ঢাকা-কোলকাতা-দার্জেলিং-মিরিক পার্ট -১
আজ শনিবার ১৭/১০/২০১৫ তারিখ। আমরা অনেক সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফেয়ারলি প্লেস যাবার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি আমরা কোলকাতা উপস্থিত হয়ে একটা সিম নিয়েছিলাম ৩০০ টাকা (রুপি) বিনিময়ে । ২০০ টাকা ফ্রী ও ৫০ এম বি ইন্টারনেট ছিল। দোকানদারকে বলেছিলাম বাংলাদেশে যেন কম টাকা কাটে। সে কি সিস্টেম করল জানিনা তবে বাংলাদেশে কথা বললে ১ টাকা ৯৯ পয়সা কাটতো আর সকল ইন্ডিয়া নাম্বার ৪০ পয়সা কাটে। সকালের নাস্তা করে হেঁটে পার্ক স্ট্রিট দিকে চলে এলাম। হাওরার বাস ধরে ফেয়ারলি প্লেস চলে এলাম ভাড়া দিতে হল ৬ টাকা করে তিন জন ১৮ টাকা। যেখানে নামলাম তার বিপরীত ফেয়ারলি প্লেস ভবন । যেয়ে দিখি বন্ধ কারন তখনও ৯ টা বাজে নাই। দেখলাম একজন লোক সিরিয়াল লিখিতেছে আমি আমাদের নাম লিখেদিলাম। সিরিয়াল ৪১ হল। কারন ঐখানে অনেক সকাল হতে মানুষ সিরিয়াল দিয়া বসে আছে। যত জন মানুষ দেখলাম তার ৯৫% মানুষ বাংলাদেশি। কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ ঘুরতে্, কেউ তার আত্মীয় বাসায় বেড়াতে গেছে।
আমরা সিরিয়াল দিয়ে আরামে ঘুরে বেড়াছি কিন্তু যানাছিল না যে লাইনে দারিয়ে থাকতে হবে। যখন ফেয়ারলি প্লেস অফিস খুলে দিল দেখি সবাই আমাদের আগে দারিয়ে গেছে আমরা শুধু পিছিয়ে আছি। আগে যে লিস্ট নাম লিখিয়েছিলাম তার কোন দাম নাই। কি আর করা মেনে নিতে হল। আশা করি আপনারা এই কাজ করবেন না। ভিতরে ঢোকার সময় একটা হাতে কাগজ দিল সেখানে আপনার তথ্য লিখতে হবে। একদম উপরে আমাদের সিরিয়াল লেখা ৪৫ নম্বর। ইনফর্মেশন গুলো ছিল এই রকম কোন ট্রেন যাবেন তার কোড নং, ট্রেন নাম, কোথায় থেকে কোথায়, কবে যাবেন , আপনার ইন্ডিয়ান মোবাইল নং, আপনারা কতজন যাবেন তাদের নাম, বয়স, নারি বা পুরুষ , পাসপোর্ট নং আর যদি রিটার্ন আসতে চান তার বিবরণী । আমরা দার্জিলিং যাবার জন্য টিকেট কাটছিলাম । ভুল করেছিলাম রিটার্ন টিকেট না কেটে কেননা আসার সময় টিকেট পেতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যথা সময়ে আমরা ফরমটি পুরন করতে ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হল আমরাতো ট্রেন কোড জানিনা। তাহলে কি করা যায়? আমাদের কোন সমস্যা হয়নি আমার আরেক জন সঙ্গি তার মোবাইলে একটা অ্যাপ্লিকেশান ইনস্টল করেছিল। আপনি ইচ্ছা করলে অ্যাপ্লিকেশান ইনস্টল করে সকল ইনফর্মেশন পেতে পারেন। কতো ভাড়া কোথায় কখন ও কবে যাবে সকল তথ্য পাওয়া যায় (অ্যাপ্লিকেশান ইনস্টল লিঙ্ক )।
