ইতিহাস কেবল মাত্র মুখস্হ করে পরীক্ষার হলে খাতাভরে লিখে এ+ পাওয়ার জন্য নয়।
৭১১ সালে তারেক বিন জিয়াদের অভিযানের মাধ্যমে শুরু হয় আর ৭৫২ সালে খলিফা আবদুর রহমানের হাত ধরে সমাপ্ত হয় স্পেন বিজয় যা পুরো বিশ্বের ইতিহাসকেই চিরদিনের মতো বদলে দিয়েছিল। দুশ বছর পর ৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে খ্রীষ্টানরা উত্তর-পূর্বের বার্সেলোনা শহর থেকে শুরু করে উত্তর-পশ্চিমের পোর্টো পর্যন্ত দখল করে নেয়। কিন্তু মুসলমানেরা তখন ফিকাহশাস্ত্রে মতদ্বৈততার কারণে একে অপরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে বিবাদে লিপ্ত। কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি তারা, বরং এক মুসলিম গোষ্ঠী অপর মুসলিম গোষ্ঠীকে দমনের জন্য খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে সহযোগিতাও নিয়েছে। ১০৮০ খ্রিষ্টাব্দে তারা যখন মধ্য স্পেন পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে, তখনো মুসলমানেরা একে অপরকে দমনেই ব্যস্ত। এভাবে ১১৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে একে একে আধুনিক পর্তুগালের রাজধানী লিসবন, স্পেনের টলেডো, সারাগোসা রাজ্যগুলো মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গেল। চোখের সামনে একের পর এক স্বগোত্রীয় মুসলিম রাজ্যের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারাতে দেখেও তাদের হুশ ফেরেনি। ১২১২ সালে যখন খ্রিষ্টানেরা কর্ডোভার দোরগোড়ায় হাজির, তখনো স্পেনের মুসলমানেরা আজকের বাংলাদেশের মতোই ঘোরতর কলহকোন্দলে লিপ্ত। আর এ সুযোগে কর্ডোভা, সেভিল, ভ্যালেন্সিয়ার মতো রাজ্যগুলো খ্রিষ্টানেরা গিলে ফেলল। খ্রিষ্টানেরা তাদের মধ্যে সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক জিইয়ে রাখে। এ লক্ষ্যে তারা মুসলিম সমাজে বেতনভুক লেখক, বক্তা ও বুদ্ধিজীবী নিয়োগ দেয় সেই সমাজের মধ্য থেকেই। বিবেক বিক্রি করা এসব তথাকথিত লেখক, বুদ্ধিজীবী খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ আর বিতর্ককে চালু রেখেছিলেন। ওই ভূখণ্ডে ২৩টি মুসলিম রাজ্যের মধ্যে তত দিনে (১২৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ) এক এক করে ১৯টি রাজ্যই খ্রিষ্টানেরা দখল করে ফেলেছে; তার পরও বাকি চারটি মুসলিম রাজ্য নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, কথিত সুশীলসমাজের কারণে। তারা নিজ নিজ এলাকার জনগণকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল মজহাবি বিতর্কে। ঠিক আজকের বাংলাদেশ যেমন!
