অ্যাবেল ১৬৮৯ নামে বিশাল গ্যালাক্টিকপুঞ্জকে গ্যালাক্টিক ল্যান্স হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছেন। এই গ্যালাক্টিকপুঞ্জতে কৃষ্ণশক্তি বিদ্যামান। বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে আসা আলোর মাধ্যমে মহাবিশ্বে ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তির পরিমাণ বের করেছেন। কৃষ্ণশক্তি এমন এক রহস্যময় শক্তি যা বিশ্বের প্রসারণ ত্বরান্বিত করেছিল। এই বলের বণ্টন থেকেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব সম্ভবত চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে। পরিণামস্বরূপ এটা হবে ঠাণ্ডা, মৃত, পরিত্যক্ত। অন্তত গবেষকরা তাই বলছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির প্রফেসর এরিক জুলিওর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাটি দ্য জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত হয়।
কেন মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল বা এর আগে কী ছিল এর উত্তর বিজ্ঞানীরা না জানলেও কী ঘটবে ভবিষ্যতে বা এর পরিণতি কী?_ এ সংক্রান্ত দুটি সম্ভাবনা আছে। প্রথমটি হলো বিশ্ব উন্মুক্ত বা ওপেন এবং চিরকাল তা প্রসারিত হতে থাকবে। ফলস্বরূপ নতুন গ্যালাক্সি ও নক্ষত্রগুলো তৈরির প্রক্রিয়া থেমে যাবে এবং বিদ্যমান অস্তিত্বগুলোর সমাপ্তি ঘটবে কালো বামন নক্ষত্র, নিউট্রন নক্ষত্র এবং কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যদিয়ে। দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি হলো, বিশ্ব আবদ্ধ বা ক্লোজ হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পদার্থ আছে। যদি বিষয়টা এ রকম হয় তাহলে মহাকর্ষ মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মহাবিশ্বের এ প্রসারণ বন্ধ হবে এবং বিশ্বের সংকোচন শুরু হবে। মহাবিস্টেম্ফারণের পর যা ঘটেছিল এক্ষেত্রে অন্তিম মহাসংকোচনের বা বিগক্রাঞ্চের সঙ্গে ঘটনার ধারাবাহিকতা হবে বিপরীত অগি্নময় মৃত্যু বা ফায়ারি ডেথ। তাহলে কি এরপর আরেকটি মহাবিস্ফোরণ? যদি তাই হয় তাহলে বিশ্ব হবে পর্যায়ক্রমিক অর্থাৎ শুরুও নেই, শেষও নেই।
বিশ্বটা চারভাগের তিনভাগ কৃষ্ণশক্তি দিয়ে পরিপূর্ণ কিন্তু তা অদৃশ্য। আমরা শুধু বিশ্বের প্রসারণের প্রতিক্রিয়া থেকে এর সম্বন্ধে জানি। কীভাবে স্থানের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণশক্তি বিস্তার লাভ করছে তা বের করার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে আগত ওই আলোকপথের বিচ্যুতি ঘটায় নিকটবর্তী গ্যালাক্টিকপুঞ্জ 'অ্যাবেল ১৬৮৯'। এটির সন্ধান ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জে পাওয়া গেছে। এটি হচ্ছে জানা এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গ্যালাক্টিকপুঞ্জ। এর ব্যাপক ভরের কারণে এটাকে মহাজাগতিক ম্যাগনিফাইং গ্গ্নাস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিনটি ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে মহাজাগতিক ল্যান্স আলোক পথের বিকৃতি ঘটায়। ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম দুটি চালকের পরিমাপে সামর্থ্য। এটিই তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরকে পরিমাপে সামর্থ্য করে তুলছে। বর্তমানে কৃষ্ণশক্তির বণ্টন জেনেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব ক্রমেই প্রসারিত হবে।
ইয়েলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির কসমোলজিস্ট ও এই গবেষণাপত্রের সহলেখক প্রফেসর প্রিয়ামভাদা নটরজ্যান বলেছেন, অনুসন্ধানই বলে দেবে বিশ্বের নিয়তি আসলে কী হতে পারে। তবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সংক্রান্ত ইনফ্লেশন থিওরি ও মাল্টিভার্স, প্যারালাল ইউনিভার্সের মতো হাইপোথিসিসগুলো বলছে, আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচ্যুয়েশনের মধ্যদিয়ে স্থান-কালের শূন্যতায় আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এ পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে এবং হয়তো বাস্তবে ঘটেছেও। বলা হয়ে থাকে সৃষ্টির ঊষালগ্নে ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত বুদ্বুদ থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে, যেগুলো একটি অপরটি থেকে সংস্পর্শহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতে হয়তো আমরা অবস্থান করছি অন্যগুলোর সম্পর্কে জ্ঞাত না হয়ে।
আসিফ
বিজ্ঞান বক্তা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১:০৭