জানটু পাখি-
এখন রাত ৯।৩০ । তোর দেওয়া খাবার কিছুক্ষন আগে খেলাম। আবার বলছি, তোর রান্নার হাত আসলেই চমৎকার। আচ্ছা , তুই কি করে জানলি যে, আমি আজও না খেয়ে আছি?
তোর মেসেজ টা দেখলাম। তুই জানতে চেয়েছিস যে- পেন কেন দিয়েছি?
সত্তি বলছি, কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। ছিল শুধু অন্তর থেকে শুভকামনা আর তোর একচিলতে হাসিমাখা মুখ খানি দেখে প্রশান্তি পাবার এক উদগ্র বাসনা।
তাহলে তোকে বলি যা আর কেউ জানেনি আজ পর্যন্ত, অবশ্য জানার মত এটি তেমন কথাও নয়-
আমার এই জীবন চলার পথে গিফ্ট জিনিষটা আমি খুব কমই পেয়েছি।
আর তাই হয়তোবা গিফ্ট জিনিষটা পাবার জন্য সব সময়ই একটা আকুলি কাজ করতো মনের মাঝে। যাও কিছু পেয়েছি, বেশিরভাগই পেয়েছি জোড় করে। জোড় করে গিফ্ট!!! কোন জিনিষ খুব ভালো লাগলে নির্লজ্জের মত শুধু গিয়ে বলেছি- তোর এটাতো খুব সুন্দর! আমাকে গিফ্ট করনা। বার বার বলেছি আর জ্বালাতন করেছি সবাইকে। বিরক্ত হয়েছে, ছ্যাচরা ভেবেছে, বলেছে তোর কি কোনো লজ্জা নেই? শেষে কোনো এক সময় দিয়ে দিয়েছে। আমি পরম আগ্রহ নিয়ে তা নিতাম আর মনে মনে ভাবতাম যে অমুক আমাকে কিছু একটি গিফ্ট করেছে। হ্যা, মিথ্যা হলেও ভাবতাম আর মনে এক অসাধারন পুলক অনুভব করতাম। কি ছেলেমানুষি, তাইনা? কি জানিস, এই সব ছেলেমানুষি করতে আমার ভালই লাগে!!!!
অনেক অনেক অনেক দিন পর আমি একটা গিফ্ট পেয়েছি। কতদিন পর তা মনে করতে বা হিসেব করতে মন চাচ্ছেনা। শুধু যা করতে মন চাচ্ছে তা হোল অসীম আনন্দে মনকে প্লাবিত করতে। একটি সত্যিকারের গিফ্ট, না চাইতেই গিফ্ট, অন্তর থেকে গিফ্ট!! একটা পেন।
পেনটি আমার অসম্ভব প্রিয়। আর আমি জানি প্রিয় জিনিষ কাছে থাকলে কেমন লাগে আর হাত ছারা হলেই বা কেমন লাগে। তোর মনে পড়ে, তোর কাছ থেকে তোর একটি গিফটেড পেন আমি জোড় করে গিফ্ট নিয়েছিলাম? হ্যা, তোকে আমি একটি পেন গিফ্ট করেছি। না আমার পকেটের যে অবস্থা তাতে পেনটি কিনে গিফ্ট করার সাধ্য আমার নেই। হাহ্, টাকার অভাবে যে তিন দিনে দু বেলা খাবার খায় , তার জন্য এটি বিলাসিতাই বটে, কি বলিস। ঠিক ধরেছিস, এটিই সেই পেন। প্রিয়জনকে, আন্তরিক শুভাকাঙ্খীকে প্রিয় জিনিষটি দেওয়া আমার রীতি। নিরানন্দ এবং একলা এই চলার পথের বাঁকে বাঁকে আমি যেসব আনন্দ খুঁজে বেরাই, এটি তার মধ্যে অন্যতম। যদিও এমন সুযোগ জীবনে খুব কমই এসেছে।
তোদের জন্মদিনের পার্টিতে তোরা আমাকে যখন দাওয়াত করতি, খুব ভালো লাগতো। আমি যেতাম খালি হাতে, খেতাম সবচেয়ে বেশী। হয়তো তোরা বিরক্ত হতি, হ্য়তোবা না। আমি কিন্তু খুব উপভোগ করতাম। না করলে এত সুন্দর খাবারগুলো মিস্ হয়ে যাবেযে!!!!!!
যে একটা আস্ত ক্যালাস টাইপের ছেলে, আস্ত বদরাগী, যে বোঝেনা পাবলিক ম্যানার, যখন তখন যার তার গায়ে হাত তোলে, মাসের খরচ আর ধারের টাকা শোধ করতে যে রিকসা চালাতে কুন্ঠিত বোধ করেনা তাকে যে তোরা দাওয়াত দিতি , এটাই আমার কাছে আশ্চর্য্য বিষয়।
তোর প্রশ্নের উত্তরটা দেবার আগে তোকে একটা প্রশ্ন করি, ঠিকাছে?
তুই আমাকে খাবার দিলি কেন?
