somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুদন্ড পর্ব ২: পদ্ধতি সমূহ এবং কিছু ঐতিহাসিক ভুল ধারনা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যুদন্ড: কি; কেন; কিভাবে; খরচাপাতি; কাদের স্বার্থে (প্রথম পর্ব) পর্বটি এখানে পাবেন। ধন্যবাদ।

মৃত্যুদন্ডের সবচেয়ে প্রচলিত ৭টি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে। ঘন হয়ে বসুন।

অলরাইট। মৃত্যদন্ডের রায় তো হয়ে গেল এবার কার্যকর করার পালা। রায়ের সাথে কখনো কখনো বলে দেয়া হয় কিভাবে কাজটা করতে হবে। যদি না বলে তাহলেই ঝামেলা। উপায়তো ৭টা! কোনটা রেখে কোনটা বাছি?

যাই হোক চিন্তার কারন নেই। সবদেশে সব সিস্টেম এর ব্যবস্থাও নেই। আরব দেশে যান, কল্লাটা হাতে নিয়ে ঘাড়ের রক্ত মুছতে মুছতে চলে আসুন। অথবা পাথরে পাথরে জর্জরিত হোন। ইউরোপ বা এ্যামেরিকায় যান। এসপ্রেসো না এ্যামেরিকানো? এভাবেই অপশন দেবে তবে জানতে চাইবে অন্যকিছু, ফাঁসি না গ্যাস? না কি ইলেকট্রিক চেয়ার? ও ইনজেকশন! আচ্ছা ফায়ারিং স্কোয়াড টা ট্রাই করবে নাকি?

তো সাতটার নাম কিন্তু আপনার মোটামুটি জানা হয়ে গেল। আসুন আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেই। কোনটা কিভাবে কাজ করে।

শিরশ্ছেদ: এটা নিয়ে যতবার ভাবতে বসি ততবার আমার নিজেরই শিরঃপীড়া শুরু হয়। বারবার ভাবি আহ্‌ বর্বর আরবদের এই নিয়মটা যদি বদলানো যেত! আর ঠিক তখনি মনে পড়ে যে আরে এটাতো আরবদের আবিস্কার না বরং আরব আবিস্কারের হাজার বছর আগে থেকেই এটার চর্চা হয়ে আসছে। গ্রীক, রোমান কোন সভ্যতাই বাদ ছিল না। খালি দোষ আরবের, যেন ওদের দোষের কমতি পড়েছে!



এটা খুবই সিম্পল একটা দন্ড। হাটু গেড়ে চোখ ঢাকা অপরাধী বসবে এবং তার অজান্তেই নেমে আসবে জল্লাদের তরবারি। মুন্ডুটা লুটোপুটি খাবে। ঘাতক কুড়াল বা তলোয়ারটা মুছে হাঁটা দিবে। মেডিক্যাল টিম কাটা মাথাটা নিয়ে শরীরের সাথে সেলাই করে দেবে অন দ্য স্পট। তারপর প্লাসটিক ব্যাগে মুড়ে লাশটিকে সৎকারের জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এটার প্রয়োগ এখন শুধু সৌদী আর ইরানে আছে। কাতার, ইয়েমেনে নিয়মটা আছে কিন্ত প্রয়োগ নেই। একটা traditional Arabic তলোয়ার যেটা দিয়ে শিরশ্ছেদ করা হয় সেটা দৈর্ঘে প্রায় ৪৫ ইঞ্চি।



বৃটেন, সুইডেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, চীন সবাই এর চর্চা করেছে কিছুকাল আগ পর্যন্তও। তবে এটার একটা পোষাকী নাম দিয়েছিল এরা অনেকেই। গিলোটিন। নিজে সরাসরি ছুরি চাকু ব্যবহার না করে একটা মেশিন তৈরী করেছিল। আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ডে এর যথেস্ট ব্যবহারও হয়েছে ১৪ শতকের দিকে। ছবিটা দেখুন।
গিলোটিন



পাথর ছুড়ে হত্যা: আপনি কি জানতেন যে পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্মই পাথর ছুড়ে হত্যাকে অনুমোদন করেছে? এটা শুধু ইসলামের একক সম্পত্তি বা আবিস্কার না।

