somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একই অঙ্গে দুই জীবন!!

০৮ ই আগস্ট, ২০০৬ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুলটা আমি করেছি মাত্র গতকাল। এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। দাওয়াত খেতে গেছি এক বন্ধুর বাসায়। ভরপেট খেয়ে হাত ধুতে বাথরম্নমে যাবো, দেখি কিউ। রান্নাঘরে বেসিনেই হাত থেকে না খাওয়া খাদ্যাংশগুলোকে ছাড়ালাম। পেটে যেহেতু যেতে পারেনি সুতরাং এসব খাদ্য এখন অভিধান অনুযায়ী উচ্ছিষ্ট। কাজ শেষে ফিরছি, চোখে পড়লো ওজনের স্কেল। ভুলটা সেখানেই। শিশু যেমন কোল দেখলেই চড়ে বসে আমিও ওতে উঠে দাঁড়ালাম। ওজনের কাঁটা নাচতে নাচতে যেখানে এসে থামলো তা দেখে চোখ একেবারে বাঙ্গি ফটাশ। পঁচাশি কেজি। ইউকে 7 সাইজের পদতল আর 10 পাউন্ডের চপ্পল কি করে এত ওজন টানছে ভেবে শ্রদ্ধাবনত: অবস্থা থেকে মাথাটা সোজা করলাম। এবার চোখ গেলো আয়নায়। ওজনের যন্ত্রের সামনে বপু দেখারও ব্যবস্থা। সমগ্র দেহ 85 কেজি। একি দেখছি, একই অঙ্গে দুই জীবন।

আমার শরীরে আমি একটা বাড়তি লোক নিয়ে ঘুরাঘুরি করছি। ভাবতে গেলেই বিষম খাই। ভার্সিটি যখন ছাড়ি তখন ওজন ছিল 55 কেজি। ভুলার কথা না, বাংলা একাডেমির সামনে মেপেছিলাম। ওখানে তখন লাইন দিয়ে স্কেল নিয়ে বসতো মাপনেওয়ালারা। একটাতে যদি 50 দেখায় তো আরেকটাতে 60। পাশেই মোয়া-মুড়কির চাকাবিশিস্ট দোকান। ওদের কাছ থেকে দুটো 5 কেজি ওজনের পাথর নিয়ে সব স্কেলে একবার করে চড়ালাম। যেটায় ঠিকঠাক 10 কেজি দেখালো সেই স্কেলে আমার ওজন দেখিয়েছিলো 55। তারও আগে যখন কলেজ ছেড়েছি তখন নিশ্চয়ই 40-45 কেজি ওজন ছিল। তার মানে, কলেজ-পাশ আমার দেহে দ্বৈতাবস্থান করছে আরেকটি মানুষ। রীতিমত ডাবলিং।

ঝেড়ে নামাতেই হবে। এতো ওসামার ভূত না যে গুহায় সেঁদিয়ে গেছে। আমিও জঙ্গলের পুত্র জঙ্গল না। আয়নায় দাঁড়িয়েই শত্রু দেখতে পেয়েছি। অজগরের শরীরের মধ্যে ঢিবিমত কি দেখা যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে হাঁ করে গিলছিল। মুখের হাক্কাও তো মুক্তচিনত্দার মত ইলাস্টিক। টানলেই বাড়ে। গোডাউনের সাইজের চেয়ে বেশি মাল ঢুকিয়ে ফেলেছে। এখন মাল বের করতে হলে গোডাউন ভাঙ্গতে হবে। দরজা দিয়ে দারোয়ানই ঢুকে না। এসব ইঞ্জিনিয়ারিং কথাবার্তা। আমি হচ্ছি বৈশিষ্টে প্রাণী। বিফলে মূল্য ফেরত কোনো কবরেজের কাছে গেলে হরিপুরের বড়ি বলে যা ধরিয়ে দেবে তা হলো জোলাপ। জল সব বেরিয়ে যাবে। কিন্তু যেসব জিনিস আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে 'কানেক্ট' হয়ে গেছে ও জিনিসতো মাটি কামড়ে লটকে থাকবে। এতো ছোট দরোজায় 30-40 কেজি মাল বের করা কবরেজের কাজ না।