করুনা? সকালবেলা যে ছেলেটি তোর দেওয়া খাবারের ৫-৬ ভাগের এক ভাগ পরিমান ভাত খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দেয় পরবর্তী সকালের অপেক্ষায় , তাঁর প্রতি করুনা? সারা জীবন যা কিছুকে ভয় করে এসেছি তার মধ্যে করুনা আর বিরক্তি ভাব অন্যতম।
না, আমার বিশ্বাস, এটি করুনা ছিলনা। এটি ছিল মমতা, নির্ভেজাল মমতা যাকে কোন ভাবে সঙ্গায়িত করা যায়না। আর এই বিশ্বাসটুকুকে পুঁজি করেই খাবারটা খেলাম। না হলে তা আমার গলা দিয়ে নামতোনা। আমি খাদক হতে পারি, কবে খাওয়াবি বলে বলে বিরক্ত করতে পারি, হতে পারি তোদের ভাষায় লজ্জাহীন যে কিনা সবার সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে , এত খারাপ যে নিজের বোন তার সাথে কথা বলেনা কিন্তু তার পরেও , মানুষের পেটে জন্মছি যখন, কিছুটা বৈশিষ্ট বোধ হয় আছে। কি বলিস? যদিও বেশীরভাগ সময় শুনে এসেছি জানোয়ার হিসাবেই আমি বেশী মানানসই। আমি করুনার কাঙাল নারে। আমি মমতার কাঙাল। চলার পথের প্রতি বাঁকে খুঁজে বেড়াই এই মমতা। একটুখানি মমতা।
আশা করি তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিস।
বোহেমিয়ান এই চলার পথে বুদ্ধি হবার পর থেকেই অনুভব করেছি আমার জীবনটা একটা হালবিহীন নৌকা । নদীতে যে ভেসে বেড়ায় এলোমেলো ভাবে, স্রোত না থাকলে যার গতি যায় থেমে। সব সময় অনুভব করেছি একজন বন্ধুর , একজন প্রকৃত বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা। যার কাছে নিঃসঙ্কোচে বলতে পারবো মনের সব কথা, যাবতীয় কিছু। আমার খুশির সংবাদে যে আনন্দে লাফিয়ে উঠবে, আমি যাকে জড়িয়ে ধরব, কাঁদব। যে আমাকে সবসময় বলবে সামনে তাকাতে, ভুল গুলিকে পেছনে ফেলে আসতে, সাহায্য করবে নির্মল আনন্দে জীবনটাকে ভরিয়ে তুলতে। ছুটির দিনে বলবে চল একসাথে বেড়াই। যার হাসি মাখা আর প্রানোচ্ছল মুখ দেখে ভরে যাবে মন, ভুল করলে ধরিয়ে দেবে , না শোধরালে ধরে কান মচলে দেবে , আরো কত কি! যার কাছে সব বলা যায়, এমনকি যা বাবা-মা কেও বলা যায়না। একই ভাবে আমিও হব তার একই রকম বন্ধু। হাসি কান্না আর আনন্দে কেটে যাবে দিন। যেখানে থাকবেনা কোনো কলুষতা, গোপনীয়তা। থাকবে শুধুই নির্মলতা আর প্রকৃতির মত সরলতা।
জানি এসব অসম্ভব কল্পনা। বর্তমানে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ইচ্ছা মানুষের নেই। আছে শুধু ভোগ করার ইচ্ছা, টাইম পাস করার মানষিকতা, অপরকে মাড়িয়ে সামনে যাওয়ার প্রবনতা। এখন মানুষ বন্ধুত্ব করে স্বার্থের জন্য।
কিন্তু এই কল্পনাই আমাকে সজীব রাখে।
আমি জানি আমার মত ক্যালাস টাইপ ছেলের এত ভালো বন্ধু পাবার কোনো যোগ্যতা নেই। কিন্তু আমি অনুভব করি জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা। আর তাই যখন মনে হয় কারো কোন সমস্যা অথবা ক্রমাগত অতলে ডুবে যাওয়া রত কেউ, তখন চুপ থাকতে পারিনা। অযাচিত ভাবে এগিয়ে যাই আর তার বিরক্তির কারন হই।
আমি তোকে খুব বেশী জ্বালাই, বুঝতে পারি। যখন আমার খুব মন খারাপ থাকে, যখন পড়ায় মন বসেনা , জীবনের প্রতি চরম হতাশা জন্মে তখন আমি অনুভব করি একজনের প্রচন্ড অভাব। তখন নিজেই নিজের ফোনে একটি মেসেজ পাঠাই। মিথ্যা ভাবি যে আমার বন্ধু আমার পাশেই আছে। আনন্দে ভরে ওঠে মন।
একই কারনে তোকেও মেসেজ পাঠাই। শুধু তোকেই না, একই সাথে আমাকেও। তোকে বলি ভালো করে পর। আমাকেও।
বার বার খেয়ে নিতে বলি , কারন আমি জানি না খেয়ে থাকাটা কতটা ক্ষতিকর। পদে পদে টের পাই এর প্রভাব। তারাতারি ঘুমাতে বলি, ভোরে ঘুম থেকে উঠতে বলি কারন আমার বন্ধুটি থাকলে আমাকেও তাই বলতো।
বুঝিনি সবার প্রয়োজন এক হয়না। আরও বুঝিনি সবাই আমার মত মমতার কাঙালও না। বুঝতে চাইনি মানুষের প্রয়োজনের ভিন্নতা। চাহিদার রকম-ফের, বিরক্তির সীমা। আর তাই হয়ত উপকার করার অভিপ্রায়ে অপকার আর বিরক্তি উৎপাদন করেছি বেশী।
]কি বোকা আমি।!!!! আচ্ছা, মানুষের মনটা যখন প্রচন্ড খারাপ থাকে তখন বোকামিটা ও প্রচন্ড বাড়ে , তাইনা?
নাকি এটি শুধু আমার ক্ষেত্রেই হয়? বলতে পারিস?
ভালো থাকিস।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




