আগের পর্বঃ পর্ব ৮ -ক্রিয়েটিভিটি
আগে মিডিয়া ছিলো অনেক ইন্ডিভিজুয়াল। অর্থাৎ আপনি হয় টিভির জন্য এড বানাবেন, নাহয় রেডিওর জন্য, নাহয় পত্রিকার জন্য। বাট এখন অনলাইন গনমাধ্যমে আপনি সবগুলা মিডিয়াকে একত্রে ব্যাবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন। অডিও রেকর্ড করে সেটার সাথে ভিডিও যোগ করে ইউটিউবে দিতে পারছেন। সেই ভিডিও আবার ফেসবুকে শেয়ার করতে পারছেন। ব্লগ লিখে পরিচিতি পেলে ফেসবুকে সেই পরিচিতিকে
কাজে লাগাতে পারছেন। আবার ফেসবুক এ পরিচিত হলে সেটা কাজে লাগাতে পারছেন নিউজ পেপারে। এখন সব মিডিয়াই এক হয়ে গেছে অনলাইনের কল্যানে।
একে বলা হয় মিডিয়া কনভার্জেন্স। আবার অনলাইনে বিভিন্ন মিডিয়াকে একসাথে মার্কেটিং এর কাজে ব্যাবহার করাকে বলা হয় ইন্টিগ্রেটেড মার্কেটিং কমিউনিকেশন বা আইএমসি। এ কারনেই সব রকম বিজনেস দিনে দিনে নেট ভিত্তিক হয়ে পড়ছে। ব্যাঙ্কিং বলেন, শো-বিজ বলেন, বিল দেয়া, টিকেট কাটা বলেন, পড়ালেখা বলেন, সবকিছুই অনলাইনে করা যাচ্ছে। কাজেই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এডভার্টাইজিং এর ক্ষেত্রেও আমাদের অনলাইনের ব্যাবহার শিখতে হবে।
অলরেডি কিন্ত অনলাইন প্রমোশনের সিস্টেম টা শুরু হয়ে গেছে। এই যে চোরাবালি অথবা টেলিভিশন মুভি দুটো মুক্তি পেলো। তাদের ফেসবুক এডভার্টাইজিং টা খেয়াল করেছেন ? আমি ইদানিং ক্লোজ আপ ওয়ান, আর পাওয়ার ভয়েস নামে দুইটা প্রোগ্রাম রেগুলার ফলো করি। যেহেতু টিভি দেখার সময় করে উঠতে পারিনা, তাই তাদের প্রগ্রাম গুলো দেখার জন্য নেট আই ভরসা। বাট তারা যদি ফেসবুক পেইজ না খুলতো, বা ইউটিউবে আপ না করতো তাহলে তাদের দর্শক সঙ্খ্যা কিন্ত বাড়তো না। এইভাবেই মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য অনলাইন দারুন সাপোর্ট দিচ্ছে।
আজকে আমরা কথা বলবো অনলাইন ব্রান্ডিং এবং এডভার্টাইজিং নিয়ে।
সবার আগে একটা সহয ইকুয়েশন শিখি আসুন।
আপনার পারফরমেন্স+ কিভাবে আপনার পারফরমেন্স প্রেজেন্ট করছেন = আপনার ব্রান্ডের পারসেপশন
এই কথাটা শুধু এডভার্টাইজিং নয়, আপনার জীবনের সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মনে করুন আপনি আপনার প্রেমিকাকে অনেক ভালোবাসেন, এটা হচ্ছে আপনার পারফর্মেন্স। কিন্ত সেই ভালোবাসা মনের ভিতরে রেখে দিলে লাভ হবেনা। আপনাকে ফুল নিয়ে যেতে হবে দেখা করার সময়। এটা হচ্ছে আপনার
পারফর্মেন্সের প্রেজেন্টেশন। এই দুইটা ব্যাপার এক করতে পারলেই প্রেমিকার কাছে আপনার একটা ইমেজ তৈরি হবে। ভালো প্রেমিকের ইমেজ। এবং এই ইমেজ বা পারসেপশনই হচ্ছে ব্রান্ড।