গুরু উপায় বলো না। শাস্ত্রে আছে গুরু ছাড়া কর্ম সাধন হয় না। বহু গুরুরা আগে অনেক ফুঁসলেছে, 'পথে আইসো বৎস'। তখন হেলাল হাফিজের যৌবন, গুরুদের তুলাধুনা করার শ্রেষ্ঠ সময়। ভক্তি গদগদ হয়ে গলে পড়েনি। এক গুরুর তত্ত্বকথার পাশে অন্য গুরুর তত্ত্বকথা বিছিয়ে মাপজোখ করেছি। কেও আড়ে বেশি কেউ দীঘে। এসব কপচানোয় তত্ত্বজ্ঞান বেড়েছে, কর্মসাধন হয়নি। এইবার বেলের লক্ষ বাবড়ি চুলের মাথা (ন্যাড়া মাথায় ফ্লিক করে উলেট চার হয়ে যায়, ক্যাচ উঠে না)। এবার চোখবুঁজে গুরুর চরণ। পূর্ণ আস্থায় সমর্পন। বিনা প্রশ্নে সাধনচর্চা। সিদ্ধান্ত নিয়ে জয় গুরু বলে ঢুকে পড়ি। কোথায় আর ঢুকবো? হিমালয়ের গুহায় এখন শ্বেতাঙ্গিনী সাধিকাদের ক্যাটওয়াক চলছে। খড়মের প্রতি আঘাতে ধ্যানভংগ হয়। সুতরাং ঢুকলাম ইন্টারনেটে। গুরু পেতে দেরি হলো না। গুরুর শুভ নাম জেমস্ ক্র্যাকনেল। (সবকিছু মনে হয় তিনি ক্র্যাক ব্রেক করে দেন)। যেমন নিজস্ব ধর্ম ছাড়া কেউ নবী হয় না তেমনি নিজস্ব তরিকা ছাড়া কেউ গুরু হয় না। আমার গুরুর তরিকার নাম 'নো-জিম হেলথ্ প্ল্যান'। জয় গুরু।

ঃ বিকাল পাঁচটার পর, কোনো শর্করা জাতীয় খাদ্য খাওয়া যাবে না। ভাত, রুটি, পাসত্দা, আলু হারাম।
ঃ জয় গুরু।
ঃ গলা দিয়ে নদী যাবে। পানির ধারা। চা, কফি যাবে না।
ঃ জয় গুরু।
ঃ প্রকৃতিতে কত ফল। দিনে পাঁচ থেকে সাতটা।
ঃ জয় গুরু।
ঃ মেনে চল, মুক্তি পাবি। যে তোর দেহযন্ত্রে সেঁদিয়ে গেছে, সে দৌড়ে পালাবে। এইখানে শান্তি পাবে না।

জয় গুরু।আমিও চাইনা এই বাড়তি লোকটা শানত্দিতে থাকুক। শানত্দিতে সে ইনস্টল হয়ে গেছে বলেই তো আমার দিন-রাত্রির শানত্দি এখন ডিলিট হয়ে গেছে। কেন যে ব্যাকস্পেস বোতামটা চাপছিলাম - মানে ওজনের স্কেলে শরীরটাকে ডাউনলোড করেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শু সাইন বয় ইন্ডিকেটর

লিখেছেন মুনতাসির, ০৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:১২

অর্থনীতি ও বিনিয়োগের জগতে একটি বিখ্যাত গল্প প্রচলিত আছে, যেটি "Shoeshine Boy Indicator" নামে পরিচিত। এটি একটি উপকথার মতো শোনালেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে এক গভীর সত্য—যখন সবাই বিনিয়োগে লাফিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....


'ওরফে গফুর' এর লেখা আমি বহুবছর থেকেই পড়ি। ওনার লেখা পড়ে ওনার মতবাদ, আদর্শে আমি বিভ্রান্ত হয়েছি বারবার। কারণ, কোন এক পত্রিকায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×