই, ধরেন আপনি চান বিস্তির্ন পর্বতমালার ছবি তুলতে কিন্তু আপনার কাছে পুরাটা ফ্রেমে আনার মতো ক্যামেরা/লেন্স নাই, শুধু একটা পয়েন্ট এন্ড শুট অথবা মোবাইলের ক্যামেরা আছে। আপনি যদি হোটেলের সামনে থেকে সেই পর্বতমালার দিকে ক্যামেরা তাক করে শাটার টিপে দেন তাহলে যে ছবিটা উঠবে, সেইটার কি আসলেই কোন দরকার আছে আপনার? কি উঠবে সেই ছবিতে? হয়তো অনেক শার্প কিছু গাছপালা আর দুরে প্রায় দেখাই যায় না এমন কিছু একটা যেটাকে আপনাকে ফেসবুকে ট্যাগ কইরা বুঝায় দিতে হবে যে "ইহা পর্বত"।

আমার মুল পয়েন্টটা হইলো কি আসলে তুলতে চান (মানে ছবির সাবজেক্ট), সেইটা আগে ঠিক করেন তারপর দেখেন আপনার ক্যামেরা আদৌ সেইটা তোলার ক্ষমতা রাখে কিনা।

ফোকাল পয়েন্ট কে একা করে দেন :P (Isolate the Focal Point)

সাবজেক্ট ঠিক করার পর চেষ্টা করেন সাবজেক্টটাকে ছবিতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন কইরা তুলতে। সেইটা করতে হইলে আপনারে সাবজেক্টকে রাখতে হবে ফোকাল পয়েন্টে। জিগান ফোকাল পয়েন্ট কি? সহজ ভাষায় লেন্সের সামনের যেই পয়েন্ট থেইকা আলো আইসা লেন্সের পিছনে সবচেয়ে স্পষ্ট রিফ্লেকশন তৈরি করে সেই পয়েন্টটা।

ফোকাল পয়েন্টে যা থাকবো, সেইটা ছবিতে সবচেয়ে বেশি শার্প আসবো। আর আশেপাশের গুলা তাদের অবস্থান অনুসারে কম শার্প আসবো। অনেক সময় সাবজেক্টকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য আশে পাশে বা সামনে পিছনে কিছু আনশার্প এলিমেন্ট রাইখা দেয়া হয়।

ছবিতে যদি অনেক বেশি ফোকাল পয়েন্ট থাকে তাইলেও অনেকে কনফিউজড হয় যে আসলে ছবিটাতে কি বুঝানো হইসে। তাই চেষ্টা করেন ছবিতে ফোকাল পয়েন্ট যতটা কম রাখা যায়...অবশ্য এই নিয়মটাও ভাঙা হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন গ্রুপ ফটো আর লেন্ড স্কেপ। যে পর্বতের ছবিটার কথা বল্লাম শুরু তে, সেইটার এমন ঝাপসা ফটো না তুইলা সুর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, এরপর পাহারের একটা সিলুয়েট তুলেন, যেইটা যে কোন ক্যামেরায় সম্ভব। এইখানে কিন্তু সিলুয়েটটারে শার্প করা হইতাসে কোন একটা পয়েন্ট কে না।


রুল অফ থার্ডস

নতুন নতুন ছবি তোলার উৎসাহে অনেকেই খেয়াল করেনা যে ভিউফাইন্ডারে/ক্যামেরার স্ক্রিনে কি দেখা যাচ্ছে। রুল অফ থার্ডস এই সব ফটোতে ব্যালেন্স আনতে অনেক সাহায্য করে। যদিও ৩য় স্থানে লিখতেসি কিন্তু আমি মনে করি এইটা ফটোগ্রাফির অন্যতম মুল্যবান একটা কম্পোজিশন রুল।

এইটা মনে রাখাও অনেক সহজ। ছবির ফ্রেমে "#" এইরকম চারটা লাইনের একটা গ্রিড চিন্তা করেন। লাইন গুলা যেখানে ক্রস করে সেইগুলাকে বলে "গোল্ডেন সেকশন"। চেষ্টা করেন আপনার সাবজেক্টকে গোল্ডেন সেকশন ৪টার যে কোন একটাতে রাখতে।

আপনি যদি এই নিয়মটা মাথায় রাইখা কিছু ভাল ছবি দেখেন, দেখবেন ৭৫% ফটোগ্রাফার এই নিয়মটা অনুসরন কইরা ছবি তুলসে। প্র্যাকটিস করলে এই নিয়মটা অনেকটা ইনটুইশনের মতো মাথায় ঢুইকা যায়। এইটা ফলো করেন, দেখেন আপনার ছবির কোয়ালিটি ভাল হয় কি না...

আপাতত এইটুকুই থাক... কম্পোজিশনের প্রথম কিস্তি এই পর্যন্তই। বাকি নিয়মগুলা নেক্সট পোস্টে.... হ্যাপ্পি ফটোগ্রাফি...:)

(আজকের পোস্টের ফটোটা তুলসিলাম নবাবগঞ্জের জমিদারবাড়িতে)

আগের পোস্টের লিংক:

ফটোগ্রাফির পঞ্চম পাঠ
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:২৯
৩২টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস বিদেশে দেশকে করছেন অপমান-অপদস্থ

লিখেছেন sabbir2cool, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬


দুর্নীতির কারণে তার যাওয়ার কথা ছিল জেলে, গেছেন তিনি বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিতে। এটা খোদ মুহাম্মদ ইউনূসের স্বীকারোক্তি ছিল। তার দেশশাসনের আট মাসে বিদেশে যখন গেছেন তিনি, তখন স্বীকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের বাড়ি

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:২৭


রোজার ঈদে মাকে খুঁজতে যাব
পাঁচ হাজার টাকা রেখে দিয়েছি-
সিঁলিকের শাড়ি কিনবে বলে;
বাবা আর বিড়ি খাওয়া দায়ে
আমাকে নাক সেছুর দিবে না
কোন কোরবানী ঈদে-কোন
পথে যাবো- কোন ঈদ আসবে!
আর অপেক্ষা করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩


কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?

দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×