somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কবিতা কিভাবে বদলে যায়।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আকাশ চাঁদ অপেক্ষা

বহুদিন আকাশ দেখিনা।

এখন ঘোর কৃষ্ণতম রাতের জন্য অপেক্ষা করি।

একদিন বিকেলে ছাদে হাটছি
আমার ভালো লাগে
সারা বিকেল ছাদে হাওয়ায় হাওয়ায়
মেঘের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে
মনে হয়, ঐ দূরে বুঝি একটা মেঘের কারখানা
অদৃশ্য এক চিমনি দিয়ে ভুরভুর করে বের হয়ে আসে
সাদা সাদা থোকা থোকা মেঘ
এরপর ছেঁয়ে যায় আমার পুরো আকাশ
ফিকে হতে হতে চলে যায় মিলিয়ে যায়
কিন্তু অদৃশ্য চিমনি হতে সাদা সাদা থোকা থোকা মেঘ
বের হতেই থাকে, আর আমি দেখি- দেখতেই থাকি
সারা বিকেল জুড়ে

এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে ধীরে সন্তর্পণে।
সেই অদৃশ্য চিমনি আরো অদৃশ্য হয়ে যায়
অদৃশ্য হতে থাকে মেঘ, দৃশ্যমান হতে থাকে তারা
মিটিমিটি তারা। আমি তারা দেখি, কি সুন্দর!
আমি তারা দেখি আর ভাবি, কিভাবে সম্ভব
এতো সুন্দর, এতো, এতো!

একদিন তারা দেখতে দেখতে তারাখসা দেখলাম।
মনে হলো, না এ বোধহয় চোখের ভুল
আমি কি সত্যি দেখেছি?
মার কাছে শোনা
প্রিয়ো কারো বিচ্ছেদের আগে তারা খসা দেখে লোকে
তবে কি প্রিয়ো কেউ সরে যাবে আমার জীবন থেকে
ভয়ে থাকি, আবার ভাবি, না- নিশ্চয়ই চোখের ভুল

না, বেশি দেরী হয়নি
আমার শঙ্কার ডঙ্কায় তুমুল বাদ্য বাজিয়ে
বাবা চলে গেলেন
এরপর আর আকাশ দেখিনা।

এরপর অনেক অনেক দিন অনেক অনেক রাত
পেরিয়ে যায়
আমি রাতের আঁধারে জোনাকি দেখি
জ্বলে-নেভে, নেভে-জ্বলে।

তেমনি একরাতে, রাতের আঁধারে দেখি
দুধ সাদা এক চাঁদ!
প্রতিদিন আমার আকাশে উঠে
চাঁদোয়া রাতে, রাতের আঁধার ভেসে যায়
সেই জোছনায়

জোছনা ধীরে ধীরে ঢেউ হয়
ঢেউয়ের মতো আছরে পরে হৃদয়ের তটে
ধীরে ধীরে তীব্র হয়
ভাঙতে থাকে হৃদয়ের কূল
ভাঙতে ভাঙতে উপচে পরে
এরপর ফুলে ফুলে উঠে ঢেউ
ভাসিয়ে নেয় হৃদয়ের কূল
আমি ভেসে যাই

ভাসতে ভাসতে এক বাঁক আসে
মনে হতে থাকে
আমার সাথে চলা চাঁদ
কোথায় যেন আটকে গেছে
আমি ভাসতেই থাকি কিন্তু
আমার চাঁদ আর চলেনা
হায় সর্বনাশা স্রোত তুমি থামো
বার বার বলি, কত চেষ্টা করি
থামেনা, আমাকে ভাসিয়ে নিতেই থাকে
আর চাঁদ যেতে থাকে দূরে
না না, ভাসতে ভাসতে আমিই যেতে থাকি দূরে

এরপর একসময় দেখি আমার কেবল
আঁধারটাই আছে, চাঁদ নেই।

আমার কোনো আকাশ নেই, চাঁদ নেই, তারা নেই

এখন পরিপূর্ণ আঁধারের জন্য আমি
অমাবস্যার জন্য অপেক্ষা করি।

২৮/০৮/২০১৩

বহুদিন আগে একটা কবিতা লিখেছিলাম। সেই কবিতার নাম ছিলো 'নক্ষত্র আকাশ রাত'। এই কবিতাটায় সেই কবিতার ছায়া এসে পড়লো। প্রিয়ো পাঠক, সেই কবিতাটাও দিয়ে দিলাম।

নক্ষত্র আকাশ রাত

বহুদিন আমি আকাশ দেখি না
ভয়, নক্ষত্র খসে পরার ভয়;
একবার নক্ষত্র খসে পড়তে দেখে
বাবাকে হারালাম
এরপর আর কোনো রাতে
ছাদে উঠিনি
আকাশ দেখিনি
নক্ষত্র খুঁজিনি।

তবু নক্ষত্র খসে পড়ে-
হৃদয়ের আকাশ হতে নক্ষত্র খসে পরে
সময়ের ফাঁক গলে নক্ষত্র খসে পরে
সম্পর্কের জাল ছিড়ে নক্ষত্র খসে পরে

বহুদিন আমি আকাশ দেখিনা
আর কোনোদিন হয়তোবা
আমি আকাশ দেখবো না
নক্ষত্রহীন রাতের আকাশ
দেখার মতো তেমন কিছ নয়।

যদি আবার কোনো দিন
নক্ষত্র ফুটে উঠে রাতের আকাশে
ব্যাকুল হয় হৃদয়
সেই ভয়
ফিরে আসবে না কি, মনে?

আর কোনোদিন হয়তো
আমি রাতের আকাশ দেখবো না
হোক সে নক্ষত্রখচিত আকাশ
হোক নক্ষত্রহীন মহাশূন্য আকাশ
যে মহাশূন্য আমি লালন করি হৃদয়
যে গাঢ় অন্ধকারে প্রতিদিন যাচ্ছি তলিয়ে
নক্ষত্রহীন রাতের আকাশ তার কাছে কিছু না

২৫/১০/২০০৯


প্রিয়ো পাঠক আমি আসলে যা বলতে চাচ্ছি, একটা কবিতা কিভাবে সময়ের পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয়, এই কবিতা হয়তো তারই উদাহরণ। চার বছর পর যখন কবিতাটা লেখা হলো সেটি বদলে গেছে। আবার চার বছর পর যদি লেখা হয় ঠিক এই কবিতাটাই হয়তো আরো বদলে যাবে। ভাষা, নাম আর কবিতার স্বাদ। কিন্তু কবিতাটা কিন্তু একক ভাবে ভাবের দিক থেকে ঠিকই থাকবে। নাকি ভাবটাও বদলে যাবে। এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকটা বছর। যদি আবারো লেখা হয়।
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×