
সেই সময় হঠাৎ করেই কারো বিয়ে হতো না। কোন শপিংমল, রেষ্টুরেন্ট এ গিয়ে পাত্রী দেখার সুযোগ ছিল না। পাত্রীর বাড়ীতে গিয়েই দেখতে হতো। পাত্রীর বাড়ীতে নানার রকমের নাস্তার আয়োজন চলতো। পাত্রের বাবা-মা, মুরুব্বীরা পাত্রী দেখতে যেত। বাবা-মার পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়ে হতো। পাত্রী দেখার পর এনগেইজমেন্ট হতো তারপর বিয়ে। সেই সময় কমিউনিটি সেন্টার ছিল না। বাড়ীতেই বিয়ের অনুষ্টান হতো। বর পালকিতে চড়ে বিয়ে বাড়ীতে আসতো। বরের জন্য বিয়ে বাড়ীতে গেইট ও উঠানে একটি স্টেইজ সাজানো হতো। আর কনেকে ঘরে সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হতো। বর পক্ষের দুষ্ট ছেলেরা উকি মেরে নতুন বউকে দেখার চেষ্টা করতো। সেই সময় বিয়ের দিনই আকদ হতো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আকদ হওয়ার পর বর-কনেকে নিয়ে আলাদা আলাদা পালকিতে চড়ে বাড়ীতে ফিরতো। নতুন বউকে একটু দেখার জন্য বাড়ীর সবাই জমায়েত হতো। সবাই নতুন বউয়ের মুখ দেখে টাকা দিতো।
আর বর্তমানে হঠাৎ করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত, ছেলেরা নিজেই পাত্রী পছন্দ করছে তারপর আকদ তারপর কোন এক কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে অনুষ্টিত হচ্ছে। বর-কনের জন্য দুটি সাজানো স্টেইজ। পার্লারে সেজে গুজে কনে স্টেইজে বসে থাকে। সেলুন থেকে ভাল করে ফ্যাসিয়াল করে বর নিজেই ভাড়া করা শেরওয়ানী পরে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে ছুটতে থাকে। কমিউনিটি সেন্টারে দুই পক্ষের মেহমানরা জমায়ের হয়। সেই আগের দিনের মত আর উকি দিয়ে নতুন বউকে দেখতে হয় না । ডিজিটাল জামানার কনেরা ঘুমটা দিয়ে বসে থাকে না । বিনা বাধায় মহিলাদের রুমে প্রবেশ করেই কনেসহ সবাইকে দেখা যায়, ছবি তোলা যায়, ভিডিও করা যায়। বরকেও আগের মত মুখে রুমাল দিয়ে বসে থাকতে হয় না। বর-কনেকে আর পালকিতে চড়তে হয় না। নানান ফুল দিয়ে সাজানো এসি কারে বসে দুইজন দুজনার হাত ধরে বাড়ীতে চলে আসে---------
পুরাতন বছর গুলোতে কি দেখেছি আর এখন কি দেখছি--ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ভূলতে বসেছি। প্রাশ্চাত্যের দিকে হা তাকিয়ে থাকছি। তাদের কর্মকান্ডকে নিজেদের সংস্কৃতিতে সংযোজন করছি।
আজকে নতুন বছরের এই দিনে আমাদেরকে অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। সেই সোনালী দিনগুলোর স্মৃতিময় কাহিনীগুলো বড়দের কাছ থেকে শুনতে হবে। তাহলেই আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐহিত্য লালন করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:১৯