আবার মনে করেন আপনি দারুন একটা সোশ্যাল কাজ করেছেন। এখন আপনি যদি সেটা সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে পারেন ঠিকমত, তাহলে আপনার সম্পর্কে একটা পারসেপশন তৈরি হবে। একজন হিরো, জিনি সমাজে একটা পরিবর্তন এনেছেন। আর এটাই হচ্ছে আপনার নিজের ব্রান্ড ভ্যালু।
তারমানে হচ্ছে, আপনি কি করছেন, শুধু সেটাই ইম্পর্টেন্ট নয়। আপনি কিভাবে সেটাকে রিপ্রেজেন্ট করছেন এবং সবাই কি ভাবছে, সেটাও ইম্মপর্টেন্ট। ব্রান্ডিং এর বেসিক ধারনা পেতে হলে এই সিরিজের ফার্স্ট পোস্ট টা ঘুরে আস্তে পারেন।
সরাসরি আলোচনায় চলে আসি।
এর আগের একটা পর্বে ইথোস, লোগস, প্যাথোস নিয়ে বলেছিলাম। আজকেও ইথোসের ব্যাপার টা আসবে। ইথোস মানে হচ্ছে ক্রেডিবিলিটি। আপনার এড তখনি মানুষ দেখবে, যখন আপনার একটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে, গ্রহনযোগ্যতা থাকবে। এডভার্টাইজিং এ ক্লায়েন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা মাস্ট। মানে আপনি যাকে বা যেই কোম্পানিকে বিশ্বাস করবেন, তার প্রোডাক্ট ই কিনবেন। অথবা আপনি যদি বিজ্ঞাপন বানান, তাহলে তখনি সেই বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ আপনার কথা শুনবে, যখন আপনাকে তারা বিশ্বাস করবে। আজকে সাকিব আল হাসান বিজ্ঞাপনে একটা কথা বললে সবাই শুনবে, কিন্ত আমি আপনি বললে কেউ শুনবেনা। কারন কি ? কারন টা হচ্ছে আপনি যেই দর্শকদের টার্গেট করে বলছেন, তারা আপনাকে চিনেনা। তারা চিনে সাকিব আল হাসান কে। কাজেই আপনার কথা শুনানোর জন্য আপনাকে আগে সেলফ ব্রান্ডিং বুঝতে হবে।
বিখ্যাত একজন মার্কেটিং গুরু টম পিটার্স বলেছেন, "আপনি নিজেই একটা ব্রান্ড" ।
বিশ্বাস করুন, কথাটি মিথ্যা নয়। স্বাভাবিক ভাবে সবাই ধারনা করে থাকেন, ব্রান্ড মানেই একটা প্রোডাক্ট। আসলে কিন্ত তা নয়। একটা সার্ভিস হতে পারে ব্রান্ড,আইডিয়া হতে পারে ব্রান্ড, একটা কনসেপ্ট হতে পারে ব্রান্ড। এবং একজন মানুষ ও হতে পারে ব্রান্ড। এমন কি একটা জাতিও ব্রান্ড হতে পারে। যেমন মনে করুন আপনি চায়নার কথা ভাবছেন। চায়না বা চাইনিজ নামটা শুনলেই আপনার কিছু জিনিস মাথায় চলে আসবে অটোমেটিক্যালি। চাইনিজ খাবার, চায়নার প্রডাক্ট,
চায়নার নাকবোচা মানুষগুলি, চায়না সেট ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মানে হচ্ছে, চায়নার নিজস্ব একটা ব্রান্ড ভ্যালু আছে। যেটা দিয়ে আপনি চায়নাকে রিকগনাইজ করতে পারছেন, রাইট ? যদি কেউ একজন এসে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আপনি কি হাসান মাহবুব কে চিনেন ? আপনি তাকে চিনুন আর না চিনুন হাসান মাহবুব নামটা কিন্ত ব্রান্ডেড হয়ে গেলো। একই কথা প্রোডাক্টের বেলাতেও। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, আপনি স্যান্ডেলিনা সাবান ব্যাবহার করেন ? তখন সেই সাবান টা আপনি ব্যাবহার করুন আর না করুন, সাবানের ব্রান্ডিং কিন্ত হয়ে গেলো। কারন সাবান টা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আর এডভারটাইজিং এর কাজ ই হচ্ছে, ব্রান্ড কে প্রতিষ্ঠিত করা।
