বর্তমানে অনেকটা ঝামেলাহীন ভাবেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি করা যাচ্ছে, যেখানে পূর্বে নানান ঝুট-ঝামেলার মুখোমুখি হতে হতো। মূলত ৫টি ধাপে কাজটি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া > অনলাইনে ফর্ম পূরণ > ফর্ম জমাদান এবং ছবি তোলা > পুলিশ ভেরিফিকেশন > পাসপোর্ট সংগ্রহ
আপনাদের বোঝার ক্ষেত্রে এখানে ধাপগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়া হলো। কিন্তু নিচের বিরাট ইতিহাস দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আপনারা যাতে কোন জায়গায় ভুল না করেন তার জন্য প্রতিটি জিনিসকে সম্পূর্ণরুপে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ ছোট একটা ভুলের কারনেই আপনাকে বারবার কষ্ট করতে হবে আর সময়ের অপচয়ও হবে বটে।
◘ কাজ শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস্/তথ্যঃ
• প্রতিটি জেলায় আলাদা আলাদা পাসপোর্ট অফিস রয়েছে এবং কেবলমাত্র নিজ নিজ জেলার পাসপোর্ট অফিস থেকেই পার্সপোর্টে তৈরি যাবতীয় কাজ করতে হবে।
• ঢাকাতে মোট ৩টি পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। আগারগাঁও, শরির আখড়া এবং উত্তরাতে।
• এই পোস্টে শুধুমাত্র আগারগাঁও অফিসেরর তথ্য সরবরাহ করা হল। তবে ফর্ম পূরণের ব্যাপারটা সব অফিসের জন্য একই রকম হবে এবং কার্যপ্রণালীও একই।
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানাঃ
Department of Immigration and Passport
7-E Agargaon
Shere-E-Bangla Nagor
Dhaka-1207, Bangladesh
ইমেইলঃ inquiry@passport.gov.bd
টেলিফোনঃ 02-8123788
এখন ধাপে ধাপে কার্যপ্রণালীগুলো দেখা যাক-
◘ ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াঃ
অনেকেই টাকা জমা দেওয়ার আগেই ফর্ম পূরণ করা শুরু করে দিতে পারেন। তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো আগে টাকা জমা দিতে। কেননা অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হলে আপনাকে টাকা জমা দেওয়ার তারিখ এবং সিরিয়াল রম্বর দরকার হবে। তাই ফর্ম পূরণ একবারেই করতে হলে আগে টাকা জমা দিন।
সোনালি ব্যাংক এর ফার্মগেট, মগবাজার, মালিবাগ, কলেজ-গেট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখায় পাসপোর্টের টাকা জমা দেয়া যাবে। এসব ব্যাংকে পাসপোর্টের জন্য টাকা জমা দেওয়ার আলাদা রশিদ পাওয়া যাবে। ব্যাংক কর্মকর্তা/কর্মচারীর কাছ থেকে নির্ধারিত রশিদ চেয়ে নিন।
টাকা জমা দেয়ার হারঃ
১. সাধারণ ৩০০০ টাকা
২. জরুরী ৬০০০ টাকা
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, যাদের পূর্বের পাসপোর্ট রয়েছে কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাদের কে অতিরিক্ত নবায়ন ফ্রি দিতে হবে। নবায়ন ফ্রির হার প্রতি বছরের জন্য ৩০০ টাকা (অর্থাৎ যাদের ২০১২ সালে মেয়ার উর্ত্তীণ হয়েছে তাদের কে ৩০০ টাকা, যাদের ২০১১ সালে মেয়ার উর্ত্তীণ হয়েছে তাদের ৬০০ টাকা)।
টাকা জমা দেওয়া হয়ে গেলে রশিদটি সংরক্ষন করুন।
◘ অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণঃ
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ঝামেলা বিহীন পার্টটি হলো অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা। অনেকে অনলাইনেই ফর্ম পূরণকে ঝামেলা মনে করে শুধুমাত্র আবেদনপত্র ডাউনলোড করে হাতে পূরণ করেন। কিন্তু এতে করে তাদের পরবর্তীতে ঝামেলা পোহতে হয়।অনলাইনে অ্যাপ্লাই করার আরো একটি সুবিধা হলো নিজের পছন্দ অনুযায়ি ছবি তোলার তারিখ ঠিক করা যায়। অনলাইন ফর্ম পূরণ করার সময় ভ্যালিড ইমেইল অ্যাড্রেস/টেলিফোন নাম্বার দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা আপনার দেওয়া কন্ট্রাক্ট নাম্বারেই পরবর্তীতে এসএমএস দিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানানো হবে।
