ট্রাভেল গাইড::বান্দরবান:: কি ভাবে যাবেন,কি দেখবেন? কত খরচ?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের অবারিত সবুজের সমারোহ এবং মেঘে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে যার আছে সে সহজেই বাংলাদেশের পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান ঘুরে আসতে পারেন।
বান্দরবান ভ্রমনের টুকিটাকি জেনে নিন:-
কি ভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে আপিন ২/৩ টি রুট ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান।
@ ঢাকা থেকে বান্দরবান ডাইরেক্ট =>
ঢাকা থেকে বান্দরবান পযর্ন্ত ডাইরেক্ট একটি গাড়ী চলে এস.আলম (নন এসি)। ভাড়া জনপ্রতি-৩৫০ টাকা। ছাড়ে এস.আলমের কমলাপুর রেল ষ্টেশনের বিপরীত কাউন্টার থেকে।
@ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে =>
ট্রেনে: এসি- ৩৬৫-৪৮০ টাকা। নন এসি-১৫০-১৬৫ টাকা।
বাসে: এসি- ৫৮০-৭৯০ টাকা। নন এসি-২০০-২৫০ টাকা।
@চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান => বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে ৩০ মিঃ পর পর বান্দরবানের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি-৭০ টাকা।
কোথায় থাকবেন:
@বান্দরবনে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি হোটেল আছে মেঘলাতে। যার ভাড়া রুম প্রতি ৭৫০ হইতে ২০০০টাকা পর্যন্ত। বুকিং ফোন:- 0361-62741এবং 0361-62742।
@হোটেল ফোর স্টার : এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১,০১৫৫৩৪২১০৮৯।
@হোটেল থ্রী স্টার : এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন:-থ্রী স্টার এবং ফোর ষ্টার হোটেল মালিক একজন মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯।
@হোটেল প্লাজা বান্দরবান: এটি বাজারের কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৪০০ টাকা, ডাবল- ৮৫০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:- ০৩৬১-৬৩২৫২।
খাবার:
বান্দরবান শহরে খাবার হোটলের মান তেমন ভাল নয়। তবে যে হোটেলে আপনি থাকবেন সে গুলোতে রেষ্টুরেন্টের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া আরো দুটি মোটামুটি মানের ভাল হোটেল হচ্ছে জেলা সদর বিল্ডিং এর কাছে "ফিয়েস্তা" হোটেল এবং বান্দরবান বাজারের কাছে "তাজিংডং" হোটেল। বান্দরবানে সব হোটেলে খাবারের মানের চেয়ে দামটা বেশী। রান্নায় মসল্লা ব্যবহার এবং হলুদের আধিক্য বেশী।
কি কি দেখবেন:
@নীলগিরির আরো ছবি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন=> "নীলগিরির ছবি"
নীলগিরি: বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৭ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বদিকে লামা উপজেলার অংশে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উপরে বাংলাদেশের নতুন পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরির অবস্থান। যাকে বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসাবে অবহিত করা যায়। যেখানে পাহাড় আর মেঘের মিতালী চলে দিনরাত। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ঐ মেঘের দেশে। তবে যারা মেঘ ভালোবাসেন তারা জুন-জুলাইতে অর্থাৎ বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশী মজা পাবেন। কারন মেঘ তখন আপনা হতে এসে আপনাকে ধরা দিয়ে যাবে।
নীলগিরি যাওয়া হোটেল বুকিং ও অন্যান্য:
