somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে

০৮ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খোকা মাকে শুধায় ডেকে —

‘ এলেম আমি কোথা থেকে ,

কোন্‌খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে । '

মা শুনে কয় হেসে কেঁদে

খোকারে তার বুকে বেঁধে —

‘ ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে ।




(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)



শুরুটা খুব সাধারণ। দুজনের পরিচয়, তারপর দীর্ঘদিনের প্রণয় এবং পরিণয়। কিছুদিনের মধ্যে ঘর আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল, তাই তো হওয়া উচিত! কিন্তু গল্পের শুরু এখান থেকেই। গর্ভে থাকা অবস্থায় অথবা প্রসবকালীন জটিলতায় শিশুটির স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগে। আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মত তার জন্ম হয়নি। যদিও জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস লেগে যায় ব্যাপারটা বুঝতে। অন্য সব শিশুরা যে সময় বসতে শেখে, হাঁটে, বাবা-মাকে ডাকতে শেখে, রীতিমত দৌড়ায় তখনও সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে গোঁ গোঁ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। ডাক্তারের কাছে রোজই চলছে তার চিকিৎসা।খুব যে উন্নতি হয়েছে তা বলা যাবে না। ছেলের এরকম অবস্থায় ওর বাবা-মা কোথাও খুব একটা বেড়াতে যান না। এমন ছেলেকে নিয়ে তো মানুষের বাসায় যাওয়া যায় না। আবার ছেলেকে রেখে বেড়াতে ভালো লাগে কোন বাবা-মায়ের? সে ছেলে যেমনই হোক।

কোন এক ঈদের রাতে ছেলেকে নিয়ে তাঁরা আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন। একই পাড়ায় থাকি আমরা। সেই সাথে তাঁরা আমার ভাইয়ার বন্ধু ও বন্ধুর স্ত্রী । অনেকদিন ধরেই তাঁদেরকে আমাদের বাসায় আসার জন্য আসতে বলা হচ্ছিল। অবশেষে সেদিন তাঁরা এলেন আমাদের বাসায়। ছোট্ট ছেলেটাকে আমার ঘরে শুইয়ে রাখা হল। ফুটফুটে একটা ছেলে। মায়ের মতই বড় বড় আর মায়াবী চোখ পেয়েছে। কিন্তু সেই চোখে কোন প্রাণ নেই যেন! অপরিচিত আমাকে দেখে এমন অদ্ভুতভাবে গোঁ গোঁ করতে শুরু করল যে, আমার রীতিমত ভয় লাগা শুরু করল। এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার উপর! কিন্তু না, ছেলেটির নিজে নড়ার ক্ষমতা নেই। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আমি একটু ভাব জমানোর চেষ্টা করি। আমাকে ও পছন্দ করল না তবুও। ওর মা (যাঁকে আমি ভাবি বলব এখন থেকে) আমার ঘরে এলেন। ছেলের জন্য খাবার নিয়ে। খাওয়া নিয়েও কি কম হাংগামা? স্বাভাবিক একটা বাচ্চা খাওয়া নিয়ে যে পরিমাণ যন্ত্রণা করে, ওর বেলায় তো সেটা আরো বেশিই হবে। ভাবি তার ছেলেকে কোলে নিয়ে নানা রকম ছড়া-কবিতা-গল্প বলে বলে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। এ কি করছেন উনি? ছেলে কি মায়ের এত এত ছড়া-কবিতা-গল্প বুঝতে পারে? শুনতে পারে?

ছোটবেলার ভুলে যাওয়া ছড়া-কবিতা-গল্প গুলো একটা সময়ে এসে সব মেয়েরা, সব মায়েরা আবার নতুন করে শিখতে শুরু করে। একটা ইচ্ছে তার ‘’মনের মাঝারে’’ বাসা বাঁধে।



ভাবি তার ছেলেকে যতই আদর করে খাওয়াতে চান, ছেলে ততই জেদ করে ফেলে দেয়। মুখে ফেনা তুলে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। মা বলেই সব সহ্য করে যান হয়ত ভাবি। হঠাৎ শুনি ভাবি তার ছেলের সাথে খুব অভিমান করে অনুযোগ করছেন, “এই! তুই আমাকে মা ডাকবি না? বল, মা, বল! তুই আমার কেমন ছেলে? কোন দিন কি তুই আমাকে মা বলে ডাকবি না?’’



সব কিছুই ঘটছিল আমার চোখের সামনে। আমার পক্ষে ভাবির কথাগুলো সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। কথায় কথায় সুযোগ পেয়ে আমি তাকে বললাম, ‘’আপনার ছেলের অবস্থা তো এখন আগের থেকে অনেক ভাল। চিকিৎসা যখন চলছে, আর ডাক্তারও যখন বলেছে, ও নিশ্চয়ই হাঁটতে শুরু করবে।‘’



--‘’না, আমি ছেলেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখি না। আমার বড় বোন বলেছে, তোকে লোকে নানা রকম সান্ত্বণার কথা শোনাবে। এগুলো শুনে তুই আশা করতে শুরু করবি। কিন্তু তোর আশা পূরণ হবে না। তুই কষ্ট পাবি। এজন্য আমি ওকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখি না।‘’



এরপরে আমার আর কী বলার আছে?

৭ জুন, ২০১১

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:০৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×