somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০৩: দেহরক্ষী ( হলের মধ্যে যারা উল্লাস করেছেন, আনন্দে সিটি দিয়েছেন আমি তাদের মধ্যে একজন)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা চলচিত্রের পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে আবার আমরা ফিরে পেতে যাচ্ছি আমাদের পুর্বের হারিয়ে ফেলা সম্মান। সম্প্রতি কিছু চলচিত্র তাই প্রমান করে। এই সময়ে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আমার ইনডাস্ট্রি। কিছু সংখ্যক মানুষের প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তন শুরু হলেও এখন তা ছড়িয়ে যাচ্ছা। এই পরিবর্তন কখনো ঘরে বসে উপভোগ করা সম্ভব নয়। এই পরিবর্তনটা অনুধাবন করতে হলে আমাদের হলে যেতে হবে, ছবি দেখতে হবে, নির্মাতা এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটি মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে।



আমি চেয়েছি এই সময়টার সাথে নিজেকে জরিয়ে নিতে। তাছাড়া বাংলা ছবি প্রিতি আমার বরাবর। এবং আমার " মুগ্ধতা-ব্যধি" বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সবথেকে বেশী কাজ করে। দারাশিকো ব্লগে রিভিউ পড়ে দেখতে গেলাম ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত দেহরক্ষী।

দেহরক্ষীর গল্পটা এইরকম যে, শহরের একজন টপ টেরর আসলাম সিদ্দিকি ( মিলন)। সে একটা পার্টি-গার্লকে ভালোবেসে ফেলেছে। পার্টি গার্ল সোহানা, নিয়তীর ফ্যসাদে পরে ক্লাবে ড্যান্স করছে। আসলাম সিদ্দিকির প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে, আসলাম সোহানার বাবাকে বন্দি করে। এবং ব্লাক-মেইল করে সোহানাকে নিজের বাংলোতে রাখতে বাধ্য করে। সোহানা প্রতিবাদ জানালে তাকে অত্যাচার করা হয়। একসময় মাফিয়া চক্রের সমস্যায় জড়িয়ে যায় আসলাম। এবং ওইসময়েই একটা বিশেষ কাজে তাকে বিদেশ যেতে হয়। আসলাম চিন্তিত হয়ে পরে সোহানার সিকিউড়িটি নিয়ে। আসলাম তীব্র ( মারুফ) নামের একজন বডিগার্ড নিয়োগ করে। এবং সে নিশ্চিন্তে বিদেশে যায় কেননা অপ্রত্যাশিত হলেও সত্যি তীব্র নামেই এই বিখ্যাত বডিগার্ড তার হাই-স্কুল ফ্রেন্ড। সেকারনেই সে এতটা নিশ্চিত। এক সপ্তাহ পর আসলাম ফিরে এসে দেখে, দাবার গুটি উলটে গেছে। এলোমেলেও হয়ে গেছে সব কিছু। এই হলো কাহিনি।

দেহরক্ষীর সবথেকে দুর্বলতা হলো এর কাহিনি। কাহিনিতে নতুনত্ব থাকলেও কাহিনি ফোকাস প্রচন্ড দুর্বল এবং সাধারন। কাহিনিটা তখনোই দুর্বল লেগেছে যখন আর অন্যদিকগুলো ভালো লেগেছে। পুরা ছবিটা খারাপ বলা যাচ্ছেনা। ওই একটাই সমস্যা আমার মনে হলো।

আর কিছু সাধারন ভুল যা চোখে পরার মতো। পরিচালকরা ভেবে থাকেন, এই সাধারন ভুলগুলোতে সেরকম কোন সমস্যা হবেনা। কিন্তু এই ভুলগুলো না থাকলে এমনিতেই ছবিটা ভালোলাগে। আমারতো মনে হয় এখানে সাব-কানসাস মাইন্ডের একটা কিছু কাজ করে।

