somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা ১১view this link

১২
ভাদ্রমাস শেষ। সকাল থেকে আকাশের দিকে তাকানো যাচ্ছে না তার স্বচ্ছতার জন্য। ঝকঝকে নীল আকাশ। রোদের তেজে যেন আরো নীল। খুব একটা গরম না হলেও রোদ বাঁচিয়ে চলতে হয়। বাড়ির বাইরের অংশে গোয়ালঘরটা। বেশ বড়। অথচ একটা মাত্র গাই আর বাছুর ছিল সম্বল। এখন নেই । চাষ বাসের জন্য একসময় নাকি অনেক বলদ গরু ছিল। এখন সে সব নেই। সব জমি আধিয়ারের হাতে। দেশে গোলমাল শুরু হওয়ার পর যখন যে যার মত পালাচ্ছে তখন কেউ গরু বিক্রি করেছে,কেউ পাশের আমিত্তিপুরের চেনা মানুষদের কাছে রাখতে দিয়েছে। তাই শ্রীমন্তপুরের সব গোয়ালই ফাঁকা। এই বাড়ির গাই বাছুরও ঐ সময় তাদের আধিয়ার রজব আলির কাছে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন এই ফাঁকা গোয়ালে সকালে খাওয়া দাওয়ার পর বাচ্চাকাচ্চারা এসে খেলে। দিবাকর বর্ষা বাদলের দিনে গোয়ালের বারান্দায় বাঁশের মাচাটার উপর বসে বিড়ি খেত আর সাত পাঁচ ভাবতো। তখন শরীর খুব দুর্বল ছিল। এখন কিছুটা সামলে ওঠার পর সেও সকালে খাওয়ার পর এ দিক সেদিক ঘুরে পুকুর পারের দিকে যায়। সেখানে বড় কিছু আম কাঁঠাল গাছ আছে। ছায়া আছে। তারই কোন একটার নিচে বসে সময় কাটায়, আর কান খাড়া রাখে গুলির শব্দ শোনার জন্য।
মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনাও যায়। সে সব মানুষ মারার জন্য না ভয় দেখানোর জন্য বোঝা যায় না। সময়ের নিয়মে আতংকও একসময় যখন গা সওয়া হতে শুরু করেছিল ঠিক তখনি ওই গত কালের ঘটনা । ঐ চারটা লাশ। আবার সব আশঙ্কা পূর্ববৎ ফিরে এসে চেপে বসলো সবার চিন্তায়। তবু এই সময় দিবাকর আতঙ্কের কথা মনে রাখতে চায় না। আয়েস করে একটা বিড়ি ধরিয়ে সে পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। খানসেনা নেই এমন একটা পৃথিবীর কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়লো অনেক দিন মাছ খাওয়া হয়না। অথচ এই পুকুরে কত মাছ। এখন নাকি লোক না থাকার সুযোগে রাতে রাতে মাছ চুরি হচ্ছে। আগে শ্বশুর বাড়ি এলে এক সময় বড়শি দিয়ে দিবাকরও মাছ ধরতো। সে-সব কী দিন ছিল। এই জীবনেই ছিল কি!ভাবতে ভাবতে দিবাকরে চোখ লেগে আসছিল।