আপ্নারা যেহেতু ব্লগ পড়েন এবং লিখেন, ধরে নিচ্ছি সকলেরি ফেসবুকে একাউন্ট আছে। বর্তমানে ফেসবুক হচ্ছে ব্রান্ডিং এন্ড এডভার্টাইজিং এর সবচাইতে ইফেক্টিভ যায়গা। কারন আমাদের লাইফের ডিজিটাল রুপটাই হচ্ছে ফেসবুকে একাউন্ট। আমরা বাস্তবে যা, তার একটা ভার্চুয়াল ছায়া হচ্ছে ফেসবুক। রিসার্চ করে পাওয়া যায়, ৯০ % শিশু যারা সদ্য জন্মেছে, তারা অলরেডি ইন ফেসবুক। কিভাবে ? কারন সেই শিশুদের মা বাবারা ফেসবুকে ছবি আপ শুরু করে দেন জন্মের পরপরি। ফেসবুক হচ্ছে এমন একটা মিডিয়া, যেখানে মানুষ কি খাবার খাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, সমাজ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা, পার্সোনাল অপিনিয়ন, সবকিছুই স্ট্যাটাস হিসেবে দিচ্ছে। দেখবেন একদিন নেট লাইন না থাকলেই আপনার কাছে অস্থির লাগা শুরু করবে। মানুষের এত ক্লোজ আর কোন মিডিয়া নেই। ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে, যখন মানুষ অর্ধেক রিয়েল লাইফে বাচবে, আর অর্ধেক বাচবে ফেসবুকে। তাহলে কেন এডভার্টাইজিং এর জন্য আমরা এই চমৎকার মিডিয়াটিকে কাজে লাগাবো না ?
এখনকার সময় ফেসবুক প্রেম অনেক কমন একটা ব্যাপার। কারো সাথে ব্লাইন্ড ডেটে যাবার আগে, সবার আগে চেক করা হয় ফেসবুক প্রোফাইল। যে তার ফেসবুকে যতটা স্মার্ট, ধরে নেয়া রিয়েল লাইফেও তাই হবে। তারমানে আপনার ফেসবুকের প্রোফাইল মুলত আপ্নাকেই রিপ্রেজেন্ট করছে। ফার্স্ট ইম্প্রেশন টা আসছে ফেসবুকের উপর ভিত্তি করে। শুধু প্রেমের বেলাতেই নয়, বাইরের দেশে জব সেক্টর গুলাতেও ফেসবুক প্রফাইল কে অনেক মূল্য দেয়া হয়। চাকুরির ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি ফেসবুক চেকিং হয় ক্রিয়েটিভ ডিপার্ট্মেন্টে। আমি যেখানে জব করি, সেই অফিসেও সিভির সাথে ফেসবুক এর লিঙ্ক দিতে হয়। এইচার ডিপার্ট্মেন্ট আবার সেই ফেসবুক প্রফাইল অব্জার্ভ করে।
আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না, আপনার পার্সোনালিটির কত বড় একটা অংশ ফেসবুকে প্রতিফলিত হয়। আপনার প্রোফাইল পিকচার, কাভার ফটো, স্ট্যাটাস, এলবাম, লাইক, গ্রুপ, পেজ সবকিছুই আপনার বৈশিষ্ট ধারন করে।
একটা ব্যাপার জানেন ? অধিকাংশ ছুপা ছাগুই কিন্ত ফেসবুকে ধরা খায়। হয়তো অনেক আগে শিবিরের কোন পেজে লাইক দেয়া আছে, কোন স্ট্যাটাসে বা কমেন্টে পাকিস্তান কে সাপোর্ট করেছে। ফেসবুকে কিন্তু সবকিছুরি রেকর্ড থাকে। যত আগেই কেউ কিছু করুক না কেন, তা খুজে বের করা সম্ভব।
