
কোন স্ত্রীই সাধারণত প্রথম প্রথম স্বামীর সাথে রূঢ় আচরণ করে না। অবশ্য দু একটি ঘটনা ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। ধীরে ধীরে স্ত্রীদের অনেকেই রূঢ় আচরণ করতে প্রলুদ্ধ হয়। এর কারণ অনেক সময় স্ত্রীদের মা অর্থাৎ ছেলের শ্বাশুড়ী।
মেয়ের বিয়ে দেবার পরপর মেয়ের মা স্বাভাবিকভাবেই কামনা করে যে, তার জামাই হবে তারই মন মতো একটা আদর্শ ছেলে।
শ্বাশুড়ী যখন দেখে যে জামাইর চালচলন একটু অন্য রকম, তখন শ্বাশুড়ী জামাইকে নিজের আদর্শে গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। চালায়। এ ধরণের চেষ্টা প্রথম দিকে মেয়ের কল্যাণেই মূলত হয়ে থাকে।
জামাই যখন তার ব্যক্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্যে অটল থাকে, তখন শ্বাশুড়ী মেয়েকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে জামাই সংশোধন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এভাবে ছেলের শ্বাশুড়ী, মেয়ের সংসারে এবং জীবনে আস্তে আস্তে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
শ্বাশুড়ীর পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে জামাতার ওপর মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আর এই ক্ষিপ্ততার প্রয়োগ ঘটানো হয় মেয়েকে দিয়ে। মেয়ে তাই ধীরে ধীরে তার স্বামীর সাথে একটু অন্যরকম আচরণ শুরু করে দেয়।
স্বামী যে ধরনের আচরণ তার স্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করে, স্ত্রী সেরকম আচরণ না করে কেমন যেন বিগড়ে যেতে থাকে। এমনকি স্বামীর কোন কোন কর্মকান্ডের সমালোচনায় মুখরও হয়ে ওঠে।
মেয়েকে রীতিমতো শ্বাশুড়ী বিভিন্ন রকম নির্দেশ দিতে শুরু করে, আর মেয়েও আগ-পর চিন্তা না করে মায়ের আদেশ-নির্দেশকে অনুসরণ করতে শুরু করে। এমনকি স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তন করার জন্য বলতে শুরু করে।
মেয়ের মঙ্গল কামনা থেকেই মূলত: শ্বাশুড়ীরা মেয়ের সংসারে প্রভাব বা হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে। কিন্তু অজ্ঞতাবশত: অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়।
শ্বাশুড়ীর সাথে জামাতার সম্পর্ক মানেই যে বৈরী সম্পর্ক এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। বরং সম্পর্কটা সাধারণত এর বিপরীত অর্থাৎ শ্বাশুড়ীর সাথে জামাইর সম্পর্ক খুবই আন্তরিক ও শ্রদ্ধা-স্নেহের। সেজন্যে শ্বাশুড়ীদের ব্যাপারে পুরুষদের অতিরিক্ত সমালোচনার মনোভাব পরিহার করে চলাই শ্রেয়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শ্বাশুড়ীরা খুবই ভালো প্রকৃতিরও হয়ে থাকেন।
এক ভদ্রলোক বলেছেন, তাঁর ভাষায় "আমার শ্বাশুড়ী যেন সাক্ষাৎ দেবী। তিনি যেমন দয়াবতী, তেমনি সবকিছু ভালোমত বুঝতেও পারেন। তাই আমি তাকে মায়ের মতোই ভালোবাসি। আমাদের সমস্যায় তিনি সবসময় আমাদের পাশে থাকেন। তার অস্তিত্ব যেন আমার পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এক নিশ্চয়তা স্বরূপ।"
তাই বলা যায়, শ্বাশুড়ী মাত্রই খারাপ নয় এবং শ্বাশুড়ীই মেয়ের সংসারে জটিলতা সৃষ্টির একমাত্র কারণ নয়।

শশুর-শ্বাশুড়ী বা শাশুর বাড়ীর সাথে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
১. শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সামনে কখনোই তাদের মেয়ের সমালোচনা করা উচিত নয়। বরং তাদের কন্যার প্রতি জামাতার ভীষণ ভালোবাসার দিকটিই ফুটিয়ে তোলা উচিত।
২. স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই পরস্পরের বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা। এতে উভয়েরই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
৪. মেয়ের বাবা-মাও কিন্তু অভিভাবক। ফলে নিজের বাবা-মায়ের মতো স্ত্রীর বাবা-মায়ের কাছেও অভিভাবকসুলভ পরামর্শ গ্রহণ করে সংসার জীবনে তা কাজে লাগানো যেতে পারে।
৫. স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েরই উচিত আপন-আপন শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথেই কেবল নয় বরং শ্বশুর বাড়ীর সবার সাথেই সহৃদয় আচরণ করা। এর ফলে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি ও সাফল্য নেমে আসবে।
৫. শ্বাশুড়ীর সাথে বা শ্বশুর বাড়ীর সাথে সমস্যা এড়িয়ে চলার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হলো শ্বশুর পক্ষীয় আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২৬