যথা সময় সকল ইনফর্মেশন দিয়ে ফর্মটি পুরন করে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আমাদের সিরিয়াল আসে। তখন ১০ বাজে । আমাদের চিন্তা হল আজ রাতে দার্জিলিং টিকেট পেলে আজই হোটেল চেক-আউট করব। কেননা ১২ টার মধ্যে চেক-আউট না করলে আরেক দিনের ভাড়া দিতে হবে। কিন্তু যা দেখলাম তাতে মনে হলনা ৩ টা নাগাত শেষ হবে। কি আর করা এক অফিসার কে বলে আমরা হোটেলে চলে গেলাম চেক-আউট করার জন্য । দুপুর ১২ টার মধ্যে আমরা হোটেল চেক-আউট করে আবার ব্যাগ নিয়ে ফেয়ারলি প্লেস চলে আসলাম। এসে দেখি ৩৫ নং সিরিয়াল চলে। কি করব বসে রইলাম। অবশেষে আমাদের সিরিয়াল আসল কিন্তু ওইদিন কোন টিকেট ছিল না। পরের দিন রবিবার (ওইদিন ওদের সরকারি ছুটি) ১৮/১০/২০১৫ তারিখের টিকেট পেলাম কি করব ওইদিন কোলকাতা থেকে যেতে হল। আবার পার্ক স্ট্রিট ফিরে এলাম। এইবার ওই হোটেলে না উঠে হোটেল খাজা হাবিব উঠলাম। ভাড়া ৯০০ টাকা তিনজনের বেড । হোটেলে উঠে একটু রেস্ট নিয়ে এবার বের হলাম কোলকাতা শহরের কি কি আছে তা ঘুরে দেখার জন্য। কোলকাতার নিম্ন স্থান গুলো ঘুরে দেখেছি ।
#ময়দানঃ মির্জা গালিব স্ট্রিট থেকে হেঁটে পার্ক স্ট্রিট এসে রাস্তা পার হয়ে ওপার গেলেই ময়দান শুরু। বুজতে না পারলে ট্রাফিক সাহায্য নিতে পারেন । সকল ঘুরার স্থান গুলা পার্ক স্ট্রিট এর আশে পাশে অবস্থিত । আপনি পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারেন। ময়দান শুধু ওরা সকালে ব্যায়াম করার জন্য এবং ছেলেরা ওইখানে ক্রিকেট খেলতে ছিল। এক বিশাল জায়গা ।
(এইটা ময়দান মাঠ )
( এইখানে আমি এবং আমার বন্ধু হাঁটছিলাম সকাল বেলা)
( এইটা আমার আরেক বন্ধু পাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে )
#ভিক্টোরিয়া পার্কঃ বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা মনে হয়েছে কোন রাজার প্রাসাদ। আমরা টিকেট কাটার জন্য আমাদের একজনকে পাঠালাম । টিকেট মূল্য ২০ টাকা যদি আপনি ভিতরে মিউজিয়াম সহ দেখতে চান । আর বাগান জন্য শুধু ১০ টাকা (রুপি) লাগে। একটা কথা বলে রাখি ইন্ডিয়াতে প্রতিটি স্থানে বিদেশিদের জন্য অন্য মূল্য টিকেট। যেখানে ওদের জন্য ১০ রুপি সেখানে আমাদের জন্য ১৫০ রুপি। আপনি কৌশলে টিকেট কাটলে কোন রকম বেশি রুপি দিয়ে কাটতে হবে না। কোন রকম ঝামেলা ছাড়া টিকেট কাটা হয়ে গেল। গেটে একবার চেক করবে আবার প্রাসাদ ঢোকার সময় আবার চেক করবে। বলবে মোবাইল বা ক্যামেরা বন্ধ করে ঢোকার জন্য। সামনে দিক দিয়ে ঢুকবেন আর পিছন দিক দিয়ে বের হতে হয়। ভিতরে অনেক ছবি আছে । ব্রিটিশ আমলের ছবি ও কিভাবে এই প্রাসাদ তৈরি করেছে , কতো সাল হতে কাজ শুরু করেছে আরো অনেক তথ্য। ছবি তোলা সম্ভব নয় বলে ছবি দিতে পারছি না। তবে বাগানের কিছু ছবি দিলাম।
( ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে আমি )
( ভিক্টোরিয়া পার্কের পিছনে আমি ও আমার বন্ধু )
( ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে রানির ছবি )
( রাতের বেলা ভিক্টোরিয়া হতে বের হবার সময় )
