ঐতিহাসিক গঙ্গা পানি চুক্তি কার্যকরের ত্রয়োদশ বছর শুরু হয়েছে গতকাল। পদ্মা শুকিয়ে এখন মরা খাল। পরিবেশগত হুমকির মুখে ৬ জেলার ২ কোটি মানুষ। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) কর্মকর্তারা শুক্রবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথ পানি বিশেষজ্ঞ দল ভারতের ফারাক্কা ও বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গঙ্গার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং সে অনুযায়ী পানি বণ্টন হয়ে থাকে। তবে পানি চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত কোন বছরই বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা পায়নি। ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদী বেষ্টিত ৬টি জেলায় মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেআরসিতে ভারতীয় জল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ভারতীয় পানি কমিশনের উপ-পরিচালক শ্যামনারায়ণ সিং ও সহকারী পরিচালক সুনীল কুমার সিনহা। বাংলাদেশের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কবিবুর রহমান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন’। কিন্তু পদ্মা নদী বেষ্টিত পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ ও মেহেরপুর জেলার অন্তত ২ কোটি মানুষ ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে পদ্মার অবস্থা খুবই করুণ। ন্যূনতম পানির প্রবাহও নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১১টি পিলারই শুকনো চরে দণ্ডায়মান। যে ৪টি পিলার পানিতে রয়েছে তার আশপাশে মানুষ চাষাবাদ করছে। নদীতে মাছ নেই। জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও জোগাড় করতে পারছে না।
এদিকে ফারাক্কার প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের ৫৪টি নদী শুকিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। পাবনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমান জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এত নিচে নেমে গেছে যে, এভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে। তাছাড়া বৃষ্টিপাত না থাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কবিবুর রহমান জানান, চুক্তি অনুযায়ী (১-১০ জানুয়ারি) প্রথম মাসের প্রথম সাইকেলে গড়ে প্রতিদিন ৬৭ হাজার ৬৫০ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু পদ্মা যে পানি প্রবাহ রয়েছে তাতে এবারও ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার আশংকা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর নদীগুলোর ভূগর্ভস্থ উচ্চতা বেড়েছে এবং পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তিনি আরও বলেন, পানি চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত কোন বছরই বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা পায়নি। ভেড়ামারা পাম্প স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, পানি না পাওয়ায় ইতিমধ্যে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ পাম্প বন্ধ হয়েছিল। পদ্মার পশ্চিমপাড় ভেড়ামারাসহ আশপাশের এলাকার আবহাওয়া ও পরিবেশ আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে। মরুভূমির মতো দিনের বেলায় থাকে প্রচণ্ড গরম আর রাতে কনকনে শীত।
১. ০২ রা জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:০৯ ০