
মার্চ মাস। বাংলাদেশের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন মাস। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ঠিক এই মাসে দেশটির জনগন তাদের দেশে পাকিস্থানী সৈন্য ও তাদের দেশী দোসরদেরকে পরাজিত করে মুক্তির লাল সূর্যটা ছিনিয়ে আনার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। এতো গুরুত্বপূর্ন এই সময়টি কিভাবে আমাদের জাতির জীবনে এলো। কিভাবে এই দিনটিই আমাদের জীবনে বদলে দিলো - তা বলতে হলে আমাদের বেশ লম্বা সময়ের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে।
আমরা সবাই জানি ১৭৫৭ সালে পলাশীতে সিরাজের পরাজয়ের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতি তাদের স্বাধীনতা হারায়। তারই ফলশ্রুতিতে ইংরেজরা শাসন করে ২০০ বছর। ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, তীতুমীর আর সূর্যসেনদের সংগ্রামী কর্মকান্ডে যখন ইংরেজদের বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে। শুরু হয় বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে ষড়যন্ত্র। তারই একটা প্রকাশ হলো বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন , তৎপরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে পাকিস্তানের উদ্ভব এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চার ক্রমঃ-
বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে ততকালীন বৃটিশ ঔপনিবেশক সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়। বাংলা বিভক্ত করে ফেলার ধারনাটি অবশ্য কার্জন থেকে শুরু হয়নি। ১৭৬৫ সালের পর থেকেই বিহার ও ঊড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারী প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত এখান থেকেই।
এই বঙ্গভঙ্গের রেশ ধরেই শুরু হয় দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রচারনা। যা মূলত সাম্প্রদায়িক ধারনার উপর দুই রাষ্ট্রের জন্ম নেয়। ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগস্ট জন্ম নেয় দুইটি ভূখন্ডের সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্র - নাম পাকিস্থান। পূর্ব অংশের মানুষদের ভাষা আর সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ন আলাদা পম্চিম অংশের সাথে শুরু থেকেই কোন বাস্তবিক একক রাস্ট্র হিসাবে গড়ে উঠেনি। পশ্চিমের শাসক গোষ্ঠী শুরু থেকেই প্রভুসূলভ মনোভাব প্রকাশ বাঙালী জনগোষ্ঠীকে হতবাক করে দেয়। বিশেষ করে বাঙালীদের মাতৃভাষা আর সংস্কৃতির উপর আঘাত আসে পর পর। তারপর শুরু হয় অর্থনৈতিক বৈষম্য। ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্থানের শাসকদের মনোভাবে একটা প্রভুসুলভ ভাব দেখা যায়। মূলত বাঙালীদের কোন ভাবেই মাথা তুলে দাড়াতে দিতে অনীহা প্রকাশিত হয় তাদের প্রতিটি কর্মকান্ডে। শুধু মাত্র একটা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তি জন্মে নিলেও পশ্চিম পাকিস্থানীদের কাছে পূর্ব পাকিস্থানে মুসলমানদের বিষয়েও হীন মনোভাব পোষন করতো। এই প্রসংগে এককালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুন বলেছিলেন - “পূর্ব বাংলার মুসলমানরা নিম্নশ্রেনী হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়, সুতরাং তারা প্রকৃত মুসলমান নয়”। পরে পাকিস্থানের সামরিক শাসক জেনারেল আইউব খান বলেছেন - “ওদের মধ্যে নীচু জাতের মনোভাব এখনো বিদ্যামান থাকায় ওরা আজও নতুন পাওয়া স্বাধীনতার চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেনা”। এই দুইটি বক্তব্যই বাঙালিদের সম্পর্কে পাকিস্থানী শাসক মহলের মনোভাবে সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।
-----
পরের পর্ব - বাঙালির পাকিস্থানী হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৮:৫৯