১.
কতটা ব্যর্থ হলে মানুষ হাঁটতে শিখে দেরিতে
নামতা মুখস্ত করতে দিলে ভুলে যায়,
ইস্কুলে বেঞ্চির কাড়াকাড়িতে বসে থাকে শেষের ধুলামাখা তক্তায়
রোল থাকে পিছনে
স্কুল শিক্ষক ভুলেও ডাকেনা বৃত্তি পরীক্ষার জন্য!
কতটা অকৃতকার্য হলে পাড়ার কলেজেও ডাকে না
বুয়েট, মেডিকেল, এমবিএর স্বাস্থবান বৃক্ষের পাশে আগাছা ভেবে অন্যরা এশট্রেতে ছাই ফেলে!
অথবা ভার্সিটির মেধাবী তালিকায় নাম দেখে
ধেই ধেই করে ফিরতে ফিরতে
মফিজউদ্দিন, হাশেম, মকবুলেরা ফিচকি হাসে
কতটা পিছনে পড়লে ভবিষ্যতের সংজ্ঞাটাই মাথায় ঢোকে না
জটিল পুস্তকে ক্লান্ত হয়, ঘামে সাঁতার কাটে মেধাহীনতায়,
অমনোযোগ প্রাত্যহিক রোগ হয়ে জলহীন পাতার মত ঢলে পড়ায় । না পারে বিসিএস, না পায়
ইন্ডেন্টিং ফার্মে চাকুরির ইন্টারভিউ
অন্যরা যখন ব্যাঙ্কে, ওষুধ কোম্পানীতে, স্পিনিং এ ম্যানেজার হয়ে গাড়ির ক্যাটালগ দেখে
সাজানো ড্রইং রুম তৈলচিত্রে ঢেকে দেয়
পাতলা টিভি এবং ফ্ল্যাট কেনে
এঞ্জেলিনা জোলি বা ঐশরিয়ার মত বউ নিয়ে সংসারী হয়,
তখন যদি মাথা খুড়ে মৃত সাদা মথের মতো
বাবার পেনশনের টাকায় কেনা জানালার পর্দায় ঝুলে থেকে
বিনা পয়সার আকাশ দেখে,
কতটা ব্যর্থ সে সমাজের দাগে?
হাইস্কুলের গবেট ছেলেটাও একসময় ব্রিটিশের টিকেট কেটে
বিদেশে পাড়ি জমাতে জানে,
টেক্সাসে ব্যবসা করে, গ্যাস স্টেশন কিনে ফেলে,
অথবা লন্ডনে ডিগ্রী নিয়ে পাল্টে ফেলতে পারে ফিউচার,
দেশে ফিরতেই তৃতীয় মাত্রারা তাকে ডাকে টকশোতে,
বসুন্ধরার এজেন্টেরা পিছন পিছন ঘোরে
কত অপাংক্তেয় হলে
সেই হরিসউদ্দিন ৬০ পাওয়ারের বাতি ঝোলানো
ফকিরেরপুলের শীতাতপহীন অফিসে
অস্থায়ী কেরানী হয়ে বাড়ি ফেরে,
বুড়ো মানুষদের মতো, মাথা নত করে, চার বছরের ছেলেটার জন্য ফুটপাথের সেকেন্ডহ্যান্ড প্যান্ট কেনে, পকেট হাতড়ে একটা প্লাস্টিকের ঘুঘু কেনে..?
২.
হরিসউদ্দিন রিক্সা চেপে ফেরার পথে প্রায়ই
উঁচু এপার্টমেন্টের আলো এবং পাশেই মসজিদের গোরস্তানটা দেখে - কত শত শত সফল এবং বিফল মানুষ জীবিত ও মৃত!
এক সময় দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে নিজেকে প্রশ্ন করে,
"কী লাভ হতো ইতিহাসে স্থান পেলে?
সম্রাট অথবা ঐশ্বর্যের সফলতায়?
আর কতটা ক্ষতি, কতটা ব্যর্থতা
এই হরিপদ কেরানীর অন্ধকার জীবনে? "
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ২:০৬