ঢাকা শহরে শেষ কবে নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে আমি ঠিক জানিনা, কিন্তু সময়ের সাথে কিছু মন্দির আর কিছু অমুসলিম পরিবারের ভিটেমাটি খেয়ে ফেলা হয়েছে বিসমিল্লা বলে সেটা মোটামুটি ধরে নেয়া যায়। এই ধরণের আকাম যেই কুতুবেরা করেন, তাদের যদি কিঞ্চিত ধারণাও থাকত, সংখ্যালঘুর ওপর অন্যায় সুবিধা নিয়ে জাহান্নামে কি বিরাট প্যালেস তৈরি হচ্ছে, তাহলে আমাদের দেশ সর্বধর্মের জন্যই আরো আরামের থাকত। সম্রাট আলমগীরের সময়ে তার কোন এক সেনাপতি নারায়ে তকবীর দিয়ে পাঞ্জাবের কোন এক গ্রামের প্রাচীন মন্দির ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে দিব্যি আজান দিয়ে মসজিদ তুলে কেল্লা ফতে করে ফেলল। সেই মন্দিরের পুরোহিত, বহু খড়কাঠ পুড়িয়ে দিল্লী এলেন বিচার চাইতে, এবং এক সুযোগে রাজদরবারে পৌছে নিজের অভিযোগও উপস্থাপন করলেন। ন্যায়পরায়ণ সুশাসক সম্রাট তদন্ত করে দেখলেন অভিযোগ সঠিক। তাই খোঁজ করলেন এই অবস্থায় কি করা যায়। এই সম্পর্কিত মাসায়ালায় পাওয়া গেল, কোন স্থান মসজিদ হিসেবে ব্যাবহৃত হলে সেখানে ভিন্ন প্রয়োজনে ব্যাবহার নিষিদ্ধ। তাই সেই পুরোহিতকে ডেকে নিজে ক্ষমা চেয়ে নিজের অক্ষমতার কথা জানালেন পূর্বস্থানে মন্দির পুনর্নির্মাণের। তবে এই সুযোগ দিলেন, যে পুরো মোঘল সম্রাজ্যের যেকোন স্থানে সে চাইলে মন্দির নির্মান করতে পারবে। সেই পুরোহিত তখন চাইল দিল্লীর মুসলিম ক্ষমতা আর শৌর্যের কেন্দ্র দিল্লী জুমা মসজিদের সিড়ির কাছেই যায়গা দেখিয়ে জানালো এখানেই চাই তার মন্দির। পরবর্তীতে সেখানেই নির্মাণ হয় সরকারী খরচে মন্দির। আমি নিজেও দিল্লী গিয়ে মনে হয় দেখেছিলাম সেই মন্দির। আজকে ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি যারা করে, তাদের ধমকানোর মত আল্লাহওয়ালাদের আর দেখিনা। হযরত ওমর (রাঃ) যখন গেলেন জেরুজালেমে সেখানকার অধিবাসীদের সাথে চুক্তির জন্য, সেই অধিবেশন ডাকা হয়েছিল সিনাগগ ( অথবা গীর্জা ঠিক মনে নেই) এর ভেতরে। আলোচনা চলাকালীণ নামাজের সময় হলে তিনি এই কারণে সেখানে নামাজ আদায় করেন নাই, যে পরবর্তীতে মুসলিমরা সেটার অন্যায্য সুবিধা নিয়ে সেই স্থান দখল করে নেবার চেষ্টা করতে পারে। আর একই সাথে আল্লাহর রাসুল (সঃ) মদীনার মসজিদে খ্রীস্টান প্রতিনিধিদের মসজিদের ভেতরেই তাদের উপাসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন বলে পড়েছিলাম কোথাও।
ঢাকার দেড়কোটি জনসংখ্যার মাঝে লাখ দশ পনের তো হিন্দু ধর্মাবলম্বী হবারই কথা, প্রতি বছরেই যেমন এক দুই ডজন নতুন মসজিদ গজিয়ে ওঠে নানা হাউজিং, প্রোজেক্ট আর কলোনিতে, একই সাথে বছরে তো এক আধটা মন্দিরও হবার কথা। কই কখনো তো শুনিনি সেই কথা। নিজে অনাহারী থেকে অমুসলিম কয়েদীদের খাদ্যের ব্যাবস্থা করা ছিল সেই সময়ের মুসলিমদের ক্যালিবার, আর নারাবাজী করে অসহায় মানুষের ওপর যুলম হল আজকের জমানার। তবে যেসব যালিমদের এসব সুকীর্তি, তারা যে নিজ স্বজাতির ওপরেও খুব সদয় তা নয়। নেকড়ের তো মেষবালকের রক্ত চোষার জন্য ছুতো লাগবেই।
বাবা আদমের দুনিয়ার ক্র্যাশ ল্যান্ডিং এর পরের বেশিরভাগ সময়েই কাটিয়েছেন এই ভারতে, আর নবীদের এক অংশ তাদের কর্মক্ষেত্র হিসেবে পেয়েছিলেন ভারতকে। কিছু গবেষকের মতেই প্রাচীন বেদের ভিত্তি ছিল নূহ নবীর ওপর পাঠানো সহীফার ওপরে। পরবর্তীতে কালে কালান্তরে গঞ্জিকার ধোঁয়ার সাথে বহু কূপমন্ডুকতা ঢুকে এখন কল্পনা, প্রতিমাপূজা আর বাগাড়ম্বরের এক আশ্চর্য মিশ্রণ আজকের হিন্দুধর্ম যার একনিষ্ঠ অনুসারী আমি লম্বা সময় ভারতে কাটিয়েও খুব বেশী পাইনি। তার পরেও প্রতিটি মানুষেরই এই পৃথিবীর জীবনে অধিকার আছে তার পরিচয় আর বিশ্বাসকে বেছে নেবার। আসল খেলা ফাইনাল চোখ বন্ধ হবার পরে।
রমজান রহমতের মাস, হকদারের হক বুঝিয়ে দেবার মাস আর আত্মশুদ্ধির মাস। তাই রমজানের আমেজে বলা যায় ঢাকার জনসংখ্যার হিসেবে মন্দিরগুলি কোথায় হওয়া উচিৎ একটু খোঁজ নেয়া যাক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:০৮