ইহুদী, খ্রীস্টান এবং মুসলমানদের ধর্মে উল্লেখ করা কিছু সুনির্দিস্ট অপরাধের জন্যেই পাথর ছুড়ে হত্যা করা যায়। উদাহরন স্বরূপ, ব্যাভিচার, ধর্ষন ইত্যাদি। বেশ কিছু দেশে এর প্রচলন আছে এখনো যেমন, সৌদি, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, সুদান, মালি ইত্যাদি। ইজরেইল এ যদি ধর্ম ভিত্তিক রাস্ট্র ও শাসন ব্যবস্থা চালু হয় কখনো যা জায়োনিস্টরা চাইছে তাহলে সেখানে পাথর ছুড়ে হত্যা ব্যবস্থও যে চালু হবে তা বেশ বলেই দেয়া যায়।

যেভাবে দন্ডিত হয়:
অপরাধী পুরুষ হলে কোমর সমান আর মহিলা হলে কাঁধ পর্যন্ত মাটিতে গর্ত করে পুতে রাখা হয়। তারপর কিছু সেচ্ছাসেবক, যে কেউ হতে পারে, মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে পাথর ছুড়তে থাকে। পাথরের আকার মোটামুটি বড় হতে হবে যাতে এর আঘাতে শরীরে যন্ত্রনা ও ক্ষতের সৃস্টি হয়। আবার এত বড়ও হবে না যে এক আঘাতেই মৃত্যু হয়ে যায়। ১০-২০ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুমুখে পতিত হয় অপরাধী।



একটা মুভি দেখতে পারেন যদি চান। মুভিটা সুন্দর।



বিষাক্ত ইনজেকশন: বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগে মৃত্যুর ধারনা প্রথম আলোচনায় আসে ১৮৮৮ সালে। নিউইয়র্কে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার এই ইনজেকশন ব্যবহার করেছিলো দুর্বল, অসুস্থ, বয়স্ক এবং disabled দের হত্যার জন্যে। গ্যাস চেম্বার এবং ফায়ারিং স্কোয়াডের পাশাপাশি।

ইনজেকশনটা কি: এটা তিনটা ঔষধের একটা Combination. প্রথমটা, সোডিয়াম থিওপেন্টাল বা সোডিয়াম পেন্টোথ্যাল। এই ড্রাগটা অচেতন করতে পুশ করা হয়। দ্বিতীয়টা, প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড। এটা মাস্‌ল কে রিল্যাক্স করতে ব্যবহার করা হয়। এই ইনজেকশনটা ডায়াফ্রাম এবং ফুসফুসকে অবশ করে দেয়। তৃ্তীয়টা হল পটাসিয়াম ক্লোরাইড। এর কাজ হচ্ছে হার্ট এর স্বাভাবিক কাজ আটকে দেয়া।

অপরাধীকে একটি বিশেষ রুমে নিয়ে বিশেষভাবে তৈরী করা একটা চেয়ারে বসিয়ে তার হাত এবং পা চেয়ারের সাথে লাগানো স্ট্র্যাপ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। তারপর প্রথমে ৫ গ্রাম সোডিয়াম থিওপেন্টাল দিয়ে ২০ সিসি পরিমানের একটা সল্যুউশন তৈরী করে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। তারপর ৫০ সিসি প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড এবং শেষে ৫০ সিসি পটাসিয়াম ক্লোরাইড প্রবেশ করানো হয়।



অচেতন অপরাধীর ফুসফুস আর ডায়াফ্রাম অবশ হয়ে যায় এবং হার্ট এর স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করে দিয়ে মৃত্যু ঘটায়।

ইলেকট্রিক চেয়ার: ১৮৮৮ সালে নিউইয়র্ক প্রথম ঠিক করে যে ইনজেকশন না বরং ইলেকট্রিক চেয়ারই ব্যবহার করা হবে মৃত্যুদন্ড দিতে। ১৮৯০ এ মাইকেল কেমলার হয় এর প্রথম শিকার।

কাঠের চেয়ার ব্যবহৃত হয় এতে। রাবারের একটা Base বানিয়ে চেয়ারটা রাখা হয় তার উপর। চেয়ারের পা গুলো কংক্রীটের মেঝেতে আটকানো থাকে। অপরাধীকে চেয়ারে বসিয়ে তার বুক, কোমর, হাত, বাহু স্ট্র্যাপ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। ডান পায়ের গোছা শেভ করে সেখানে একটা ইলেকট্রোড সংযুক্ত করে রাখা হয় চেইন দিয়ে। একটা বিশেষ ভাবে তৈরী হেলমেটও পড়ানো হয়। হেলমেটের ভিতর দিয়ে ইলেকট্রিসিটি পাস করার জন্যে বিশেষ ইলেকট্রোড চুল শেভ করে মাথার সাথে লাগানো থাকে। মাথার চাঁদিতে ভেজা একটা স্পন্জ রেখে দেয়া হয় যাতে বিদ্যুৎ প্রবাহ সরাসরি ব্রেইনে যায়।



