somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটি কোন গল্প নয়

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি নূর। সানা নূর।
ওয়েবক্যামে ফুটে ওঠা তরুণীর প্রতিচ্ছবিটি ভরে উঠল নম্রতার মনোমুগ্ধকর আলোয়!
অপার্থিব সেই আলো ভেদ করে সে জানতে চাইল শান্তস্বরে, তোমার নাম?
আমি আমার নাম বললাম।
তরুণী দ্বিধান্বিত কিছুটা। তুমি কি মুসলিম?
না।
দুঃখিত, আমি তাহলে কথা বলব না তোমার সাথে।
আমার মন খারাপ হলো। ধর্মীয় বিধিনিষেধের অব্যাখ্যাত আচারে মানবিক সম্পর্ক সৃষ্টি হবার সম্ভাবনাগুলো কত সহজেই মরে যায়, ঝরে যায় বসন্তের বৃন্তচ্যুত শুকনো পাতা হয়ে!
কী আর করা! বিদায় নূর। ভালো থাকো বহমান নদীর মতো।
নদীর কথায় কেঁপে উঠল মেয়েটির চোখের পাতা। ব্যাধিগ্রস্ত বৃক্ষের অসাড়তায় ডুবে যেতে যেতে সে বলল, তুমি নদী দেখেছো?
কেন দেখবো না? নদীর দেশের মানুষ আমি। নিরুত্তপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলাম।
আমি কখনও নদী দেখিনি।
কোথায় থাকো তুমি?
মালয়েশিয়া।
তুমি যেখানে থাকো কাছাকাছি কোন নদী নেই?
না। কয়েকটি অগভীর জলাশয় আছে। যমুনার মতো গভীর নদী নেই।
মেয়েটির কথায় চমকে উঠলাম আমি, বললাম, তুমি যমুনা নদীর কথা জানলে কীভাবে? যমুনা তো আমার দেশের নদী!
তোমার দেশের নদী? বিস্ময়ে অভিভূত মেয়েটির বিস্ফারিত চোখের মণিতে যমুনার সবুজাভ ঢেউয়ের ওঠাপড়া ভেসে উঠল। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে সে বলল, তুমি বাংলাদেশে থাকো?
আমি হতচকিত স্বরে বললাম, হ্যাঁ! তুমি চেনো আমার দেশকে?
চিনি তো! ভীষণ ভালোভাবে চিনি! তারপর একটু থেমে মেয়েটি আমাকে প্রশ্ন করলো আবার, আচ্ছা, তুমি কী হাসানকে চেনো?
হাসান? বিহ্বলতা আমার কণ্ঠে।
হাসান! মানে হাসান ইকবাল!
হাসান নামের মানুষটিকে চেনাবার প্রাণপণ চেষ্টা মেয়েটির!
অনন্যোপায় আমি না চেনার ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে বললাম, না, আমি ঠিক চিনি না তাকে!
হাসান আমাকে বাংলাদেশের গল্প বলেছে। ওর বাড়ি যেতে পাড়ি দিতে হয় যমুনা নদী। নদীতে অনেক শাপলা ফোটে, তাই না?
আমি ভিনদেশী মেয়েটির কথায় আবেগাপ্লুত হলাম! বললাম, স্রোতস্বিনী নদীতে সাধারণত শাপলা ফোটে না। যে নদীর স্রোত রুদ্ধ, যে নদী যৌবনহারা, বৃদ্ধ অথবা মৃতপ্রায়, সে নদীর অগভীর জলে শাপলা বাসা বানায়। এক নিঃশ্বাসে বললাম আমি।
তুমি কী কবি? নূরের কণ্ঠে আবিষ্টতা!
না। আমি শ্রমিক, আমি আমার শ্রম বিক্রি করি শহরে। আমার স্পষ্টস্বর।
হাসান কবি। ভীষণ সুন্দর কবিতা লেখে ও।
হাসানকে আমার শুভেচ্ছা দিও।
কীভাবে তোমার শুভেচ্ছা ওকে দেবো আমি! ওর কোনো ফোন নাম্বার নেই আমার কাছে! নূরের বিষন্ন জবাব।
বিষয়টি চিন্তায় ফেললো আমাকে। আমার কৌতূহল ওদের মধ্যকার সম্পর্কের গ্রন্থি উন্মোচনে প্রবৃত্ত হলো। সংকোচের অস্বচ্ছ দেয়াল ভেঙে জানতে চাইলাম, তোমার সাথে হাসানের যোগাযোগ কীভাবে?
হাসান আমাদের দেশে এসেছিল কাজ করতে। আমাদের বাসার কাছেই ওদের কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আমাদের পরিচয় এলাকার শপিং মলে। ধীরে ধীরে ওর সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হবার পর আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাই। পরিচয় করিয়ে দেই মায়ের সাথে। আমার বাবা মারা যাবার পর মা-ই আমাদের পরিবারের সবকিছু। মনের অর্গল ভেঙে অনেক কথাই বলে ফেলল মেয়েটি, একনিঃশ্বাসে।
তারপর? অকৃত্রিম আগ্রহ আমার কণ্ঠে।
এই যে এনগেজমেন্ট রিং, এটা হাসানের দেয়া। নূরের বাম হাতের অনামিকার শোভা বাড়াচ্ছে একটি সুন্দর আংটি।
তারপর?
প্রায় এক বছর হলো দেশে ফিরেছে হাসান। বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসার পর আমাদের বিয়ে হবার কথা। বিয়ের পর আমাদের যাবার কথা যমুনার পাড়ে।
তাহলে অপেক্ষা করো। জেনো, অপেক্ষার ফল সবসময় মধুর হয়। অনিঃশেষ শুভকামনা ভরা গলায় উচ্চারণ করলাম আমি।
কিন্তু ওদের কোম্পনির সুপারভাইজার কয়েকদিন আগে বললো হাসান আর ফিরবে না কাজে! ও নাকি দেশে ফিরে বিয়ে করেছে! মেয়েটির বিচলিত কণ্ঠস্বর।
আমি চুপ করে রইলাম। অনভিপ্রেত এক আশংকার মেঘ জন্ম দিলো ধূসর সময়ের।
মেয়েটি মনের অতলে সকরুণ রক্তপাতকে ক্ষয়িষ্ণু বিশ্বাস দিয়ে ঢেকে দেবার চেষ্টা করতে করতে বলল, আমি কিন্তু সুপারভাইজারের কথায় কান দেইনি একদম! ও ভীষণ মন্দ লোক!
আমি সংশয়ভরা কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম, মানুষকে চেনা খুব কঠিন নূর!
মেয়েটি ত্রস্তস্বরে বলল, না না, আমি ভালোভাবে চিনি ওকে। আমার আর হাসানের ভালোবাসা ও কখনওই ভালো চোখে দেখেনি!
তোমার উপলব্ধি যথার্থ হোক নূর! আদ্রকণ্ঠে বললাম আমি।
আমার কণ্ঠস্বর দ্রবীভূত করল মেয়েটির মনকে। সে সলাজ ভঙ্গীতে বলল, আমাকে একটু সাহায্য করবে? হাসানকে একটু খুঁজে দেবে তুমি? ফিরিয়ে আনবে আমার কাছে?
না, বর্ণময় কোন আশ্বস্ততার কথা উঠে এলোনা আমার কণ্ঠনালীতে!
আমি বলতে পারলাম না কিছুতেই, যদি কোন মানুষ হারিয়ে যাবার জন্য জীবনে আসে, একজীবনে তাকে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব!


