
মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন অবিবাহিত যুবককে বিয়ের আগে সর্ব প্রথম স্বর্ন ক্রয় করার জন্য বছরের পর বছর ধরে টাকা জমা করতে হয়। স্বর্নের দাম বৃদ্ধির কারনে মধ্যবিত্ত ও নিম্মবিত্তের অবিবাহিত যুবকেরা স্বর্নের দোকানে ঢুকতেও ভয় পায়। বর্তমানে স্বনের দাম ৫৫,০০০.০০ টাকার উপরে। মধ্যবিত্ত সংসারে জন্ম নেয়া অবিবাহিত যুবকের পক্ষে ৪/৫ ভরি স্বর্ন ক্রয় করা সম্ভব নয়। কনের জন্য একটি গলার হার কিনতে ও ৪/৫ ভরি স্বর্নের প্রয়োজন হয়। কনের জন্য হাতের বালা, নাকফুল, কানের দুল, গলার চেইন, আংটিসহ আরো অনেক কিছু কিনতে হয়। কনের জন্য মেহেদী আইটেম, বিয়ের আইটেম সহ কনের দাদা-দাদী, ভাবীর জন্য ও গিফট কিনতে হয়। বিয়ের পর ওয়ালিমা করতে হয়। এত কিছু ক্রয় করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমানে দেন-মোহরের টাকার পরিমানটাও অনেক বেশী ধায্য করা হয়। বউকে দেয়া স্বর্ণ থেকে কিছু টাকা উসুল দেখিয়ে বাকীটা বাকীর খাতায় রেখে দেয়া হয়। বাসর রাতে বাকী টাকাটা পরবর্তীতে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংসার জীবন শুরু করে। এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান সমাজের বিবাহ পদ্ধতি।
অন্যদিকে বরপক্ষও কনে পক্ষকে ছাড় দিতে রাজী নয়। যৌতুকের কথা মুখে না বললেও সুন্দর কথা দিয়ে কনে পক্ষকে ঘায়েল করে ফেলে। এই যেমনঃ
১. আমাদের আত্বীয়-স্বজন একটু বেশী তাই ৫০০/৬০০ জনের কম অথিতি নিয়ে কিভাবে যাব? তাই ৫০০/৬০০ হলে ভাল হয়।
২. বরপক্ষ ফার্নিচারের কথা মুখে না বললেও কনে পক্ষকে ৭/৮ প্রকারের ফার্নিচার দিতে হয়।
৩. বরপক্ষের পছন্দের কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করতে হয়।
৪. বরকে স্যুট-টাই-শার্ট-জুতা-প্রসাধনী-আংটি-ঘড়ি-টিভি-ফ্রিজ আরো অনেক কিছু উপহার দিতে হয়।
৫. বিয়ের পরে জামাইয়ের চৌদ্দগোষ্টিকে আবারও খাওয়াতে হয়।
এত কিছুর যোগান দিতে গিয়ে কন্যার বাবা-ভাইকে জমি-জমা বিক্রী করে কর্জ করতে হয়্। শূধমাত্র মেয়ে বা বোনের সুখের জন্য সব কিছু উজাড় করে দিতে হয়।
আমরা কি পারি না উপরোক্ত কাজগুলি একটু কাটসাট করে বিয়ে অনুষ্টান করতে?
সমাধান ছেলে পক্ষ থেকেই হতে পারেঃ
পাত্রী পছন্দ হওয়া মাত্রই বলে দিন আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। শূধুমাত্র ১০০ অথবা ২০০ জন অথিতি নিয়ে আপনার মেয়েকে ঘরে তুলতে চাই। কোন আসবাবপত্র ও দেয়ার দরকার নেই। এই রকম প্রস্তাব পেলে কন্যার পিতা আলহামদুলিল্লাহ বলে অবশ্যই বলতে বাধ্য হবে “ আপনারা খূশী হয়ে একটা মানসম্মত দেন-মোহর ধার্য করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেন।
বিয়ের ক্ষেত্রে প্র্রথমে বরপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে তারপর কন্যা পক্ষ ও এগিয়ে আসবেন। অমুকের বিয়েতে কি দিয়েছে না দিয়েছে সেই দিকে না তাকিয়ে আপনারা কম খচরে কিভাবে বিয়ের অনুষ্টান করবেন চিন্তা করার সময় এসেছে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের লক্ষ লক্ষ যুবক সমাজ আজ বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছে। বিয়ের ক্ষেত্রে দুই পক্ষের দাবী-দাওয়ার কাছে তারা অসহায়। বিয়ের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তাদের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অর্থের অভাবে ঘরে বিবাহ যোগ্য কন্যা রেখে পিতা-মাতারা টেনশনে থাকছে।
আগের দিনের সেই গোলা ভরা ধান-পুকুর ভরা মাছ-গোয়াল ভরা গরু আর নাই-- ডিজিটাল জামানায় সবাইকে সংসার চালাতে হিমশিত খেতে হয়। তাই বর্তমানে বিয়ের এই সিস্টেমকে পরিবর্তন করার জন্য যুব সমাজকে এগিয়ে আসা উচিৎ। যুব সমাজই পারে সমাজ পরিবর্তন করতে।
হে অবিবাহিত যুবক ভাইয়েরা মনে রাখবেনঃ------------------
যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি।
লোভ থেকে যার জন্ম।
আর লোভ মানুষকে কখনো
প্রকৃত সুখ দিতে পারে না।
তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এটিকে ঘৃণা করতে শিখতে হবে।
ইসলামে যৌতুকের কোন স্থান নেই।
এটি ভিনদেশি কালচার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১২ সকাল ১১:০৭