আপনার এল্বাম দেখলেই বুঝা যাবে, আপনি মানুষ টা কেমন। আপনার এল্বামে ফ্রেন্ডসদের ছবি বেশি থাকলে ধরে নেয়া হবে আপনি একজন ফ্রেন্ডলি মানুষ। পার্টির ছবি বেশি থাকলে বুঝা যাবে, আপনি ফান লাভিং। আপনার ফলো লিস্টে মেয়েদের সঙ্খ্যাবেশি থাকলে ধরে নেয়া হবে আপনি একজন লুল। সমস্যা কোথায় জানেন ? মে বি আপনি আসলে লুল না। কিন্ত আপনার ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে মনে হবে আপনি লুল। তা না হলে ১৮+পেজে কেন লাইক থাকবে ? তারমানে ফেসবুক প্রোফাইল কে হেলাফেলা করার কোন সুযোগ নাই। আপনি যদি "সে কেন চলে গেলো" টাইপের স্ট্যাটাস দেন, ধরে নেয়া হবে আপনি মেন্টালি স্ট্রেসে আছেন। আবার প্রোফাইলে বা কাভারে কাপল ছবি থাকে, ধরে নেয়া হবে আপনি হ্যাপি আছেন। কাজেই যারা জব বা বিজনেস করেন কিংবা করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য ফেসবুক মেইন্টেইন করাটা অনেক জরুরী। চেষ্টা করবেন আপনার ফিল্ড রিলেটেড স্ট্যাটাস, ছবি ইত্যাদি বেশি বেশি শেয়ার করার। আমেরিকাতে জবের ক্ষেত্রে ৭৫% ক্যান্ডিডেটের সিভি চেক করা হয় অনলাইনে। তারা রিসার্চ করে ক্যান্ডিডেটের ফেসবুকের উপর। এমন কি টিমে একজন সাইক্লিয়াটিস্ট ও থাকে, আপনার ফেসবুক থেকে আপনার কার্যক্ষমতার লেভেল ফাইন্ড আউট করার জন্য। ট্রাস্ট মি, ইট হ্যাপেনস এন বাংলাদেশ অলসো।
এইকথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফেসবুক এ আপনি নিজেকে স্মার্ট এবং এলিজেবল হিসেবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন। এই সুযোগ টা কেন মিস করবেন সামান্য অবহেলা করার কারনে ? আপনার সেলফ এডভার্টাইজিং এর মাধ্যমে আপনি একজন আইকন হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন।
আরিফ জেবতিক, অমি রহমান পিয়াল, আসিফ মহিউদ্দীন, আরিফ আর হোসাইন, ড.আইজুদ্দিন,সবাক পাখি এনাদের কথা চিন্তা করেন। এরাই কিন্ত ফেসবুকের রথহি মহারথি। তাদের এক একজনের ফলোয়ার সঙ্খ্যা অনেক। তারা একটা স্ট্যাটাস দিলেই তাতে লাইকের হিড়িক পড়ে যায়। তার মানে হচ্ছে এই মানুষগুলা নিজেদের একটা আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করতে পেরেছে ফেসবুকে। তারা যদি একটা কথা বলে, তাহলে সবাই শুনবে। অন্তত পড়ে দেখবে। একবার চিন্তা করে দেখেন
তো, এইরকম কেউ যদি একটা স্ট্যাটাস দেয়, "আজকে লাক্সের নতুন সাবানটা কিনলাম, অনেক দারুন। আপ্নারাও ব্যাবহার করে দেখতে পারেন"- তাহলে কি হবে ? শিওর থাকতে পারেন, স্ট্যাটাসদাতার ফলোয়ারদের মাঝে মিনিমাম ২৫% পরবর্তিতে সাবান কিনার সময়ে লাক্সের নতুন ডিজাইনের সাবান কিনবে।