ছবি: সংগৃহীত
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৮











শেখ সাহেবের উদাত্ত কণ্ঠের আহবানে ৫৫ বছর আগে সেই কিশোর রক্ত গরম করা শরীর নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে
জ য়... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারকেল জিঞ্জিরা! Beauty in Uncongenial Surrounding

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩



সেন্টমার্টিন! বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে একমাত্র কোরাল আইল্যান্ড। প্রাকৃতিক জীব-বৈচিএ এ ভরপুর, স্বচ্ছ নীল জলরাশির ঘেরা মাএ ৮ বর্গ কিলোমিটার ছোট্ট একটি দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আমার অবশ্য পছন্দ ছেঁড়াদিয়া ডাকতে। টেকনাফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শামির রোজা রাখা না রাখা নিয়ে ভারতীয় মৌলভীদের মধ্যে কেন বিতর্ক চলছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০


মোহাম্মদ শামি একজন ভারতীয় ক্রিকেটার। বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নামে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছে আটটি দেশের অংশগ্রহণে। টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলো। মোহাম্মদ শামি একজন বোলার হিসাবে সে খেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার পতনে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:০২


জুলাই অভ্যুত্থানের পিছনে ক্রীড়ানক হিসাবে অনেক দেশি ও বিদেশি শক্তির হাত ছিলো বলে শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো শেখ হাসিনার প্রতি জনসমর্থন ২০১৪ সালের পরেই কমতে থাকে। ২০২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

হজরত মুসা (আঃ) থাপ্পড় মেরে আজরাইলের (আঃ) এক চোখ কানা করে দিয়েছিলেন

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:১৯

হজরত মুসা (আঃ) অত্যধিক বলশালী একজন মানুষ ছিলেন। ওনার শরীরের শক্তি সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ আছে। সুরা আল কাসাসের ২৮ নং আয়াতে আছে;
নারীদ্বয়ের একজন বলল, হে আমার পিতা! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×