২) একটা যুদ্ধে নিহত এবং আহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারন সম্ভব কি না?
৩) একটা যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের নির্ভূল সংখ্যা নির্নয় সম্ভব কি না?
১) বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী, তার দোসর রাজাকার আলবদর এবং আলশামস কতৃক নিহত এবং নির্যাতিত নারীর প্রকৃত সংখ্যাটা কি?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে যদি পৃথিবীর কুখ্যাত কিছু যুদ্ধের দিকে তাকাই তাহলে আমাদের উত্তর পাওয়াটা সহজ হবে বলে মনে করছি। প্রথমত সাম্প্রতিক কালের চলমান ইরাক যুদ্ধের কথাই ধরা যাক। ইরাকে কতজন সাধারন মানুষ মারা গেছে গত চার বছরের? বিশ্বের বিভিন্ন নামীদামী গবেষনা সংস্থার মতে এই সংখ্যা ৬ - ৭ লাখ। অন্যদিকে মিডিয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ইরাকী বডি কাউন্ট নামক একটা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েব পেজে সংখ্যাটা দিয়েছে ২৬ - ৫৫ হাজার। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিও বুশের মতে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার হবে। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে - বর্তমানে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের যুগেও কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেও একটা সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। এর পিছনে কারন কি? উত্তরটা সহজ - যুদ্ধের সময় যারা মানুষ মারে তারা তো আর গুনে গুনে মানুষ মারে না। এ ছাড়া যুদ্ধের একটা বড় দিক হলো এর ভয়াবহতা। সেখানে মানুষ জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি একটা সুক্ষ সীমানার কাছাকাছি থাকে - সেখানে মৃত মানুষের চেয়ে জীবিত মানুষ আনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন। তাই মানুষ নিহতদের দ্রুত তাদের দৃষ্টিসীমা থেকে সরিয়ে নিজের বাঁচার প্রক্রিয়াকে বেশী গুরুত্ব দেয়। আর যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশে মৃত মানুষের সংখ্যা নির্ধারনের চেয়ে জীবিত মানুষদের জীবনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াটাই বেশী যৌক্তিক নয়কি?
এটাতো গেল সিভিলিয়ান বা বেসামরিক মানুষ সম্পর্কে - যুদ্ধের সময় তাদের মৃত্যুকে সাধারন ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এটাকে কোলেটারাল ডেমেজ হিসাবে বিবেচনা করে মিডিয়াও মৃতের সংখ্যার থেকে ঘটনার ভয়াবহতা বা বিজয়ের হিসাবেই বেশী প্রচার করে। তাই দেখি ২০০৬ সালে ইসরায়েলী আক্রমনে একটা লেবানিজ গ্রাম যখন মাটিতে মিশে যায় - তখন পশ্চিমা মিডিয়া নিহতদের সংখ্যা ১০ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দেখিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধে নিহত সামরিক ব্যক্তিদের হিসাবতো সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধে কতজন মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে? একটা সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যাবে না। সেখানে আমেরিকান বাহিনী তাদের ইনভেন্টরী ব্যলেন্স করার জন্যে একটা বিশেষ কলাম ব্যবহার করে। সেটাকে বলা হয় - এমআইএ (মিসিং ইন একশন) বা হারিয়ে যাওয়া সৈন্য। একটা যুদ্ধের তিনযুগ পরও কি একজন সৈন্য হারিয়ে থাকতে পারে। এখনতো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ভিয়েতনাম যাচ্ছেন বা ভিয়েতনাম অন্য অর্থে আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্র। এখন তো এরা হিসাব করে বের করতে পারে এই এমআইএ ৫০ হাজার সৈন্য কোথায়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কঠিন। একটা শরীর পঁচতে লাগে মাত্র এক সপ্তাহ আর পচাঁ-গলা মানবদেহ থেকে কোনটা আমেরিকান আর কোনটা ভিয়েতনামী হিসাবে চিহ্নিত করা কঠিন। এখানে খরচের প্রশ্নটাও জড়িত বটে। একেতো খুঁজে বের করতে খরচ - তার উপরে আবার নিহত সৈন্যদের ক্ষতিপুরনের ব্যয় একটা বিশাল ব্যাপরই বটে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে - সামরিক পোশাকী মানুষেরও যুদ্ধে মারা যাওয়া পর সংখ্যা নির্ধারন করা কঠিন কাজ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
(পরের পর্বে সমাপ্য)
মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা - ১ম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৩৬