somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা।

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা।


মিলিটারী আসবে, মিলিটারী আসবে---করেই দিন কাটে। নিয়তির একদম কোলের ছেলেটার মুখে 'মেলেটারি' শুনেও কেউ আর এখন হাসেনা। দিনের বেলায় ঘরে থাকার অভ্যেসটা ক্রমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবু রান্নাতো করতে হয়। আর সেটা ঘরেই করতে হয়। তাই সুপ্রভা যখন রাঁধেন বাইরে পাহারা দেয় নিয়তি। ঘরের পেছনে জঙ্গল লাগোয়া একটা জায়গা ঠিক করা আছে। সেখানে সে তার ভারী পা আর পেট নিয়ে দিনের অনেকটা সময় কাটায়। সামনে বাচ্চারা খেলে। বাচ্চারা যথাসম্ভব কম চেঁচামিচি করতে শিখে গেছে। এভাবে দিন কি কাটে—কাটেনা। নিয়তি ক্রমেই আরো উদাসীন হয়ে পড়ছে। সারাদিন দিবাকর কোথায় থাকে তার খোঁজ পর্যন্ত সে আর রাখেনা। বাপের ভিটেতে আসার পর সে যেন নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছে।

এই রকম সময় একটি দিনের সকাল শুরু হয় একটু অন্য ভাবে। গ্রামের সরকারি রাস্তায় সকাল থেকেই মানুষের জটলা। কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে সকালের আলস্যভাব যেন সকলেই খুব দ্রুত ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে। আর ঝেড়ে ফেলে সকলেই রাতে গুলির শব্দ শুনে ভয় পেয়ে নিজের ভেতর আরো সেঁধিয়ে যাওয়ার চেষ্টার স্মৃতিও মুছে ফেলতে চাইছে। তবে খুব দ্রুতই সাব্যস্ত হয়ে গেল যে রাতে ওটা গুলির শব্দই ছিল আর গ্রামের পেছন দিকে পরে থাকা চারটে লাশের গায়ে গুলির চিহ্নগুলোর সঙ্গে রাতের ঐ শব্দের সম্পর্ক আছে। ভাল কি খারাপ বোঝা যাচ্ছেনা যে ওই চারটি লাশের কেউ এই গ্রামের নয়। একজন পাশের গ্রামের সনাক্ত করা গেলেও বাকি তিনজন একদম অচেনা।

বিগত ক’মাসের অস্বাভাবিক জীবন যাপনের ফল মানুষের চিন্তাশক্তিতেও প্রভাব ফেলেছে। একটা বিষয় নিয়ে কেউ বেশিক্ষণ ভাবতে পারে না। কেউ বেশিক্ষণ ভাবতে চাইলে বা প্রশ্নাদি করতে থাকলে তাকে থামানোর উপায় এখন একটাই-- হালার বান্দির পুত, চুতমারানি-- ইত্যাদি বিশেষণ প্রয়োগ করা। তাতে ইদানীং কেউ আর তেমন রাগও করছে না। গ্রামের সামনের রাস্তা জুড়ে গ্রামেরই মানুষ। গ্রামের পেছন দিকের ক্ষেতের মধ্যে পড়ে থাকা লাশ কেউ দেখতে যাচ্ছে,কেউ দেখে এসে এটা সেটা বলছে। সবই যার যার উপলব্ধি। তার মধ্যে ভিন্ন পাড়ার কারোর বয়ান শুনে আসার নামে নানা রকম গুজবও আমদানী হচ্ছে। ওদিকে লাশের কাছে ভিড়টা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ হালকা হয়ে আসছে। লাশ দেখে ফেরত আসা মানুষদের মধ্যে একসময় দেখা গেল গ্রামেরই দুই মুরুব্বী। তারাও লাশ দেখে ফিরছেন। তারা নিশ্চই কোন মন্তব্য করবেন। তাদের কথার দাম আছে। তা শোনার আশায় রাস্তার ভিড় যেন একটু জমাট হয়ে গেল। কিন্তু মুরুব্বীরা মন্তব্যের বদলে যেতে যেতে সবাইকে রাস্তা থেকে সরে যেতে বললো। বললো এই বিপদের সময় রাস্তায় ভিড় করে থাকা ঠিক না,কখন মিলিটারী আসে--। বলে তারা নিজেদের বাড়ির পথেই চলে গেল । ভীড়ের মুখে যেন চুন পড়লো। দুপুর নাগাদ স্থানীয় থানার চারজন পুলিশ সঙ্গে সাদা পোশাকের আরো চারজন এসে লাশ চারটা একটা গরুর গাড়ীতে চাপিয়ে নিয়ে গেল।পাশের গ্রামের মুখ চেনা লাশটীর বাবা মা ভোর থেকে ঠায় বসে থেকে শেষ পর্যন্ত গরুর গাড়ির পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলো। এখন আর তারা কাঁদছেনা। তবে মাঝে মাঝে বুক থেকে হু হু করে একটা আওয়াজ বের হচ্ছে। (ক্রমশঃ)

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনু গল্পঃ ব্যর্থ বাসনার দাহ

লিখেছেন সামিয়া, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮

ছবিঃনেট

খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবে না, কোনো টিউশনি করাবে না, ফোন করে সব student-কে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে।

নাবিল আসছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক জিয়ার দেশে না ফেরার কারণ।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৪


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর কেটে গেলেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×