অবশেষে বাকি চারটি রাজ্যও তাদের স্বাধীনতা হারায়। ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রানাডার শেষ সুলতান আবু আব্দুল্লাহকে চোখের অশ্রু ফেলতে ফেলতে সপরিবারে আল হামরা ছেড়ে আসতে হয়েছিল। এর মূল্য দিতে হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মকেও।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার হারাতে দেখেও ভারতবাসী কোনো শিক্ষা নেয়নি। তারই ফলে ১৮৪৩ সালে সিন্ধু হারাতে হলো তাদেরকে। এর পরও তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদে মগ্ন। আর এই সুযোগে মাত্র একটি বছরের মধ্যেই ইংরেজরা ১৮৪৪ সালে গোয়ালিয়র দখল করল। তারপর ১৮৪৯ সালে ভারতের ‘শস্যভাণ্ডার’ পাঞ্জাব, ১৮৫২ সালে বার্মা , ১৮৫৩ সালে নাগপুর, আর ১৮৫৬ সালে অযোধ্যা বেদখল হয়ে গেল। আর ১৮৫৭ সালে শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহকে দিল্লি থেকে বার্মায় নির্বাসনে পাঠিয়ে ভারত বিজয়ের ষোলকলা পূর্ণ করল ধূর্ত ইংরেজরা।
১৮৬০ সালে আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন আব্রাহাম লিংকন।নির্বাচিত হওয়ার পরই বর্ণ বিদ্বেষের কারণে দেশজুড়ে শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। উত্তরের শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত রাজ্যগুলোর সঙ্গে থাকতে চায় না দক্ষিণের কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান স্টেটসগুলো। কঠোর হলেন আব্রাহাম লিংকন। বিচ্ছিন্নতাবাদী দক্ষিণের রাজ্যগুলো একে একে আত্দসমর্পণ করল সরকারি বাহিনীর কাছে। রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষা করতে সক্ষম হলেন প্রেসিডেন্ট লিংকন। তিনি বর্ণবৈষম্যবাদ নির্মূলের আইন জারি করলেন সমগ্র আমেরিকায়।১৯৬৪ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেলেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কথা মাথায় রেখে তিনি নিজের দল থেকে না নিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রানিং মেট হিসেবে গ্রহণ করেন ডেমোক্রেট দলের এন্ড্রু জনসনকে। জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করলো তার এ সিদ্ধান্ত। উভয় দলের সমর্থনে নির্বাচিত হলেন তারা। তিনি যখন জাতীয় পুনর্গঠন কাজে বিনাবাধায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন উগ্র এক শ্বেতাঙ্গ আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারালেন মার্কিন ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন।
দক্ষিণ আফ্রিকা। সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল শ্বেতাঙ্গ শাসন। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে শ্বেতাঙ্গবিরোধী আন্দোলনে টলটলায়মান ছিল শাসকগোষ্ঠী। ১৯৬২ সালে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনের নেতা ম্যান্ডেলাকে কারারুদ্ধ হলেন। কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনের চাপে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হলো শাসক গোষ্ঠী। অবশেষে ২৮ বছর পর ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যান্ডেলাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয় স্বেতাঙ্গ সরকার। মুক্তিলাভের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা। সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গের আনন্দের জোয়ারে ভাসছিল সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকা। অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে পালাতে শুরু করে শ্বেতাঙ্গরা। জাতীয় ঐক্যের কথা চিন্তা করে নেলসন ম্যান্ডেলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করেন কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতনকারী শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীর নেতা ফ্রেডারিক উইলিয়াম ডি ক্লার্ককে। ফলে ধীরে ধীরে স্তিমিত হতে থাকে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধ। অতি স্বল্পকালের মধ্যে দেশে ফিরে আসে ঐক্য, শান্তি, শৃঙ্খলা এবং স্বস্তি।
ওরা যদি জাতীয় ঐক্যের কথা চিন্তা করতে পারে, তবে ক্ষমতাসীনদল -বিরোধীদল সবাই এক সাথে বসে দেশ গড়ার কথা আমরা কেনো ভাবতে পারি না........?? ওরা যদি পারে তবে আমরা কেনো পারি না.....??
নেতৃত্ব.......। নেতৃত্ব একটা বিশাল ব্যাপার। আমরা ভালো নেতা বাছাই করতে পারি না। আমাদের কাছে ভালো নেতা নেই, থাকলেও আমরা তাদের মূল্য দেই না। সম্মান দেই না।
এই দেশ, এই মাটি, এই মা বন্ধ্যা হয়ে গেছে। নষ্টা হয়ে গেছে। সে আর ভালো নেতা, ভালো মানুষ প্রসব করতে পারে না।