যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য দরকার অফিস ডকুমেন্টেশন, ই-মেইল, চ্যাটসহ ব্যক্তিগত জনসংযোগ, সিডিউলিং এবং অর্গানাইজিং সলিউশন যেমন ক্যালেন্ডার। এ ধরনের কাজের জন্য অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশন থাকলেও এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে গুগল অ্যাপস-এর বিভিন্ন ফিচার বা সুবিধা নিয়ে।
সম্পূর্ণ প্যাকেজ
গুগল অ্যাপস দিয়ে কাজ শুরু করতে চাইলে প্রথমে ভিজিট করুন http://www.google.com/a/ সাইটে। গুগল অ্যাপস সার্ভিসের জন্য শুধু ডোমেইন অ্যাডমিনিস্ট্রেটে সাইনআপ করতে হবে। এটি উন্নততর নিরাপত্তা বিধান করার সাথে সাথে বেনামী ব্যবহারকারীদের প্রতিহত করে, যাতে ডোমেইনের অপব্যবহার না হয়। গুগল অ্যাপস পেজে অফিসিয়াল ই-মেইল অ্যাড্রেস এন্টার করে Get Started-এ ক্লিক করুন। এর ফলে গুগল আপনাকে ডোমেইন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে শনাক্ত করবে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার অর্গানাইজেশনকে রেজিস্ট্রি করবে। পরবর্তী পেজে আপনার সাথে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে পাসওয়ার্ড দিন। প্রাথমিকভাবে ২০০ ই-মেইল ব্যবহারকারী অর্থাৎ ছোট বা মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ২০ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে গুগল অ্যাপস-এ ট্রানজিশন সম্পন্ন করতে পারবেন। ইচ্ছে করলে পরে আরো ব্যবহারকারী যুক্ত করতে পারবেন। প্রদত্ত শর্তসমূহ মেনে নিয়ে পরবর্তী পেজ ড্যাশবোর্ডে এগিয়ে যান। এটি আপনার ডোমেইনের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পেজ।
ড্যাশবোর্ডে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস রয়েছে যেমন স্টার্ট পেজ, ক্যালেন্ডার, চ্যাট, ডকস, ই-মেইল, ওয়েব পেজ ও সাইট। এসব সার্ভিস নিয়ে কাজ শুরু করার আগে আপনার অর্গানাইজেশনের ব্যবহারকারীর একটি লিস্ট তৈরি করুন। নতুন ব্যবহারকারী তৈরি করার জন্য Create New Users-এ ক্লিক করুন। প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য নেম, সাবনেম এবং ইউজারনেম এই তিনটি ডাটা ফিল্ড পূর্ণ করতে হবে। এর ফলে গুগল অ্যাপস আপনাকে দেবে পাসওয়ার্ডসহ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, যা পরে নতুন ব্যবহারকারীরা পরিবর্তন করতে পারবে। আপনি সিএসভি (যেমন সেপারেটেড ভ্যালু) ফরমেটে সব ব্যবহারকারীর সমন্বিত তালিকা আপলোড করতে পারবেন।
স্টার্ট পেজ
স্টার্ট পেজ থেকে সব গুগল অ্যাপ্লিকেশনে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। স্টার্ট পেজকে একইভাবে পার্সোনোলাইজ করতে পারবেন, যেভাবে আই গুগল পেজকে পার্সোনোলাইজ করা যায়। স্টার্ট পেজের ইউআরএল হলো http://start.your-domain.com। প্রথমবার স্টার্ট পেজে ক্লিক করলে সেখানে পর্যাপ্ত ই-মেইল পাওয়া যায়। এখানে ইনবক্সে যেমন নতুন ই-মেইলের স্ন্যাপস্যুট দেখতে পাবেন, তেমনি পাবেন নতুন মেইল কম্পোজের জন্য শর্টকাট। স্টার্ট পেজে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যেসব অ্যাপ্লিকেশন পাবেন, সেগুলো হলো কালেন্ডার এবং স্টিকি নোট।
ক্যালেন্ডার
ক্যালেন্ডার হলো সময় ব্যবস্থাপনার এক জটিল টুল। ক্যালেন্ডারে অ্যাক্সেস করা যাবে http://calender.your-domain.com সাইট থেকে। সংশ্লিষ্ট ডাটাতে ক্লিক করে ক্যালেন্ডারে একটি ইভেন্ট ইনসার্ট করুন। বেলুনে যা পপআপ হয়, সেখানে আপনার এজেন্ডা টাইপ করুন। যদি এ এজেন্ডা অনেক বেশি সময় ব্যবহার করে, তাহলে ডিফল্ট সময় ড্র্যাগ করে নিতে পারেন, যা ইভেন্ট বক্সের নিচের দিকে পাওয়া যাবে।
ক্যালেন্ডারকে একে অপরের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। আপনি গুগল ক্যালেন্ডারকে আউটলুকের সাথে সিনক্রোনাইজ করতে পারবেন থার্ডপার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এমনকি ব্লাকবেরির সাথেও সিনক্রোনাইজ করতে পারবেন।
ডকস
