(ছবি সূত্র - বিডিনিউজ২৪ ডট কম)
আজ রায় হচ্ছে মীরপুরের কসাই নামের কুখ্যাত কাদের মোল্লার। আরো দশ দশটা জামাতী শীর্ষ নেতার মতো উনিও একজন রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধে সময় পাকবাহিনীর দোসর হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের উপর জুলুম করেছেন। ঘটনাচক্র সামরিক শাসকদের করুনায় উনারা বেশ ভালই ছিলেন ৪০ বছর। কিন্তু গত বছর পর্যন্ত জামাতে দলীয় ওয়েব সাইটে উনাদের যে বায়োডাটা ছিলো - তাতে জন্ম থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যণ্ত নানান কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিয়ে হঠাৎ করে আবার ১৯৭৮ সাল পর্যণ্ত কোন তথ্য না দিয়েই ১৯৭৯ সাল থেকে নানান বিষয়ে উনাদের বায়োগ্রাফী ছিলো। শিবিরের কর্মীরা এমনটাই জানতে। তাদের নেতাদের জীবনে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৮ সাল ছিলো না - সেইটা ছিলো ব্লাক হোল। কিন্তু নতুন প্রজন্মকে বোকা বানানো গেলো না - ঠিকই জেনে গেলো এই নরপশুদের কুকীর্তিগুলো এবং ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিলো - বিচার চাই্।
বিচার শুরু হলো - জামাতের বাঘা বাঘা আইনজীবি - তাদের বিদেশী মিলিয়ন ডলারের কনসালটেন্ট এবং বিএনপির শীর্ষনেতা কাম আইনজীবিগন সন্মিলিতভাবে কোর্টে তাদের পক্ষে কার্যক্রমে অংশ নিলো এবং অবশেষে রায়ের দিন আজ। দীর্ঘ আড়াই বছরের মামলার কার্যক্রমে রসময় জামাত শিবির ছিলো মোটামুটি ধরিমাছ না ছুই পানি নীতিতে সক্রিয়। আজ দেখলাম - এরা হরতাল ঢেকেছে এবং ইতোমধ্যে বাসে আগুন দিয়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে পুড়িয়ে মেরেছে। দাবী হলো মামলার রায় প্রকাশ করা যাবে না। এই ধরনের দাবী পৃথিবীর কেউ কোন দিন শুনেছে কিনা না। শুনানীতে থাকলেন - সয়ালজবাবের থাকলেন - স্বাক্ষীদের কথা শুনলেন - তাদের জেরা করলেন - সাফাই স্বাক্ষী দিলেন - এখন বলছেন রায় শুনতে চাই না। এইটা কোন ধরনের দাবী!
এই দাবী করতে পারে একমাত্র তালগাছ আমার পার্টিরা। সব মানি - কিন্তু শাস্তি দেওয়া যাবে না - মুক্তি দিতে হবে। একদম মামার বাড়ীর আব্দার।
জামাত শিবিরের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং জনদুর্ভোগের কর্মসূচী দেখে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত ড. হুমায়ুন আহমেদের একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো। এক গ্রামে একটা ভয়ানক পাজি লোক ছিলো। সেই লোক সব সময় মানুষকে যন্ত্রনা দিতো এবং তাতে সে আনন্দ পেতো। তার কাজ ছিলো নানান ভাবে গ্রামের মানুষকে মামলায় জড়ানো। এক সময় লোকটি বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু শয্যা - তখন গ্রামের লোকজনকে ঢেকে একটা অনুরোধ করলো - যেন তার মৃত্যুর পর তার লাশটা গ্রামের তিনরাস্তার মোড়ে বাঁশের মাথা ঝুলিয়ে রাখে। লোকজন তার কথা মতো কাজটি করলো তার মৃত্যুর পর আর পুলিশ এসে গ্রামের সবার নামে মামলা দিয়ে দিলো।
রাজাকাররাও এই একই কাজ করছে - জীবিত অবস্থায় এরা বাংলাদেশের মানুষকে যন্ত্রনা করেছে নানান ভাবে - ৭১ সালেতো এরা ছিলো খাস ইবিলিশের এজেন্ট। এখনও সেই পথেই যাচ্ছে।
আসুন রায় ঘোষনার আগে আরেকবার দেখি - কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর সারাংশ -
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, কাদের মোল্লার নির্দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে আটক মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে একাত্তরের ৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয়
।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তাঁর মা ও দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
তৃতীয় অভিযোগ অনুযায়ী, ২৯ মার্চ বিকেলে আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে গেলে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে ধরে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানার খানবাড়ি ও ঘটেরচর (শহীদনগর) এলাকায় যান। সেখানে দুজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে দিনের আলোয় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে (শহীদনগর) হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।
পঞ্চম অভিযোগ অনুযায়ী, ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি হেলিকপ্টার মিরপুরের আলোকদি গ্রামের পূর্ব দিকে নামে। কাদের মোল্লা অর্ধশতাধিক অবাঙালি ও রাজাকার নিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে ঢোকেন এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি মারা যায়।
ষষ্ঠ ও শেষ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগী কয়েকজন অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনা মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলীর বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আমিনা এবং দুই মেয়ে খাদিজা ও তাহমিনা, দুই বছরের ছেলে বাবুকে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় কাদের মোল্লার ১২ সহযোগী মিলে হযরতের ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। হযরতের আরেক মেয়ে মোমেনা ওই সময় আত্মগোপন করে সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।
- প্রিয় ব্লগার,
আজ বাংলাদেশের জন্যে একটা গুরুত্পূর্ন দিন। আমারদের পূর্বপুরুষ এই রাজাকার আলবদর আর পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মরনপন লড়াই করে দেশটা স্বাধীন করেছিলো - আর আজ সেই রাজাকার আলবদরের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের জন্মের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয় (৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেক বার - সেই হাতিয়ারতো রাজাকারের হাতিয়ার)। আমাদের জন্যে এইটা একটা কঠিন পরীক্ষা। পূর্বপুরুষের রক্তের ঋণ শোধ করার। সবাই সচেতন হউন - সবাই সোচ্চার হউন - যে যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের এই শেষ অধ্যায়টাতে নিজেকে যুক্ত করুন এবং ৭১ এর অসমাপ্ত বিজয়কে পূর্নতা দান করার ক্ষে্ত্রের ভুমিকা রেখে গর্বিত হউন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