বাবা বাবা ---ডাকে সম্বিত ফিরলো দিবাকরের। দেখলো তার বড় ছেলেটা দৌড়ে আসছে। কাছে এসে শুধু 'বাড়িত যাও--তুমারে মায় ডাকে' বলে আবার এক গতিতেই সে ফিরেও গেল। দ্বিতীয় বিড়িটা টানতে টানতেই দিবাকর বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। রান্না ঘরের সামনেই নিয়তির দেখা।--থাহ কই--এইদিকে খুইজ্জা মরি--চিন্তা নাই ভাবনা নাই--বড় ঘরে যাও। অনেকদিন পর যেন নিয়তি কথা বললো। গালি হঊক আর অনুযোগই হোক দিবাকরের ভালই লাগলো। স্বভাব অনুযায়ী কথার উত্তর না দিয়ে সে বড় ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো । ঢুকে কিছুটা অবাকই হলো । শ্বশুর শ্বাশুরি অধীর মাঝি, তিন জনই তিন জায়গায় বসা। দিবাকর ঘরে ঢুকতেই শ্বশুর বলে উঠলেন--নিয়তিত আজই চইলা যাইতে চায়। তোমার কী মত। এই অবস্থায় ---। শুনে একটু ক্ষণ মাথা নিচু করে দিবাকর বসে থাকলো। একসময় বলল--আফনেরা? কথাটার উত্তর রবীন্দ্রবাবুর বদলে সুপ্রভা দিলেন।---দেখ বাবা বাড়িত বইসাও মরণ, বাইরে গেলেও মরণ--তা বাঁচনের চেষ্টা করার জন্য বাইরে যদি যাইতে হয় তয় যাওনই কাম--ঘরের দুয়ারে বিপদ নিয়া আর কতদিন--। শ্বাশুরির যুক্তির কাছে দিবাকরের কিইবা বলার আছে। এতো অনেকটা--মরা ঠিক হয়ে আছে--কে কীভাবে মরবা এখন ঠিক করো আর সেই মতো কাজ করো। কথাবার্তার মধ্যে নিয়তি নীরবে ঘরে ঢুকে একপাশে বসে পড়লো। সে জানে তারা না সরলে মা বাবাও সরবেনা শ্রীমন্তপুর ছেড়ে। তারা ভাবে পোয়াতী মেয়েরে একলা এই শূন্যপুরীতে রেখে যাওয়াও অসম্ভব। তারচে নিজের গ্রামে গিয়ে--। আর এখানেই অস্পষ্টতা--দিবাকরও এখানে এসেই আর ভাবতে পারছে না। ঘর বাড়ি সব সেখানে পড়ে থাকলেও এখন কি অবস্থা সেখানে--কোন সংবাদ না নিয়ে নিয়তি এই রকম ঝুঁকি কেন নিচ্ছে সেখানে যাওয়ার!

দিবাকর একটা জিনিষ বুঝে গেল যে তার আসার আগে এখানে অনেক কথাই হয়ে গেছে। সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানোর জন্য তাকে ডাকা। দিবাকরত এখানেই থাকতে চেয়েছিল। চাইকি যদি মরতেও হয় ত এখানেই মরবে। কী যে মা মেয়ের মধ্যে হলো--কে জানে। নিয়তি পরিষ্কার করে কিছু বলেওনা। তার শরীরের এই অবস্থা--কোথায় যাব-- কী করবো--ভাবতে ভাবতে দিবাকর হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল --আফনেরা যা কইবেন সেইমতই হইবো---আমার আর কী মত--। বলতে বলতে সে বাইরে পা রাখলো। পেছনে শুনলো,নিয়তি বলছে--অহন আর দূরে যাইয়োনা--কাম আছে--বান্দাছান্দা করন লাগবো। দিবাকর আবার পুকুর ঘাটের দিকেই চেয়েছিল যেতে। কিন্তু নিয়তির কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে ঘরের পেছনে জঙ্গলের আস্তানাটায় গিয়ে একটা বিড়ি ধরালো। বাঁশের একটা নিচু মাচা মতন করে দেয়া হয়েছিল নিয়তির বসার জন্য--এখন সেটার উপরই সে বসলো। দেশের গোলমাল শুরু হওয়ার পর যখন সব কিছুই বেসামাল হয়ে পড়ছিল তখন থেকেই দিবাকর তার বাবার অভাব বোধ করে আসছে। আর আজ আরো বেশি করে মনে পড়ছে। বাবা মারা যাওয়ার সময় তার এই আদরের বড় ছেলে সংসার বলতে কিছুই জানতোনা। এখনো জানে না। নিয়তি সুস্থ থাকলে চিন্তা ছিলনা। সংসার নিয়তিই দেখে । সব সেইই জানে। এখনও হয়তো সেইই দেখবে । কিন্তু সে আট মাসের গর্ভবতী। শুনশান জঙ্গলে বসে দিবাকরের চোখ ছলছল করে উঠলো।(ক্রমশঃ)

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলেম কি? এ বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:১০




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প- ৯৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১



নাম তার তারা বিবি।
বয়স ৭৭ বছর। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। সামনের পাটির দাঁত গুলো নেই। খেতে তার বেগ পেতে হয়। আমি তাকে খালা বলে ডাকি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×