গুগল ডকস আরেকটি মজার টুল, যা গুগল অ্যাপস-এর একটি অংশ। গুগল ডকস দিয়ে অন্যখানে অফিস স্যুটের সাথে কাজ করতে পারবেন। আপনি এবং আপনার দল ডকুমেন্ট, ¯েপ্রডশিট এবং প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি সব সহযোগীরূপে ব্যবহার করতে পারবে। গুগল ডকস এমন অপশন অফার করে যার মাধ্যমে একটি ইউনিক ইউআরএল-এ ডকুমেন্ট শেয়ার ও পাবলিশ করতে পারবেন। এছাড়া এটি সেভ করতে পারবেন অন্য ফরমেটের হোস্টে। যারা সবসময় চলমান, তাদের জন্য এ অপশনটি বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। কর্মস্থল থেকে দূরে থেকেই কোনোরকম ডাটা না হারিয়েও কাজ শুরু করতে পারবেন। গুগল ডকস ব্যবহার করতে চাইলে http://docs.your-domain সাইটে ভিজিট করুন। এই সাইটে অ্যাক্সেস করার পর নিউ ট্যাবে ক্লিক করুন। ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট বা প্রেজেন্টেশন অপশনগুলোর মধ্যে কাক্সিক্ষত অপশনটি বেছে নিন। টাইপিং শুরু করার পর গুগল ডকস অবিরতভাবে আপনার ডকুমেন্টের পরিবর্তনগুলো সেভ করতে থাকবে।
ই-মেইল
মৌলিক ভার্সনে গুগল অ্যাপস প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য ৬ গি.বা. স্টোরেজ স্পেস দেয়, যা পার্সোনাল জি-মেইল অ্যাকাউন্টের মতো। ই-মেইলের জন্য ইউআরএল হলো http://mail.your-domain.com । এছাড়া গুগল মনিটর করে abuse@yourdomain.com ও postmaster@yourdomain.com সাইট ও স্প্যাম এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয় সংক্রান্ত রিপোর্ট করে। গুগল অ্যাপস-এ আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ই-মেইল অ্যাড্রেস খুব সহজেই কয়েক মিনিটের মধ্যে কনফিগার করা যায়। নতুন ই-মেইল সার্ভিস সেটিংয়ের দুটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত আপনাকে নতুন ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত সেটআপ করতে হবে ই-মেইল ডেলিভারি। গুগল মেইল ব্যবহার করার জন্য আপনার ডোমেইন স্যুইচ করতে হবে। এজন্য দরকার হবে MX রেকর্ড পরিবর্তন করার। আর এ কাজটি করতে পারবেন আপনার হোস্টিং প্রদানকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পেজ থেকে। আপনার প্রোভাইডারের নির্দিষ্ট নির্দেশনাবলী পাবেন http://www.google.com/support/a /bin/answer.pyanswer=87084 সাইট থেকে। MX রেকর্ড আপডেট হতে ২ দিন সময় নেবে। এ সময় যাতে ই-মেইল হারিয়ে না যায় তার জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় ই-মেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপরই MX রেকর্ড পরিবর্তন করতে হবে।
সিএসভি ফরমেট ব্যবহার করে আপনি বিদ্যমান ই-মেইল অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য আপলোড করতে পারবেন, যেমন ইউজার নেম, ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি। কন্ট্রোল প্যানেলে লগ করে অ্যাডভান্সড টুলে যান। সম্পূর্ণ লিস্ট আপলোড করতে চাইলে এক্সেস করুন User Accounts Bulk Update- এ। এবার সিএসভি আপলোড করুন।
চ্যাট
এক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা অথবা ক্লায়েন্টভিত্তিক যোগাযোগ বেশ ব্যয়বহুল ও বিরক্তিকর ছিল। এ ঝামেলা এড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন গুগল টক অপশন। গুগল অ্যাপস-এ গুগল টক কনফিগার করা যায় অর্গানাইজেশনের ইউজারদের সাথে। গুগল টকের ইউজারদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ড্যাশবোর্ডে গিয়ে চ্যাট-এ ক্লিক করলে গুগল অ্যাপস একটা অপশন দেবে ইউজারদের সতর্ক করার জন্য, যখন এরা আপনার ডোমেইনের বাইরে অন্যের সাথে চ্যাট করবে। এই ফিচার ব্যবহার করে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরে যাবে না। এছাড়াও এ ব্যবস্থা নেয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা চ্যাট করে অযথা সময় নষ্ট করতে পারবে না।
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট খরচ হয়, বিশেষ করে অফিস ডকুমেন্টেশন, ই-মেইল, ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে। অফিস ব্যবস্থাপনার অনেক কাজই আমরা স্বল্প ব্যয়ে সম্পন্ন করতে পারি গুগল অ্যাপস-এর মতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে