সেই ছোটবেলা থেকেই আমার ঘোরাঘুরির শখ। মন খারাপ হলেই ইচ্ছে হত চলে যাই অনেক দূরে কোথাও। কিন্তু পকেটের হালত সেই ইচ্ছে গুলোকে কান ধরে ফিরিয়ে নিয়ে আসত বাস্তবতার জগতে।
মোটামুটি বলা চলে গত বছর দুয়েক ধরে ছোটাছুটি করি। দেড় থেকে বড়জোর দু মাস হলেই মন আনচান করে।
যা হোক, গতবার মহেশখালী যাবার পর এবার সেন্টমার্টিন্স যাবো বলে ঠিক করি। অনেক আগে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন আর সে সব মনে নেই। নেটে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেও তেমন একটা ইনফরমেশন পেলামনা, এমনকি কোনো হোটেলের ফোন নম্বর, কোথা থেকে সীট্রাক পাওয়া যাবে তার কোনো তথ্যই কেউ দিতে পারলোনা। অতএব যা আছে কপালে ভেবে বেড়িয়ে পরলাম। তবে আপনাদের যাতে এই অসুবিধে না হয় সে জন্যেই এই পোস্ট লেখা।
যাত্রা শুরু।
ঢাকা থেকে অনেক ভাবেই যাওয়া যায় টেকনাফ, তবে সাধারণ বাস গুলোর মধ্যে ( আমি সাধারণ বাসের কথাই লিখছি কারণ বেশিরভাগের অবস্থা আমার মতই) মডার্ন লাইন / এস. আলম পাবেন। ভাড়া পরবে ৫৬০ টাকা। মডার্ন লাইনের অবস্থা একটু ভাল কারণ ওরা এখনো ৩৬ সিটের বাস ৩৬ সিটই রেখেছে, ৪২ করেনি। রাত ৯টা / ৯:৩০ এর বাসে উঠলে পরদিন ৭:৩০ থেকে ৮:০০ নাগাদ টেকনাফ পৌঁছে যাবেন। বাসে বলে রাখবেন ঈগল/কুতুবদিয়ার ঘাঁটে নামবেন। জাহাজ ঘাট টেকনাফ থেকে ১৮ কিলোমিটার আগে। তাই ভুল করে টেকনাফ শহরে চলে গেলে আবার ফিরে আসতে হবে পেছন দিকে।
ওখানে হাতমুখ ধোয়া আর ফ্রেশ হবার ব্যবস্থা আছে। পরটা আর ডিম ভাজি দিয়ে সকালে নাস্তা মনে হবে যেন অমৃত!
ঢাকা থেকেই ঈগল / কুতুবদিয়ার সিট বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। ঈগলের ফোন নাম্বার ০১৭১৩১৪৫৫৮৪, ০১১৯০১২৪১২৭। সাধারণতঃ তিন ধরনের টিকেট ওদের। ৬৫০ (নিচ তলা) ৭০০ (দ্বিতীয় তলা) ৭৫০ (এক্সিকিউটিভ ক্লাস। এসির মধ্যে বসে থাকতে হবে)। আমি যতদুর দেখেছি সবাই সিটে গিয়ে ব্যাগ ট্যাগ রেখে সীট্রাকের ডেকে দাঁড়িয়ে নাফ নদী আর সমুদ্র উপভোগ করে।
সীট্রাক ছাড়বে ৯:৩০। সময় মেনেই ঘাট ছেড়ে যাবে। দু পাশের অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে এক সময় চলে আসবে সমুদ্র। মায়াবী নীল জল আপনাকে নিমেষেই নিয়ে যাবে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। মাথার ওপর দিয়ে সীগালের ওড়াওড়ি, ছোট ছোট মাছ ধরা নৌকো গুলোর এপাশ ওপাশ দোল খেলানো দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখে পড়বে ছোট্ট একটা দ্বীপের আবছা উপস্থিতি। সাগর যে কতটা নীল ওখানে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা.....