নীলগিরি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি পর্যটন স্পট। বর্তমানে নীলগিরির কটেজ গুলো এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সব বুকড করা আছে। আপনি ইচ্ছে করলে এর পরের জন্য বুকড করতে পারবেন। ভি.আই.পি নাম্বার-০১৯২৫৮৮২৩৩৮ শুধু মাত্র সেনাবাহিনী অফিসার ও উচ্চ পদস্থ সরকারী কমকর্তার জন্য।
সাধারন পর্যটকের জন্য বুকিং ব্যবস্থা এখানে:-
পেট্রো এভিয়েশন
৬৯/২, লেভেল-৪,রোড-৭/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোন:-মনতোষ মজুমদার-০১৭৩০০৪৩৬০৩ এবং হাসান সাহেদ-০১৭৩০০৪৩৬০৩।
কটেজ ভাড়া:
গিরি মারমেট: ৭৫০০ টাকা। (৮/১০ জন থাকতে পারবে)।
মেঘদূত: ৬৫০০ টাকা। (৮/১০ জন থাকতে পারবে)।
নীলাঙ্গনা: ৫৫০০ টাকা। (৪/৬ জন থাকতে পারবে ২ রুমে) এটি ছবির বাশের কটেজটি।
নীলাঙ্গনায় কাপলের জন্য এক রুম ভাড়া নেওয়া যায় যাহা ৫৫০০টাকার অর্ধেকে ২৭৫০টাকায়।
এখানে খাবার ব্রেকফাষ্ট+লান্স+ডিনার মিলে খরচ হবে দিনে ৫০০ টাকা জনপ্রতি। এবং এটি অবশ্যই কটেজ বুকিং দেওয়ার সাথে খাবার বুকিংও দিতে হবে অন্যথায় কটেজে থাকতে হবে না খেয়েই।
কি ভাবে যাবেন: নীলগিরি যেতে হলে আগে থেকে ল্যান্ড ক্রুজার জিপ ভাড়া করতে হবে। সময় লাগবে আসা-যাওয়ায় ৪ ঘঃ ৩০মিঃ। ভাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত আসা-যাওয়া-ছোট জীপ- ৫সিট-২৩০০ টাকা এবং বড় জীপ-৮সিট- ২৮০০ টাকা। কিন্তু এখানে ড্রাইভাররা আপনার কাছে আরো অনেক বেশী চাইতে পারে যা কখনো দিবেন না।
বাদশা ড্রাইভার - (৫ সিটের ল্যান্ড ক্রুজার ড্রাইভার)
ফোন:-০১৫৫০৬০১৬৩৫,০১৯২৫৮৭০০২৭।
আমি এই ড্রাইভারের মাধ্যমে (নীলগিরি+চিম্বুক+শৈলপ্রপাত+স্বর্ণ মন্দির) এই চারটি সাইট দেখেছি মাত্র ২৮০০ টাকা এবং দুপুরে তাকে লান্স করানোর মাধ্যমে। ইচ্ছে করলে স্থানীয় ড্রাইভার বাদশার সহযোগীতা নিতে পারেন।
@স্বর্ণমন্দিরের আরো ছবি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন=>
"স্বর্ণমন্দিরের ছবি"
স্বর্ণমন্দির : বর্তমানে স্বর্ণমন্দির উপাশনালয়টি বান্দরবান জেলার একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই "বৌদ্ধ ধাতু জাদী" কে স্বর্ণমন্দির নামাকরন করা হয়। এটি বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের একটি উল্লেখযোগ্য উপাশনালয়। যাহা বান্দরবান শহর থেকে ৪ কি:মি: উত্তরে বালাঘাট নামক এলাকায় পাহাড়ের চূঁড়ায় অবস্থিত। এটির নির্মাণশৈলী মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পল গুলোর আদলে তৈরী করা হয়। বান্দরবান ভ্রমণে আপনিও এই জাদী বা স্বর্ণমন্দিরটি একবার স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন।
@মেঘলার আরো ছবি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন=>
"মেঘলার ছবি"
মেঘলা : নাম মেঘলা হলেও মেঘের সাথে মেঘলা পর্যটন স্পটের কোন সর্ম্পক নেই। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৭ কি:মি: আগে মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত। এটি সুন্দর কিছু উঁচু নিচু পাহাড় বেষ্টিত একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠে। ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটককে প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নেয় প্রতিনিয়ত। পানিতে যেমন রয়েছে হাঁসের প্যাডেল বোট, তেমনি ডাঙ্গায় রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। আর আকাশে ঝুলে আছে রোপওয়ে কার। এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চুঁড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো পাহাড়ী বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। মেঘলা পর্যটন স্পটের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বান্দরবান পর্যটন হোটেলটি।