ভেজা স্পন্জ না দিলে কি হয় সেটা জানার জন্যে The Green Mile মুভিটা দেখতে পারেন। মুভিটা আপনাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

অপরাধী কে চেয়ারে স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকানোর পর তিনটা ধাপে এই বিদ্যুত প্রবাহিত করা হয়। প্রথম ধাপে ২,৩০০ ভোল্টের ইলেকট্রিসিটি চালানো হয় ৮ সেকেন্ড। এর পরপরই শুরু হয় ১,০০০ ভোল্টের ইলেকট্রিসিটি ২২ সেকেন্ডের জন্যে। তৃতীয় এবং শেষ পর্যায়ে আবারো ২,৩০০ ভোল্টের বিদ্যুত ৮ সেকেন্ডের জন্যে। পুরো প্রসেস টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

এই ৩৮ সেকেন্ড পরও যদি অপরাধীর মৃত্যু না হয় তবে পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকে আবার ফলো করা হয়।

বিষাক্ত গ্যাস: হিটলারের গ্যাস চেম্বারের কথা কে না শুনেছে! শত শত নিরপরাধ মানুষের প্রান গিয়েছে এতে। এটা অনেকটা কেমিস্ট্রির ল্যাব এর মত। এর সাথে ও মিশবে এবং মেশার কারনে বিক্রিয়া হয়ে একটা নতুন কিছু উৎপাদিত হবে যা ব্যবহার করে হত্যা করা যাবে।

তো এই চেম্বারটা একটা এয়ার টাইট স্টীল এর রুম এর মত। ছবি দেখুন।



চেয়ারটাতে অনেকগুলো স্ট্র্যাপ লাগানো থাকে যা দিয়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে বুকে, বারুতে, কোমরে এবং পায়ে বেঁধে রাখা হয়। চেয়ারের নীচে একটা ধাতব পাত্রে সায়ানাইড ক্যাপসুল রাখা থাকে। এই পাত্রটির নীচেই থাকে একটি ক্যানিস্টার বা Jar যার মধ্যে থাকে সালফিউরিক অ্যাসিড। নির্দেশ আসা মাত্র সুইচ টিপে সায়ানাইড রাখা পাত্রটির নিচের অংশটি খুলে দেয়া মাত্র ক্যাপসুল গুলো সালফিউরিক অ্যাসিডের দ্রবনে গিয়ে পড়ে এবং বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণঘাতী গ্যাসের নিঃসরন ঘটায়। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়ে ভিকটিম। ভেতরে প্রচন্ড জ্বলুনি সৃস্টি হয়, অপ্রতিরোধ্য খিঁচুনি উঠে, নাকে মুখে ফেনা উঠে যায়, দম বন্ধ হয়ে আসে। অসহ্য যন্ত্রনার ভেতরেই কাঁপতে কাঁপতে মৃত্যুমুখে পতিত হয় ৬-১৮ মিনিটের মধ্যে।

মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর সেই চেম্বারে অ্যামোনিয়া গ্যাস স্প্রে করা হয় বিষ নিস্ক্রিয় করার জন্যে। Exhaust ফ্যান দিয়ে টেনে বিষাক্ত ধোঁয়া ভরা বাতাস একটা শোধনযন্ত্রে পাঠানো হয় যেখানে পানি দিয়ে বাতাস থেকে বিষাক্ততা ধুয়ে পরিস্কার করা হয়। প্রায় ৩০ মিনিটব্যাপী এই প্রক্রিয়া শেষে চেম্বার এবং চেম্বারের বাতাস বিষ নিরপেক্ষ হিসেবে সার্টিফাইড হয়।

ফাঁসি: ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু সম্ভবত সবচেয়ে কমন পদ্ধতি মৃত্যুদন্ডের। সারা বিশ্বে এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে একটা সময়ে। এর 'জনপ্রিয়তা' কমে আসছে ধীরে ধীরে এবং এর কারন আলোচনা করব কিছুক্ষনের মধ্যেই। সাথে থাকুন।

ফাঁসির তারিখ নির্ধারন হবার পর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।