সীট্রাকের ভোওও সাইরেন আর পি.এ.এস-এ সারেঙ জানিয়ে দেবে সামনের অদ্ভুত সুন্দর স্থলভাগটি সেন্টমার্টিন্স।
জেটি থেকে নামলেই বাজার, ওপরে ছাউনি দেয়া ভ্যান জাতীয় এক ধরনের বাহনে উঠতে হবে যদি না আপনার এনার্জি থেকে থাকে..ভাড়া নেবে জন-প্রতি ১০টাকা। দামাদামি করতে পারলে ৫ টাকাতেই যাবে।
এর পর চলে যান আগে থেকে বুক করে রাখা রিসর্টে। বুক করে না গেলে ভাল কোনো রিসর্টেই রুম পাবেননা। তবে একেবারে সাধারণ হোটেল গুলোর বয়-বেয়ারা "রুম লাগবে? রুম লাগবে?" বলে ডাকা ডাকি করবে, ইচ্ছে হলে দেখে আসতে পারেন। তবে কোনো মতেই ৭০০-৮০০টাকার বেশি এক টাকাও দেবেন না।
কিছু রিসর্টের নাম ও টেলিফোন নম্বর....
ব্লু মেরিন: ০১৮১৯০৬৩৪১৮, ০১৭২২৪৭৩৬১৩, ০১৮১৯০৬৩৪২৫
অবকাশ: ০২৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১,৯৩৫৯২৩০ (ঢাকা থেকে বুকিং দিতে হবে)
প্যাসিফিক রিসর্ট: ০১৭৩২৪৩৪২৬৪ (সেন্টমার্টিন্স), ০১৭১২৬৪৩৬৯৪, ০১৭২০৯৩৯০৯০ (ঢাকা)
শৈবাল: ০১৮১৫০১৪৬৬৪
হোটেল স্বপ্ন প্রবাল : ০১৮১৪২৭৪৪০৯, ০১৭২২৫৪৫৮৭২
(সেন্টমার্টিন্স) ০২৮৬১১৪২৮, ০১৭১১-১১০৯১৯ (ঢাকা)
সমুদ্র বিলাস : ০১৮১৩০১৯৮৩৯ (মং), (কক্সবাজার শাখা হোটেল নিদমহল : ০১৭১১৯৬৯৮৩৩, ০১৮১২৬১১৪২৭, ০১৮১৮১৪৩০১২)
পালিনি রিসর্ট : ০১৭২৭৩৬৮২৮২
সীমানা পেড়িয়ে রিসর্ট : ০১৮১৯০১৮০২৭, ০১৮১৭০৪২০২০ (সেন্টমার্টিন্স ), ০১৮১৯৪৬৬০৫৯, ০১৮১৯৪৭৮৪৩৪, ০১৯১১১২১২৯২, ০১৭১১৩৪৪৪৫১ ( ঢাকা)
নীল দিগন্তে রিসর্ট: ০১৭৩০০৫১০০৪ (সেন্টমার্টিন্স), ০২-৮৬৫২৬৭১, ৮৬৫২৩৭৪, ০১৭৩০০৫১০০৫ (ঢাকা)
ছোট্ট একটা দ্বীপ, ঘুরে দেখতে বেশি সময় লাগবেনা আশাকরি।
জেটী থেকে নামলেই ডান দিকে মাছ ধরতে থাকা জেলেদের দেখা মিলবে। বিশাল বড় সব জাল নিয়ে সারাদিন মাছ ধরতে ব্যাস্ত ওরা।
সাধারনত ছোট ছোট মাছ জালে ধরা পরে, একেকবারে হাজার খানেক টাকা হয়তো জোটে।
তবে ভাগ্য ভাল থাকলে নিচের ছবির দৃশ্যও চোখে পরতে পারে...
দ্বীপের পাথুড়ে অংশটা পেছন দিকে। পেছনের অনেকটা অংশ জুড়েই আছে নারকেল আর কেয়ার ঝোপ। অদ্ভুত সুন্দর লাগবে....
আপাতত এখানেই থাকুক। পরে ইচ্ছে হলে আরো বড় করবো পোস্টটি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:১০