অনলাইনে ফর্ম পূরণের ধাপ সমূহঃ
• http://www.passport.gov.bd/ তে ভিজিট করুন।
• হোপ পেজে দেওয়া নির্দেশনাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এটি আপনাকে নির্ভুলভাবে ফর্ম পূরণের সহায়ক হবে।
• একেবারে নিচে I have read the above information and the relevant guidance notes ঘরে চেক মার্ক দিন।
• Continue to online enrollment এ ক্লিক করুন।
• যে নতুন পেজটি ওপেন হবে সেটি যথাযথভাবে পূরণ করুন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সতর্কতাঃ
• শিক্ষাগত বা চাকুরীসূত্রে প্রাপ্ত পদবীসমূহ (যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডক্টর, পিএইচডি ইত্যাদি) নামের অংশ হিসেবে পরিগণিত হবে না। ফরমের ক্রমিক নং ৩ পূরনের ক্ষেত্রে, একাধিক অংশ থাকলে প্রতি অংশের মাঝখানে ১টি ঘর শূন্য রেখে পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীর পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী মৃত হলেও তার/তাদের নামের পূর্বে ‘মৃত/মরহুম/Late’ লেখা যাবে না।
• আপনার এবং পিতামাতার নামের বানান যেন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট/জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধনের মত হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এক এক জায়গায় এক এক রকম হলে ঝামেলা হতে পারে।
• টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নাম্বার ঠিকমত দিয়েছেন কিনা ডাবলচেক করুন।
• ছবি তোলার জন্য এমন একটা দিনকে আপনি নির্বাচন করুন যেদিন আপনার আর কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকে।
• ফাইনাল সাবমিট করার আগে আবার রিচেক করুন।
• আপনার মেইলে পূরণকৃত ফর্ম এর কপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেটি প্রিন্ট আউট দিয়ে রাখুন। দুটি কপি করুন। জমা দেওয়ার সময় দুই কপি জমা দিতে হবে।
• ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড নিরাপদ স্থানে রাখুন।
ঝামেলাঃ এটি একটি বিজি সাইট হওয়ায় অনেক সময় পেজ ওপেন হতে এবং ডাটা এন্ট্রি করতে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই অনেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে হাতে লেখাতেই পছন্দ করেন। যারা হাতে ফর্ম পূরণে আগ্রহী তারা আবেদনপত্র ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
◘ দরকারি ডকুমেন্ট সত্যায়নঃ
- আপনার পূরণকৃত ফর্মের যেই পিডিএফ কপিটা পেয়েছেন, সেটার ২ কপি কালার প্রিন্ট করে ফেলুন।
- যেসব জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে সেগুলো করে ফেলুন । আপনার সাইন দিন।
- এবার নিজের চারকপি ছবি , জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট ফর্ম নিয়ে নিম্ন বর্ণিত যেকোন ব্যাক্তিদের কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিন। পরিচিত কাউকে দিয়ে সত্যায়ন করানো দরকার এই কারণে যে, ঐ কর্মকর্তার নাম , যোগাযোগ ও ফোন নাম্বার ফর্মে লিখতে হয়।
- মনে রাখবেন ছবির পেছনে সত্যায়িত করার দরকার নেই। ছবি আগে ফর্মে আঠাদিয়ে লাগাবেন। তারপর ছবির উপর সত্যায়িত করতে হবে যেন সত্যায়নটা ছবিতে এবং ফর্মে অর্ধেক অর্ধেক হয়।
- সত্যায়ন শেষে পুরো ফর্মটি রিচেক করুন।
- সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফর্মের সাথে যুক্ত করুন। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটি নিন।
আপনার ফর্ম এখন পরবর্তী কাজগুলো করার জন্য রেডি।
কারা কারা কাগজপত্র প্রত্যায়ন ও সত্যায়ন করতে পারবেন?
