somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গনপ্রজান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধ কি এবং যুদ্ধাপরাধী কারা?

১২ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে নানান থিয়োরী তৈরী করছেন। এর কারন অবশ্য একটাই - সেটা হলো জামাতের নেতা - যিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েও পিছনের দরজা দিয়ে মন্ত্রী হয়ে দেশে পাঁচ বছর মৌলবাদ বিস্তারের লক্ষ্য শত শত বিশেষ ধরনের এনজিও প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে - তার একটা বক্তব্যকে সমর্থন করা। ইনিয়ে বিনিয়ে এরা বলছে - যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে "জেনেভা কনভেনশান" অমান্য করে যারা কোন কাজ করবে তারা যুদ্ধাপরাধী। আর জামাত করেছে "গৃহ যুদ্ধ"। সুতরাং সেই রাজনৈতিক যুদ্ধে কোন যুদ্ধাপরাধী থাকার সুযোগ নেই। এই অপযুক্তির আড়ালে রাজাকার, আলবদর আল-শামস নামক ঘাতক বাহিনী আর শান্তি কমিটি নামক পাকিস্থানী আর্মির রাজনৈতিক সহযোগী গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে যুদ্ধাপরাধের বাইরে রাখার একটা অপেষ্টা চলছে - তার বিষয়ে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।

আগের পোস্টে বলেছিলাম - বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধী - বিশেষ করে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনে অংশ হিসাবে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা হয়েছে। কঠোর ভাবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার কারন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কারন পরাজিত শক্তি কখন্ই একটা দেশকে এগুতো দেবে না - এরা তাদের কৃতকর্মের কথা যাতে মানুষ ভুলে যায় - তার জন্যে ইতিহাস বিকৃত করবে - প্রমান করার চেষ্টা করবে - যুদ্ধের আগের অবস্থাই ভাল ছিল। যাতে মানুষের মনে একটা ধারনা জন্মে - যুদ্ধটা ভুল ছিল আর ওরা ছিল সঠিক।

যুদ্ধাপরাধীর বিচারে জন্যে দেশে দেশে যেমন নিজস্ব আইন তৈরী হয়েছে - বাংলাদেশও মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আর যুদ্ধাপরাধী বিচারে জন্যে সুস্পষ্ঠ আইন এবং ট্রাইবুনাল গঠন করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক খেলায় সেই বিষয়গুলোকে আড়ালে পাঠানোর সুবাদে যুদ্ধাপরাধী রক্ষার জন্যে ব্যস্ত মহল নতুন নতুন সংজ্ঞা নিয়ে আসার সুযোগ পাচ্ছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৬ শে মার্চ। পাকিস্থানী বাহিনী "আপরেশন সার্চ লাইট" নাম দিয়ে একটা বিশেষ অভিযানে ঢাকার পিল খানা, রাজারবাগ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল, পত্রিকার দফতর গুলোতে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে বিডিআর, পুলিশ, ছাত্র-শিক্ষকসহ অসংখ্যা নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে তাদের পরিকল্পিত গনহত্যার সূচনা করে। যা চলেছে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যণ্ত। সেই সময় কালে বাঙালীদের ভিতর থেকে একদল দালাল তৈরী হয় - যারা রাজনৈতিক ভাবে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর গনহত্যা আর স্বাধীন বাংলাদেশের ভুখন্ডের ভিতরে একটা আগ্রাসী যুদ্ধ চালাতে সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনী তৈরী করে তাদের কাজকে সহজ করে দেয়। এরাও বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যা, ধর্ষন, লুট, অগ্নিসংযোগসহ ত্রাস সৃস্টির জন্যে অনেক অপকর্মসহ যুদ্ধের শেষ ভাগে তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের পরপরই দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্যে একটা আইন প্রনীত হয় - যা "বাংলাদেশ কোলাবরেটরস স্পেশাল ট্রাইবুনালস অর্ডার ১৯৭২" নামে ২৪ শে জানুয়ারী ১৯৭২ সালে অধ্যাদেশ আকারে জারী করা হয়।

সেখানে যুদ্ধাপরাদী দালালদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছেঃ-

১) পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে বাংলাদেশে বেআইনি দখল টিকিয়ে রাখার জন্যে সাহায্য করা, সহযোগিতা বা সমর্থন করা।

২) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দখলদার পাকিবাহিনীকে বস্তুগত সহযোগিতা প্রদান বা কোন কথা, চুক্তি ও অন্যান্য কার্যাবলীর হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করা।

৩) গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বা যুদ্ধের চেষ্টা করা।

৪) মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং মুক্তিকামী জনগনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

৫) পাকবাহিননীর অনুকূলে কোনো বিবৃতি প্রদান বা প্রচারনায় অংশ নেওয়া এবং পাকবাহিনীর কোনো প্রতিনিধি, দল বা কমিটির সদস্য হওয়া। হানাদারদের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া।


উপরের পাঁচটি সংজ্ঞা অনুসারে কারা যুদ্ধাপরাধী তাদের আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই সংজ্ঞার পর দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের সংজ্ঞার জন্যে জেনেভা কনভেনশান দেখানো আর "বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো"র মতো কৌতুক ছাড়া আর কিছু মনে হয়না।

আর যুদ্ধাপরাধী প্রমানের জন্যে ১৯৭১ সালের 'দৈনিক পাকিস্থান' আর 'দৈনিক সংগ্রাম' যথেষ্ঠ। তারপর আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নথিপত্র - যাতে ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের কার্যক্রমের প্রচুর প্রমান রয়েছে।

সংজ্ঞা আর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক বাদ দিয়ে আসুন সবাই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সোচ্চার হই - ঐক্যবদ্ধ হই।

ঐক্যই ন্যয়ের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পূর্বশর্ত।

(এই লেখাটি সহব্লগার বিষাক্ত মানুষের সন্মানে লেখা, উনি একটা লেখার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। আশা করি এই লেখাটি উনার পছন্দের তালিকায় যাবে )

(সূত্র: রাজাকারের মন - মুনতাসীর মামুন)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ২:০২
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×