১৯৯৮ সালের বসন্ত কালে ড. ইউনুস ও তার গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে নরওয়ে সরকার ও উন্নয়ণ সহযোগীতা সংস্থার সম্পর্ক বেশ ঝঞ্চা বিক্ষুব্ধ একটা সময় পার করে। সম্পর্কের এই পর্যায়ের কোন দলিল এর আগে কখনও জনগণের সামনে আসেনি, নোরাডের কাছে গোপন নথি হিসেবেই সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু ডেনমার্কের প্রথিত যশা অনুসন্ধানি সাংবাদিক ও প্রামাণ্য চিত্র নির্মাতা টম হাইনমান নির্মিত ”কট ইন দ্য মাইক্রো ডেট” বা ”ক্ষুদ্র ঋণের ফাদে” ডকুমেন্টারিতে ফাঁস হয়ে গিয়েছে কেমন করে কলমের এক খোচায় নরওয়ে, সুইডেন সহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা কর্তৃক দরিদ্রদের ঋণ প্রদানের জন্য দেয়া অর্থ ”গ্রামীণ ব্যাংক” থেকে পাচার করা হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণ নামের একটা সংস্থায় যার কাজ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণœ হওয়ার অযুহাতে সুইডেন বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি না করলেও নরওয়ের উন্নয়ণ সহায্য সংস্থা নোরাড বিষয়টি নিয়ে ইউনুসকে চেপে ধরলে ড. ইউনুস ও নরওয়ের মধ্যে বেশ কিছু চিঠি চালাচালা হয়, তর্ক বিতর্ক হয় এবং এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতাও হয়। এই চিঠি চালাচালি ও তর্ক বিতর্ক গুলো যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে এর মধ্যে দিয়ে বিদেশী সাহায্যে ক্ষুদ্র ঋণ, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাবসা, ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র বিমোচনের নামে গ্রামীণ ফোনের মতো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ইত্যাদির সম্পর্ক আরো পরিস্কার করে ধরা পড়বে।
৫ নভেম্বর ১৯৯৭:
নোরাড এদিন গ্রামীণ ব্যাংক কে ৩২.২ মিলিয়ন ক্রোনার প্রদান করে। এই কিস্তির মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক ও নোরাডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে সর্বমোট ৪০০ মিলিয় ক্রোনার প্রদান সম্পন্ন করে নোরাড। কিছু দিন পর ঢাকাস্থ নরওয়ের দুতাবাসের কর্মকর্তা এইনার ল্যান্ডমার্ক এর গ্রামীণ ব্যাংকের আগের বছরের(১৯৯৬) বার্ষিক প্রতিবেদনের এক টিকার দিকে নজর পড়ে যায়। টিকাটিতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ ফাউন্ডেশান নামের নাম না জানা এক নতুন সংস্থায় ধারবাহিক ভাবে কয়েকশ মিয়িলন বৈদেশিক সাহায্য ট্রান্সফার কথা উল্ল্যেখ করা হয়েছিল।
৩ ডিসেম্বর ১৯৯৭:
অর্থ পাচারের বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য নরওয়ে দূতাবাস ড. ইউনুসকে ডেকে পাঠায়। পরে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এক গোপন চিঠিতে নোরাড পরিচালককে জানান যে ইউনুস সাহেবের ব্যাখ্যা তার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। রাষ্ট্রদূত লিখেছিলেন:
”ইউনুস বলেছেন এই অর্থ পাচারের মূল কারণ সরকারকে ট্যাক্স কম দেয়া এবং সেই বেচে যাওয়া অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কল্যাণে ব্যাবহার করা।”
১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৭:
নরওয়ে দূতাবাস গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ”আরও বিস্তারিত তথ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা” চেয়ে পাঠায়।
৮ জানুয়ারি ১৯৯৮:
ড. ইউনুস অনেক গুলো সংযুক্তি সহ নরওয়ের দূতাবাসে একটা চিঠি পাঠান। চিঠিটি তে কি কারণে এবং কোন পরিস্থিতিতে এই অর্থ পাচার করা হয় তা তুলে ধরেণ ড. ইউনুস। চিঠিটিতে সর্বমোট ৬০৮ মিলিয়ন ক্রোনার বা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ সংস্থার কাছে সর্বরাহ করার কথা স্বীকার করা হয়েছে। এই অর্থ নেয়া হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল বা রিভলবিং ফান্ড থেকে যে তহবিলে নরওয়ে সুইডেন সহ বিভিন্ন দেশ অর্থ প্রদান করেছিল দরিদ্রদেরকে ঋণ দেয়ার কাজে ব্যাবহার করার জন্য। গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ কল্যাণ সংস্থার মধ্যে ১৯৯৭ সালের ৭ মে তারিখে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ি এই অর্থ সরবরাহ করা হয়(যদিও চুক্তিটি এর আগেই, ৩১ ডিসেম্বরই কার্যকর করা হয়েগিয়েছিল)। একই দিনে গরীবের ব্যাংক নামে পরিচিত গ্রামীণ ব্যাংক নিজের দেয়া অর্থই গ্রামীণ কল্যাণ সংস্থা থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে!