যে সকল ব্যক্তিগণ পাসপোর্টের আবেদনপত্র ও ছবি প্রত্যায়ন ও সত্যায়ন করতে পারবেন – সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলরগণ, গেজেটেড কর্মকর্তা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও পৌর কাউন্সিলরগণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, নোটারী পাবলিক ও আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জাতীয় বেতন স্কেলের ৭ম ও তদুর্ধ্ব গ্রেডের গ্রেডের কর্মকর্তাগণ।
◘ ফর্ম জমাদান এবং ছবি তোলাঃ
অনলাইনে আপনার দেওয়া তারিখে নিচের কাগজপত্র নিয়ে সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে উপস্থিত হোন।
১. পূরণকৃত আবেদনপত্রের দুইটি কপি।
২. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি।
৩. পূর্বের পাসপোর্ট থাকলে, পূর্বের পাসপোর্টের প্রথম তিন পাতার ( ছয় পৃষ্ঠা ) ফটোকপি এবং মূল পাসপোর্ট, এখানে লক্ষণীয় যে, ফটোকপি করার সময় পূর্বের পাসপোর্টের মলাটের পাতা থেকে যেখানে ইস্যু এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেয়া থাকবে, সেখান থেকে ফটোকপি শুরু করতে হবে।
৪. কলম, আঠা, স্ট্যপলার ও জেমস ক্লিপ সাথে রাখতে পারেন।
পাসপোর্ট অফিসে যে সমস্ত জিনিস আপনাকে করতে হবে-
• ফর্ম ভেরিফিকেশনঃ
- সরাসরি ৮ম তলার ৮০৪ নম্বর রুমে চলে যান। সেখান থেকে ফর্ম ভেরিফিকেশন করার জন্য একটা সিরিয়াল নম্বর নিয়ে নিন।
- সিরিয়াল নম্বর নিয়ে তয় তলার ৩১০ নম্বর রুমে চলে আসুন। আপনার পূরণকৃত ফ্রম এবং ডকুমেন্টস্ সাবমিট করুন।
• ছবি তোলঃ
- ফর্ম ভেরিফিকেশন করা হয়ে গেলে ওরা আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠিয়ে দিবে ছবি তোলার জন্য। ওদের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ি নির্দিষ্ট রুমে চলে যান।
দরকারি তথ্যঃ
- ছবি তুলতে যাওয়ার সময় একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, “সাদা কাপড় পরে ছবি তোলা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ”, তাই অবশ্যই সাদা ব্যতীত অন্য কোনো রঙের কাপড় পরে যাবেন অথবা সাথে নিয়ে যাবেন। আপনার পোশাকে কোনস্থানেই সাদা রং থাকা যাবেনা। কালো রঙের শার্ট ব্যাবহার করুন। এটা সবচাইতে ভাল হবে। ওদের একটা গনশার্ট আছে। চাইলে সেটিও ব্যবহার করতে পারেন।
- ছবি তোলার পর আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট/ডিজিটাল সিগনেচার নেওয়া হবে। ডিজিটাল সিগনেচার দেওয়ার সময় আস্তে আস্তে লিখুন।
- এগুলো করা শেষ হলে আপনাকে একটি ফর্ম দেয়া হবে যাতে আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার তারিখ দেয়া থাকবে। এটি সংগ্রহ করুন এবং সংরক্ষন করুন।
আপাতত আপনার কাজ শেষ।
◘ পুলিশ ভেরিফিকেশনঃ
আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হলে দুই জায়গাতেই আপনার ভেরিফিকেশান হবে। পুলিশের এস বি ( স্পেশাল ব্রাঞ্চ) এই কাজটা করে থাকে।
৫০০-১০০০টাকা পুলিশকে বকশিস দিতে হবে এমনটাই রীতি হয়ে গেছ। আপনি চাইলে/পারলে নাও দিতে পারেন যদি আপনি মেনেজ করতে পারেন।
ভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে। যেদিন এস এম এস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
◘ পাসপোর্ট সংগ্রহঃ
- সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান।
- লাইনে দাড়ান। আপনার সিরিয়াল আসলে রিসিট জমা দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
- পাসপোর্টে দেওয়া তথ্যগুলো নির্ভূল আছে কিনা চেক করে নিন।
রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা ও দরকারি টেলিফোন নাং এর লিংক-
http://www.dip.gov.bd/?q=node/34
(পোস্টটি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্রপক্রিকায় প্রকাশিত আর্টিকেল এবং ব্লগারদের ইতোপূর্বে প্রকাশিত পোস্টকে সমন্বয় করে লিখা হয়েছে।)