সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ্তালার দরবারে শুক্রিয়া জ্ঞাপন করি। কেননা অনার সৃষ্টির কোন শেষ নেই। পৃথিবী কিভাবে মেক করেছেন তিনি ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না। তাই হয়তো তিনি বলেছিলেন ওনাকে নিয়ে গবেষণা না করে ওনার সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা কর । আমাদের ইচ্ছা ছিল অনার সৃষ্টি কিছু ঘুরে দেখা । যে ইচ্ছা সেই কাজ আমরা তিন জন বন্ধু মিলে অনেক দিন ধরে প্লান করছি কবে কিভাবে কোথায় কোথায় ঘুরব আর কত খরচ পরতে পারে এই নিয়ে। তবে ভিসা নিয়ে কোন ঝামেলা করতে হয়নি। অনেক আগেই ভিসা নিয়ে ছিলাম।
ঘুরতে যাবার আগে অনেক ব্লগ , অনলাইন , বন্ধুর কাছ থেকে অনেক তথ্য যোগার করে ছিলাম যে কিভাবে গেলে কম খরচ ও ভালো ভাবে ঘুরা যায়। এই জন্য হয়তো তেমন কোন ঝামেলায় পরতে হয়নি। এই পর্বে শুধু ঢাকা হতে কোলকাতা পর্যন্ত বিবরণ দিবো। কোন প্রকার ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার (১৫/১০/২০১৫) তারিখ ১১ টা ৩০ মিনিট রাতে আমাদের বাসের টিকেট কাটা ছিল। টিকেট অনেক আগে কেটে রেখে ছিলাম কারন সামনে পুজা ছিল। আর আমাদের টিকেট ছিল গ্রীন লাইন ভলভো । টিকেট মূল্য ১২০০ টাকা বেনাপোল পর্যন্ত । আর বেনাপোল কাটার উদেশ্য ছিল প্রেট্রাপোল থেকে টেম্পু করে বনগাঁ যাব তার পর ট্রেন করে দম দম বা শেয়ালদাহ যাব।
আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। সকল কিছু গুছিয়ে বাসা থেকে আমরা তিন জন বের হয়ে গেলাম। বাস ছাড়বে কলাবাগান থেকে। বাস ছাড়তে ছাড়তে রাত প্রায় সাড়ে বারটা বেজে গেল। আমাদের সাথে কিছু হালকা খাবার নিয়ে ছিলাম যাতে করে রাতের বেলা খাওয়া যায় । আর কোন ভাবে ভোলা যাবে না পাসপোর্ট , কিছু ছবি, আর পাসপোর্টের ফটোকপি এবং প্রয়োজনীয় কাপড় ও জিনিস পত্র।
আগের কথা ভুলে গেছি আমরা সবাই ডলার করে নিয়েছিলাম। এই ব্যপারে কিছু বলা দরকার কেননা আপনাদের যেন কোন প্রকার সমস্যা পরতে না হয়। আমরা অনেক ব্যাংক গিয়েছিলাম টাকা থেকে ডলার করার জন্য । একেক ব্যাংক একেক রেট । কোন ব্যাংক ৮১ টাকা ৪০ পয়সা আবার কোন ব্যাংক ৮০ টাকা ৫০ পয়সা সাথে চার্জ আছে ১১০০/৫৬০/২৪০ এই রকম । সর্ব শেষে এক বড় ভাইয়ে মাধ্যমে মানি এক্সচেঞ্জ হতে কোন চার্জ ছাড়া ৮০ টাকা ৫৫ পয়সা করে ডলার নিলাম যদিও ১০০ চার্জ দিতে হয়েছে (Dollar endorsement এই জন্য) এইটা ছিল সৈকত মানি এক্সচেঞ্জ , ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতালের পাশে। ডলার না নিলেও চলতো কেননা কোলকাতা বাংলা টাকা পরিবর্তন করা যায়। অনেক মানি এক্সচেঞ্জ আছে। ডলার নিয়ে ছিলাম কারন বর্ডার যেন কোন সমস্যা না হয়। তবে কেউ টাকা নিলে ৫০০ টাকার নোট নিয়ে যাইয়েন এতে ভালো মূল্য পাবেন।
যথা সময়ে ( একটু লেট ) করে আমাদের বাস ছেড়ে গেল। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমন বলে কথা তাই বাসে ঘুম আসতে ছিলনা। সকাল ৮ টায় আমাদের বাস বেনাপোল উপস্থিত । আমারা বাস থেকে নেমে সঙ্গে নেয়া খাবার একটা হোটেল ডুকে খেয়ে নিলাম। তবে বলে রাখি বাস থেকে নেমে একটু হাঁটলেই বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অফিস। গেটে অনেক মানুষ একটা কাগজ নিয়া দারিয়ে আছে । ১০ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায়। আপনাকে কিনতে হবে না আমি একটা কপি দিয়ে দিলাম (লিঙ্ক) । প্রিন্ট করে নিবেন নয়ত আপনাকে দালালের কাছ থেকে কিনতে হবে। একবার দালালের চক্রে পড়লে কি সমস্যা তা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা তিন জন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অফিস ভিতর চলে গেলাম কোন প্রকার দালালের সাহায্য ছাড়া । আমাদের আগেই ট্রাভেল চার্জ প্রদান করা ছিল বিধায় কাস্টমস শেষ করে ইমিগ্রেশন জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আপনি ইচ্ছা করলে ঢাকাতে ট্রাভেল চার্জ প্রদান করতে পারেন অথবা ঐখানে ও দিতে পারেন (ঢাকায় মতিজিল সোনালি ব্যাংক লোকাল শাখা দেয়া যায়) । অনেক্ষন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ইমিগ্রেশন পার করে ইন্ডিয়া কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ঐখানে ও সেইম; অনেক দালাল। দালাল ছাড়া কাজ করতে একটু সময় বেশি লাগে। সবচেয়ে খারাপ লাগে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস মানুষ গুলা হারামির দল। টাকা ছাড়া কিছু বোযেনা । দালালরা কোন লাইনে না দারিয়ে সহজে সিল মেরে চলে যাচ্ছে অথচ আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টা কে ঘণ্টা।