১০ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৮:
রাষ্ট্রদূত হানস ফ্রেডরিখ লেনে গ্রামীণ কল্যাণ সংস্থার বিষয়ে নোরাডের পরিচালক টোভ স্ট্র্যান্ড গেরহান্ডসনের কাছে একটি গোপন সতর্কতা বার্তা পাঠান। বার্তায় বলা হয়:
”এভাবে গ্রামীণ ব্যাংক কে দেয়া দাতাতের অর্থ পাচার করা হয় এবং সেই অর্থ আবার ঋণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর এভাবে অর্থের মালিকানা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চলে যায় গ্রামীণ কল্যাণের কাছে।”
গোপন বার্তাটিতে সস্পষ্ট করা হয় যে এভাবে নরওয়ের দেয়া ৩০০ মিলিয়ন ক্রোনার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গায়েব করা হয়েছে।
মোট ৬০৮ মিলিয়ন ক্রোনারের অর্ধেক ছিল নরওয়ের দেয়া আর বাকি অর্থ এসেছিল এসআইডিএ, ফোর্ড ফাউন্ডেশান, ইফাড, কেএফডব্লিউ, সিআইডিএ এবং জিটিজেড এর কাছ থেকে।
দূতাবাস আরও লক্ষ করে যে, গ্রামীণ কল্যাণ যে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের সাথেই লেনদেন করে তা নয়, গ্রামীণ ব্যাংকের বাইরের বিভিন্ন কোম্পানিতেও এর বিনিয়োগ আছে। বার্তাটিতে এ বিষয়ে বলা হয়:
”গ্রামীণ কল্যাণ সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দাতাদের উদ্দেশ্যের বাইরে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ঘোষিত লক্ষের চেয়ে ভিন্ন কাজে ব্যাবহার করেছে। গ্রামীণ কল্যাণ ইতোমধ্যে গ্রামীণ ফোনে ৩০ কোটি টাকা বা প্রায় ৫ কোটি ক্রোনার বিনিয়োগ করেছে।”
বহুজাতিক টেলিনরে বিনিয়োগ
১৯৯৭ সালে একটি পাদটিকা থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার আগেই ৫ কোটি ক্রোনার গ্রামীণ ফোনের হাতে চলে গেছে। গ্রামীণ ফোন ঐ বছরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ এ বিশাল আড়ম্বরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ড. ইউনুস ও টেলিনরের যৌথ মালিকানাধীন এই গ্রামীণ ব্যাংক কোম্পানিটি এরপর ব্যাপক সফল একটি কোম্পানি হিসেবে বিকাশ লাভ করে এবং টেলিনরের মানি মেশিন বা পয়সা বানানোর যন্ত্র বলে পরিচিতি পায়।
ট্যাক্স ফাঁকি প্রসঙ্গে
গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ এভাবে গ্রামীণ কল্যাণে পাচারের পেছনে ড. ইউনুসের ট্যাক্স কম দেয়ার অযুহাতটি মোটেই গ্রহণ যোগ্য মনে হয়নি নরওয়ের কাছে। ইউনুস ৮ জানুয়ারি চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংক আর ট্যাক্স মৌকুফের সুবিধা পাবে না এবং গ্রামীণ কল্যাণের সাথে চুক্তি করে যদি এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা না হতো তাহলে গ্রামীণ ব্যাংককে লাভের অর্থের উপর ৪০% হারে ট্যাক্স দিতে হতো। এই অযুহাতটির বিষয়ে রাষ্ট্রদূত নোরাডের পরিচালকের কাছে লিখেন:
”নরওয়ের পক্ষে থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে বিপুল সাহায্য করার সময় গ্রামীণ ট্যাক্স ফাকি দেয়ার জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরী করবে এরকম কোন বিবেচনা নরওয়ের ছিল না। বরং প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হয়ে উঠলে এর থেকে পাওয়া বাড়তি ট্যাক্স থেকে সরকারি কল্যাণ মূলক কর্মকান্ড ও সামাজিক সেবার সুযোগসুবিধা গড়ে তোলা যাবে এরকমটাই নরওয়ের উদ্দেশ্য ছিল।”
দূতাবাস আরও মনে করে ইউনুস সাহেবের যুক্তির মধ্যে দিয়ে ”খোদ গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের এক বিভ্রান্তিকর ভাবমূর্তি” ফুটে উঠেছে। কারণ:
”গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট মনে করে এ বিপুল অর্থ তাদের নিজেদের মালিকানায় থাকলে, এই অর্থ থেকে ঋণ দিয়ে পরে মাঠ পর্যায় থেকে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে তাদের বেশি গরজ নাও থাকতে পারে। এ কারণে তারা তাদেরই নিয়ন্ত্রিত আরেকটি কোম্পানি গ্রামীণ কল্যাণকে সেই অর্থ দিয়ে দিয়েছে এবং গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে সেই অর্থ আবার ধার হিসেবে নিয়েছে। প্রত্যাশা এই যে, গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে নেয়া ঋণের অর্থে ফেরত দেয়ার চাপ মাথায় থাকলে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের মাঠ পর্যায়ের ঋণ আদায়ের গরজ থাকবে। এই যুক্তি থেকে স্বাভাবিক ভাবেই একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, ঋণ আদায় কি তাহলে গ্রামীণের ম্যানেজমেন্টের জন্য ক্রমশ সমস্যায় পরিণত হচ্ছে? যদি ঋণ আদায়ই মূল সমস্যা হয় তাহলে ম্যানেজমেন্ট বা ব্যাবস্থাপনা পূনর্গঠন করে এই সমস্যার সমাধান অনেক সহজ হতো না? তা না করে কেন গ্রামীণ কল্যাণের মতো একেবারে নতুন একটি সংস্থার ইন্দ্রজাল তৈরীর মতো পরিশ্রম সাধ্য একটা কাজ করতে গেল গ্রামীণ? ”
সবশেষে দূতাবাসের চিঠিটিতে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ কল্যাণের মধ্যকার চুক্তিটি বাতিল করে গ্রামীণ কল্যাণ থেকে শত মিলিয়ন ডলার গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরিয়ে এনে ঘূর্ণায়মান তহবিল তৈরীর মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
৩ মার্চ ১৯৯৮
নোরাডের আইন বিভাগ এ বিষয়ে একটি গোপন স্মারক তৈরী করে। স্মারকে বিভাগীয় প্রধান এস ম্যালসম দূতাবাসের চিঠির সাথে একমত পোষণ করেন এবং চূড়ান্ত বিচারে সহযোগীতা যেহেতু নরওয়ে ও বাংলাদেশের মধ্যে হচ্ছে, তাই তিনি দূতাবাসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি দ্রুত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে বিভাগকে জানানোর পরামর্শ প্রদান করেন।
১৬ মার্চ ১৯৯৮
আইন বিভাগের পরামর্শ মত দূতাবাস বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রণালয়ের সাথে একটি আলোচনা সভা আয়োজন করে। আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয়:
”বিস্তারিত আলোচনায় সিদ্ধান্তে পৌছানো যাচ্ছে যে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ কল্যাণের মধ্যকার চুক্তিটি গ্রামীণ ব্যাংককে সাহায্য করা বিষয়ে বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যেকার চুক্তি ভংগের সামিল।”
একই সাথে নরওয়ের দূতাবাস সুইডেন এর উন্নয়ণ সহযোগী সংস্থা এসআইডিএ কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করে পাচারকৃত অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সুইডেনের পক্ষ থেকেও ইউনুসকে চাপ দেয়ার অনুরোধ জানায়।
১৭ মার্চ ১৯৯৮
সুইডেনের দূতাবাসের একটি ফ্যাক্সের মাধ্যমে জানা যায়, সুইডেন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকে ২১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার(এসইকে) প্রদান করে যার মধ্যে ঘূর্ণায়মান তহবিল এর জন্য ছিল ১৯০ মিলিয়ন যার পুরোটাই গ্রামীণ কল্যাণের কাছে পাচার হয়েছে। অবশ্য সুইডেন পরিস্কার জানিয়ে দেয় এই অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে ফেরত আনার চাপ প্রয়োগ করলে বিষয়টি জানা জানি হতে পারে এবং এর ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণœ হয়ে গোটা উদ্দেশ্যটাই ব্যার্থ হয়ে যেতে পারে।
১৮ মার্চ ১৯৯৮
নরওয়ের দূতাবাস বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রামীণ ব্যাংককে চাপ দেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানায়।
১ এপ্রিল ১৯৯৮
দূতাবাস কর্তৃক বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো খবর পেয়ে ইউনুস দূতাবাসের সাথে আরেকটি বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে ইউনুস সাহেব বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যকার চুক্তি ভংগের অভিযোগ সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন এবং গ্রামীণ ব্যাংক ও নরওয়ে/নোরাডের মধ্যকার দীর্ঘ সুসম্পর্কের বিষয়ে জোর দেন এবং আশা প্রকাশ করেন: ”বিষয়টি যেন যত দ্রুত সম্ভব মিমাংসা হয়ে যায় নতুবা গ্রামীণ ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”