একই কথা পেজগুলার ব্যাপারেও প্রযোজ্য। একটা পেজে যদি ১০,০০০ মেম্বারের লাইক দেয়া থাকে, তাহলে সেই পেজে একটা ম্যাসেজ থ্রো করা মাত্রই দশ হাজার মানুষের কাছে তা পৌছে যাচ্ছে। একটা বিজ্ঞাপন দিলে তা এক সেকেন্ডে দশ হাজার মানুষের চোখ পড়ছে। তাহলে ফেসবুকের চাইতে ভালো কোন মাধ্যম কি আর হতে পারে ? এ কারনেই দেখবেন এখন যে কোন টিভি অনুষ্ঠান, চ্যানেল, প্রডাক্ট, সার্ভিস এর ফেসবুক পেজ থাকেই। এতে করে তারা সবসময় কাস্টোমারদের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারে। এডভার্টাইজিং কমিউনিকেশনের জন্য ফেসবুকের কোন বিকল্প নাই আসলে।
তবে একটা ব্যাপার আছে। সেটা হচ্ছে, আপনি শুধু ফেসবুক বা ইউটিউব ইউজ করলেই হবেনা, মানুষের কাছে সেটা পৌছুনোর ব্যাবস্থাও করতে হবে। এখানেই চলে আসে কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজির কিছু ব্যাপার। ব্যাখ্যা করি তাহলে।
আপনি আপনার বিজনেস প্রমোট করার জন্য কাস্টোমারের সাথে সবসময় একটা কমিউনিকেশনের মাঝে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য ইউটিউব একটা চমৎকার সাইট। জাস্ট একটা ওয়েব ক্যাম হলেই চলবে। তারপর যেটা করবেন, আপনার বিজনেস বা প্রোডাক্টের উপর একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরি করবেন। হতে পারে আপনি শাই, বা কথা বলতে গেলে সমস্যা হয়। নো প্রবলেম, অন্য কাওকে দিয়ে করান। অথবা আগে স্ক্রিপ্ট করে নিন কি বলবেন। তারপর প্রাক্টিস করে ভিডিও করুন। মনে রাখবেন, আপনি যখন কারো সাথে কথা বলবেন, সে আপনার সাথে অনেক তাড়াতাড়ি ক্লোজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ ব্লগ কিংবা ফেসবুকে মানুষ শুধু আপনার লেখা পড়তে পারছে, বাট আপনাকে লাইভ দেখছে না। কিন্ত ইউটিউবে আপনাকে কথা বলতে দেখা যাবে। এটা সাইকোলজিকাল একটা ব্যাপার। আপনি যখন সামনাসামনি কারো সাথে কথা বলবেন, তখন একটা বন্ড তৈরি হয়। এটাকে বলা হয় পারসোনাল কমিউনিকেশন। ভিডিওতে কিন্ত আপনার
মুখের এক্সপ্রেশন, আপনার হাসি, হাত নাড়ানো ইত্যাদি সবি দেখা যাচ্ছে। আবার জিনি দেখছেন, তিনি যেহেতু কম্পিউটারের সামনে বসে আপনার কথা শুঞ্ছেন, তাই একটা টু ওয়ে কমিউনিকেশন তৈরি হবে। অনেক টা ইউ এন্ড মি টাইমের মত। খেয়াল করলে দেখবেন, আইফোন, স্যামসং বা ডিএসেলার ক্যামেরা কোম্পানিগুলো কিন্তু সবসময় প্রোডাক্টের একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশন লঞ্চ করে। যে কোন মডের মোবাইল সেটের নাম টাইপ করে দেখুন ইউটিউবে, দেখবেন বেশ কিছু রিভিউ পাবেন। আর সবসময় যে আপনি এড দিয়ে যাবেন তাও কিন্ত না। যে কোন ব্যাপার নিয়েই ইন্টারেস্টিং কথা বলতে পারেন ভিডিও ব্লগে। সেটা হতে পারে রিসেন্ট কোন ইস্যু নিয়ে, পলিটিক্স নিয়ে, রেপ, করাপশন, স্বদেশ কে নিয়ে।