ইমিগ্রেশন শুধু আমাকে বলে ছিল আপনার কাছে কোন ইন্ডিয়ান রুপি আছে কিনা। আমার কাছে যদিও ছিল কিন্তু আমি বলেছিলাম নাই। কোন প্রকার চেক বা প্রবলেম হয়নি। অবশেষে ইন্ডিয়া কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কাজ শেষ করে রাস্তায় আসলাম।এখন আপনার ঘরির টাইম পরিবর্তন করুন। ঐখানে অনেক টেম্পু ও বাস ছিল। আমারা বাসে না যেয়ে টেম্পু করে বনগাঁ চলে এলাম ভাড়া ২৫ টাকা (রুপি)। একাটা কথা বলে রাখি পেট্রোপোল গিয়ে ৫০০ বাংলা টাকা কে রুপি করে নিবেন। যাতে করে বাস ভাড়া বা টেম্পু ভাড়া দিতে পারেন।
আমারা এখন টেম্পু করে বনগাঁ যাচ্ছি ।
বনগাঁ স্টেশন নেমে দম দম স্টেশন একটা টিকেট কাটলাম ১৫*৩(তিন জন ৪৫) টাকা (রুপি) দিয়া। যখন ট্রেন উঠলাম তখন প্রায় ১২ বাজে । ট্রেন অনেক ফাকা ছিল। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস লাইনে দাঁড়ানোর সময় একটা পরিবারের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম তাদের সাথে আমরা এক সাথে টেম্পু ভাড়া করেছিলাম।
আর স্টেশন এক সাথে টিকেট কাটলাম ।
বনগাঁ স্টেশন নেমে দম দম স্টেশন পর্যন্ত ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেগেছিল।
দম দম স্টেশন নেমে ঠিক উল্টো দিকে পার ( ওভার ব্রিজ) হয়ে। ব্রিজ থেকে নেমে দেখবেন সাবওয়ে রাস্তা আছে। ওইটা মেট্রো ট্রেন রাস্তা। মেট্রো ট্রেন টিকেট কাটলাম ১০ রুপি করে ৫ জন (আমরা তিনজন আর ওই পরিবারের দুই জন) পার্ক স্ট্রিট যাব । কেননা পার্ক স্ট্রিট থেকে অনেক সহজ হয় চলাচল করতে। পার্ক স্ট্রিট নেমে পায়ে হেঁটে মির্জা গালিব স্ট্রিট চলে গেলাম। মির্জা গালিব স্ট্রিট অনেক হোটেল পাওয়া যায়। এর পাশে মারকুইস স্ট্রিট যেখানে বাংলাদেশের সকল বাস থামে। অনেক হোটেল পাবেন আপনাকে দরদাম করে উঠতে হবে। আমাদের সাথে যে পরিবার ছিল ওরা অন্য হোটেল বুকিং ছিল। তাই আমরা তিনজন অনেক দামাদামি করে মির্জা গালিব স্ট্রিট পারামউন্ট হোটেল উঠলাম। তিনজন ভাড়া ছিল ১১০০ টাকা নন এসি । অনেক জার্নি করেছিলাম বলে উঠেগেলাম। পরের দিন হোটেল পরিবর্তন করলাম পাশে হোটেল খাজা হাবিব ছিলাম তিনজন ৯০০ টাকা নন এসি (ইন্টারনেট ফ্রী) প্রতিদিন। হোটেল উঠে গোসল করে খাবারের জন্য বেড় হলাম । আসে পাশে অনেক হোটেল ছিল আমরা ইসলামিয়া হোটেলে খেতে গেলাম। কারন ওইটা মুসলিম হোটেল ছিল। ওইখানে গরুর মাংস পাওয়া যায় । মোটামুটি কম দাম ছিল এক প্লেট ৫০ টাকা । তিনজন খাওয়া শেষে বিল আসলো ১৭৫ টাকা (রুপি) মাত্র। খাওয়া শেষে আবার হোটেলে ফিরে গেলাম ওইদিন আর কোথাও বেড় হইনি শুধু ফেয়ারলি প্লেস গিয়েছিলাম দার্জিলিং (শিলিগুড়ি কিন্তু ট্রেন যায় নিউ জল্পাই গুড়ি ) টিকেট জন্য । কিন্তু তখন বন্ধ হয়ে গেছে। কারন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কি আর করা আমরা পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করলাম। আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছিল হোটেলে দেরি না করে যদি সরাসরি ফেয়ারলি প্লেস যেতাম তাহলে হয়তো পেতাম। পার্ক স্ট্রিট থেকে ফেয়ারলি প্লেস যেতে ৬ টাকা ভাড়া দিতে হয়। কি আর করা হাওরা ব্রিজ ঘুরে হোটেলে ফিরে এলাম সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম( ইসলামিয়া হোটেল হতে) । মোবাইল ও ল্যাপটপ চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আজ এই পর্যন্ত পরবর্তী পর্বে কোলকাতা কোথায় কোথায় ঘুরলাম তার বিবরন ও ছবি সহ পোস্ট করব।
চলবে..
ঢাকা-কোলকাতা-দার্জেলিং-মিরিক পার্ট -২
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