শৈল প্রপাত : শৈল প্রপাত বান্দরবান শহর হতে ৭ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বে চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে দেখা যাবে।
নীলাচল : নীলাচল বান্দরবান শহর হতে ১০ কি:মি: দক্ষিণে ১৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্বত শীর্ষ। যেখান থেকে নীলআকাশ যেন তার নীল আচল বিছিয়ে দিয়েছে ভূমির সবুজ জমিনে। যে দিকে দুচোখ যায় অবারিত সবুজ ও নীল আকাশের হাতছানি। মুগ্ধতায় ভরে উঠে মন প্রাণ।
মিলনছড়ি : মিলনছড়ি বান্দরবান শহর হতে ৩ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বে শৈল প্রপাত বা চিম্বুক যাওয়ার পথে পড়ে। এখানে একটি পুলিশ পাড়ি আছে। পাহাড়ের অতি উচ্চতায় রাস্তার ধারে দাড়িয়ে পূর্ব প্রান্তে অবারিত সবুজের খেলা এবং সবুজ প্রকৃতির বুক ছিড়ে সর্পিল গতিতে বয়ে সাঙ্গু নামক মোহনীয় নদীটি।
চিম্বুক : চিম্বুক বান্দরবনের অনেক পুরনো পর্যটন স্পট। বান্দরবান শহর হতে ২১ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বে মিলনছড়ি এবং শৈল প্রপাত ফেলে চিম্বুক যেতে হয়। এখানে পাহাড়ের চুঁড়ায় রেষ্টুরেন্ট এবং একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে।পাহাড়ের চুঁড়া থেকে চারদিকের সবুজ প্রকৃতির সৌন্দয্য অবগাহন এখানে প্রকৃতি প্রেমীদের টেনে আনে।
সাঙ্গু নদী : পূর্বের অতিউচ্চ পর্বত শীর্ষ থেকে সাঙ্গু নদী নেমে এসে বান্দরবন শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে। বান্দরবান শহরের পূর্বে পাশে পাহাড়ী ঢালে বয়ে চলা সাঙ্গু নীদ দেখতে দারুন দৃষ্টি নন্দন।
@শৈল প্রপাত: নীলাচল: চিম্বুক:মিলনছড়ি:সাঙ্গুর আরো ছবি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন=> "শৈল প্রপাত: নীলাচল: চিম্বুক:মিলনছড়ি:সাঙ্গুর ছবি"
৫০টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মহান আল্লাহতালা কতজন নবী- রাসুলের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন এবং কোন ভাষায় কথা বলেছেন?
হ্যা আল্লাহপাক নবী রাসূলের সাথে কথা বলেছেন।
কারো সাথে কথা হয়েছে সরাসরি। কারো সাথে ফেরেশতাদের মাধ্যমে, কারো সাথে ওহির মাধ্যমে। আমরা যেভাবে কথা বলি একজন আরেকজনের সাথে আল্লাহ... ...বাকিটুকু পড়ুন
জিব্রাইল (আ: ) বললেন, "আপনি পড়ুন"
এখন ব্লগে এমন কেহ আছেন নাকি, যিনি স্কুলে গিয়ে ১মবার বর্ণমালা পড়েছেন শিক্ষকের কাছে? আজকাল, শহরে জন্মনেয়া বাচ্চাদের ( যেসব পরিবারে ২/১ জন শিক্ষিত আছে ) ৮০ ভাগ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিবেশী দেশ ভারত নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ-জনগণের মতভেদ কেন?
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এর দায় বাংলাদেশের মানুষের তুলনায় ভারতের মিডিয়া এবং মুষ্টিমেয় কতিপয় ভারতীয় বেকুবদের বেশি। শেখ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের একটা পাহাড় ছিলো
আমার একটা পাহাড় আছে,
ঠিক আমার না, ওটা আমাদের।
তবু আমি ওর কাছে যাই,
তোমাকে রেখে, একা।
ওর পায়ের কাছে নদী,
সে জানে আমার সব কথা।
পাহাড় জানে আমার ভয়,
আমার ভাঙা স্বপ্নগুলোর ব্যাথা।
আমি উঠি ওর... ...বাকিটুকু পড়ুন
রোগিণীর মা হওয়ার বাসনা পূরণ করতে ডাক্তার কর্তৃক নিজ বীর্য দান
পৃথিবীর যে কোন সমাজেই অনেক দম্পতির জন্য সন্তানহীন থাকা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাদের দেশের মত ধর্মীয় গোঁড়ামির দেশে অনেক সময় সহজ সরল নিঃসন্তান নারীরা সন্তান লাভের আশায় ভণ্ড পীরের কাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন