somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের আলোকে দেখা একটি জাতির বিজয় । (পর্ব -৪ ) নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাপঞ্জি - ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা । ৭ মার্চের ভাষন ,আলোচনার নামে কালক্ষেপন- আক্রান্ত বাঙালী জাতি।

০৮ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নির্বাচনের আগে ইয়াহিয়া খানকে মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলামী আর জামাতে ইসলামীর মতো দলগুলোর সন্মিলিত ভোটের কাছে আওয়ামীলীগের নিশ্চিত পরাজয় সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল ইয়াহিয়ার জন্যে বিরাট একটা বিপর্যয় হিসাবে দেখা দেয়। সকল বাধা বিপত্তি কাটিয়ে আওয়ামীলীগ ১৬২ টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৭ টি সহ ১৬৯ টি আসন পেয়ে নিরন্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনের আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো - বামপন্থীদের একটা অংশ “ভোটের আগে ভাত” শ্লোগান দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যায়। নির্বাচনের আগে ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর উপকূল অঞ্চলে ঘঠে যাওয়া প্রবল জলোচ্ছাসে লক্ষ লক্ষ বাঙালির মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতিতে সরকারের নিরবতা এবং পশ্চিম পাকিস্থানীদের উদাসীনতা বাঙালিদের মধ্যে পাকিস্থানীদের বিরূপ মনোভাব সুস্পস্ঠ করে তোলে।

একদিকে আওয়ামীলীগের এই বিজয়কে আপাত মেনে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে পাকিস্থানীরা গোপনে পূর্ব পাকিস্থানে সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্থানের নেতা ভুট্টো ক্ষমতার লোভে সরকারের সাথে গোপন সমঝোতা করে আর ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কালক্ষেপনের নীতি গ্রহন করে। মূলত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয়ের পরই পাকিস্থানী সরকার সামরিক শক্তি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা তৈরী করে। ১৯৭১ সালে জানুয়ারী থেকেই ঢাকায় অধিকহারে পাকিস্থানী সৈন্য পরিবহন শুরু হয়। এই বিষয়কে আরো বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে আদমজী আর মিরপুরে বিহারী-বাঙালি দাঙ্গা লাগানো হয় - ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে কাশ্মীরে নামানো হয়। এ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সৈন্য বেসামরিক পোশাকে পরিবহন করা হয়।

এই বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল নেতারা সজাগ ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্র জনতা এই প্রতারনা বুঝতে পারছিলো এবং তাদের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিলো। এই সময় আসে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। শেখ মুজিবুর রহমান বিশাল জনসভা থেকে ঘোষনা দিলেন -

“ এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”


কার্যত পূর্ব পাকিস্তানে তখন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সকল নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছিলো। বাকী ছিলো একটি সুস্পস্ট ভাবে স্বাধীন দেশের ঘোষনা। ছাত্ররা নতুন দেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। ঘরে ঘরে নতুন পতাকা তৈরী হচ্ছে। অন্যদিকে ক্যান্টনমেন্টে চলছে বাঙালি নিধনের সকল পরিকল্পনার চুড়ান্ত রূপরেখা প্রনয়ন। এদিকে ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন ছুতায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ কয়েকবার পিছিয়ে ২৫শে মার্চ নির্ধারন করলো। সমস্ত বাংলা তখন উত্তাল। প্রতিদিন পুলিশ আর সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। বাঙালিদের জন্যে সবচেয়ে হতাশার খবর এলো যখন বালুচের কসাই খ্যাত টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্থানের গভর্ণর করে আনা হলো। সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৪ শে মার্চ সন্ধ্যায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্যে স্থগিত ঘোষনা করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে। আর নেই রাতের মধ্যে ভাগে শুরু হয় পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর বাঙালি নিধন যজ্ঞ অভিযান “অপারেশ সার্চ লাইট ”
---------------

পরের পর্ব:


২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউন থেকে ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর সরকার হয়ে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়, গনহত্যা , যুদ্ধাপরাধ , ধর্ষণ ,লুটপাট।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৮:৫৯
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×