প্রশ্ন করতে পারেন, আপনার ভিডিও দেখে আসলেই কেউ আপনার প্রোডাক্ট কিনবে কিনা। আসলে ব্যাপার টা ঠিক সরাসরি আপনার পন্য বিক্রির জন্য নয়। আপনি যখন কন্টিনিউয়াস্লি ভিডিও ব্লগিং করবেন, মানুষ সেটা একবার দেখবে, দুইবার দেখবে, চেঞ্জ করবে, আবার দেখবে...এক সময় তারা নিজের অজান্তেই ইনভল্ভ হয়ে যাবে আপনার সাথে। এটাকে এডভার্টাইজিং এর ভাষায় বলা হয় ক্রাউডিং
ভিডিওর সুবিধা হচ্ছে, আপনাকে সবাই দেখতে পারছে। মানুষ নিজের সেন্স কে কিন্ত অবিশ্বাস করতে পারেনা। তারা আপনাকে দেখছে, আপনার বিজ্ঞাপন দেখছে, প্রোডাক্ট দেখছে, কথা শুঞ্ছে। সো আপনি যে জেনুইন, সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ তাহলে থাকছেনা। আমাদের দেশে চমক হাসান এবং সোলায়মান সুখন নামে দুইজন মানুষ চমৎকার ভিডিও ব্লগিং করেন। আসুন সুখন ভাইয়ের একটা ভিডিও দেখি ।
একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, আপনি ভিডিও ব্লগিং এবং ফেসবুক এ এক্টিভ থাকলে মানুষ প্রথমে কেয়ার করবেনা আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, বা কিসের এড দিচ্ছেন। বাট তারা
এটা শিওর থাকবে, ইউ আর আপ টু সাম্থিং। তারা অন্তত এইটা শিওর যে আপনি এনোনিমাস কেউ নন। আপনার একটা আইডেন্টিটি তৈরি হবে অনলাইনে। এখন যেটা করবেন তা হচ্ছে, ইউটিউবে আপনার ভিডিও ব্লগে এবং ফেসবুকে শেয়ার করবেন। যেহেতু এতদিন সবাই আপনাকে নিয়মিত দেখে এসেছে, তাদের কাছে অলরেডি আপনি পরিচিত। সো, তারা একবার হলেও ভিডিওটি দেখবে। জানার চেষ্টা করবে, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন। মোট কথা আপনার রেগুলার এক্টিভিট
তাদের এইটুকু সিকিউরিটি দিচ্ছে, যে আপনি ফ্রড কেউ না। আপনাকে অনলাইনে প্রতিদিন দেখা যায়, আপনার নাম ঠিকানা সবি ওপেন। তারমানে আপনাকে ট্রাস্ট করা যায়। এবং এতক্ষন যা বললাম, সবি হচ্ছে এই ট্রাস্টটুকু গেইন করার জন্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এডভার্টাইজিং এবং মার্কেটিং এর জন্য অনলাইনে এনোনিমাস থাকা যাবেনা একেবারেই। ব্লগিং ে ভিন্ন ব্যাপার, বাট যখন আপনি কমিউনিকেশনে যাবেন অডিয়েন্সের সাথে, তখন আপনার পরিচিতি সম্পর্কে তাদের সিকিউর করাটা জরুরি। মানুষ কখনই অপরিচিতদের কথা শুনতে চায়না, তাদের কাছ থেকে কিছু কিনতে চায়না।