আসামির ওজন নেয়া হয়। লম্বা কতখানি সেটা ও দেখে নেয়া হয়। ফাইল দেখে কোন বিশেষ সমস্যা যেমন পংগুত্ব বা অন্যকিছু থাকলে সেটাও টুকে নেয় নোটবুকে। ফাঁসিকাস্ঠের নাট বোল্টস, কাঠের পাটাতন যেটা খুলে দিলে আসামি নীচে ঝুলে পড়বে এগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয়। যে দড়িটা ব্যবহার করা হবে সেটা 'ম্যানিলা রোওপ' নামে পরিচিত। ৩/৪"-১.৪" ঘের আর প্রায় ৩০ ফুট লম্বা এই দড়িটা ভিজিয়ে রেখে টেনে বারবার পরীক্ষা হয় যাতে যাতে এর ইলাস্টিসিটি শুন্যের কোঠায় চলে আসে। স্প্রিং এর মত জাম্প যাতে না করে ঝোলানোর পর। ফাঁসটাতে সাবান, তেল বা মোম দিয়ে মাখহানো হয় যাতে গেরো টা সহজে মুভ করতে পারে। এই বিষয়গুলো খুব ভালভাবে নজরে না থাকলে পরিকল্পনায় ঘাটতি থেকে যাবে। অনেক অঘটন ঘটতে পারে এতে করে। গলা ছিড়ে পড়তে পারে, বা দড়িতে আটকে ঝুলতে থাকতে পারে শরীর-সেটা এক বীভৎস দৃশ্য হবে। মাপ জোক এবং পরিকল্পনা যদি ঠিকঠাকমত হয় তাহলে তাৎক্ষনিক মৃত্যু নিশ্চিত হবে এবং যন্ত্রনা ও হবে কম।



যথাসময়ে ফাঁসিতে ঝুলানোর দিন আসামিকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে হাত পা বেঁধে পাটাতনের উপর দাঁড় করিয়ে তার শেষ ইচ্ছে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তারপর কালো বা সাদা কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয় মুখ গলা পর্যন্ত। দড়ির ফাঁসটা গলার সাথে লাগিয়ে টাইট করে দেয় জল্লাদ।

তারপর শুধু অপেক্ষা। ইশারা করা মাত্র পাটাতনটি খুলে দু ভাগ হয়ে যায়। দড়ি নিয়ে নিম্নমূখী যাত্রা শুরু হয় জলজ্যান্ত মানুষটার। ঘাড় মটকে গিয়ে মৃত্যুবরন করে। অথবা হঠাৎ দম বন্দ্ধ হয়ে মারা যায় তাতক্ষণিক।

ফায়ারিং স্কোয়াড: ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুবরন করাকে সম্মানজনক মৃত্যুদন্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যু বা হত্যার ঘটনা শুধু আর্মড্‌ ফোর্সেস মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। বিভিন্ন দেশে এভাবে মৃত্যুদন্ড দেয়ার প্রচলন আছে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এর প্রচলন বেড়ে যায়। কারন এতে সময় নস্ট হয় কম এবং ঝটপট কাজ শেষ।



প্রতি একজন অপরাধীর জন্যে তিন ছয় জন শ্যুটার নিয়ে গঠিত হয় একটা ফায়ারিং স্কোয়াড। অপরাধী ব্যক্তিটিকে হয় একটা চেয়ারে স্ট্র্যাপ দিয়ে বুক, বাহু, কোমর এবং পা বেঁধে রাখা হয় অথবা একটা কাঠের Pole এর সাথে বেঁধে রাখা হয়। এটার পেছনে বালির বস্তা দিয়ে একটা দেয়াল তৈরী করা থাকে। আসামির চেয়ার থেকে সামনে প্রায় ২০ ফুট দুরত্বে স্থায়ীভাবে তৈরী একটা দেয়ালের পেছনে থাকে শ্যুটাররা। দেয়ালে ছোট ছোট খোলা জানালা মত থাকে রাইফেল রাখার জন্যে।

শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়ার পর মুখ ঢেকে দেয়া হয় কালো কাপড় দিয়ে। বাম বুকের উপর হার্ট লক্ষ করে একটা টার্গেট এরিয়া আঁকা কাপড় সেটে দেয়া হয়। যেহেতু টার্গেট হিসেবে বুকটা তুলনামূলকভাবে সহজ একটা এরিয়া মাথার চাইতে তাই
সাধারনত বুক লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। ঠিকমত গুলি লাগলে হার্ট, ফুসফুস ছিন্নভিন্ন হয়ে মারা যায় মানুষটা। অবশ্য কখনো এমনও হয় যে গুলি লাগলো কিন্তু সাথে সাথে মৃত্যু হল না, তখন পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হয়, খুব কাছ থেকে।