ইউনুস সাহেব এবার আসলে পরিমাণ সম্পর্কে ভীষণ ভয় পেয়ে যান এবং নোরাডের পরিচালকের কাছে সাহায্য চেয়ে ঐ দিনই একটি চিঠি দেন, চিঠিটির প্রথম লাইনই ছিল:
”প্রিয় ট্রোভ, গ্রামীণের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিন। আমি আপনার সাহায্য চাই।”
এরপর তিনি নোরাড ও গ্রামীণ ব্যাংকের মাঝে একটি ”ভুল বোঝাবুঝি” হওয়ার কথা বলেন এবং সামনের মাসে যখন অসলো যাবেন তখন তার সাথে দেখা করে বিষয়টি মীমাংসা করার আশা প্রকাশ করেন। তিনি দূতাবাস কর্তৃক বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানানোর ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে বলেন:
”এই অভিয়োগটি বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ব্যাপক ভুল বুঝাবোঝির সৃষ্টি করবে। সরকার এবং সরকারের বাইরের গ্রামীণ ব্যাংক বিরোধীরা যদি চিঠিটি হাত করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে আমাদেরকে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হবে।”
২৯ এপ্রিল ১৯৯৮
নোরাডের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কেজেল স্টোরলকেন একটি নোট তৈরী করেন যেখানে তিনি অসলো তে আসা ড. ইউনুসের সাথে বৈঠকের কথা উল্ল্যেখ করেন। বৈঠকে নোরাড কিংবা ইউনুসের মতামতের কোন পরিবর্তন হয়নি।
এই নোট থেকে দেখা যায়, ড.ইউনুসের সাথে বৈঠকের সময় টেলিনরের একজন কর্তা তার সাথে ছিলেন এবং তারা বাংলাদেশে নতুন মোবাইল টেকনোলজি চালুর নিয়েই বেশি উৎসাহি ছিলেন।
৫ মে ১৯৯৮
নরওয়ের দূতাবাস থেকে নোরাডের কাছে একটি জরুরী বার্তা পাঠানো হয়। বার্তায় ড.ইউনুসের পক্ষ থেকে একটা সমঝোতা প্রস্তাবের কথা উল্ল্যেখ করে জানানো হয় ইউনুস সাহেব গ্রামীণ কল্যাণের কাছে একটা অংশ রেখে বাকি অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরিয়ে এনে বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসা করতে চান।
২৬ মে ১৯৯৮
দূতাবাস ড.ইউনুসকে চিঠি দিয়ে প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। এই সমঝোতা অনুসারে ১৭০ মিলিয়ন ক্রোনার গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং ১৩০ মিলিয়ন রয়ে যায় গ্রামীণ কল্যাণের কাছে। দূতাবাসের চিঠিটি শেষ হয় এভাবে:
”দূতাবাসে ভবিষ্যতেও উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রত্যাশা করছে। ”
এরপরই বিষয়টা পুরোপুরি ধামা চাপা দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংক কে নরওয়ের দেয়া সাহায্যের একটা যৌথ মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরী করা হয়, সেখানেও বিষয়টি নিয়ে টু শব্দও করা হয় নি।
২২ আগষ্ট ২০১০
পুরোবিষয়টি নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে বিস্তারিত প্রশ্ন করা হলে জবাবে গ্রামীণ ব্যাংক ২২ আগষ্ট ২০১০ এ ইমেল এর মাধ্যমে দুটো পয়েন্ট আকারে জানায়:
গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং এর গ্রাহকদের কল্যাণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ কল্যাণ নামের সংস্থাটি গঠন করে।
গ্রামীণ ব্যাংক কখনই ট্যাক্স ফাকি দেয়ার জন্য গ্রামীণ কল্যাণে অর্থ পাচার করেনি। গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ট্যাক্স মৌকুফের সুবিধা ভোগ করে আসছে।
সূত্র: লেখাটি মূলত এনআরকে টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখা থেকে গুগুল ট্রান্সলেটর ব্যাবহার করে করা ইংরেজী থেকে অনুবাদ করে তৈরী করা হয়েছে। মূল লেখা ”608 millioner bistandskroner på avveie” টি পাবেন এখানে : Click This Link