দারাশিকো ব্লগ " এই মাইয়া মানুষ যদি দেখাইতে চায় তাইলে পুরুষ মানুষ কি না তাকাইয়া পারে ?
এই সংলাপটি কোট করে বলেছে,সিনেমার একমাত্র সংলাপ যা দেয়ার সাথে হলভর্তি দর্শক উল্লাস করেছেন, আনন্দে সিটি বাজিয়েছেন।
ঐ " একমাত্র " শব্দটাতে আমি একমত নই। আমি আরও বেশ কয়েকটি সংলাপে জোড়ালো পাবলিক রি-একশন পেয়েছি। আমি মনেকরি, এই ব্যাপারটাতে একটা নেগেটিভ ভিউ আসতে পারে।



এবং নায়িকা ববিকে একটু বেশী উপস্থাপন করা হয়েছে। কথাটা সত্যি।
কিন্তু তা আমার মোটেই খারাপ লাগেনি। বরং ইনজয় করেছি।
ববিকেও ভালো লেগেছে। ববি অবশ্যই আকর্ষনিয়া। কিন্তু আর একটা বিখ্যাত সমস্যা আছে। সমস্যাটা দূর করার জন্য তাকে পারসোনায় যাওয়া আসাটা বাড়াতে হবে। তার বগলের দিকটায় স্পা করাবার প্রয়োজন আছে।


মারুফ যে অভিনয় জানেনা সে আরেকবার প্রমান দিল। কিন্তু এই ছবির চরিত্রে তাকে ভাললেগেছে। তার অভিনয় না পারাটাই পজেটিভ কাজ করেছে। বডিগার্ড বডিগার্ড ভাবটা বেশ ভালোই ফুটেছে। কিন্তু অবশ্যই মারুফকে নিয়মিত দাত মাজতে হবে।

মিলনকে আমার সবথেকে বেশী ভালোলেগেছে। ইফতেখারের বোকামিগুলোকে টপকে যেতে পেরেছে মিলন। কোথাও কোথাও আবার ফেসেও গেছে। এই চরিত্রটা নিয়ে আরও ভাবলে সুন্দর একটা রুপ দেয়া যেত। মিলনের এক্সপ্রেশনগুলো ছিল দেখার মতো। রাজীব আর হুমায়ুন ফরিদীর উত্তরসুরী হতে পারবে মিলন।

গানগুলো হয়েছে এ + । অসাধারন ছিল প্রতিটা গান। আইটেম সংটা, আইটেম সং এর মতোই হয়েছে। খেলতে গিয়ে মুখ থুবরে পরে যাইনি এই জন্য অদিত ( আজ এই আকাশ, কেন যে মনে হয় বোঝনা আমাকে, ইত্যাদি গানের নির্মাতা) কে ধন্যবাদ।

চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন ইফতেখার চৌধুরী।
চিত্রগ্রহন এবং সম্পাদন তিনি এ + ।

চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায় তিনি সাকসেস । তিনি সাকসেস এই জন্যই বলছি কেননা আমার মনে হয় আমি তার ভাবনাটা ধরতে পেরেছি। আসলে সে কি চেয়েছি এই ছবি দিয়ে ? তিনি ছবিটাকে কোন রুপে দেখাতে চেয়েছে ? এর উত্তর আমার মনেহয়, উনি চেয়েছেন একটা হাই-কমার্শিয়াল কিছু বানাতে। যেহেতু উনি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নতুন কিংবা অসাধারন কিছু বানাতে চান বলে প্রচার করেছেন এরকম শুনিনি সেহেতু ধরেই নিলাম ওনার টার্গেট ছিল পাবলিক ডিমান্ড এবং ব্যবস্যা। দেহরক্ষী এই কদিন হাউসফুল গেছে । এবং আগামীতে এটা ভালো ব্যবসা করবে তা হলের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। এবং তার এই ছবি পাবলিক ডিমান্ড ধরতে পেরেছে এবং মিশতে পেরেছে। হল ভর্তি মানুষের ছুরে দেওয়া কমেন্ট,হাততালী এবং ক্লাইম্যাক্সে পিনপতন নিরবতা। সেদিক থেকে ইফতেখার অবশ্যই সাকসেস।




