সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
বিরাজমান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষি উৎপাদন বাড়ার বিরাট সুযোগ রয়েছে। তা হচ্ছে, উপকূলবর্তী অঞ্চলে এবং সিলেট অঞ্চলে শস্য চাষের নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে ধান-আবাদি এলাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত নমুনা জরিপে উল্লিখিত শস্য চাষের নিবিড়তার তথ্যচিত্রে দেখা যায়, কম শস্যনিবিড় অঞ্চল হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলবর্তী অঞ্চল, সিলেট অঞ্চল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। এসব এলাকায় সেচের প্রসার এবং বোরো ধানের আবাদও বেশ কম। ভূ-উপরিস্থ সেচব্যবস্থার মাধ্যমে এসব অঞ্চলের আনুমানিক ১০ লাখ হেক্টর এলাকায় বোরো ধানের আবাদ বাড়ানো যায়। আগে এসব এলাকায় ধানের আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল না। কেননা লবণাক্ততা-সহিষ্ণু ধানের জাতের অভাব ছিল। বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি) এবং বাংলাদেশ পারমাণবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবাদের জন্য লবণাক্ততা-সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
এছাড়া শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির আরও কিছু সুযোগ রয়েছে। তা হচ্ছে মানসম্মত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। সিস্টেম অব রাইস ইনটেনসিফিকেশন (এসআরআই), যা বিভিন্ন শস্য ব্যবস্থাপনা কৌশলের সমন্বয়, এর বিস্তারের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং বাংলাদেশে ধানের ফলন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এসআরআই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে (ক) পর্যাপ্ত দূরত্ব রেখে কম বয়সী চারা রোপণ, (খ) কৃষক কর্তৃক ব্যবহৃত ৪-৫টি চারার পরিবর্তে এক বা দুটি চারা ব্যবহার, (গ) পর্যায়ক্রমে সেচকৃত জমি ভেজানো ও শুকানো এবং (ঘ) রাসায়নিক সারের পরিপূরক হিসেবে জৈব সারের ব্যবহার। এসআরআই পদ্ধতির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সেচকৃত জমিতে ধানের ফলন হেক্টরপ্রতি ১ থেকে ২ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
একই পরিমাণ উৎপাদন-উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে হাইব্রিড ধানের উৎপাদন ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। বোরো মৌসুমে মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়ে থাকে। হাইব্রিড ধানের আবাদ প্রসারের মাধ্যমে ধানের ফলন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বীজের উচ্চ খরচ এবং চালের নিম্নমান। বীজের জন্য বিদেশ-নির্ভরতা কমানো এবং উন্নতমানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। প্রতিকূল পরিবেশ-উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলে ফলন ভালো হবে। উন্নত প্রযুক্তি না থাকার কারণে বর্তমানে প্রতিকূল কৃষি-পরিবেশ অঞ্চলে শস্যের ফলন খুবই কম। বিজ্ঞানীরা এসব অঞ্চলের জন্য লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধানের জাত, পানিতে নিমজ্জিত থাকতে পারে এমন ধানের জাত, তাপমাত্রাসহিষ্ণু ভুট্টা ও গমের জাত এবং স্বল্পমেয়াদি শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে প্রান্তিক খরাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। মাঠ পর্যায়ে এসব প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের জন্য কৃষকদের অংশগ্রহণমূলক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালু করা দরকার। শুষ্ক মৌসুমে খরাপ্রবণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ডালজাতীয় শস্য ও তেলবীজ আবাদের প্রসার করা। শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির দুষ্প্রাপ্যতা মোকাবিলায় এবং তেলবীজের আবাদের প্রসার ঘটাতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষত বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসাশ্রয়ী ভুট্টা ও সবজি আবাদ বাড়ানো দরকার। উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী তেলবীজ চাষ বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রমাণিত হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে স্বল্পকালীন শস্যের জাত উদ্ভাবনে মনোযোগী হতে হবে।
স্মরণ করা যেতে পারে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে অনেক দেশকে বিশ্ববাজার থেকে আমদানির ক্ষেত্রে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। নগদ অর্থের বিনিময়েও খাদ্য আমদানি করা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। খাদ্য রফতানিকারক দেশগুলো নিজ দেশের সরবরাহ ও ভোক্তাস্বার্থ অক্ষুণœ রাখতে প্রায়ই রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে সব খাদ্য আমদানিকারক দেশ খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। এক্ষেত্রে উপযোগী জাত ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদন কৌশল, হাইব্রিড ধানের ব্যাপক প্রসার, অধিকতর দক্ষ শস্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যেমন পানিসাশ্রয়ী সেচপদ্ধতি, এসআরআই প্রযুক্তির প্রসার, লিফ কালার চার্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি ধানের চারা রোপণের ব্যবস্থা করে একরপ্রতি উৎপাদন খরচ কমিয়ে ফায়দা লাভ করা যায়।
জমি চাষ ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তাদানের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত ১০ লাখ হেক্টর জমি বোরো ও আউশ ধান আবাদের আওতায় আনা সম্ভব। বন্যা ও পানিনিমগ্নতা সহিষ্ণু ধানজাতের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে আমন মৌসুমে উৎপাদনের ঝুঁকি হ্রাস করে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বোরো ধানের তুলনায় আমন ধানের একরপ্রতি উৎপাদন খরচ কম এবং মুনাফার হার বেশি। কৃষি বহুমুখীকরণ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন। এ জন্য শস্য বিন্যাসভিত্তিক কৃষি গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বল্পমেয়াদি ধানজাতের উদ্ভাবন এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ধানভিত্তিক শস্যবিন্যাসে রিলেক্রপিং বা দুই ফসলের মাঝে অন্তর্বর্তীকালীন শস্য হিসেবে ডালজাতীয় শস্যের আবাদের সম্ভাবনা যাচাই করতে হবে এবং উৎসাহিত করে বর্ষব্যাপী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মৌসুমী জোগানের স্থায়িত্ব বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মাধ্যমে মৌসুমভেদে দামের ব্যাপক অস্থিতিশীলতা ও তারতম্য রোধ করা সম্ভব হবে।
যথাসময়ে অত্যাবশ্যক উৎপাদন-উপকরণ যেমন বীজ, সার ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভর্তুকি ও নিয়মিত বাজার পরিবীক্ষণ চালু রাখতে হবে। শস্য অভিযোজন, কৃষকদের অংশগ্রহণমূলক জাত অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়া এবং অধিকতর দক্ষ কৃষিসম্প্রসারণ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক নীতি-সহায়তা দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বায়োটেকনোলজি, সিস্টেমস মডেলিং এবং জিআইএস-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
এতে করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল আবাদের মাধ্যমে ২০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং পরীক্ষিত সর্বাধুনিক কনজারভেশন এগ্রিকালচার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতেও অল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প সময়ে শতকরা ২০ ভাগ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে সার্বিক শস্য বিন্যাস ও চাষাবাদের সময় গড়ে ৪০-৪৫ দিন এগিয়ে আসবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের আয় বাড়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতারও উন্নয়ন হবে।
মূলত সব সমস্যা সমাধানে চাই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা তথা সততা। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন নেক কুওওয়ত। যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ছোহবতেই তা প্রাপ্তি সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত নছীব করুন। (আমীন)
সূত্রঃ