( ভিক্টোরিয়া পিছনে বসে আছি মাঠের মধ্যে )
( কার্জন ভাস্কর্য সামনে ভিক্টোরিয়া পিছনে ছবি )
( প্রধান গেটের সামনে টিকেট কাউন্টার পাশে আমার বন্ধু )
( প্রধান গেটের সাথে ঢোকার সময় )
( সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া পিছনে )
( ভিক্টোরিয়া মিউজিয়াম ঢোকার সময় গেটে তোলা ছবি )
#ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামঃ ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ১৮৪১ সালে তৈরি করেছে। আপনি পায়ে হেঁটে পার্ক স্ট্রিট এসে একটু উত্তর দিক হাঁটলেই হাতের ডান দিকে ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম পাবেন। ঐখানে ওভার ব্রিজ শুরু ও নিউ মার্কেট এলাকা । ঢোকার সময় আপনার টিকেট নিতে হবে। টিকেট মূল্য ১০ টাকা (রুপি) কিন্তু আপনি বিদেশি তাই আপনার জন্য ১৫০ টাকা (রুপি) করে। আগেই বলেছি একটু কৌশলে টিকেট কাটতে হবে। মোবাইল ছবি তোলা নিষেধ নাই তবে ক্যামেরা নিয়া প্রবেশ করলে ৫০ রুপি দিতে হবে। এই জন্য আপনাকে একটা ট্যাগ দিবে যেটা ক্যামেরা সাথে লাগাতে হবে। তার পর আপনার যত খুশি ছবি তুলতে পারেন। আমারা অবশ্য দুটি ক্যামেরা নিয়ে গেছিলাম কারন চার্জ যদি শেষ হয়ে যায়। আমাদের একটার চার্জ শেষ হয়ে গেছিল পরে ওই ট্যাগ খুলে আবার নতুনটায় লাগিয়েছি। ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে ওদের সকল সংস্কৃতি দেখতে পাবেন। ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম চারটি পাস আমরা ঘুরে দেখেছি। আমাদের কাছে যত গুলো ছবি ছিল তার সবগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
( ইন্ডিয়া মিউজিয়ামে তোলা ছবি )
#সায়েন্স সিটিঃ এইটা আমার চোখে বিনোদনের বিজ্ঞানাগার বলে মনে হয়েছে। কেননা এইখানে শুধু ভারতের বিজ্ঞানের প্রতিফলন দেখিয়েছে। সায়েন্স সিটি যেতে হলে আপনাকে বাসে যেতে পারেন আবার ট্যাক্সি যেতে পারেন। আমরা যাবার সময় ট্যাক্সিতে গিয়েছিলাম কারন তখনও আমরা তেমন চিনিনা। ১৩০ টাকা নিয়েছিল। তবে আসার সময় বাসে এসেছি ভাড়া মাত্র ৮ টাকা (রুপি) করে নিয়েছিল। এইটুকু রাস্তা কতো বেশি ভাড়া আমাদের দিতে হয়েছিল না চেনার কারনে। সায়েন্স সিটি প্রবেশ সময় আপনার ব্যাগ জমা রাখতে হয়। তবে যদি ব্যাগে ল্যাপটপ থাকে তাহলে আপনি ভিতরে নিতে পারবেন। টিকেট মূল্য ৪০ টাকা (রুপি) করে প্রতিজন। আর যদি আপনি রোপওয়ে (ক্যাবলে করে) যান তাহলে আর ৩০ টাকা (রুপি) বেশি দিতে হবে। কেব্ল কারে করে যেতে পারেন। তবে হেঁটে যাওয়া ভালো এতো খরচ দরকার নাই। ভিতরে অনেক গুলো রাইড আছে । ড্রাগন ঢোকার জন্য ১০ টাকা করে। সোলার সিস্টেম ঢোকার জন্য ৬০ টাকা করে আর যদি ৩ডি মুভি দেখেন আর অনেক টাকা (রুপি)। আমাদের কাছে যত গুলো ছবি ছিল তার সবগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।
( এইটা রপের ছবি যাতে করে পার্কে ঢুকেছি )
( এইটা স্ট্রিমিং ছবি , এর ভিতরে অনেক ঘুরতে থাকে )
( এইটা রপের উঠার আগে ছবি যাতে করে পার্কে প্রবেশ করতে হয় )
( এইটা পার্কের ভিতরে সোলার সিস্টেম সামনে ছবি )
( এইটা রপের উপর থেকে তোলা ছবি )
( পার্কের সামনে আমি রপের গেটের দিকে যাচ্ছি )
( পার্কের ভিতরে তোলা )
( কিছু বিবর্তন প্রানির ছবি )
( কিছু বিবর্তন প্রানির ছবি )
( গুহার মধ্যে আমরা হাঁটছি )
( গুহার মুখের সামনে যেখান দিয়ে প্রবেশ করতে হয় )
( পার্কে বসে কপি পান করছি )
#হাওরা ব্রিজঃ অনেকে বলে ব্রিজ দেখার কি আছে। আমরা যখন হাওরা স্টেশন দেখতে গিয়েছিলাম তখন হাওরা ব্রিজ উপর দিয়ে হেঁটে বড় বাজার হয়ে বাসে উঠে ছিলাম। হাওরা ব্রিজ নির্মাণ অনেক সুন্দর বলা যায়। বাংলাদেশের পাকশি ব্রিজ মত কিন্তু এর উপর অনেক বড় ও প্রশস্ত এবং রাতে অনেক লাইট সিস্টেম । এর উপর দিয়ে অনেক বাস ও মানুষ চলাচল করে। রাতের বেলা অনেক সুন্দর দেখা যায়। হাওরা ব্রিজ অনেক সময় দারিয়ে ছিলাম । এখানকার মানুষ গুলো কতো ব্যস্ত তা ব্রিজ গেলে বোঝা যায়। কেউ কার জন্য অপেক্ষা করে না। পরে বুজতে পারলাম এরা সবাই হাওরা স্টেশন দিকে যাচ্ছে কারন ট্রেন তো কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। এইখানে একটা জিনিস ভালো লাগছে সময়টা অনেক মূল্য দিতে যানে। যথা সময় ট্রেন ছাড়া ও উপস্থিত । আমাদের কাছে যত গুলো ছবি ছিল তার সবগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।
#হাওরা স্টেশনঃ অনেক বড় একটা রেল স্টেশন। অনেক গুলো রেল প্লাট ফর্ম আছে। ইন্ডিয়ান জরীপে বলা যায় প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই স্টেশন যাতায়াত করে। আমিতো প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম এতো মানুষ কই যায়। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন তার গন্তব্য চলে যায়। ইন্ডিয়াতে এই জন্য ট্রেন বিখ্যাত । আপনি যখন ট্রেন উঠবেন তখন দেখবেন তারা কত সহনশীল ।
#চিড়িয়াখানাঃ কোলকাতার চিড়িয়াখানা দেখা এক প্রকার শখ ছিল।
আজ আর কোলকাতা সম্পর্কে বলছি না। তবে আপনি ইচ্ছা করলে আরও সময় নিয়ে কোলকাতা শহরকে ঘুরে দেখতে পারেন। আমাদের হাতে সময় ছিলনা । তাই যত টুকু ঘুরেছি তার বর্ণনা দিয়েছি। তবে কোলকাতার নিউ মার্কেট , বিগ বাজার, কোলকাতা বাজার, শ্রী লেদার ( জুতার দোকান) , চাঁদনী চক, ট্রাম চড়া, মেট্রো ট্রেন, টানা গাড়ি ( মানুষ দিয়ে টানানো হয়), রবীন্দ্র সদন, কালি মন্দির সবই ঘুরে দেখেছি। এতো বর্ণনা দিতে অনেক সময় লাগবে তাই সময় স্বল্পতার কারনে আর লেখা হল না। পরবর্তী পর্বে কোলকাতা হতে দার্জিলিং সম্পর্কে লিখব।
চলবে ........
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০২