সবথেকে শক্তিশালী যে প্রশ্নটা দেহরক্ষী নিয়ে " বাংলা চলচিত্রের অভ্যুন্থানে এই ছবি কোন অবদান রাখতে পারবে কিনা? "
আমার মনেহয়, দেহরক্ষীর কোন অবদান কোনরকম পরিবর্তনেই থাকবেনা। দেহরক্ষীর নাম ৫ মাস পরেই মানূষ ভুলে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে এটা ভালো আনন্দ দিলেও এটা মোটেই যুগান্তকারি কিছু হতে পারে না, সেই সীমানার ধারে কাছেও না। অনেকে আছেন যারা ইফতেখারের থেকে আশা করেছেন একটা পরিবর্তন, একটা অন্যতম কিছু, সেই দলে আমিও একজন। আমাদের সবাইকে হতাশ করেছে ইফতেখার। একজন সমালোচক ও বাংলা চলচিত্রের শুভাকাংখি হিসেবে আমার মনক্ষুন হলেও একজন দর্শক হিসেবে আমি যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছি। মানুষ হলে আসছে, দেখছে,শিষ দিচ্ছে, ক্লাইম্যক্সে নিরব হচ্ছে, এইটাও একরকমের পরিবর্তন। এই কারনেই দেহরক্ষী নিয়ে লিখছি এবং দেখার আমন্ত্রন জানাচ্ছি।

এবার কথা হলো আমার কিরকম লেগেছে?

আমি অশ্লীন যুগের ছেলে। আমি যখন হলে ছবি দেখতাম, এইতো কয়েকদিন আগের কথা, তখন ওইসবই দেখতাম। দেখতাম কেন ? ভালো লাগতো বলেই দেখতাম। কেউ যদি বলে, দেহরক্ষী অশ্লীন ছবি বা অশ্লীনতাই এর মুলমন্ত্র তবে আমি তার সাথে দ্বিমত প্রষোন করবো।

ববির শরীরকে দেখান হয়েছে অথবা ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি সত্য এবং ধ্রুব সত্য । ঠিক সেইরকম সত্য হলো আমার কিন্তু দেখতে খারাপ লাগেনি। আমি উপভোগ করেছি ববি ও তার আচরনকে।
সবকিছু ভেবে বললে, বলতে হয় ভালোলেগেছে।

রেটিংঃ ১০ এ ৪

রেটিং বাংলা ছবির অনুপাতেই দিলাম। ছবিটা ভালো তারপরেও ৪ দিলাম এই জন্য যে আমি আশা করি এর থেকেও অনেক অনেক ভালো মুভি আসবে। যেরকম আগে ছিল। সেইসময়ে যাতে ৪ এর উপরের সংখ্যাগুলো ব্যবহার করা যায় তাই।

দেহরক্ষী চলছে প্রায় ৯০ এর কাছাকাছি হলে। কিন্তু কালের কন্ঠে দেওয়া এই অল্প কয়েকটার নাম।

বলাকা, অভিসার, জোনাকি, চিত্রামহল, মানসী, বিজিবি, এশিয়া, সনি, পূরবী, সৈনিক ক্লাব, পূর্ণিমা, গীত, রানীমহল, পুনম [ঢাকা], নিউ মেট্রো [নারায়ণগঞ্জ], ঝংকার [পাঁচদোনা], মধুমতী [ভৈরব], মানসী [কিশোরগঞ্জ], ছায়াবাণী [ময়মনসিংহ] ,কাকলি [শেরপুর], কল্লোল [মধুপুর], ফাল্গুনী [নাগরপুর], নবীন [মানিকগঞ্জ], চন্দ্রিমা [শ্রীপুর], সাগর [কালিয়াকৈর], রজনীগন্ধা [চালা], বর্ণালী [শাহাজাদপুর], মমতাজ [সিরাজগঞ্জ], সোনিয়া[বগুড়া], বীণা [পাবনা], শাপলা [রংপুর], মডার্ন [দিনাজপুর], উপহার [রাজশাহী], হ্যাপি [লক্ষ্মীপুর]

দেহরক্ষী

চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: ইফতেচৌধুরী
খার কাহিনী ও সংলাপ: আবদুল্লাহ জহির বাবু
অভিনয়: মারুফ, মিলন, ববি, কাজী হায়াৎ, প্রবীর মিত্র
সঙ্গীত: অদিত

বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০১: ভন্ড ( রুবেল,তামান্না,হুমায়ুন ফরিদী )

বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০২: মরনের পরে ( অবশ্যই বাংলাদেশের আলোচিত এবং প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২
২২টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×