somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপ কিংবদন্তী: জার্ড মুলার

২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জার্ড মুলারকে আদর করে ডাকা হতো ”ডার বোম্বার” বা বোমারু নামে। একের পর এক গোলা বর্ষণে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করাতেই তার এই নামকরণ। তবে এই গোলা যুদ্ধের গোলা নয়, এই গোলা ফুটবলের, এই গোলা গোলের। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল করতে পারার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল এই মুলারের।

২০১১-১২ মৌসুমে লিওনেল মেসি ভেঙ্গে দেবার আগ পর্যন্ত এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬৭ গোলের রেকর্ডটি নিয়ে বিগত প্রায় ৪০ বছর আলোচিত হয়েছে মুলারের নাম। ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল কিংবদন্তী রোনালদো ভেঙ্গে দেবার আগ পর্যন্ত ৩২ বছর টিকে ছিল বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের মুলারের রেকর্ডটি। অবশ্য ২টি বিশ্বকাপের ১৩ ম্যাচে করা মুলারের এই ১৪ গোলের রেকর্ড ভাঙ্গতে রোনালদোকে খেলতে হয় ৩ টি বিশ্বকাপ আর ১৯ টি ম্যাচ। সর্বকালের সেরা আন্তর্জাতিক গোলদাতার তালিকায় অনেক কম ম্যাচ খেলেও মুলারের অবস্থান ১১ তম। ম্যাচ প্রতি গোলে মুলারের চেয়ে ভালো ’স্ট্রাইক রেট’ আছে মাত্র দু’জন খেলোয়াড়ের।

তবে মুলারের সবচেয়ে বৈশিষ্ট বোধহয় আরও অনেক বড় বড় খেলোয়াড় যেখানে রিতীমতো হিমশিম খেয়েছেন ক্লাব এবং জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে একটা ভারসাম্য রাখতে সেখানে তিনি গোল করায় কখনো বৈষম্য করেননি ক্লাব এবং জাতীয় দলের মধ্যে। বরং জাতীয় দলের হয়ে তার এই আক্রমণ ছিল আরও তীব্র। বুন্দেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচে ৩৬৫ গোল করা মুলার জাতীয় দলের হয়ে করেছেন মাত্র ৬২ ম্যাচে ৬৮ গোল।

তবে বোম্বার নিজের সেরাটা উপহার দেন ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে। মাত্র ৬ ম্যাচেই করে ফেলেন ১০ গোল, যার মধ্যে বুলগেরিয়া এবং পেরুর সাথে পর পর দুই ম্যাচে করেন দুটি দর্শনীয় হ্যাট্রিক। পুরো আসরেই প্রতাপের সাথে খেলা মুলারের পশ্চিম জার্মানি সেমিফাইনালে ইতালির সাথে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে। ম্যাচ অব দ্যা সেঞ্চুরির সেই খেলাতেও মুলার করেন ২ গোল। বিশ্বকাপ হাতছাড়া করলেও আসরে সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে ১০ গোল করা মুলার দেশে ফেরেণ সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট পুরস্কার নিয়ে।

দু’টি মাত্র বিশ্বকাপেই খেলেন মুলার। ১৯৭৪-এর পরের বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় মুলারের নিজ দেশ পশ্চিম জার্মানিতে। অধিনায়ক বেকেনবাওয়ার, গোল রক্ষক সেপ মায়ার. গুন্টার নেতশা, জার্ড মুলারদের নিয়ে গড়া টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট পশ্চিম জার্মানির প্রতি ছিল স্বাগতিক দর্শকদের প্রত্যাশার চাপও। বিপক্ষ দলগুলোও বুঝে যায় পশ্চিম জার্মানিকে হারাতে হলে আটকাতে হবে তাদের গোলমেশিন। এবার শুরু থেকেই মুলারকে আটকাতে উঠে পড়ে লাগে সবাই। বেশ খানিকটা সফলও হয় দলগুলো। গত আসরের ১০ গোল করা মুলার এবার গোল করেন সাকুল্যে ৪ টি। তা-ই সই।

তবে একজন মহানায়কের বিদায়কে মহান করে রাখার জন্যেই হয়তো ৪২ মিনিট পর্যন্ত ১-১ গোলে সমতার ফাইনাল ম্যাচটি অপেক্ষা করছিলো মুলারের গোলের জন্য। মুলারের ম্যাচ নির্ধারণী গোলেই আসরের একমাত্র পরাজয়ের স্বাদ পায় পুরো আসরে অপরাজিত নেদারল্যন্ডস। ফাইনালের পথে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলকে হারিয়ে আসা ইয়োহান ক্রুইফের টোটাল ফুটবলের নেদারল্যন্ডস শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় মুলারের গোলেই। ৩ টি বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল জুলে রিমে ট্রফিটি নিজেদের করে নেবার পর নতুন করে নকশা করা বর্তমানের এই ট্রফিটি প্রথম শোভা পায় মুলারদের হাতেই।

গত বার বিশ্বকাপ হাত ছাড়া করে গোল্ডেন বুট নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন মুলার। এবার তাই বোধহয় গোল্ডেন বুট ছেড়ে বেছে নিলেন বিশ্বকাপটিই। বিশ্বকাপের ১৪ গোল হয়তো পেছনে পরে গেছে, তবে যতদিন বিশ্বকাপ ফুটবল থাকবে, বিশ্বকাপে গোল থাকবে থাকবেন গেরহার্ড ”জার্ড” মুলার।

প্রথম আলো অনলাইনে মাঝে মাঝে আমার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। সেই ভালোলাগা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কখনও কখনও ব্লগেও তা শেয়ার করি। কিন্তু এখানেই ঘটে বিপত্তী। অনেকেই সঙ্গত কারণেই বিভ্রান্ত হন, 'পুরোটাই কপি করার দায়ে' তেড়ে আসেন। বিভ্রান্ত হবেন না, এটি তেমনই একটি প্রয়াস।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১:২৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান কি তবে কাগুজে বাঘ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৭


সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস-হিজবুল্লাহ ত্রিমুখী যুদ্ধে প্রচুর লোক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।২০২২ সালে ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস ইসরায়েলের উপর হামলা করলে এই যুদ্ধ শুরু হয়।এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ফিলিস্তিনের প্রায় ৫০... ...বাকিটুকু পড়ুন

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×