ফায়ারিং স্কোয়াডের এক কদর্য রূপ। চীনের মানবাধিকার লংঘনের একটি ছবি।



শেষ কথা: মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সময় কর্তৃপক্ষ সবসময় দুটো বিষয়ের উপর কড়া নজর রাখে। এক, যত কম যন্ত্রনা দিয়ে দন্ডটি কার্যকর করা যায়। দুই, যত দ্রুত কার্যসিদ্ধি হয়। যন্ত্রনাটা শুধু যে অপরাধীরই হয় তা কিন্তু না। ভেবে দেখুন, একটা লোকের খিঁচুনী উঠেছে, কুকড়ে যাচ্ছে দেহ, মোচড় দিয়ে উঠছে। হাত পা টান টান হয়ে আসছে, উল্টে যাচ্ছে চোখ, হাপরের মত উঠানামা করছে বুক, গোংগানীর শব্দে ভেংগে যাচ্ছে নীরবতা, মুখ দিয়ে পানি উঠছে নাক দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে। জিভ্‌ বের হয়ে লকলক করছে ... ... এই দৃশ্য কি খুব দেখার মত কিছু?

বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগে মৃত্যুর সংখ্যা এবং চাহিদা দুটোই বাড়ছে বর্তমানে। বেশীরভাগ অপরাধীই এটা প্রিফার করছে। ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসছে। ইলেকট্রিক চেয়ার একসময় অত্যন্ত প্রচলিত ছিল কিন্তু এর কিছু সমস্যাও আছে। অনেক সময় চামড়া পুড়ে যায়, শিরা উপশিরা ফেটে রক্তাক্ত হয় দেহ। গ্যাস চেম্বারের ঝামেলাটা হল এর দীর্ঘসূত্রিতা এবং বিষাক্ততা দূরীকরনে এর ঝামেলাপূর্ণ প্রক্রিয়া। পাথর ছুড়ে হত্যা এবং শিরশ্ছেদ কে বর্বরতা বলে গন্য করা হয়। ফাঁসি অমানবিক একটা ব্যপার। বার্বারিক।

অনুরোধ: আপনাদের মন্তব্য পেলে আমার খুব ভাল লাগবে। তবে মৃত্যুদন্ডের পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে টেকনিক্যাল কোন প্রশ্ন না করলেই বাধিত হব। আমি কোন জল্লাদ নই। ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী কয়েক মাসে যা যা ঘটতে পারে এবং চ্যাটাং চ্যাটাং

লিখেছেন রাজীব নুর, ০২ রা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১



শেখ হাসিনা চলে যাবার পর-
উপদেষ্টারা ভালো কিছু করে দেখাতে পারেননি। বরং সমগ্র বাংলাদেশে চুরী, ডাকাতি, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজি ত্রিশ গুন বেড়েছে। সেই সাথে দূর্নীতি ও ধর্ষন অব্যহত আছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীরব বিদ্রোহ: অস্তিত্বের অচেনা মুখ

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ০২ রা মে, ২০২৫ দুপুর ২:১২



কোনো কিছুর ভেতরে থেকেও তার অংশ না হওয়া, এটাই অস্তিত্বের নীরব বিদ্রোহ।
এই কথা শুধু একটি চিন্তা নয়, এক গভীর অস্তিত্ববাদী স্বীকৃতি। এটি সেই নিঃশব্দ প্রতিবাদ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হবে না যে কারণে

লিখেছেন নতুন নকিব, ০২ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হবে না যে কারণে

ছবি কৃতিত্ব এআই।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান—দীর্ঘদিন ধরে বৈরিতা, সীমান্ত সংঘর্ষ এবং অবিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং কূটনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ণ করে দিবে

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০২ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৮

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ণ করে দিবে

The image created by AI

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক ও প্রভাবশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, সময়ের ব্যবধানে দলটির চরিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন: সেভেন সিস্টার্স দখল করতে বলেননি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা মে, ২০২৫ রাত ৮:৩২


পাকিস্তান-ভারতের এক্স মিলিটারি কর্মকর্তারা জোশে অনেক কথাই বলে থাকেন তাদের জনগণকে আলী বুঝ দেয়ার জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×