ফেবুতে তো অনেক পেজ আছে। তাহলে আপনাকে সেই সব পেজ থেকে এগিয়ে থাকতে হলে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। চেষ্টা করুন অডিয়েন্স কে ফ্রি কিছু দেয়ার। আপনি যদি ডাক্তার হন, তাহলে ফ্রি কিছু স্বাস্থ্য টিপস দিন। আপনি সিনেমাখোর হলে আপডেট সিনেমার রিভিউ দিন। ডিজাইনার হলে কিছু ডিজাইন শিখিয়ে দিন। ফটোগ্রাফার কিভাবে ছবি
তুলতে হয়, সেই সম্পর্কে টিউটোরিয়াল দিতে পারেন। অর্থাৎ আপনি মানুষ কে আপনার সাথে এঙ্গেজ হবার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাদের এমন কিছু জিনিস অফার করছেন, যেটাতে আপনার টাকা খরচ হবেনা, কিন্ত অডিয়েন্স খুশি হবে। জাস্ট বি নাইস, পোলাইট। মেক এ রিলেশনশিপ উইথ দ্যা পিপল।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য যদি কোন পেজ বা গ্রুপ ওপেন করেন, তাহলে সব সময় চেষ্টা করবেন আপডেট রাখার। পারলে আপনার প্রোডাক্টের ছবি, তথ্য, লোগো, প্রেস এড, নিউজপেপারের স্ক্রীনশট ইত্যাদি ক্রমগত শেয়ার করতে থাকবেন।এতে করে আপনার কর্পোরেট আইডেন্টিটির সাথে সবার পরিচয় ঘবে। তাদের চোখ আপনার পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে। যেমন মনে করুন, রবির ফেসবুক পেজ। দেখবেন তারা সবসময় তাদের কর্পোরেট কালার লাল ইউজ করে সবযায়গাতেই। আবার বাংলালিঙ্ক ইউজ করে কমলা। আপনি একবার দেখলেও রিকগ্নাইজ করতে পারবেন এটা বাংলালিঙ্ক নাকি রবির এড। কাজেই চেষ্টা করবেন একই কালারের
এড, কমন লোগো ইউজ করার। এই সিম্পল রিসোর্স গুলা ইউজ করে কিন্ত আপনি একটা পাব্লিক রিলেশন তৈরি করছেন। আর পাব্লিক রিলেশন বা পি আর হচ্ছে ব্রান্ডিং এর আরেকটা গুরুত্বপূর্ন হাতিয়ার।
তবে ওড়না পেইজ বা একটা লাইক সমান একটা চুম্মা টাইপের বিরক্তিকর ব্যাপারগুলা থেকে দূরে থকার চেষ্টা করবেন।
চেষ্টা করুন শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের কাজে ফেসবুক, ইউটিউব এবং ব্লগ কে ইউজ না করে সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে ব্যাবহার করার। এক্টিভিজম শুরু করে দিন ফেসবুকে। বিভিন্ন ইস্যুতে ইভেন্টস ক্রিয়েট করে রাস্তায় নেমে আসুন। ভুলে যাবেন না, এই ফেসবুক দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে কোন কোন দেশে সরকার পতন হয়েছে। কাজেই সমাজের যেখানেই অসঙ্গতি দেখবেন, সেখানেই ভয়েস রেইস করুন। পরিবর্তন আসবেই, এবং সেটা আমাদের হাত দিয়েই। অনলাইন এক্টিভিস্টরাও কিন্ত চমৎকার একটা ব্রান্ড। সো হ্যাপি ব্রান্ডিং।
এতক্ষন কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
(পোস্ট উৎসর্গঃ নোমান , মেঘ রৌদ্দুর, রাকিব এবং আরিফ আদনান। এদের সাথে এডভার্টাইজিং নিয়ে আড্ডা খুব উপোভগ করি )
পর্ব ৬ - কমিউনিকেশনের ম্যাজিক
পর্ব ৬ - এরিস্টটলের আপেল
পর্ব ৫- কপিরাইটিং
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